বহু আগে পড়া এই বইটি নতুন করে পুনর্পাঠ করা শুরু করেছি এবং এর গুরুত্ব ও তাৎপর্যের দরুন মনে হলো- বইটি সম্বন্ধে সবার সাথে আমার মনোভাব শেয়ার করা উচিৎ। কারণ বাংলাভাষায় এরকম চিন্তাশীল ও হোমিওপ্যাথির মৌলিক স্বরূপ ও ইতিহাস সম্বন্ধে এরকম বই নেই বললেই চলে। বইটির লেখক ডা. চন্ডীপদ চক্রবর্তী – বইটিতে মূলত স্বল্প-পরিসরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস, বিশেষ করে এই ভারতীয় উপমহাদেশে হোমিওপ্যাথির ইতিহাস, হোমিওপ্যাথির প্রসারকল্পে ও উন্নয়নে তাকে যে চড়াই-উৎরাইগুলো পেরোতে হয়েছে তার প্রামাণ্য তথ্য দিয়ে আমাদের সমৃদ্ধ করেছেন। সেই সাথে আলোচনা করেছেন- চিকিৎসাবিজ্ঞানের মৌলিক দর্শন নিয়ে।
চিকিৎসা-ব্যবস্থায় বিজ্ঞানের ব্যানারে মহাসমারোহে যেসব অবৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড চলছে- তিনি বলিষ্ঠ ভাষায় তার যৌক্তিক সমালোচনা করেছেন। তার প্রতিপাদ্য বিষয় দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন- বিজ্ঞান আসলে কি? আর এ প্রসঙ্গের আলোচনার ধারাবাহিকতায়- হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ও যুক্তি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। বইটিতে তিনি বর্তমানের মর্ডান মেডিসিন নামে পরিচিত এলোপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার বিভিন্ন অন্তসারশূণ্য কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতাকে তুলে ধরে হোমিওপ্যাথির সফলতা, তার কারণ ও যৌক্তিকতাকে ব্যাখ্যা করতে সচেষ্ট হয়েছেন।
তাছাড়া, চিকিৎসা-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রটিতে একান্ত জরুরী মৌলিক বিষয়গুলো সম্বন্ধেও আলোকপাত করেছেন। সেই প্রাসঙ্গিকতায় তার আলোচনায় চলে এসেছে- দর্শন ও বিজ্ঞানের প্রসঙ্গ, তাদের সম্পর্ক। দর্শন এবং বিজ্ঞান- এ দু’টি যে আসলে একে অপরের পরিপূরক এবং হোমিওপ্যাথি কার্যত দর্শন ও বিজ্ঞানের এক অপূর্ব সমন্বয়- এই ব্যাপারটি যুক্তিসহকারে সুন্দরভাবে বইটিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
সেই সাথে হোমিওপ্যাথির বিভিন্ন সংকট, শিক্ষাব্যাবস্থার বিভিন্ন ত্রুটি ও এই ত্রুটি থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়ে তিনি তার এই বইটিকে আমাদের পাঠ্য হিসাবে অপরিহার্য করে তুলেছেন। পরিশেষে বলব বইটি হোমিওপ্যাথির ভিত্তিমূলক জ্ঞানকে আরো বর্ধিত করতে এবং হোমিওপ্যাথির উপর ঐতিহাসিক, দার্শনিক ও গঠনমূলক জ্ঞানকে আরো শক্তিশালী করতে নিঃসন্দেহে সাহায্য করবে।