ডা. মহেশ গান্ধি M.D. (Psych) একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এবং হোমিওপ্যাথ, যিনি তার সাইকিয়াট্রিক কেইসগুলোতে সফলভাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার জন্য বিখ্যাত। ১৫ বছর ধরে তিনি ডা. রজন সংকরণের সাথে খুব ঘনিষ্ঠরূপে সম্পর্কিত। ‘Insight to Plants’ গ্রন্থটিতে তাঁর কেইসগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।
VS: একজন হোমিওপ্যাথ হিসাবে সাইকিয়াট্রিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
MG: সাইকিয়াট্রির ভিত্তি রোগের বায়োলজিক্যাল/কেমিক্যাল মডেলের উপর। সকল কিছুকেই শরীর ও নিউরোট্রান্সমিটারের বিঘ্নের দরুণ হয় বলে বিবেচনা করা হয়। সাইকোথেরাপি ও সাইকিয়াট্রিক বিশ্লেষণ ব্যাপক সময়সাপেক্ষ। ১৯৫০ সালের আগে সাইকিয়াট্রি মূলধারার চিকিৎসাক্ষেত্র ছিলো না। ১৯৫০ সাল থেকে, ঔষধভিত্তিক চিকিৎসা দ্রুত ফলদান করছিলো। এই অগ্রগতিটার জন্য অবশ্য চড়া দাম দিতে হয়েছিলো। এলোপ্যাথি এবং সাইকিয়াট্রি রোগের উপর আলোকপাত করে এবং একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসাবে রোগীকে দেখতে পায় না। প্রতিটি ডায়াগনোসিসের প্রেক্ষিতে ঔষধ আছে। যখন মূল কারণটির চিকিৎসা না করা হয়, তখন এই ঔষধ নির্ভর চিকিৎসা অস্থায়ী। উদ্বেগ, বিষণ্নতা ইত্যাদি লক্ষণগুলোতে হয়তো ঔষধগুলোর দ্বারা উন্নতি হতে পারে কিন্তু যদি ভেতরের পরিবর্তন না ঘটে, ফলাফলটি স্বল্পস্থায়ী। ড্রাগ ও ল্যাব-টেস্ট ভিত্তিক চিকিৎসা তরুণ ইনফেকশন ও ঘাটতিজনিত রোগের ক্ষেত্রে ঠিক আছে, কিন্তু ক্রনিক রোগগুলোতে, ড্রাগের প্রতি নির্ভর না হয়ে বরঞ্চ তাদের সার্বিক কল্যানে অন্য কোন উপায় খুঁজে বের করা উচিৎ। এলোপ্যাথিক ও সাইকিয়াট্রি চিকিৎসার অবদমনকারী প্রকৃতি যারা সুস্বাস্থ্যের জন্য ঔষধমুক্ত ও হলিস্টিক পদ্ধতি আকাঙ্ক্ষা করবে, তাদের নিরাশ করবে। হোমিওপ্যাথিতে, রোগীকে স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তার কথা শোনা হয় এবং তারা সার্বিকভাবে কল্যাণের অনুভূতি লাভ করে।
VS: আপনার প্র্যাকটিসে আপনি কি প্রকারের মানসিক স্বাস্থ্য ইস্যুগুলোর মুখোমুখি হন?
MG: আমি উদ্বেগ ও প্যানিকে আক্রান্ত, ফোবিয়া বা ভীতিতে আক্রান্ত, আঘাতপরবর্তী স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিজঅর্ডার, বাইপোলার ম্যানিক ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, প্যারানয়া, এনোরেক্সি, বিউলিমিয়া, মাদকাসক্তি, বাচ্চাদের সমস্যা, বিছানায় প্রস্রাব, আচরণতগত সমস্যা, অডিজম, ADHD, মানসিক জড়ত্ব, বয়সজনিত সমস্যা, যৌন সমস্যাযুক্ত রোগীগুলি দেখি। হোমিওপ্যাথিতে এই সকল অবস্থাগুলি অত্যন্ত সুন্দরভাবে সাড়া দেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফার্স্ট লাইন চিকিৎসা হিসাবে হোমিওপ্যাথি সবচেয়ে ভালো। বাচ্চাদের ঔষধ দেবার আগে আমি অভিভাবকদের হোমিওপ্যাথ দেখাতে পরামর্শ দিই। ঔষধের দ্বারা বাচ্চারা অল্প একটু সময়ের জন্য ভালো থাকে এবং সমস্যাগুলো কোনদিন পুরোপুরি যায় না। ছোট থেকে আরো ছোট বাচ্চাদের জন্য ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো অধিক থেকে অধিকতর ঔষধ বাজারজাত করছে। এটি একটি সাংঘাতিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ভীতিজনক অবস্থা।
VS: হোমিওপ্যাথি সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের সচেতনতা কেমন এবং মানসিক রোগে এর ভূমিকা কি?
