হ্যানিম্যানের সময় পর্যন্ত রোগের কোনরূপ সুশৃঙ্খল শ্রেণিবিভাগ চিকিৎসাশাস্ত্রে ছিল না। নানারকম মনগড়া শ্রেণিবিভাগ দিয়ে চিকিৎসাশাস্ত্র পরিচালিত হতো। তৎকালীন অরাজকতাপূর্ণ এসকল কারণে তিনি তাঁর দীর্ঘকালের গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের দ্বারা মানুষের দেহ-মনে প্রকাশিত রোগাবস্থাকে একটি যুক্তিসম্মত শ্রেণিবিভাগ করেন, যা চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি অমূল্য সম্পদ। তিনি যাবতীয় রোগসমূহকে তাদের প্রকৃতি অনুযায়ী প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করলেন।
ক) অচির রোগ বা অস্থায়ী রোগ বা একিউট রোগ (Acute disease)
খ) চিররোগ বা স্থায়ী রোগ বা ক্রনিক রোগ (Chronic diseases)
[অর্গানন অব মেডিসিন, অনুচ্ছেদ ৭২]
একিউট রোগের বৈশিষ্ট্য:
হ্যানিম্যান বলেন – “অচির রোগ বা একিউট ডিজিজ মানবদেহে সংক্রামিত হওয়ার অতি অল্প সময়ের মধ্যেই পূর্ণোদ্যমে ক্রিয়া শুরু করে এবং এর বিষক্রিয়ার লক্ষণসমূহ রোগীর দেহে ও মনে দ্রুত পরিস্ফুটিত হয়ে উঠে। ফলে রোগাবস্থার একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দ্রুতই রোগীর মধ্যে প্রকাশিত অবস্থায় দেখা যায়। রোগাবস্থার ক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তার গতিপথের শেষ সীমায় পৌঁছায়। ফলে হয় রোগী আরোগ্য লাভ করবে, অথবা রোগী মৃত্যুমুখে পতিত হবে।”
সাধারণত একিউট রোগাবস্থার রোগীতে পীড়ার সুচনা (Onset), বিকাশ (Development) ও বিরাম (Recession) থাকে। রোগীর আরোগ্যলাভই এর স্বাভাবিক পরিণতি। এর ক্রিয়ার দ্রুততা ও প্রচন্ডতা থাকে, কিন্তু গভীরতা থাকে না। সেকারণে এই জাতীয় রোগাবস্থায় কেবলমাত্র দেহযন্ত্রের ক্রিয়াগত বৈলক্ষণ (Functional disorder) সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু দেহের গঠনগত কোন পরিবর্তন (Structural Change) সাধন করতে পারে না। অস্থায়ী বা স্বল্পস্থায়ী বলে এদের অচির রোগ বলা হয়। উদাহরণ হিসাবে কয়েকটি রোগের নাম বলা যায়। যেমন – সর্দি, কাশি, জ্বর, উদরাময়, আমাশয়, হুপিংকাশি, বসন্ত, কলেরা ইত্যাদি।
• একিউট রোগাবস্থার সৃষ্টির মূল কারণ (Cause) হচ্ছে কোন উত্তেজক কারণ বা দূষিত পদার্থ বা দূষিত প্রভাব কিংবা সুপ্ত সোরা মায়াজম বা কোন অচির রোগবিষের সাময়িক উচ্ছাস। একিউট রোগাবস্থাকে কাল বৈশাখি ঝড়ের সাথে তুলনা করা যায়।
• রোগের সুপ্তাবস্থা (Incubation period) – একিউট রোগাবস্থায় রোগ সংক্রমণের অতি অল্প সময়ের মধ্যেই জীবনী শক্তির উপর এর প্রভাব বিস্তার করে এবং বিভিন্ন কষ্টকর লক্ষণের মাধ্যমে এর অস্তিত্ব প্রকাশিত হয়।
• রোগের বিকাশধারা (Development) – একিউট রোগাবস্থা সংক্রমণের অল্পসময়ের মধ্যেই পূর্ণমূর্তিতে প্রকাশিত হয়। জ্বর, গাত্রতাপ বৃদ্ধি, সর্দি, কাশি, আমাশয়, উদরাময়, উদ্ভেদ নির্গমন প্রভৃতির মাধ্যমে জানান দেয়, আভ্যন্তরীণ সংক্রমণ সম্পূর্ণ হয়েছে। লক্ষণের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পেতে একটি চরম অবস্থায় পৌঁছে যায়। তারপর রোগীর মৃত্যুতে সমাপ্ত না হলে আবার ধীরে ধীরে রোগবস্থার প্রকোপ কমতে বা উপশম হতে থাকে।
• ক্রিয়াক্ষমতা (Effects upon the organism) – একিউট রোগ দেহযন্ত্রে শুধু ক্রিয়াগত বিশৃঙ্খলা (Functional disorders) সৃষ্টি করতে পারে, গঠনগত কোন পরিবর্তন (Structural change) সাধন করতে পারে না, এর ক্রিয়া অগভীর।
