অনুবাদ: ডা. শাহীন মাহমুদ
এটি ডা. জে. এন. কাঞ্জিলালের “How a neophyte in homeopathy can advance in the art of prescribing in the Hahnemannian line to become a succussful practitioner” রচনাটির অনুবাদ – যে বিবৃতিটি তিনি ১৯৭৪ সালের জানুয়ারির ১২-১৩ তারিখে হাবলিতে অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথির দ্বিতীয় বিজ্ঞান-সিমিনারে প্রদান করেছিলেন। আমি মনে করি, হোমিওপ্যাথির শিক্ষার্থীদের জন্য এটি অপরিহার্য তো বটেই, অগ্রসরমান হোমিওপ্যাথগণেরও নিজের শিক্ষা ও জ্ঞানকে মূল্যায়ন করার জন্য লেখাটি অবশ্যপাঠ্য।
বহু লোক হোমিওপ্যাথির চমৎকার ফলাফলকে প্রত্যক্ষ করে কিংবা উপকার পেয়ে এর প্রতি আগ্রহী হয়। তাদের অনেকে এতটা উৎসাহী হয়ে উঠে যে প্র্যাকটিস শুরু করার লক্ষ্যে হোমিওপ্যাথির কিছু বই- বিশেষ করে, যে বইগুলো রোগের ভিত্তিতে ঔষধপ্রয়োগ সংক্রান্ত কিংবা ঘরোয়া চিকিৎসা সংক্রান্ত সেগুলো কিনে নেয়, এবং নিজেদেরকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক বলে দাবী করতে থাকেন। এদের কেউ কেউ এমনকি তাদের সংশ্লিষ্ট স্টেট/বোর্ড/হোমিওপ্যাথিক কাউন্সিলের অধীনে রেজিস্ট্রেশন যোগাড়-যন্ত করতেও সমর্থ হয়। তাদের অনুশীলনে তারা কিছু কেইসে সফল হন এবং তার চেয়ে বহু বেশি কেইসে হন ব্যর্থ। তারা তাদের সফলতাগুলো নিয়ে উল্লাসিত হন এবং তাদের ব্যর্থতাগুলোকে অদৃষ্টের পরিহাস বিবেচনা করে ভ্রুক্ষেপহীন থাকেন।
আপাতদৃষ্টে অবস্থা একদম বিপরীত মনে হলেও, যারা বেশ গুরুত্বের সাথেও হোমিওপ্যাথির প্রয়োগকলা ও বিজ্ঞানকে শিখতে চান এবং বর্তমানে ইন্ডিয়াতে যেরকমটি আছে- সে ধরণের কোন টিচিং ইন্সটিটিউশনে স্বেচ্ছায় ভর্তি হন- বহু সময় ও শ্রম ব্যয় করে, এমনকি প্রায়শই মেধার পরিচয় দিয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাশ করেও কিন্তু তাদের সেই একই ভাগ্য বরণ করে নিতে হয়। কিছু কেইসে সফলতা ও বহু কেইসে ব্যর্থতার কারণগুলো সম্বন্ধে তারাও একই অন্ধকারে হাতড়াতে থাকে। কাজেই একমাত্র আরোগ্যকারী ও যৌক্তিক চিকিৎসাপদ্ধতি হোমিওপ্যাথিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে, তাদের ডিপ্লোমা ও রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটগুলোকে ব্যবহার করে- পছন্দমতো অন্য কোন “প্যাথি”-র শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া তাদের আর কোন উপায় থাকে না; (মনে হয়) যেন হোমিওপ্যাথি তাদের রোগীদের জন্য ভীষণ হানিকর।
বলা বাহুল্য, এটি একটি ভীষণ তিক্ত সত্য যে, সমস্ত কেইসেই সফলতা পাওয়া কখনো সম্ভব নয়, তা আপনি যতই জানলেওয়ালা ও সবচেয়ে কল্যাণদায়ী প্রয়োগকলা ও বিজ্ঞান- হোমিওপ্যাথিতে যতই পারদর্শী হন না কেন। আভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক, বিভিন্ন প্রকার নিয়ন্ত্রণ-বহির্ভূত কারণে- এটি বোধহয় যে কোন মানবিক প্রয়াসের ক্ষেত্রেই অনতিক্রমণীয়।
কিন্তু যে কোন চিন্তাশীল মানসিকতার ও সচেতন হোমিওপ্যাথি-শিক্ষার্থীর জীবনে অবশ্যই নীচের সুনির্দিষ্ট দু’টো সংকল্প থাকবে-
- সে অবশ্যই ক্রমান্বয়ে অধিক থেকে অধিকতর সফলতা অর্জন করবে এবং ব্যর্থতা ক্রমান্বয়ে কম থেকে আরো কম হবে।
- সে অবশ্যই ক্রমাগত তার সফলতার ও ব্যর্থতার কারণগুলোর সঠিক মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে আরো বেশি প্রজ্ঞা অর্জন করতে থাকবে।