MG: হোমিওপ্যাথ হবার আগে, আমি একজন সফল সাইকিয়াট্রিস্ট ছিলাম। রোগীরা ঔষধ-ভিত্তিক চিকিৎসার জন্য আসতো। এখন সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে, এখন মানুষ হোমিওপ্যাথির কথা জিজ্ঞেস করে। তারা তাদের জীবনের উপর ঔষধগুলোকে চাপাতে চায় না, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াগুলোতেও ভুগতে চায় না। মানুষ হলিস্টিক এপ্রোচ চায় এবং ইন্ডিয়াতে ১০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের কাছে হোমিওপ্যাথিই প্রথম পছন্দ।
VS: দুঃখ, ক্ষতি, পরিত্যক্ত হওয়া এগুলোর চিকিৎসা কি হোমিওপ্যাথির দ্বারা হতে পারে?
MG: হ্যাঁ, সম্প্রতি আমি একজন ৪০ বছর বয়স্ক ব্যক্তিকে দেখলাম, যিনি ক্যান্সারে তার স্ত্রীকে হারিয়েছেন। তার দুঃখটা টাটকা। তিনি তাকে ভালোবেসে তার মূর্তিকে হৃদয়ে ধারণ করে ছিলেন এবং কখনোই তাকে ভুলতে দিতেন না। বহু সাইকিয়াট্রিস্ট তাকে এন্টিডিপ্রেসেন্ট দিয়েছেন কিন্তু তিনি শোকে নিমজ্জিত থাকতেন এবং বিষণ্ন হয়ে থাকতেন। আমি তাকে বললাম তার স্ত্রীকে স্মরণ করে দুঃখ না পেয়ে, তার সাথে কাটানো সুখের মুহূর্তগুলোকে মনে করতে পারেন। কেইস নেবার সময়, আমি তার জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রের ব্যাপার- তার ব্যক্তিত্ব, সম্পর্কগুলোর ব্যাপারে খোঁজ নিলাম, কিন্তু তাকে এন্টিডিপ্রেসেন্ট দিইনি। তার দুঃখের অবস্থাটির সাথে মানানসই একটি ঔষধ দিলাম- এখন তিনি সুখী হাস্যমুখ নিয়েই স্ত্রীকে স্মরণ করতে পারেন।
VS: একজন হোমিওপ্যাথ হিসাবে, আপনি কি রোগীর সাথে সমানুভূতিক আচরণ নিয়ে সম্পৃক্ত হন, কিংবা কেবল চিকিৎসক হিসাবেই অবস্থান করেন? মূলধারার চিকিৎসার সবটাই তো বিচ্ছিন্নতা, দূরত্ব ও ব্যক্তির সাথে সম্পর্কহীন চিকিৎসাপদ্ধতির সমর্থক।
MG: একজন হোমিওপ্যাথ হিসাবে আমি গ্রহণযোগ্যতা, যুক্তি, ভাগ্য, নিয়তি, কর্ম এবং আমাদের জীবনে ঈশ্বরের ভূমিকার ব্যাপারে কোন উপদেশ বা পরামর্শ না দিয়ে- প্রথমে আমি তাদের কথা শুনি। আমি রোগীদের কৃতজ্ঞতা, করুণা কিংবা কোন শিক্ষা গ্রহণ করুক এই আশায় কথা বলি না। আমি শুনি, কারণ কথা শোনাটা রোগীর প্রয়োজন। মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনাটি ঔষধের মতো কাজ করে। রোগী নিজেকে নিরাপদ মনে করে ও তাকে বুঝতে পেরেছি বলে মনে করে। একজন হোমিওপ্যাথ আসলে মায়ের মতো। যখন আমাদের কাছে একজন রোগী আসে, আমরা সমানুভূতির সাথেই তার কথা শুনি ও খেয়াল রাখি। পুরো ব্যাপারটিকে হয়তো বেশ মেয়েলি বলে মনে হবে। এলোপ্যাথি যুক্তি, সমস্যা-সমাধান, নিয়মতান্ত্রিক প্রটোকল ও রুটিনের সাথে সম্পর্কিত। হোমিওপ্যাথি আবেগ ও অনুভূতিগুলো নিয়ে কাজ করে। সেখানে মানবিকতার স্পর্শ থাকে। আর এটাই, এই মায়ের স্পর্শটাই একজন রোগীর কষ্ট ও যাতনাগুলোর সময় প্রয়োজন। তারা আমাদের এই সমানুভূতিকে বুঝতে পারে- এমনকি যখন আমারা দয়া ও করুণাসুলভ কোনও শব্দও উচ্চারণ করি না তখনও। আমরা একই সাথে একজন মহৎ মানুষ ও ভালো হোমিওপ্যাথ একসাথে হতে পারি।

VS: যৌনতা, পারিবারিক ও সাম্প্রদায়িক উগ্রতাজনিত আঘাতপ্রাপ্ত মানুষকে কি হোমিওপ্যাথি সাহায্য করতে পারে?