• পরিণাম (Ultimate) – আরোগ্য অথবা মৃত্যু হচ্ছে একিউট পীড়ার পরিণতি। এমনকি কোন রকম চিকিৎসা ছাড়াই এর পরিসমাপ্তি হতে পারে।
তবে সুচিকিৎসার জন্য রোগের শ্রেণিবিভাগকে আরও বিস্তারিতভাবে জেনে নিতে হয়।
রোগের বিস্তারিত শ্রেণিবিভাগ –১:
ক) ডাঃ পরেশচন্দ্র সরকারের এর ‘হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান ও আরোগ্যকলা’ গ্রন্থে রোগের যে শ্রেণিবিভাগটি উপস্থাপন করা হয়েছে-
• রোগ বা পীড়া
• বাহ্যিক কারণজনিত পীড়া (Disease that spring from mechanical and exterior sources)
• সামান্য অসুস্থতা (Indisposition) (150)
• বৃত্তিগত পীড়া (Occupatioal Disease)
• আঘাত বা দুর্ঘটনাজনিত পীড়া (Injury, Accidental, Surgical)
• আভ্যন্তরীণ পীড়া বা প্রকৃত পীড়া (Dynamic diseases or disease proper)
• অচির রোগ (Acute Disease) (72, 73, 152)
• ব্যক্তিগত বা স্বতন্ত্র (Individual)
• বিক্ষিপ্ত (Sporadic)
• মহামারী (Epidemic)
• মায়াজম ব্যতীত অন্য কারণে সৃষ্ট পীড়া (Non-miasmetic)
• একিউট মায়াজম উৎপাদিত পীড়া
• জীবনে একবার – বসন্ত, হুপিংকাশি
• বার বার আক্রমণ করে – এসিয়াটিক কলেরা
• চির রোগ (Chronic Disease: 74-82 পৃষ্ঠা)
• সোরা
• সিফিলিস
• সাইকোসিস
ডাঃ হরিমোহন চৌধুরী লিখিত ‘Indications of Miasms’ গ্রন্থে যে শ্রেণিবিভাগটি উল্লেখিত হয়েছে (বাংলা অনুবাদের জন্য দেখুন – মায়াজমের স্বরূপ):
Hahnemann classified all the diseases in two groups :
(1) Acute
(2) Chronic.
According the Hahnemann, acute diseases are divided into three parts –
(a) individual
(b) sporadic
(c) epidemic
He had also given hints of endemic and pandemic character of acute diseases.
Hahnemann divided chronic diseases in two parts:
(a) Diseases with fully developed symptoms
(b) Diseases with very few symptoms.
He again divided chronic diseases of category “a” in two parts –
- Non- miasmatic
- (ii) Miasmatic.
Non-miasmsatic diseases are again sub-divided into three groups:
- diseases from bad hygienic conditions of living,
- diseases due to continued application of non-homoeopathic drugs in crude forms or drug addictions,
- occupational diseases.
Miasmatic chronic diseases are also sub – divided into two parts:
- Single disease by Psora-Sycotic, or Syphilis
- compound Disease by Psoric- Sycotic, or Psoric-Syphilitic, or Syco-Syphilitic or Psoric-Syphilitic-Sycotic.
These are also of three different types, i.e. ,
- continued,
- Intermittent and
- Alternating.
Miasmatic chronic diseases with few symptoms are also divided into two parts:
(i) One-sided diseases which are sub-divided two groups, i.e. ,
(a) diseases with only mental symptoms, e. g., Mania, Insanity, etc.,
(b) Diseases with only physical symptoms, e.g. , backache, headache, etc.
(ii) Local diseases which are also sub-divided into two groups,
(a) Surgical and
(b) Non-Surgical.
This classification of diseases was the first in its character in the history of medicine which is of paramount importance for treatment and management of diseases. And this is one of the greatest contributions of Masters Hahnemann.
Discussion about this post