বিশেষ করে শেষের গুণাবলীটি অর্জন, হোমিওপ্যাথির যে কোন সৎ ও চিন্তাশীল শিক্ষার্থীর সংকল্প হতে বাধ্য। সোজাকথায়, “ব্যর্থতাই সফলতার দুয়ার” এই প্রাচীন প্রবচনটির এটাই হচ্ছে মানে। আপনি যদি ব্যর্থতার কারণটিকে স্বচ্ছরূপে নির্ণয় করতে ব্যর্থ হন, আপনি কোনদিনই সেইসব ব্যর্থতাগুলো থেকে এমন একটি কণাও অর্জন করতে পারবেন না- যার বদৌলতে তাকে আপনি “সফলতার দুয়ার” বলে আখ্যায়িত করবেন। আপনি যদি আপনার ব্যর্থতাগুলোর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করেন এবং আপনার ব্যর্থতাগুলো থেকে কোন শিক্ষা অর্জন করাটিকে উপেক্ষা করেন, কস্মিনকালেও আপনি একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক হতে পারবেন না- তা আপনার প্র্যাকটিস যত দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকুক না কেন।
এখন, উপরোল্লিখিত এই দুইটি লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে, নিচের পদক্ষেপগুলি ব্যাপক সহযোগিতা করতে পারে:
শিক্ষালয়ে প্রশিক্ষিত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে
হোমিওপ্যাথিক শিক্ষার্থী-দলের জন্য টিচিং ইন্সটিটিউশনগুলোর দিকনির্দেশকারী ব্যাপক গঠনমূলক ভূমিকা রয়েছে। কাজেই তাদেরকে অবশ্যই নিম্নোক্ত ব্যাপারগুলিতে অত্যন্ত সচেতনভাবে যত্নশীল হতে হবে-
১. তারা কেবলমাত্র সেই শিক্ষকদেরই নিয়োগ দেবেন- যাদের অর্গাননে দেয়া হোমিওপ্যাথির মূলনীতিগুলোকে বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিশ্বস্ততা, আত্মপ্রত্যয় ও পারদর্শীতা রয়েছে।
২. চরম সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখবেন- যাতে শিক্ষকদের মধ্যে কেউ প্রি-ক্লিনিক্যাল বা ক্লিনিক্যাল সাবজেক্টগুলোতে কোনভাবেই কচি-কাঁচা শিক্ষার্থীদের মনকে হোমিওপ্যাতির মূলনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট- বিশেষ করে স্বাস্থ্য, রোগ ও আরোগ্যের অখণ্ড, স্বাতন্ত্রতাবাচক, জীবনীশক্তিমুখী, শক্তিবাচকতামুখী দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাপারগুলোতে দ্বিধাগ্রস্ত করতে না পারে।
৩. অর্গানন ও মেটেরিয়া মেডিকার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষাপ্রদানে আরো বহুগুণ জোর প্রদান করুন।
অর্গাননের ব্যাপারে, শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই প্রতিটি এফোরিজমের সত্যিকারের (প্রায়োগিক ও যৌক্তিক উভয়প্রকার) মর্মার্থকে অন্যসব এফোরিজমের প্রাসঙ্গিকতা অনুযায়ী অনুধাবন করতে হবে, বিশেষ করে তাদের বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে।
মেটেরিয়া মেডিকার প্রসঙ্গে, যখনই কোন ঔষধ শেখানো হবে- তোতাপাখির বুলির মতো কিছু লক্ষণ ঠুসে না দিয়ে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই ঔষধটির ব্যক্তিত্বটিকে উপলব্ধি করাতে হবে।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধপ্রয়োগবিদ্যার বাস্তব প্রশিক্ষণের ব্যাপারে বা ইনডোর বা আউটডোর ডিপার্টমেন্টে অর্গানন ও মেটেরিয়া মেডিকার বাস্তব প্রয়োগের ব্যাপারে অনেক বেশি গুরুত্বারোপ করতে হবে।
স্বশিক্ষিত শিক্ষার্থীদের জন্য
তারা যদি পড়াশুনার ব্যাপারে নীচের রূপরেখাগত পরিকল্পনা অনুসরণ করেন, তাহলে ব্যাপক উপকৃত হতে পারেন-
তারা অন্য যে পেশায়ই থাকুন, দিনে অন্তত পাঁচটি ঘণ্টা সময় হোমিওপ্যাথির পড়াশুনার জন্য অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তাদের আলাদা করে রাখতেই হবে – দুই ঘণ্টা মেটেরিয়া মেডিকার জন্য, দুই ঘণ্টা অর্গানন এবং এক ঘণ্টা ভালো কোন হোমিওপ্যাথিক জার্নাল পড়ার জন্য।