MG: যখন কোন দুঃখজনক ঘটনা আঘাত করে, কিছু কিছু মানুষ তাকে এড়িয়ে এগিয়ে যেতে পারে না। তারা সেখানে আটকে যায়। এরপর যে অবস্থাটি হয় তাই আঘাতজনিত অবস্থা। একজন রোগী আমাকে বলে যে তার শিশুকালে, একটি চোর তাদের বাড়ীতে সিঁধ কেটে ঢোকে এবং ছুড়ি দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। সে যখন এই ঘটনাটা বলছে, তাকে দেখে নির্বিকার মনে হলো। আমি তাকে এই ঘটনাটি সম্বন্ধে সেই সময়টাতে তার কি অনুভূতি ছিলো- জিজ্ঞেস করলাম। সে বললো, ‘আমার জীবন আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি যদি এই উন্মত্ত মানুষটিকে তার কুকর্মটি করে চলে যেতে দিই, আমি তা কাটিয়ে উঠতে পারবো এবং আমার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো’। এই কেইসটিতে, তার ব্যক্তিগত মনোভাব তাকে এটি থেকে কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা করেছে, অন্যত্থায় তা চরম আঘাতজনিত ঘটনা হিসাবে বর্ণনা করা হতো।
যখন মানুষ আমার কাছে তাদের পেছনের জীবনের বিভিন্ন আঘাতগুলো নিয়ে আসে, আমি সবসময়ই তাদের অনুভূতি ও চিন্তাগুলো- ঘটনাটি ঘটার সময়টাতে কেমন ছিলো তা জিজ্ঞেস করি। তারা কি সেখানে আটকে আছে নাকি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে, তা বুঝতে এটি আমাকে ইঙ্গিত প্রদান করে। একটি পরিস্থিতিতে ব্যক্তির সাড়াপ্রদান ও প্রতিক্রিয়ার ধরণ ব্যক্তিটিকেই বুঝতে সাহায্য করে। ঠিক এই ব্যাপারটিই একটি স্বতন্ত্র ঔষধ তাকে প্রদান করতে আমাদের সাহায্য করে। পুরো প্রক্রিয়াটি, আমাদের অবশ্যই কোন রকম সংস্কার না রেখে, নিজের অনুভূতিপ্রবণতার ব্যাপারে স্বচ্ছ থেকে এবং রোগীর কথায় কোনরকম বিঘ্ন সৃষ্টি না করে- সম্পন্ন করতে হবে। আমাদের অবশ্যই ইতিবাচক হতে হবে, তাদের সাহায্য করার একটি খাঁটি আকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে, ভালো-খারাপের বিচার থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ব্যাপারটিকে তার প্রকৃত চেহারায় দেখতে হবে। এর দরুনই হোমিওপ্যাথি একটি অত্যন্ত মানবিক পদ্ধতি।
VS: কোন বস্তু বা মাদকে আসক্তে রোগীদের হোমিওপ্যাথি কিভাবে সহায়তা করতে পারে? শুধু আমেরিকাতেই ৬৫০০০ মানুষ প্রতিবছর পেইনকিলারে আসক্তির দরুণ মারা যায়।
MG: কোন দ্রব্যের অপব্যবহার এবং তার উপর নির্ভরশীলতা হচ্ছে জীবনীশক্তির বিচ্যুতাবস্থার প্রতিফলন। চিকিৎসার মাধ্যমে, বস্তুটির সাথে রোগীর সম্পর্কটি পরিবর্তিত হয়। হোমিওপ্যাথ হিসাবে, আমরা যে মূল সমস্যাটির দরুণ রোগী দ্রব্যটিতে নির্ভরশীল হয়ে নিজে নিজেই ঔষধ খাবার অভ্যাস তৈরি করে তা খূঁজে বের করে দূর করার চেষ্টা করা হয়। জীবনীশক্তি একবার ভারসাম্যপূর্ণ হলে, অভ্যাসটিও চলে যায়। মানুষের মূল ইস্যুটিকে ঔষধের দ্বারা চিকিৎসা করায় তাদের আর কোন অবলম্বনের প্রয়োজন হয় না।
