অনুবাদ: ডা. শাহীন মাহমুদ:
“হোমিওপ্যাথি আরোগ্যযোগ্য (Curable) রোগগুলোকে আরোগ্য করতে পারে”– আমাদের মহাগুরু হ্যানিমানসহ হোমিওপ্যাথির সকল পথিকৃৎগণ এই বিবৃতিটি প্রদান করে গেছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, কেইসের আরোগ্যযোগ্যতার কোন সুনির্দিষ্ট সীমানির্দেশকারী রেখা সেখানে পাওয়া যায় না। এটি রোগী থেকে রোগীতে এবং (দেহযন্ত্রাংশের) কাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাসহ রোগের বিভিন্ন পর্যায়ের (Stages) ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হয়। যে রোগটি আজকে বেশ আরোগ্যযোগ্য বলে মনে হচ্ছে, সময়ের সাথে সাথে তা আরোগ্যযোগ্যতাহীন হতে পারে। অন্যদিকে, আজকে যে রোগটিকে আরোগ্যযোগ্যতাহীন বলে বিবেচিত হচ্ছে, কয়েক মাসের যথাযথ চিকিৎসার পর তা আরোগ্যযোগ্যতার পর্যায়ে ঘুরে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ- ব্রঙ্কিয়াল এ্যাজমা নিঃসন্দেহে হোমিওপ্যাথিতে আরোগ্যযোগ্য, কিন্তু কয়েকবছরের অপচিকিৎসার পর একটি পর্যায় আসতে পারে যখন রোগীটি আরোগ্যযোগ্যতাহীন হয়ে পড়েন, যেমন- ব্রঙ্কিয়াল এ্যাজমা আরো জটিল হয়ে এম্ফিসেমার পর্যায়ে চলে যাওয়া। এ পর্যায়ে রোগীকে আরোগ্য করা যায় না- যদিও প্রয়োজনীয় মুহূর্তগুলোতে হয়তো উপশম প্রদান করা যাবে। একইভাবে, রেটিনাল ডিটাচমেন্টের একটি কেইসকে মেডিক্যাল চিকিৎসার এখতিয়ারভুক্ত বলে বিবেচনা করা যায় না, কিন্তু সতর্ক ও বিচক্ষণ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার সাথে সাথে সুনির্দিষ্ট বিরতিতে রোগীকে পরীক্ষার মাধ্যমে- একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ হয়তো অপ্রত্যাশিত উন্নতি অবলোকন করতে পারেন- এমনকি অবশেষে বিরল কিছু ক্ষেত্রে হয়তো আরোগ্যও করতে পারবেন। এটা সমস্ত ক্রনিক রোগের বেলায়ই সত্য। একজন রোগীর আপাত আরোগ্যযোগ্যতা এবং আরোগ্যযোগ্যতাহীনতা মূল্যায়ন করার জন্য প্যাথলজির প্রগাঢ় জ্ঞান নিশ্চিতরূপে প্রয়োজনীয়। কাজেই এটা হচ্ছে প্রথম সীমাবদ্ধতা – হোমিওপ্যাথি আরোগ্যযোগ্যতাহীন রোগগুলোকে আরোগ্য করতে পারে না।
শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ গুণগতভাবে কাজ করে। বৃহৎমাত্রায় এবং অশক্তিকৃত অবস্থায় প্রয়োগ না করা হলে এর গুণাত্মক (পার্শ্ব)প্রতিক্রিয়া উপেক্ষণীয়রূপে অকিঞ্চিৎকর। অতঃপর হোমিওপ্যাথি অনুশীলন করার জন্য একটি গুনগত অস্তিত্ব (ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য) অপরিহার্যরূপে প্রয়োজন। নামকরণকৃত শ্রেণির ভিত্তিতে নির্ণয়কৃত রোগ অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র প্রদানের ক্ষেত্রে এ কারণেই সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। কিন্তু বর্তমানে এটাই (থেরাপিউটিক এপ্রোচ) সহজ বলে স্বীকৃত ও ব্যাপকভাবে গ্রহণীয় চিকিৎসা-কৌশলে পরিণত হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি রোগের নামানুসারে নেফ্রোটিক সিন্ড্রোমের কোন রোগীকে Ars. alb., Apis mel., অথবা Natrum. mur. প্রেসক্রাইব করি- ঔষধটি রোগীকে সাময়িক উপশম প্রদান করতে পারে, কিন্তু সার্বিকভাবে রোগীর উন্নতি সম্ভব হবে না- যদি না দৈবক্রমে তা রোগীর সমগ্রতাকে আবৃত করতে পারে। এখানে হোমিওপ্যাথির নয়- সীমাবদ্ধতাটি আমাদের, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকবৃন্দের। হোমিওপ্যাথি কেবলমাত্র রোগের নামাঙ্কিত পরিচয়টিকে আরোগ্য করতে পারে না- এটাই তাহলে দ্বিতীয় সীমাবদ্ধতা।
উপরে উল্লিখিত কারণের দরুণ, অ-শক্তিময় (Non-dynamic – যা জীবনীশক্তির মৌলিক গতিময়তার সাথে সম্বন্ধযুক্ত নয়) অবস্থা, যেমন – দুর্ঘটনা, বিষাক্ততা, পানিতে ডোবা, বিশাল এলাকাজুড়ে পোড়া ইত্যাদি ব্যাপারগুলোতে প্রাথমিকভাবে হোমিওপ্যাথির কোন সুযোগ নেই। এই অবস্থাগুলো প্রকৃত রোগ নয়- এগুলো বরঞ্চ নিছক দুর্ঘটনা এবং জীবনীশক্তির কর্মকাণ্ডের আকস্মিক রূদ্ধতা অথবা সাময়িক বিরাম। তাদের ক্ষেত্রে অশক্তিকৃত (Crude) মূল ঔষধ ফিজিওলজিক্যাল মাত্রায় প্রয়োগ করে, উপযুক্ত এন্টিডোট এবং অন্যান্য সাধারণ পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে জীবনীশক্তির কর্মকাণ্ডে ফিজিওলজিক্যাল উদ্দীপনা প্রদানের প্রয়োজন পড়ে। এই কেইসগুলোর দ্বিতীয়াবস্থাটি হোমিওপ্যাথির প্রয়োগযোগ্যতার অধীনে আসে- যখন জীবনীশক্তির বিশৃঙ্খলাটি গৌন লক্ষণসমূহ, যেমন- জ্বর, পঁচন, ব্যথা, রক্তপাত, কর্মক্ষমতার বিকলত্ব এবং এরকম ব্যাপারগুলোর মাধ্যমে প্রকাশ ঘটতে থাকে। এ ধরণের কেইসগুলোতে, শক্তিময় (Dynamic) ঔষধগুলোর ক্রিয়াশীল হবার মতো পর্যাপ্ত সময়- এমনকি কয়েক মিনিটও হয়তো হাতে থাকে না। একমাত্র এখানটাতেই হ্যানিমান জীবনীশক্তির ক্রিয়াকাণ্ডে এন্টিপ্যাথিক উদ্দীপনা দান করার উপদেশ প্রদান করেন। কিন্তু এই অজুহাতে, আমরা সকল ইমার্জেন্সি কেইসে এন্টিপ্যাথি অথবা এলোপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করতে পারি না এবং তা করা সমীচীনও নয়। তা করলে, আমরা হোমিওপ্যাথি এবং আমাদের নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাসহীনতাকেই প্রকাশ করবো। তাহলে এটাই হচ্ছে তৃতীয় সীমাবদ্ধতা- হোমিওপ্যাথির প্রয়োগযোগ্যতা অ-শক্তিময় অবস্থাগুলোতে প্রাথমিকভাবে নেই।
যে কেইসগুলোতে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রতাজনিত বৈশিষ্ট্যগুলোর ঘাটতি থাকে- সেখানে হোমিওপ্যাথি অসহায়। এরকমও কেইস থাকতে পারে যেখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রতাজনিত বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া যায় না, যেমন- Advanced cancer, Nephrotic syndrome, Cirrhosis of the liver, Rheumatoid arthritis ইত্যাদি। এ ধরণের কেইসগুলোতে সাময়িক উপশম ব্যতীত