মেটেরিয়া মেডিকার ব্যাপারে- তিনি হয়তো পড়াশুনার নিম্নোক্ত পরিকল্পনাটি লাভবানরূপে অনুসরণ করতে পারেন-
প্রথমে ই. বি. ন্যাসের হোমিওপ্যাথিক থেরাপিউটিকের মতো পড়তে সহজ বইগুলো নিয়ে দুই থেকে তিনবার একই পড়া পুনর্পাঠ করা উচিৎ। যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের ক্ষেত্রে, পড়াশুনার যে পরিকল্পনা আমি সবসময়ই অনুসরণ করি- আজকে নতুন কোন পৃষ্ঠায় যাবার আগে, গতকাল যা পড়েছি তা অবশ্যই আমি আজ পুনর্পাঠ করি। এই কর্মপরিকল্পনায় দেখা গেছে- যা কিছু আগে পড়েছি, সে ব্যাপারে স্মৃতিতে বহুগভীর একটি ছাপ পড়ে যায়। এই ভাবে একবার পুরো বইটা পড়া হয়ে গেলে, একইভাবে আবার পুনর্পাঠ করা হয়। বইটির এই দুইবারের পড়ায় বেশ বড় একটি সংখ্যার পলিক্রেস্ট ঔষধগুলো- যে ঔষধগুলো বেশিরভাগ সময়ই ব্যবহৃত হয়, তার সারমর্ম সম্বন্ধে মনের উপর নিশ্চিতভাবেই কিছু ছাপ পড়ে।
তারপর এলেনের কি’নোটস এন্ড ক্যারাকটারিসটিকটি নিন। পড়ুন এবং আগে বলা উপায়ে পুনর্পাঠ করুন। এই বই থেকে কোন ঔষধ পাঠ করার পর, সেই ঔষধটিই ন্যাসের বই থেকে আবার পড়লে, সে ঔষধটির লক্ষণাবলীর ব্যাপারে একটি সুগভীর ধারণা সৃষ্টি হবে। এ প্রসঙ্গে হ্যানিমানিয়ান গ্লিনিংসের (XXXVIII/9/385.) ’৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সংখ্যায় হোমিওপ্যাথিক মেটেরিয়া মেডিকার উপর লেখা আমার সম্পাদকীয়তে প্রকাশিত “Evaluation of the Various Text” প্রবন্ধটির উল্লেখ করার আকাঙ্ক্ষাকে নিবৃত্ত করতে পারলাম না- যেখানে আমি এলেনের কি’নোটস কিভাবে পড়তে হবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত পরামর্শ প্রদান করেছি।
এই দুটি মৌলিক গ্রন্থ কিছুমাত্রায় আয়ত্ত্ব করার পর নিচের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে আপনারা আরো উচ্চতর গ্রন্থের দিকে মনোনিবেশ করতে পারেন-
- Kents lecture on Materia Medica
- Farrington’s Clinical Materia Medica
- Cowperthwaite’s Materia Medica
- Tyler’s Drug Pictures
- Hughes Pharmocodynamics
বলা বাহুল্য, ছোট পরিসরের এবং একই ভাবে বড় পরিসরের বইগুলোর সাথে অন্য আরো বই যোগ করা যেতে পারে বা কোন বইকে বদলে পড়া যেতে পারে: যেমন, ছোট পরিসরের বইগুলোর সাথে সি. এম. বোগারের সিনোপটিক কি, বেরিকের পকেট ম্যানুয়াল অব মেটেরিয়া মেডিকা যোগ করা যেতে পারে, বড় পরিসরের গ্রন্থগুলোর সাথে ক্লার্কের ডিকশনারি অব প্র্যাকটিক্যাল মেটেরিয়া মেডিকা ইত্যাদি যোগ করা যেতে পারে।
পরিশেষে, উপর্যুক্ত তালিকার কিছু বইয়ের উপর কিছুমাত্রায় আয়ত্ত্ব অর্জিত হলে, সর্বক্ষণ ব্যবহার ও রেফারেন্সের জন্য হ্যান্ডবুক হিসাবে ছোট পরিসরের বইগুলো থেকে কোন একটাকে বেছে নেয়া উচিৎ। আমার মতে, এই কাজের জন্য বেরিকের ম্যানুয়ালটি সবচেয়ে ভালো। এই লাগাতার ব্যবহারকৃত বইগুলোর মার্জিনে বা সাদা পৃষ্ঠাগুলোতে নিয়মিত- অন্য বইপত্র, ম্যাগাজিন ইত্যাদি থেকে সহজে খুঁজে পাবার জন্য, পেইজ নাম্বার ইত্যাদিসহ নোট রাখা উচিৎ।
মেটেরিয়া মেডিকার কোন গ্রন্থ পাঠ করতে নিচের পরিকল্পনাটির সবচেয়ে লাভজনকভাবে অনুসরণ করা যেতে পারে-
১. প্রথমে ভূমিকাটা সতর্কতার সাথে পুরোটা পাঠ করতে হবে- যাতে গ্রন্থটির উদ্দেশ্য ও বিন্যাসের সাথে পরিচিত হওয়া যায়।
২. প্রতিটি ঔষধের এখানে ওখানে চোখ না বুলিয়ে শুরু (নাম ইত্যাদি) থেকে শেষ (হ্রাস-বৃদ্ধি, সম্পর্ক, মাত্রা ইত্যাদি) পর্যন্ত পড়া উচিৎ (কেবলমাত্র কোন নির্দিষ্ট কোন তথ্য খোঁজার ক্ষেত্রটা ছাড়া)।