VS: লিঙ্গ-সম্পর্কিত আঘাতগুলির ক্ষেত্রে কি মানুষ হোমিওপ্যাথিতে সাহায্য পেতে পারে? পশ্চিমে সমকামী, লেসবিয়ান এবং লিঙ্গপরিবর্তিত মানুষগুলো তাদের আচরণের দরুণ সংবাদের শিরোনামে পরিণত হচ্ছে।
MG: যদিও ইন্ডিয়ানরা পরিবারমুখী ও আত্মকেন্দ্রিক নয়, তবুও লিঙ্গ সম্পর্কিত আঘাত ইন্ডিয়াতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিভাবকগণ চান তাদের সমকামী ছেলেটি স্বাভাবিক হোক। এই পারিবারিক চাপে ছেলেটি রাগান্বিত ও বিষণ্ন হয়। আমি ছেলেটির সাথে কথা বলি। যদি ছেলেদের প্রতি তার আকর্ষণ নিয়েই সে স্বাভাবিক থাকে, আমি তার এই ব্যক্তিস্বাতন্ত্রতাকে সম্মান করে তাকে চিকিৎসা করি না। একদম প্রত্যেকেই তাদের এই ঝোঁক ও আচরণটি নিয়ে স্বাভাবিক বোধ করে না। একই লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণবোধ করায় কেউ কেউ অপরাধবোধে ভোগেন। তারা পরিবর্তন চায়। এরাই হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা প্রার্থী। একজন ব্যক্তি তার জীবনটি একজন ছেলে বা মেয়ে যাকে নিয়েই যাপন করুন, সবশেষে তাকে নিজের ব্যাপারে সুখী থাকতে হবে। আমি তার বাছাইটি সঠিক নাকি ভুল, কিংবা তার কোনটা বাছাই করা উচিৎ ছিলো- সে ব্যাপারে কোন মতামত প্রদান করি না, বরঞ্চ আমি তার বাছাইটি নিয়েই তাকে খুশী ও স্বস্তিময় হতে সহযোগিতা করি। আর এই ব্যাপারটিতে হোমিওপ্যাথি সাহায্য করতে পারে, কারণ হোমিওপ্যাথি সম্পূর্ণরূপে রোগী-কেন্দ্রিক। তাদেরকে নৈতিকতা, ভালো বা খারাপ, ভুল বা শুদ্ধ, সামাজিক মূল্যবোধ, কলঙ্ক ও ধর্মীয় মতামতের ভিত্তিতে বিচার করা হয় না। মাঝে মাঝে কোন রোগী জিজ্ঞেস করে, ব্যক্তি হিসাবে আমি তাদের পরিবর্তন করতে পারবো কিনা। আমার উত্তর হচ্ছে – না। হোমিওপ্যাথি একটি বাঘকে একটি বিড়ালে, বা একটি বিড়ালকে একটি ঘোড়ায় পরিবর্তন করতে পারে না। এটি কেবলমাত্র তারই একটি উন্নত সংস্করণে পরিণত হবার ব্যাপারটি সহজতর করে। এটাই হোমিওপ্যাথির সৌন্দর্য।
VS: হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদে কি কোন সাদৃশ্য আছে? মোটের উপর, আয়ুর্বেদের উৎপত্তি ইন্ডিয়াতে এবং ইন্ডিয়া হোমিওপ্যাথির বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছে।
MG: আয়ুর্বেদে আমাদের পঞ্চকোষের ধারণা বর্তমান- অন্নময় কোষ (খাদ্য), প্রাণময় কোষ (জীবনীশক্তি), মনোময় কোষ (মন), জ্ঞানময় কোষ (বুদ্ধিবৃত্তি), ও আনন্দময় কোষ (প্রশান্তি)।