তেমন কিছু একটা করতে পারা যায় না। কিন্তু এমন কেইসও থাকতে পারে যেখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রতাজনিত বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান কিন্তু আমাদের ব্যবস্থাপত্র প্রদানে তাড়াহুড়োর জন্য অথবা পর্যবেক্ষণে যথোপযুক্ত মনোযোগের অভাবের দরুণ, আমরা তা লক্ষ্য করতে ব্যর্থ হই। সেই কেইসগুলোতে সীমাবদ্ধতাটি হোমিওপ্যাথের সাথে সংশ্লিষ্ট- হোমিওপ্যাথির নয়। একই ব্যাপার ঘটে যদি আমরা স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্টগুলো নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে- রোগের সাধারণ লক্ষণগুলো নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে যাই। এখানেও ফলাফল ব্যর্থতা অথবা খুব হলে আংশিক উপশম। তাহলে এটা হচ্ছে চতুর্থ সীমাবদ্ধতা- ব্যক্তিস্বাতন্ত্রতাজনিত বৈশিষ্টগুলোর পুরোদস্তুর অভাব থাকলে হোমিওপ্যাথি আরোগ্য করতে ব্যর্থ হয়।
শরীরবৃত্তীয় (Physiological) উপাদান, যেমন- ভিটামিন, খনিজ এবং জীবনের জন্য অপরিহার্য উপাদানগুলোর চরমমাত্রায় ঘাটতি থাকলে, সেক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথির সুযোগ সীমাবদ্ধ। এখানেও কোন প্রকৃত রোগ নেই – পথ্যের ঘাটতি থেকে উদ্ভূত ছদ্ম-রোগজ অবস্থা বিরাজ করে। এই কেইসগুলোতে প্রয়োজন সুষম খাদ্য অথবা সাপলমেন্ট থেরাপি, যেমন- জেরোফথালমিয়ার জন্য ভিটামিন-এ, আয়রন-ডেফিসিয়েন্সি এনেমিয়াতে আয়রন, রিকেটসে ভিটামিন-ডি, স্কার্ভিতে ভিটামিন-সি ইত্যাদি। কিন্তু ঘাটতিটি যদি কোন প্যাথিলজিক্যাল অবস্থা, যেমন- Mal-assimilation, Mal-absorption, Errors of metabolism ইত্যাদির দরুণ হয়, তাহলে মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন এবং সেখানে সাপলমেন্ট থেরাপি কোনভাবেই কেইসগুলোকে আরোগ্য করতে পারবে না- তা সেটা যত বেশি পরিমাণেই দেয়া হোক। হোমিওপ্যাথি এই ধরণের কেইসগুলোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হোমিওপ্যাথি বিশ্বাস করে, এ প্রকার অবস্থাগুলোর জন্য মায়াজমেটিক প্রবণতা দায়ী এবং এই প্রবণতাগুলো সংশোধনের জন্য যথোপযুক্ত ধাতু-প্রকৃতিগত চিকিৎসা আবশ্যক। আমরা যদি প্রবণতাগুলোর ব্যাপারে উদ্যোগী হই, ঘাটতিগুলো আপনা-আপনি দূর হয়ে যাবে। তাহলে এটা হচ্ছে পঞ্চম সীমাবদ্ধতা- শরীরবৃত্তীয় ঘাটতিগুলোর ব্যাপারে হোমিওপ্যাথির কোন সামর্থ্য নেই।
দেহ-যন্ত্রাংশের অসংশোধনযোগ্য পরিবর্তনে হোমিওপ্যাথির সামর্থ্য সীমাবদ্ধ, যেমন- Complete optic atrophy, Bilateral advanced renal failure, Advanced emphysema ইত্যাদি। এই কেইসগুলোতে, লক্ষণগত উপশমের বেশি আর কিছুই অর্জন করার উপায় সেই। এই কেইসগুলো বোধহয় সর্বপ্রকার মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টেরই অসাধ্য। কাজেই এটা ষষ্ঠ সীমাবদ্ধতা- হোমিওপ্যাথি দেহ-যন্ত্রাংশের অসংশোধনযোগ্য পরিবর্তনকে আরোগ্য করতে পারে না।