৩. প্রতিটি লক্ষণকে এর স্থান, অনুভূতি, হ্রাস-বৃদ্ধি ও আনুষঙ্গিক লক্ষণসহ সতর্কতার সাথে খেয়াল করে বুঝে নেয়া উচিৎ ও তার সাথে যতদূর সম্ভব এর প্যাথলজিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড (অর্থাৎ লক্ষণগুলোর মাধ্যমে রোগবাচক অবস্থাটির যে প্রকৃতি, তথা- ক্রিয়াবিচ্যুতি, উত্তেজনা, রস-রক্তসঞ্চয়, প্রদাহ, ক্ষত, কোন বিশেষ টিস্যু বা অঙ্গের বিধ্বংসী অবস্থা প্রকাশ পায়- তা) বুঝে নেয়া।
৪. যেহেতু এই সমস্ত বইগুলোতে কেবলমাত্র প্রতিটি ঔষধের চারিত্রিক স্বাতন্ত্রতাবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোর উল্লেখ থাকে, কাজেই যখন কোন লক্ষণ বা ঔষধের অন্য কোন দিক পড়া হবে- সেখানে উক্ত লক্ষণ বা দিকটির কোন লক্ষণীয় স্বাতন্ত্রতামূলক গুণটি- তার (লক্ষণটির) চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসূচক মূল্য প্রদান করেছে তা বুঝতে চেষ্টা করুন। একটি লক্ষণের ক্ষেত্রে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসূচক মূল্যটি তার চারটি দিকের- স্থান (তার বিস্তৃতি ও ব্যাপ্তিসহ), অনুভূতি (যে কোন প্রকারের রোগজ পরিবর্তনসহ), হ্রাস-বৃদ্ধি ও আনুষঙ্গিক লক্ষণ (অন্য লক্ষণগুচ্ছ বা বৈশিষ্ট্যের সহজাত সহাবস্থান)- একটিতে আছে বলে খুঁজে পাওয়া যাবে। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসূচক মূল্যটি তার (ঔষধের) ক্রিয়ার অনন্যতা, কন্সটিটিউশন ইত্যাদির মাধ্যমে মূল্যায়িত হয়।
কয়েকটি উদাহরণ এই ব্যাপারটিকে সুস্পষ্ট করবে-
লক্ষণের ক্ষেত্রে:
ক) স্থান-
ডান স্কাপুলার নিচের দিকের ভেতরের বাঁকে লাগাতার ব্যথা- চেলিডোনিয়াম
একটি নির্দিষ্ট ছোট স্থানে ব্যথা, যা আঙ্গুল দিয়ে ঢেকে ফেলা যায়- ক্যালি বাইক্রম, ইগ্নেশিয়া
জিহ্বার ডগাটি তেকোণাকৃতির লালবর্ণ- রাস-টক্স
নিচের মাড়ির হাঁড়টির নেক্রোসিস – ফসফরাস (হেকলা লাভা- উভয় মাড়ির)
বিস্তৃতি ও ব্যাপ্তি-
বাম থেকে ডানে – ল্যাকেসিস
ডান থেকে বামে – লাইকোপোডিয়াম
উপর থেকে নীচে – ক্যালমিয়া
নীচ থেকে উপরে – লিডাম
খ) অনুভূতি-
জ্বালাপোড়া – আর্সেনিক, ফসফরাস, সালফার ইত্যাদি
সূঁচ ফোটানো ব্যথা – ব্রায়োনিয়া, ক্যালি কার্ব ইত্যাদি
নাকে ও ঠোটে লাগাতার খোঁটা- এরাম ট্রিফাইলাম
মাথা বালিশ থেকে পিছলে যায় – মিউরিয়াটিক এসিড
শক্ত টিউমার – ক্যালকেরিয়া ফ্লোর
হাঁড়ের নেক্রোসিস – আর্সেনিক, এসাফিটিডা, অরাম, ফ্লোরিক এসিড ইত্যাদি
গ) হ্রাস-বৃদ্ধি-
হ্রাস-বৃদ্ধির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এতটাই স্বচ্ছ যে, এখানে তা নিয়ে আর বিস্তৃত আলোচনার প্রয়োজন পড়ে না।
ঘ) অনুষঙ্গ- একটি অতি সাধারণ লক্ষণও অত্যন্ত গুরুত্ববাচক হয়ে উঠতে পারে- যদি তা একইরকম সাধারণ অথবা কোন কোন কেইসে কিছুটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অন্য কোন লক্ষণের সাথে অনুষঙ্গ হিসাবে প্রকাশ পায়। উদাহরণস্বরূপ-
ড্রপসি যখন ডায়রিয়া ও প্রচণ্ড পিপাসার (উভয়ই সাধারণ লক্ষণ) সাথে প্রকাশ পায় তখন তা এসেটিক এসিডের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিকে ইঙ্গিত করে।
ব্যথা, জ্বর অথবা গর্ভকালীন অবস্থা, ডায়রিয়া ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যসূচকভাবে একোনাইটকে নির্দেশ করে- যেখানে তার অত্যন্ত উদ্বেগ ও প্রচণ্ড মৃত্যুভয় থাকে, যেখানে রোগী মৃত্যুর দিনক্ষণ সম্বন্ধেও নিশ্চিত থাকে।
ঔষধের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলো, নিম্নোক্ত ক্রমানুসারে স্বাতন্ত্রতাজ্ঞাপক-মূল্য অর্জন করতে পারে-