একজন ব্যক্তি যখন পঞ্চকোষে সবচেয়ে বাইরের স্তর থেকে সবচেয়ে ভেতরের স্তরে গমন করে, সে তার সত্যিকারের সত্ত্বা, আত্মাকে আবিষ্কার করে এবং সে হয়তো তার আত্মা ও পরমাত্মার চূড়ান্ত মিলনের সন্ধ্যান পায়। পঞ্চকোষের মধ্যে সবচেয়ে বাইরেরটি পরিবর্তনের অধীন, কিন্তু একেবারে কেন্দ্রের, আনন্দময় কোষটি হচ্ছে সৎ-চিদ্ কোষ, যা বাইরের কোষগুলোর পরিবর্তনে অপ্রভাবিত থাকে। যখন বাইরের কোষগুলো – অন্নময় কোষ (খাদ্য), প্রাণময় কোষ (জীবনীশক্তি), মনোময় কোষ (মন) বিচ্যুতির সম্মুখীন হয়, এইসব বিচ্যুতিগুলো আনন্দময় কোষের (প্রশান্তি) অন্তর্নিহিত আলোকচ্ছটায় আচ্ছাদন সৃষ্টি করে। অতিমাত্রায় যাতনা ও শারীরিক দুর্ভোগের সময়, অন্তর্নিহিত প্রশান্তিতে স্থির থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আপনি যখন একটি পুকুরে একটি পয়সা ছুড়ে মারবেন, এত বেশি ঢেউ সৃষ্টি হবে যে আপনি তলাটি দেখতে পাবেন না। পানি যখন স্থির হবে, আপনি তখন পয়সা ও পুকুরের তলা দেখতে পাবেন। হোমিওপ্যাথ হিসাবে আমরা বাইরের কোষগুলো অন্নময় কোষ (খাদ্য), প্রাণময় কোষ (জীবনীশক্তি), মনোময় কোষের (মন) ভারসাম্যহীনতা ও ঢেউগুলোকে দূর করি, যাতে তাদের ক্রিয়াকলাপ ও অভিব্যক্তি উন্নত অবস্থার দিকে পরিবর্তিত হয়। একভাবে, আমরা রোগীদের তাদের সত্যিকারের আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্যসাধনে সহায়তা করি এবং তাদেরকে তাদের আনন্দময় কোষের দিকে চলতে সাহায্য করি। এটিই পৃথিবীতে মানবসত্ত্বার চূড়ান্ত লক্ষ্য।
আধুনিক প্রযুক্তিগত ঔষধ ও সাইকিয়াট্রি মনে করে যে, সমস্যা শুধু শরীর ও মস্তিস্কের হয়। আক্রান্ত অঙ্গটিকে ঔষধযোগে চিকিৎসা করে ভাবে সমস্যা চলে যাবে। আমরা, হোমিওপ্যাথগণ মনে করি যে, সমস্যাগুলো শরীরেও থাকে না, মনেও থাকে না- এটি বস্তুত, প্রাণময় কোষ, জীবনীশক্তিতে থাকে। জীবনীশক্তির বিচ্যুতদশা শরীর ও মনকে প্রভাবিত করে এবং সেই পরিবর্তনগুলো আনয়ন করে যা ব্যক্তিগতভাবে ও অন্যের চোখে লক্ষণ হিসাবে উপলব্ধ হয়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা জীবনীশক্তির ভারসাম্যহীনতাকে সংশোধন করার জন্য পরিচালিত হয়।
এই উভয়পদ্ধতির চিকিৎসাই হলিস্টিক। তারা কেন্দ্রীয় কন্সটিটিউশন ও কোষগুলোর উপর কাজ করে। উভয়টিই ডকট্রিন অব সিগনেচারের কথা উল্লেখ করে এবং জীবনযাত্রা ও অভ্যাসের ব্যাপারে পরামর্শ দেয়। হোমিওপ্যাথির ঔষধ প্রস্তুতের ব্যাপারে তার নিজস্ব অনন্য পদ্ধতি রয়েছে। হোমিওপ্যাথিতে আমরা কেবলমাত্র আমাদেরকে জীবনীশক্তির অভিব্যক্তিগুলোর সাথে সম্পর্কিত করে খুঁজে বের করি কীভাবে তাকে ভারসাম্যে আনা যাবে। লক্ষণগুলো হচ্ছে জীবনীশক্তির ভাষা, যার সহায়তা প্রয়োজন।
VS: এলোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথিক ঔষধগুলো কি একটা আরেকটার পাশাপাশি কাজ করতে পারে?