দেহযন্ত্রাংশের জন্মগত ত্রুটি, যেমন- ASD, VSD, Talipes, Cleft palate, Hare lip, organic valvular diseases of the heart ইত্যাদি অবস্থাগুলোতেও হোমিওপ্যাথির ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। এ ধরণের কিছু কেইসে, যথেষ্ঠ পরিমাণ উপশম হয়তো দেয়া যায় কিন্তু আরোগ্যপ্রদান বোধহয় সম্ভব নয়। এটা হচ্ছে সপ্তম সীমাবদ্ধতা- হোমিওপ্যাথি জন্মগত বিকলাঙ্গতা ও দেহযন্ত্রাংশের জন্মগত ত্রুটিগুলোকে আরোগ্য করতে পারে না।
যেখানে উত্তেজক ও পরিপোষক কারণ লাগাতার উপস্থিত থাকে, সেখানে হোমিওপ্যাথির সুযোগ সীমিত। উদাহরণস্বরূপ- অতিরিক্তমাত্রায় মদ্যপানজনিত কারণে বার বার দেখা দেয়া Acute pancreatitis – যেখানে রোগী তার মদ্যপানের অভ্যাসটিকে পরিত্যাগ না করলে আরোগ্য কখনোই সম্ভব নয়। লাগাতার মানসিক দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, চাপও আরোগ্যের প্রতিবন্ধক হিসাবে কাজ করতে পারে। যতক্ষণ উত্তেজক অথবা পরিপোষক কারণগুলো বহাল থাকে- ঔষধ সঠিক নির্বাচন করা সত্ত্বেও, এ প্রকারের রোগীগণকে কখনো আরোগ্য করা যায় না। এটা অষ্টম সীমাবদ্ধতা- উত্তেজক ও পরিপোষক কারণ দূর না করা হলে, হোমিওপ্যাথি আরোগ্য করতে পারে না।
কৃত্রিম চিররোগ, বিশেষ করে এন্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড, কেমোথেরাপি এবং দীর্ঘদিন ধরে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের এলোপাথারি ব্যবহার থেকে উদ্ভূত ঔষধজ রোগগুলির ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথির সুযোগ সীমিত। অর্গানন অব মেডিসিনে হ্যানিমান স্বয়ং বলেন যে, কৃত্রিম চিররোগগুলি সারানো সবচেয়ে কঠিন। বর্তমান যুগে সমস্যাগুলো আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের নিত্যদিনের প্র্যাকটিসে আমরা এই সংকটের সম্মুখীন হই। বর্তমানে একটি সাধারণ প্রাকৃতিক রোগ পাওয়া একটি অতি-বিরল ঘটনা; প্রায় ক্ষেত্রেই কেইসগুলো ঔষধসৃষ্ট রোগজ উপরস্থিত অবস্থাগুলোর আড়ালে ঢাকা পড়ে থাকে। সুতরাং এটাই নবম সীমাবদ্ধতা- জটিল ঔষধসৃষ্ট রোগগুলিতে হোমিওপ্যাথির সুযোগ সীমিত।
সেই কেইসগুলোতেও হোমিওপ্যাথির সামর্থ্য সীমিত যেখানে রোগীর কোন মৌলিক দেহ-যন্ত্রাংশ না থাকে, যেমন- একজন রোগীর প্লীহা নেই অথবা কেবলমাত্র একটি কিডনী বা একটি ফুসফুস ইত্যাদি। এ ধরনের কেইসগুলোতে রোগী হয়তো প্রয়োজনীয় সময়ে তার সমস্ত অসুবিধাগুলোতে বেশ ভালোরকম উপশম পেতে পারে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে এখানে আরোগ্য সম্ভব নয়। এটা আমরা আমাদের ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এবং প্রমাণ পেয়েছি। মোদিনাপুর জেলার (পশ্চিমবঙ্গ) একজন ভদ্রমহিলা প্রায় ১৫ বৎসর আমার চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি তার নাকের পলিপের চিকিৎসার জন্য