ক) ক্রিয়ার ধরণ, অর্থাৎ একোনাইটের সাইক্লোনের মতো কাজ; লাইকোপোডিয়াম, থুজা, সাইলিসিয়ার মন্থর ও বিলম্বিত কাজ।
খ) কন্সটিটিউশন ও টেম্পারমেন্টের ধরণ অনুযায়ী প্রযোজ্যতা-
মোটা, ফর্সা, থলথলে- ক্যালকেরিয়া কার্ব
প্লেথোরিক – একোনাইট
শীতপ্রধান – হিপার সালফ, সোরিনাম
বিলিয়াস – নাক্স-ভম ইত্যাদি
গ) টিস্যু, অর্গান বা সিস্টেম অনুযায়ী প্রযোজ্যতা-
চর্ম – এগারিকাস, এলুমিনা, এম্ব্রাগ্রেসিয়া, এনাকার্ডিয়াম, আর্সেনিকাম এল্বাম, ক্রোটন-টিগ, ডলিকস, গ্রাফাইটিস, মার্কিউরিয়াস, রাস-টক্স, সিপিয়া, সালফার ইত্যাদি ইত্যাদি
শ্লেষ্মিক ঝিল্লী – ইথুজা, এগারিকাস, এলিয়াম সেপা, এলুমিনা, এন্টিমনি, ক্যালি বাইক্রম
সিরাস মেমব্রেন – এব্রোটেনাম, এপিস, ক্যান্থারিস, হেলেবোরাস
পেশী – আর্নিকা, বেলিস, ব্রায়োনিয়া, সিমিসিফিউগা, রুটা
ফাইব্রাস টিস্যু – এব্রোটেনাম, ব্রায়োনিয়া, ইউপাটোরিয়াম পার্ফ, রাস-টক্স
হাঁড় – অরাম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, স্ট্রনসিয়াম, সাইলিসিয়া
স্নায়ুতন্ত্র- একোনাইট, বেলেডোনা, এগারিকাস, এলুমিনা, কস্টিকাম, সিমিসিফিউগা, জেলসিমিয়াম
রক্তসঞ্চালন তন্ত্র – একোনাইট, বেলেডোনা, গ্লোনোয়িন
হৃদপিণ্ড – অরাম, ক্যাকটাস, ডিজিটালিস, সাপের বিষ, লিলিয়াম-টিগ, স্পাইজেলিয়া, স্পঞ্জিয়া
স্ত্রী-জননেন্দ্রিয় – সিমিসিফিউগা, পালসেটিলা, স্যাবাইনা, সিকেলি, সিপিয়া ইত্যাদি
এবং এরকম আরো অন্যান্য।
ঘ) ক্রিয়া-পরিসর –
তরুণ প্রদাহ – একোনাইট, বেলেডোনা ইত্যাদি
শোথযুক্ত অবস্থা – এসেটিক এসিড, এপোসাইনাম, এপিস, আর্সেনিক ইত্যাদি
বিধ্বংসী অবস্থা – আর্সেনিক, ফসফরাস ইত্যাদি
এবং এরকম আরো অন্যান্য। [ বলা বাহুল্য, এখানে যে উদাহরণগুলো প্রদান করা হয়েছে তা নিছক আলোচনাপ্রসঙ্গে চলে আসা এবং রেপার্টরি করার উদ্দেশ্যে তা ব্যবহারোপযোগী নয়]
বিভিন্ন গুণাবলী যা একটি লক্ষণকে বা চিহ্নকে স্বতন্ত্র-বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে তোলে তা আমি হ্যানিমানিয়ান গ্লিনিংসের ‘৬৯ সালের জুন মাসের (XXXVI/6/241) সংখ্যার সম্পাদকীয় প্রবন্ধতে বিস্তৃত ব্যাখ্যাসহ আলোচনা করেছি।
৫. কোন ঔষধ পাঠ করার সময়, কোন লক্ষণের বা পুরো ঔষধের সাথে সংশ্লিষ্ট বা সম্পর্কযুক্ত অন্য ঔষধগুলো এমনভাবে মনোযোগ দিয়ে পাঠ করা ও প্রয়োজন হলে, তা থেকে নোট করা বা বইয়ের মাঝে সাদাপাতা যুক্ত করে তা লিখে রাখা উচিৎ- যাতে তাদের মধ্যকার সাদৃশ্য ও বৈশাদৃশ্য সুস্পষ্টরূপে বোধগম্য হয়।
৬. মেটেরিয়া মেডিকাতে থাকা যে কোন এনাটমিক্যাল, ফিজিওলজিক্যাল, প্যাথলজিক্যাল ও অন্য কোন পরিভাষাগত শব্দ বা কন্সটিটিউশন, টেম্পারমেন্ট (যেমন- স্যাঙ্গুইন, লিম্ফ্যাটিক, বিলিয়াস, লিউকো-ফ্ল্যাগমেটিক ইত্যাদি পুরোনো পরিভাষাগুলো) একটি মেডিক্যাল ডিকশনারি দেখে খেয়াল করে বুঝে নেয়া উচিৎ।
অর্গানন:
প্রথমবার পড়ার সময় প্রতিটি এফোরিজমকে একত্রে তাদের পাদটীকা- কমা, সেমিকোলন ইত্যাদি ও বন্ধনীযুক্ত অংশসহ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পাঠ করতে হবে। যতক্ষণ এফোরিজমটির পূর্ণাঙ্গ অর্থ তার যৌক্তিকতা ও ভাবসহ সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার না হয় – কখনোই সন্তুষ্ট হবেন না। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই পাঠ-পরিক্রমায় সম্পূর্ণ বইটি- শুরু থেকে এপেনডিক্সের শেষ লাইনে থাকা ‘নাম’টি পর্যন্ত পুরোটা পড়তেই হবে।