MG: এলোপ্যাথিক ঔষধগুলো হচ্ছে ক্যামিকেলের বস্তুগত মাত্রা। হোমিওপ্যাথি শক্তিসত্ত্ব ঔষধ। বস্তুগত ঔষধ ও শক্তিসত্ত্ব ঔষধ ভিন্ন লেভেলে ক্রিয়া করে। বস্তুগত ঔষধ (এলোপ্যাথি) শরীরে প্রভাব বিস্তার করে। শক্তিসত্ত্ব ঔষধ (হোমিওপ্যাথি) জীবনীশক্তিতে তার প্রভাব রাখে। তারা পাশাপাশি ব্যবহার করা যেতে পারে। একজন ব্যক্তি যদি গুলি খেয়ে বেঁচে যায়, বা দুর্ঘটনায় মেরুদন্ড ভেঙ্গে যায়- একটি ইমার্জেন্সি রুমে যাওয়াটাই হচ্ছে সর্বোত্তম। কিছুটা ধাতস্থ হলে, হোমিওপ্যাথি তার রয়ে যাওয়া মানসিক আঘাত, যা রোগী এখনো অনুভব করতে পারছে তা দূর করতে ও জীবনীশক্তির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারে। আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের জন্য চমৎকার। এটি ক্রনিক রোগের এবং গভীর আবেগপ্রসূত ও মানসিক সমস্যাগুলোর ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ- যেগুলোতে হোমিওপ্যাথি সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসূ। স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিটি ধারার একটি নিজস্ব ভূমিকা আছে।
VS: যে রোগীগণ ঔষধপত্র বন্ধ করে সম্পূর্ণরূপে হোমিওপ্যাথির শরণাপন্ন হতে চায়, তাদের ব্যাপারে আপনি কি করেন?
MG: সম্ভব হলে ঔষধগুলোকে ধীরে ধীরে বন্ধ করি। এটি একটি ক্রমান্বয়িক প্রক্রিয়া, যা অবশ্যই এক্সপার্টদের তত্ত্বাবধায়নে করতে হবে।
VS: জীবনযাত্রার ধরণ, খাদ্যাভ্যাস বা ব্যায়ামের ব্যাপারে কি আপনি পরামর্শ প্রদান করেন? সুস্থতার ব্যাপারে আয়ুর্বেদ ও ট্রাডিশনাল চায়নিজ মেডিসিনের মতো সবচেয়ে প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতি এবং সাথে হোমিওপ্যাথিও জীবনযাত্রার ধরণ ও খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকাকে স্বীকার করে।
MG: হ্যাঁ। কেবলমাত্র হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিয়ে দেয়াটাই যথার্থ নয়। একটি অস্বাভাবিক স্বাস্থ্যযুক্ত মানুষের অস্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা ও বিতৃষ্ণা থাকে, যেমন- চিনি, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং অন্যান্য উত্তেজক খাবারে আসক্তি। আয়ুর্বেদ বায়ু, পিত্ত ও কফের শুদ্ধির ব্যাপারে কথা বলে। হোমিওপ্যাথি স্বীকার করে বায়ু, বাইল ও শ্লেষ্মার ভারসাম্যহীনতাকে এবং ঔষধ নির্বাচনে এগুলোর পরিবর্তনকে। এই ক্ষেত্রটিতে স্বাস্থ্যকর খাদ্য, অভ্যাস, ব্যায়াম ও পরিচ্ছন্ন আবহাওয়া এ সমস্ত কিছুরই হোমিওপ্যাথিক ঔষধের পাশাপাশি একটি ভূমিকা আছে। চূড়ান্তরকমের ব্যক্তিস্বাতন্ত্রতামূলক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার দ্বারা, মানুষ স্বাস্থ্যকর বিষয়গুলো বেছে নিতে শুরু করে। আমি এমনও বাচ্চা দেখেছি, যারা আর চিপস ও চকোলেট খেতে চায় না। যেহেতু তারা স্বাস্থ্যবান হয়, তাদের অস্বাস্থ্যকর আকাঙ্ক্ষা চলে যায়। ভেতর থেকে স্বাস্থ্যবান হওয়ায়, আপনি স্বাস্থ্য-উন্নতকারী অভ্যাস ও জীবনে সজীবতাকেই আহ্বান করবেন।

