অনুবাদ: ডা. পি গুপ্ত:
ভুপাল ট্রাজেডি ও কর্ণাটকে মাংকি ভাইরাসের ব্যাপারে আমাদের চিকিৎসাপদ্ধতি ও এর নিষ্ক্রিয়তা সম্বন্ধে কিছু ব্যক্তি খুব দৃঢ়ভাবে লিখেছেন। কেন হোমিওপ্যাথগণ ঐ এলাকাগুলোতে যায়নি ও তাদের সেবাপ্রদান করেনি এবং আমাদের পদ্ধতি অনুযায়ী আক্রান্ত লোকদের কেন সহযোগিতা করেনি বা আরোগ্য করেনি?
বস্তুত, এটি একটি ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আজ যদি কোথাও, ধরা যাক দিল্লীতে হ্যানিমান থাকতেন, তিনি কি পরামর্শ দিতেন- সেটাই আমি চিন্তা করছিলাম।
যখন কলেরা ইউরোপে আক্রমণ করে, তার প্রকৃতি ছিলো ইতোমধ্যে সুবিদিত। এটি নির্ণয় করাও ছিলো সহজ এবং এর লক্ষণাবলী এত পরিচ্ছন্ন ছিলো যে, হ্যানিম্যান এটিকে তাঁর মেটেরিয়া মেডিকা পিউরার “ইঙ্গিতবাহী” ঔষধগুলোর সাথে তুলনা করতে পেরেছিলেন। কাজেই তাঁর Camphor, Cuprum, Vert. alb, Ars. alb কে বাছাই করা আশ্চর্যের কিছু নয়। কিন্তু তারপরও, তাঁর সময়ে বা পরে আসলে কতজন চিকিৎসক এগুলো ব্যবহার করেছেন এবং তার সেই হোমিওপ্যাথিক ঔষধগুলো দিয়ে কতগুলো আক্রমণকে প্রতিরোধ করা বা আরোগ্য করা গেছে? দেখা দেয়া সমস্ত কেইসের তুলনায় তা খুব বড় কোন অনুপাত নয়। নিঃসন্দেহে যিনিই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাপ্রদানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন- এগুলো ব্যবহার করেছেন এবং তাদের এলাকাতে রোগীদের আরোগ্য করেছেন।
পরবর্তীতে হ্যানিমানের অনুসারীগণ স্মল-পক্সের বিরূদ্ধে থুজা, ডিপথেরিয়ার বিরূদ্ধে মার্ক-সায়নিটাম, হুপিং-কফের বিরূদ্ধে পার্টুসিন ও ড্রসেরা ইত্যাদি রকমের কিছু নির্দিষ্ট রোগ-প্রতিরোধক আবিষ্কার করেন, কিন্তু ব্যক্তিস্বাতন্ত্রীকরণের বিরাজিত ধারণার দরুণ, গণ–হোমিওপ্যাথিক রোগপ্রতিরোধকরণের ব্যাপারে আমরা কখনোই একমত হতে পারিনি। এটা দুঃখজনক।
বর্তমানে এই চলমান পরিস্থিতিতে, কিছু হোমিওপ্যাথিক ঔষধকে নির্বাচিত করার জন্য, হোমিওপ্যাথগণ মাংকি ভাইরাস জ্বরের পূর্ণাঙ্গ লক্ষণাবলী সংগ্রহ করার ও গবেষণা করার সুযোগ পেয়েছিলেন কিনা, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। ভুপাল ট্র্যাজেডি প্রসঙ্গে, প্রেস রিপোর্ট থেকে কেবল অস্পষ্ট ধারণাই পাওয়া গেছে। এগুলো বাইরে থেকে গবেষণা করতে পারার মতো কোন বিষয় নয় – এমনকি হ্যানিমান যদি দিল্লী অথবা বোম্বে থাকতেন, তিনিও হয়তো কোন পরামর্শ দিতেন না।
এই সমস্যাগুলো সমাধানের বা এ নিয়ে গবেষণার একমাত্র পথ হচ্ছে, কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতায় কোন কেন্দ্রীয় এজেন্সি হাতে-কলমে আক্রান্ত লোকদের স্টাডি করার জন্য স্থানটিতে ভালো হোমিওপ্যাথদের একটি টিম প্রেরণ করবেন। ধরা যাক আমি ব্যক্তিগতভাবে ভুপাল গেলাম- সন্দেহ আছে, তথ্য সংগ্রহ করার ও লক্ষণাবলী স্টাডি করার সকল সুবিধা আমার থাকবে কিনা।
সৌভাগ্যবশত ভুপালে সবসময়ই একটি কিছু সংখ্যক ভালো হোমিওপ্যাথ প্র্যাকটিস করে যাচ্ছেন। আমি নিশ্চিত, সুযোগ দেয়া হলে তারা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেন। বাইরে থেকে এবং HMAI, Indian Homoeopathic Institute, Central Council of Homoeopathy ও Central Council for Research in Homoeopathy এর মতো সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তাদের আরো বেশি পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন প্রয়োজন। এদের সুখ্যাতি আছে, অর্থ আছে, দেবার মতো বিশেষজ্ঞ আছে- বিশেষ করে যারা গবেষণার দিকটিতে আছেন। আজ অব্দি, ইন্ডিয়ার সমস্ত (হোমিওপ্যাথিক) সংগঠনের কাজ কেবলমাত্র খাতা-পত্রের মাঝে নথিবন্ধ। এখন মাঠপর্যায়ে যাবার ও কিছু কাজের কাজ করার সুযোগ এসেছে।
ইতোমধ্যে, আমি সমস্ত ভুপাল হোমিওপ্যাথদেরকে একত্র হতে ও একটি কর্মপরিকল্পনা গঠন করতে অনুরোধ করেছি। আমাদের রিসার্চ কাউন্সিলকে অবশ্যই বিষাক্ত দ্রব্যটির (ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা যেটি রোগের কারণ) সামান্য একটি পরিমাণ সংগ্রহ করতে হবে এবং এক্ষুণি এর শক্তিকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
কর্ণাটকে চমৎকার হোমিওপ্যাথগণ ও সেই সাথে একদল তরুণ কুশলী রয়েছেন। আমি আশা করি, তারা মাংকি ভাইরাস জ্বর ও তার প্রভাবের ক্ষেত্রে আমাদের পদ্ধতিতে যথার্থ চিকিৎসা সমাধান খুঁজে পেতে ও এ ব্যাপারে গবেষণা করতে তাদের হাত বাড়িয়ে দেবেন।
Discussion about this post