দ্বিতীয়বার পড়ার সময়, প্রতিটি এফোরিজমকে Dudegeon এর অনুবাদ করা ৫ম সংস্করণে দেয়া এপেনডিক্সসহ সম্পূর্ণ অর্গাননের পরিপ্রেক্ষিতে পড়া উচিৎ। দ্বিতীয়বার পড়া শুরু করার আগে, উক্ত গ্রন্থেরই ৫ম সংষ্করণের ঠিক মুখবন্ধের পরেই XXI থেকে XXX পৃষ্ঠায় থাকা ‘বিষয়বস্তু’-কে অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণরূপে পাঠ করা উচিৎ। এটি বইটিতে থাকা বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনার বিন্যাস সম্বন্ধে ধারণা আনতে ব্যাপক সহযোগিতা করবে। এরপর কোন এফোরিজম পড়ার সময়, এফোরিজমে থাকা কোন একটি ব্যাপারকে তার সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্য সমস্ত এফোরিজমের সাথে গভীরভাবে সহপাঠ করা উচিৎ। উদাহরণস্বরূপ- এফোরিজম ৫, ৭, ৯৪ তে উল্লিখিত ‘আনুষঙ্গিক পরিস্থিতিসমূহ’ শব্দগুচ্ছ; ঔষধের ‘আনুষঙ্গিক লক্ষণাবলী’ রয়েছে ১৬৩, ১৬৭, ১৮০ ও ১৮১ তে; ‘রোগের আনুষঙ্গিক লক্ষণাবলী’র উল্লেখ আছে ৫, ৭ ও ৯৫ নং এফোরিজমে; এবং আরো যেগুলো আছে। এরকম সকল দলবদ্ধ এফোরিজমকে একত্রে পাঠ করা উচিৎ, যাতে প্রসঙ্গটির সম্পূর্ণ ভাবটি একদম পরিষ্কার হয়ে উঠে।
এরকমভাবে দুইবার স্বকীয় পঠনের পর, বইটি বন্ধু ও সহকর্মীদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে এরকমভাবেই বইটি দুইবার পাঠ করেছে, তাদের সাথে দলবদ্ধ চক্রে পাঠ করলে তা সর্বাপেক্ষা উপকারী হবে। পাঠচক্রের প্রতিটি সদস্যের প্রতিটি এফোরিজমের ক্ষেত্রে তার বোধ ও যুক্তি অনুসারে তার উপলব্ধিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা উচিৎ। এ উপায়ে পারস্পরিক বাদ-প্রতিবাদের মাধ্যমে সমস্ত দিক ক্রমান্বয়ে অধিক থেকে অধিকতর পরিষ্কার হবে এবং আরো গভীরভাবে বুঝতে পারা যাবে।
উক্ত পাঠচক্রেরই কোন সদস্যের হাতে থাকা কঠিন কেইসগুলি আলোচনার জন্য পেশ করা উচিৎ- যাতে রোগীসহ সকল সদস্যগণের বৃহৎ স্বার্থে- হোমিওপ্যাথির মূলনীতির প্রয়োগ বা ঔষধ নির্বাচন সংক্রান্ত কোন ত্রুটি থাকলে তা সুস্পষ্ট হয়।
অর্গাননের দ্বিতীয়বার পঠন সমাপ্ত হবার পর এবং এর শিক্ষাগুলোর ব্যাপারে কিছু স্বকীয় ধারণা সৃষ্টি হবার পর, ধারণাগুলোকে আরো পরিচ্ছন্ন ও সমৃদ্ধ করার জন্য নিম্নোক্ত বইগুলোকে পড়তে হবে-
Kent’s Philosophy of Homeopathy
Start Close’s Genius of Homeopathy
H. A. Robert’s Principles and Art of Cure
Dunham’s Science of therapeutics
G. Boerickes Principle of Homeopathy
Hughes’ Principles and Practice of Homepathy
বিভিন্ন প্রকার বিশৃঙ্খলা এড়ানোর লক্ষ্যে, এখানে বইগুলো যে ধারাবাহিক ক্রমে উল্লেখ করা হয়েছে- সেভাবেই পড়া উচিৎ। ঠিক এই পর্যায়েই, ক্রনিক ডিজিজেসের উপর (হ্যানিমান, জে. এইচ. এলেন প্রমূখ লেখকের) বইগুলো পড়া উচিৎ।
ইন্সটিটিউশনে প্রশিক্ষিত ও স্বশিক্ষিত হোমিওপ্যাথ, উভয়েরই তার নিকটস্থ একজন অভিজ্ঞ ও প্রকৃত হ্যানিমানিয়ান ধারার চিকিৎসককে খূঁজে বের করে, কমপক্ষে কয়েকমাস তার ক্লিনিক্যাল এসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ করা উচিৎ- অন্ততপক্ষে তার চিকিৎসার ধরণকে চাক্ষুষ করা উচিৎ, যাতে অনুশীলনের ব্যাপারে প্রত্যক্ষ জ্ঞানার্জন করতে পারে ও হোমিওপ্যাথির নীতিগুলির ব্যাপারে প্রত্যয় অর্জন করতে পারে।
হোমিওপ্যাথিক প্রয়োগকলার বাস্তুব অনুশীলনে নিচের জটিল বিষয়গুলি অবিরত সচেতন প্রচেষ্টার দ্বারা আয়ত্ব করে নিতে হবে-