VS: প্রাচীন বহু সংস্কৃতি বিশ্বাস করে যে, দুষ্ট সত্ত্বাগুলো ভর করার কারণেই মানসিক সমস্যাগুলো হয়।
MG: সাইকিয়াট্রি সত্তায় ভর করার ধারণার উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে। ইন্ডিয়াতে আমরা মনে করি, আমরা আমাদের কর্ম দ্বারা প্রভাবিত। হ্যানিমানের সময়, মানসিক রোগীগুলোকে ভুতে ধরা বলে বিবেচনা করা হতো এবং পশুর চাইতেও খারাপ আচরণ করা হতো। এই নিষ্ঠুর প্র্যাকটিসগুলো অজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে গড়া। এমনকি এখনো কিছু লোক বিশ্বাস করে যে, মানসিক রোগগুলো এক ধরণের নেতিবাচক অস্তিত্বের আছর। কিছু মানসিক রোগী বিশ্বাস করে বসে যে তারা ভুতের আছরকৃত, কাজেই তাদের সাথে ভিন্নধর্মী আচরণ করা হয়। যখন প্রয়োজন হয়, আমি তাদেরকে শেখাতে এবং রোগীকে বোঝাতে চেষ্টা করি। আমাদের হোমিওপ্যাথিক মেটেরিয়া মেডিকাতে মন, ভয়, বিভ্রান্তি, দৃষ্টিভ্রম এবং অন্যান্য মানসিক লক্ষণ ও অস্বাভাবিকতাগুলোর ব্যাপারে একটি সুবিস্তৃতি পুর্ণাঙ্গ বিভাগ আছে। এটি মনের একটি অবস্থা- যা বিভ্রান্তি ও দৃষ্টিভ্রম সৃষ্টি করে। এটি মায়া। হোমিওপ্যাথিতে এগুলোকে বোঝার এবং উপশম প্রদানের একটি নিজস্ব পদ্ধতি আছে।
VS: ফার্মাসিউটিক্যালদের সাথে যুদ্ধ শুরু না করে কীভাবে একজন হোমিওপ্যাথ তাদের রোগীদেরকে ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে একটি ধারণা দিতে পারে?
MG: আমরা কীসের সাথে যুদ্ধ করছি তা দিয়েই আমাদের পরিচয় নির্ধারিত হয়। আমরা যখন আমাদের মেজাজের নিয়ন্ত্রণ হারাই এবং রাগ করি, আমারা দুর্বলে পরিণত হই। বিগ ফার্মাকে একা ছেড়ে দিন। স্রেফ ভালো হোমিওপ্যাথিক অনুশীলন জারি রাখুন। মানুষদের সিদ্ধান্ত নিতে দিন- তারা কোনটা নিতে চায়। মানুষ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে জানে। তাদেরকে ব্রেইন-ওয়াশ করা হয়েছে যে, তাদের ঔষধের কোন বিকল্প নেই। আমি তাদেরকে অন্যান্য হলিস্টিক উপায়গুলোর খোঁজ করতে বলি। একই কথা সন্দেহবাদীদের বেলায়ও বলা যেতে পারে। তারা যা চায় তাই করুক- আমরা যা পারি সেটা করি।
VS: যেসব মানুষের পরিবারের সদস্যদের কারো মানসিক স্বাস্থ্যসম্পর্কিত রোগ আছে, তাদের ব্যাপারে কি আপনার কোন বার্তা আছে?
MG: উদার ও আশাবাদী মানসিকতার হোন। কারো মানসিক রোগ আছে বলেই জীবন শেষ হয়ে যায়নি। এইসব রোগীদের সাহায্য করতে বহু কিছু করা যেতে পারে। বিকল্প চিকিৎসা ও হোমিওপ্যাথি এ ব্যাপারে একটি নিরাপদ, মৃদু, অনাক্রমণকারী, হলিস্টিক এবং আত্মিকতামুখী বিকল্প প্রদান করে যা আয়ুর্বেদ ও চায়নিজ মেডিসিনের মতো প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতিগুলোর সাথে ঐক্যতানযুক্ত। নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সাহসী হোন এবং হোমিওপ্যাথিকে পরীক্ষা করে দেখুন।
Discussion about this post