আমার কাছে এসেছিলেন- যে সম্বন্ধে তার এখন আর কোন অভিযোগ নেই, কিন্তু সময়ে সময়ে তিনি ঠাণ্ডা-সর্দি, বদহজম, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, মাথা ঘোরানো ইত্যাদি সমস্যায় ভোগেন। ছোটবেলায় তার প্লীহা কেটে ফেলার ইতিহাস আছে- যার কারণটা তিনি জানেন না। কলকাতার সল্টলেকের একজন ভদ্রমহিলাকে সারাটা বছরজুড়ে এই প্রকারের দুর্ভোগগুলো পোহাতে হতো, যার একটি কিডনী হাইড্রোনেফ্রোসিসের দরুণ কেটে ফেলতে হয়েছিলো। এটা দশম সীমাবদ্ধতা- মৌলিক দেহ-যন্ত্রাংশগুলোর অভাবযুক্ত রোগীতে হোমিওপ্যাথির ক্ষমতা সীমিত।
কিছু রোগী আছেন, তারা যে ঔষধই সেবন করবেন- ঔষধপরীক্ষণ (Prove) করতে থাকবেন। এটা রোগীর গঠনপ্রকৃতির (Idiosyncrasy) দরুণ ঘটে। এই কেইসগুলো আরোগ্য করা ভীষণ মুশকিল। তাদের চিকিৎসায় ৩০ শক্তির উর্দ্ধে ঔষধ ব্যবহার করা যাবে না এবং সেটাও একক মাত্রায় ঘ্রাণে প্রয়োগ করতে হবে। এরকম একটি একক মাত্রার ক্রিয়া ২/৩ মাস পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে- আর তখন খুব সতর্কতার সাথে পুনঃপ্রয়োগ করা যেতে পারে। এমনকি তারপরও এই কেইসগুলো আরোগ্য করা নিঃসন্দেহে অতি কঠিন। তারা শক্তিকৃত ঔষধে অত্যানুভূতিশীল। এরকম হলে, এ ধরণের কেইসগুলোতে ঔষধগুলি মাদারটিংচার অথবা নিম্নতম শক্তিগুলোতে (1x-3x etc.) প্রদান করা হলে ভালো ফলাফল আনয়ন করা যেতে পারে। এটাই হচ্ছে একাদশ সীমাবদ্ধতা – অতিসংবেদশীল গঠন-বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথির কার্যক্ষমতা সীমাবদ্ধ।
সার্জিক্যাল অবস্থাগুলো, যেমন- Ruptured appendix, Peptic perforation, Complete procedentia, Cephalo-pelvic disproportion ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে হোমিওপ্যাথির একদমই কোন সুযোগ নেই। এ ধরণের কেইসগুলোতে সার্জারির পর হোমিওপ্যাথি প্রয়োগ করাটা যদি সবচেয়ে ভালো হবে বলে মনে করা হয়- তখন তা ব্যবহার করা যেতে পারে (Method of Choice) । তাহলে এটা হচ্ছে দ্বাদশ সীমাবদ্ধতা- হোমিওপ্যাথি নিখাদ সার্জিক্যাল অবস্থাগুলোকে আরোগ্য করতে পারে না।
মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টের অপরিহার্য অংশস্বরূপ- সহায়তাকারী এবং স্বাস্থ্যবিধিগত উপায়, যেমন- যথাযথ খাদ্য, হাঁটা, জগিং, ফিজিওথেরাপি, অক্সিজেন থেরাপি, ওরাল-রিহাড্রেশন, আইভি ফ্লুইড ইত্যাদি উপায়গুলো যথোপযুক্তরূপে অবলম্বন না করা হলে, কেবলমাত্র হোমিওপ্যাথি একা একাই আরোগ্য সম্পাদন করতে পারে না। যেখানে প্রয়োজন- অবশ্যই এই উপায়গুলোর দারস্থ সেখানে হতে হবে। অন্যত্থায় একটি আরোগ্যযোগ্য কেইসেও সুনির্বাচিত ঔষধ পর্যন্ত বিফল হতে পারে। তাহলে এটাই হচ্ছে ত্রয়োদশ সীমাবদ্ধতা- অপরিহার্য সহায়তাকারী উপায়গুলো যথাসময়ে অবলম্বন করা ব্যতীত হোমিওপ্যাথি একা রোগগুলিকে আরোগ্য করতে যথেষ্ঠ নয়।
Discussion about this post