১. কেইস-টেকিং – চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো টেনে বার করা। প্রয়োগকলার এই অংশটিতে যত বেশি আপনারা দক্ষতা অর্জন করবেন- রোগী যতই নির্বোধ, প্রবঞ্চক বা অসহযোগিতামূলক হোক না কেন, রোগীর বৈশিষ্ট্য ও চারিত্রিক লক্ষণাবলী বের করে আনতে পারার সঙ্কটটির ব্যাপারে অভিযোগটি ততই কমতে থাকবে।
২. রেপার্টরাইজেশন- এই প্রয়োগকলাটিতে দখল আনার একমাত্র পথ হচ্ছে, ব্যবহার করা নির্দিষ্ট রেপার্টরির ভূমিকায় বা নির্দেশনা-বইটিতে সুস্পষ্টভাবে তার যে মূলনীতি ও পদ্ধতি দেয়া আছে তদনুযায়ী লাগাতার অনুশীলন করা।
৩. ব্যবস্থিত ঔষধ প্রদানের পর তার উপর ধৈর্য্য ও বিচক্ষণতা এবং সর্বশেষ প্রদত্ত মাত্রার পর লক্ষণের পরিবর্তনকে সাবধানতার সাথে মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করা। হোমিওপ্যাথিক অনুশীলনে উন্নতির পথে এই প্রাচীরটিকে ডিঙ্গিয়ে যাওয়াই সবচেয়ে কঠিন বলে দৃষ্ট হয়। হোমিওপ্যাথদের একটি হতবুদ্ধিকর বৃহৎ-সংখ্যা, একদম সঠিক প্রথম ব্যবস্থাপত্রটি প্রদান করার পর- এই আগলটি ডিঙ্গোতে না পেরেই কেইসটিতে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। এই গুণটি অর্জন করার জন্য যা দরকার তা হচ্ছে- মেটেরিয়া মেডিকাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অনুধাবনের সাথে ব্যবস্থিত ঔষধ সম্বন্ধে যথেষ্ঠ পরিমাণ আত্মবিশ্বাস, এবং হোমিওপ্যাথির নীতিসমূহের সাথে যথাযোগ্য জানাশোনা।
৪. কোন বৃদ্ধি দেখা দিলে- এমনকি মধ্যখানে তরুণ রোগাবস্থা এসে উপস্থিত হলেও, প্রদত্ত সর্বশেষ মাত্রার ক্রিয়াকে ব্যাহত করার ঝোঁকটিকে শক্ত হাতে দমন করা। এটি অধিকাংশ ক্রনিক কেইসের বেলায়ই প্রযোজ্য। প্রয়োজন হলে প্লাসিবো দিয়ে রোগীকে অপেক্ষা করানোতেই এই দশাগুলোর অধিকাংশই স্বাভাবিকভাবে প্রশমিত হয়। লক্ষণসমূহের পরিধি থেকে কেন্দ্রের দিকে অভিগমন করার, কম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে গমন করার প্রবণতা দেখা গেলে এবং চিকিৎসকের বিবেচনা অনুযায়ী (এবং আবেগচালিত অভিভাবকগণের বিবেচনা অনুসারে নয়, যারা এমনকি সামান্যতম বৃদ্ধি দেখতে পেলেও প্রায়শই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন), রোগীর অবস্থা সত্যিকারে সঙ্কটময় হিসাবে দেখা দিলেই কেবলমাত্র তাতে হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন হতে পারে। এ প্রকারের কেইসগুলোতে- চিকিৎসকের ঠান্ডা মাথায়, অবস্থাটির সমালোচনামূলক ও নিরপেক্ষ মূল্যায়ন ও বিচার-বিবেচনা অপরিহার্য। এ ধরণের অবস্থাটিকে অতিক্রম করার জন্য প্রয়োজনমতো প্লাসিবো ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. চিকিৎসাকৃত কেইসের নির্দিষ্ট ব্যক্তিটির মানসিক গঠন, অভ্যাস, আকাঙ্ক্ষা, বিতৃষ্ণা এবং অতিসংবেদশীলতা অনুসারে (পরিপোষক) কারণটির (খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্যবিধি, মনস্তত্ত্ব ইত্যাদি ব্যাপারে) যথোপযুক্ত ব্যবস্থাপনা।
উপরোল্লিখিত আমার সমস্ত দৃষ্টিকোণ ও পরামর্শ দীর্ঘ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে প্রদত্ত এবং তাকে সেভাবেই মূল্যায়ন করা উচিৎ। এগুলোকে ফাঁকা বুলি ও অন্তঃসারশূণ্য উপদেশ হিসাবে গ্রহণ না করতে আমার বন্ধুবর্গকে অনুরোধ করা হচ্ছে। প্রতিটি দৃষ্টিকোণ ও পরামর্শকে তাদের নিজস্ব যুক্তি ও অভিজ্ঞতার আলোকে বিচার করে- তারপর এর যে কোনটিকে গ্রহণ অথবা বর্জন করা উচিৎ।
