বইটি আমি অনেক আগেই পড়েছিলাম যখন হোমিওপ্যাথিতে পড়া প্রথম শুরু করেছি সম্প্রতি বইটি আবার পড়লাম। হোমিওপ্যাথিতে পড়াশুনা শুরু করার পর পরই বইটি যেমন মুগ্ধ হয়েছিলাম, আজ আবার পড়ার সময় তা যেন একটুও হ্রাস পায়নি। বইটি লিখেছেন ইন্ডিয়ার স্বনামধন্য প্রয়াত চিকিৎসক ডা. সূর্যপদ দে- যিনি সমস্ত জীবন হোমিওপ্যাথির উন্নতিকল্পে ও প্রসারে কাজ করে গেছেন। বাংলাভাষায় লেখা তাঁর আরো বেশকিছু বই প্রকাশিত হয়েছে যা প্রকৃত ধারার হোমিওপ্যাথিকে আয়ত্ত্ব করার লক্ষ্যে বাংলা ভাষাভাষী হোমিওপ্যাথগণের যথেষ্ঠ গুরুত্ব সহকারে পাঠ করা উচিৎ।
এই বইটিতে তিনি হোমিওপ্যাথির মূলধারার পথটিতে হোমিওপ্যাথির মৌলিক বিষয়গুলো বাংলাভাষায় সহজ-সরলভাবে উপস্থাপন করেছেন। বইটিকে মূলত হোমিওপ্যাথির দর্শনের অঙ্গীভূত বইও বলা যায় ।শুধু মেটেরিয়া মেডিকা পড়ে বা কিছু লক্ষণ মিলিয়ে কোন ঔষধ প্রয়োগ করলে হয়তো বা লক্ষণগুলো সাময়িকভাবে দূর হবে কিন্তু রোগী আরোগ্য হবে না। শুধু লক্ষণ মিলিয়ে ঔষধ দিলেই যে হোমিওপ্যাথি হয় না এবং শুধু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করলেই যে হোমিওপ্যাথ হওয়া যায় না- এই ব্যাপারটি তিনি বইটিতে অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও যৌক্তিকভাবে তুলে ধরেছেন। চিকিৎসক হতে হলে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে – রোগ কি? রোগী কে? রোগ কেন হয়? ঔষধ কি? মায়াজম কি? রোগ আরোগ্যের পথে বাঁধা কি কি ইত্যাদি বহুমাত্রিক বিষয়গুলো। সেই সাথে জানতে হয়- ‘হোমিওপ্যাথিতে রোগ নয় রোগীর চিকিৎসা করা হয়’ কথাটির অর্থ কি এবং তা কেন ? রোগীলিপি কি? রোগীলিপি কিভাবে নিতে হয়? জানতে হয়, রোগীতে বিদ্যমান লক্ষণগুলোর মধ্যে কোন লক্ষনের গুরুত্ব কতটুকু অর্থাৎ লক্ষনের মূল্যায়ন এবং ঔষধের শক্তি ও মাত্রা নির্বাচন ইত্যাদি মহাগুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয়সমূহ। যে বিষয়গুলো এই বইয়ে খুব প্রাঞ্জলরূপে উপস্থাপন করা হয়েছে- যা জানা ও আয়ত্ত্ব করা একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের জন্য অপরিহার্য।
বইটিতে হোমিওপ্যাথির মৌলিক বিষয়গুলো এত সহজ ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে গেছেন যে, আমি মনে করি, যে বা যারা হোমিওপ্যাথি পড়া শুরু করেছেন- মৌলিক পুস্তকগুলোর তালিকার প্রথমদিকেই এই বইটি রাখা উচিৎ- বিশেষ করে যারা বাংলাভাষায় পড়াশুনা ও চিকিৎসাচর্চা করতে চান। তিনি হোমিওপ্যাথির ও হোমিওপ্যাথদের স্বার্থে যে পরিশ্রম করে গেছেন- এই বইটি তার একটি জাজ্বল্যমান নিদর্শন। তার এই অমর কীর্তির জন্য বাংলাভাষী মানুষ তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ হয়ে থাকবে।