আমি নিজে একজন স্বশিক্ষিত হোমিওপ্যাথ। ১৯৩৬-৩৭ সালের বিভিন্ন সময়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমি হোমিওপ্যাথির প্রতি আকৃষ্ট হই এবং এরপর শুরু থেকে আজ অব্দি একদমই কোনরকম সহযোগিতা ও নির্দেশনা ছাড়া স্ব-শিক্ষার পুরো পথটিকে আমি অতিক্রম করেছি। এমনকি কোন একজন বিখ্যাত হোমিওপ্যাথিক অনুশীলনকারীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসার সৌভাগ্যও আমার কখনো হয়নি। কাজেই এই দীর্ঘ পথটিতে, বহু দুর্গম খটখটে কানাগলি, ফাঁদ, ঘূর্নিপাকগুলোতে বেগার খাটতে হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, এলোপ্যাথিতে গ্র্যাজুয়েশন করার (১৯৩৬) পর পরই, আমি যখন প্রথম হোমিওপ্যাথির ব্যাপারে আগ্রহী হলাম- প্রথম যে দু’টো বই পড়তে আমার একজন অপেশাদার হোমিওপ্যাথ বন্ধু আমাকে পরামর্শ প্রদান করেন তা হচ্ছে- এলেনের কি’নোটস এবং মেটেরিয়া মেডিকার উপর লেখা একটি বাংলা বই। এলেনের কি’নোটসটির থেকে কোন কিছু অর্জন ছাড়াই আমি তা দুইবার পুরোটা পড়ে ফেলেছি। আমি আমার চরম হতাশা থেকে রক্ষা পেলাম ন্যাসের ‘লিডারস ইন হোমিওপ্যাথিক থেরাপিউটিকস’ বইটি এই চরম সঙ্কটজনক মুহূর্তে, হঠাৎ করে কোনভাবে আমার হাতে এসে পড়ায়। পরবর্তীতে আমার পড়াশুনায়, এলেনের কি’নোটসটি অমূল্য রত্নে পূর্ণ বলে দেখতে পেলাম। মেটেরিয়া মেডিকার উপর লেখা বাংলা বইটি- যা সে সময় পড়তে গিয়ে আমার কাছে কিছুটা চিত্তগ্রাহী বলে মনে হয়েছিলো- পরবর্তীতে দেখতে পেলাম তা মনের-কথা দিয়ে ভর্তি যা হোমিওপ্যাথিক নীতিগুলোর সাথে পুরোদমেই সঙ্গতিহীন।
অর্গাননের দিকে আমার নজর পড়ে, হোমিওপ্যাথিতে আমার যাত্রা শুরুর স্রেফ বছর-দুয়েক পর। এটি আমার সৌভাগ্য যে, হেউজেসের ‘প্রিনসিপলস এন্ড প্র্যাকটিস অব হোমিওপ্যাথি’ আমার হাতে পড়ে ঠিক কেন্টের ফিলসফি ও সাথে (তাঁর) মেটেরিয়া মেডিকা পুরোটা পড়ার পর- নয়তো আমি নিশ্চিতভাবেই বিভ্রান্তিতে পড়ে যেতাম। কেন্ট, স্টুয়ার্ট ক্লোজের (পরবর্তীতে এইচ. এ. রবার্ট, জে. এইচ. এলেন প্রমূখগণের) শিক্ষাগুলোর মাধ্যমে হোমিওপ্যাথির ব্যাপারে কিছু মানসিক ভিত্তি প্রস্তুত হবার পরেই কেবলমাত্র হিউজেসের বইগুলো, গার্থ বেরিকের ‘প্রিনসিপলস অব হোমিওপ্যাথি’ এবং বার্নেটের বই আমার জ্ঞানকে ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ ও শাণিত করেছে।
আমি কখনোই নিয়মিত পাঠ-চক্রের সুবিধাটিকে ভোগ করতে পারিনি। কিন্তু আমি এর পুরো লাভটি বের করে নিয়েছি আমার বন্ধু ও সহকর্মীদের সাথে এবং ক্লাসে আমার শিক্ষাপ্রদানের সময়- মাঝে মাঝে করা ছুটকো আলোচনা ও বাদ-প্রতিবাদ থেকে। গুরু তো দূরের কথা- একজন শিক্ষকের চেয়ে বরং তার্কিকের ভূমিকাটিই স্বভাবত আমি বেশি অবলম্বন করি। আমি আমার শিক্ষার্থীদের সবসময়ই আমার সাথে মুক্তমনে তর্ক করতে অনুপ্রাণিত করি এবং যতক্ষণ না তাদের নিজস্ব যু্ক্তি, উপলব্ধি ও হসপিটালে পাওয়া (ইনডোর ও আউটডোর) বাস্তব অভিজ্ঞতার দ্বারা আমার শিক্ষার সত্যতা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ নিশ্চিতরূপে প্রত্যয় না জন্মে- ততক্ষণ আমি যা বলি তাকেই ঈশ্বরের বাণীর মতো গ্রহণ না করতে সতর্ক করি। এই উভয় প্রক্রিয়াতেই আমার বন্ধুবর্গ ও শিক্ষার্থীগণ মূলনীতিসমূহ ও মেটেরিয়া মেডিকাতে আমার গভীর থেকে গভীরতর উপলব্ধি আমার মধ্যে প্রবেশ করাতে ব্যাপকরকম সহযোগিতা করেছে।
আমার এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার যবনিকা-উন্মোচন যদি হোমিওপ্যাথির পথে আমার কোন বন্ধুকে অগ্রসর হতে সহায়তা করে- তাহলে আমি আমার এই লেখাটি কিছুটা সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো।
Discussion about this post