[লেখক ডা. অমরনাথ চক্রবর্তী এই লেখাটির জন্য বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করেছেন ডা. জে. এন. কাঞ্জিলালের প্রতি, যার ‘Writings on Homoeopathy’ গ্রন্থের শিক্ষাকে তিনি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং তিনি সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তাঁর শিক্ষাগুরু ডা. বিভা কাঞ্জিলাল ও ডা. তপন কাঞ্জিলালের প্রতি- যাদের ‘রেপার্টরি প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাকে তিনি সর্বদা অন্তরে ধারণ করেন। চলমান পর্বটিতে তিনি মূলত রেপার্টরির সুবিধা ও প্রয়োজনীয়তার পর এর অসুবিধা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেছেন]
এবার আমার জীবনের বিরলতম অভিজ্ঞতার কথা বলছি। তখন ১৯৮৭ বা ৮৮ হবে। ডা. কে সি দাসের চেম্বারে একজন রোগীর কথা বলছি। তার স্বামী পথ-দুর্ঘটনায় মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। স্বামীর বদলে তার চাকরি ব্যাঙ্কে তিনি পেয়েছেন। স্বামী মারা যাবার আগে অপারেশন টেবিলে যাবার পূর্বে তার বাল্যবন্ধুকে হাত ধরে অনুরোধ করেছিলেন যদি আমার কিছু হয়ে যায় তুই এদের দেখিস। সেই ভদ্রলোক সঙ্গে এসেছিলেন।
ব্যাক্তিগত বিষয়ে আপত্তি থাকায় স্যার আমাদের সবাইকে বার করে দিয়েছিলেন। পরে সেই ভদ্রলোককে ডেকে নিয়েছিলেন। রোগী ও তার সঙ্গী মুখ কালো করে নিতাইদার কাছ থেকে PLACEBO নিয়ে চলে গেল। আমরা চেম্বারে ঢুকে দেখি- স্যার মাথা নিচু করে বসে আছেন আর আমাদের বললেন, ” আজ তোদের কিছু বলবো না, জানি না আমি পাপ…….”
পরের মাসে রোগীর ঘুম ও ক্ষুধার উন্নতি হয়েছে শোনার পর সেই ভদ্রলোক ও রোগী বাদে আমরা বেরিয়ে আসলাম। রোগী আবার PLACEBO নিয়ে চলে গেল। পরের মাসে ভদ্রমহিলা একা এলেন বড় মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে কিন্তু আমাদের বার করে দিলেন। পরে আমরা সবাই স্যারকে অনুরোধ করলাম, তখন স্যার বলতে শুরু করলেন- ঈশ্বর আমাকে পাপ থেকে রক্ষা করেছেন। মেয়েটি বেশ সুন্দরী ছিল দেখতেই পাচ্ছিস। গোটা শরীরে ছোপ ছোপ দাগ সারাবার জন্য এসেছিল। সে রাত্রে ঘুমাতে পারে না যৌন উত্তেজনার জন্য। ছেলের কথা ভেবে এবং শ্বশুর ও শ্বাশুড়ির ভবিষ্যৎ ভেবে আর বিয়ে করেন নি। উত্তেজনার ফলে অনেক সময় রাত্রে স্নান করতেন ইত্যাদি। আমি ঐ ভদ্রলোককে কর্তব্য পালনের জন্য যৌন সম্পর্ক করবার উপদেশ দিয়েছিলাম- বাকীটা তোরা দেখতে পাচ্ছিস। আমি বললাম এরকম উপদেশ- অর্গাননের ৭নং সূত্রটা দেখে নিস। ঐ মহিলার সব রকম পরীক্ষার ফলে কোন দোষ ছিল না। ফলে কোন রোগ নির্ণয় হয় নি। তবে এক্ষেত্রে SUPPRESSION OF SEXUAL DESIRE কে কারণ হিসাবে ধরা কি খুব সহজ? তাহলে দর্শনকে কেন মাথায় রাখতে হবে বোঝা গেল।
স্যার মজা করে বলতেন- যার নাই কোন গতি সে করে হোমিওপ্যাথি। আমার বন্ধুদের কি আপত্তি আছে?
ঘটনা: ডাক্তারবাবু, আমি ওকে খুব ভালবাসি কিন্তু কোনদিন মুখ ফুটে বলতে পারি নি। ছোটবেলা থেকে আমাদের পরিচয়। এমনকি ওর বিয়েতে পরিবেশন করেছি। ও চলে যাবার পর থেকে ওর কথা মনে পড়লেই দু’চোখ জলে ভরে যায়। তারপর থেকে শরীরে বিভিন্ন রকম কষ্ট।
প্রশ্ন: তোমার কষ্ট কি?
উত্তর- ওকে এতটা ভালবেসে ফেলেছি, আমি আগে বুঝতে পারি নি। আমি মুখ ফুটে বললে আমাদের বিয়ে হয়ে যেত। সর্ব দিকেই আমি ওর উপযুক্ত ছিলাম। দুই পরিবারের মধ্যে ভালো সম্পর্ক আছে।
প্রশ্ন: তোমার দোষেই অন্য জায়গায় বিয়ে হল।
উত্তর: স্যার ঠিক বলেছেন। আমি আমার মনের কথা কিছুতেই সাহস করে বলতে পারিনি। কেন পারলাম না সেটাই আমার কষ্ট।
এক তরফের ভালবাসাকে বলে LOVE-SICK। এটা যেমন নারী-পুরুষের মধ্যে হয় তেমনি দুই বন্ধুর মধ্যেও (উভয়েই পুরুষ অথবা নারী) হতে পারে। এখানে দুজন বন্ধু হলেও একজন স্বাভাবিক বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ কিন্তু অন্যজন এতই অতিরিক্ত ভালবাসে যে- বিচ্ছেদ হলে (এমন কি স্বাভাবিক কারণ- যথা, চাকরির জন্য, উচ্চতর পড়াশোনার জন্য ইত্যাদি) সে অসুস্থ হয়ে পড়ে কিন্তু অন্যজন অসুস্থ হয় না। এক্ষেত্রে সাহস করে বলতে না পারাকে বলে TIMIDITY, BASHFUL।
ঘটনা: আমি সম্পত্তির লোভে ভালোবেসেছিলাম। প্রথমে অভিনয় থাকলেও পরে সত্যিই ভালবেসে ফেলেছিলাম। আমার এক বন্ধু ব্যাপারটা ওর কাছে ফাঁস করে দিয়েছিল। তাই সম্পর্ক কেটে গেছে।
প্রশ্ন: তোমার কষ্ট কি?
উত্তর: ওর সঙ্গে এরকম করা উচিৎ হয়নি। ও খুব ভালো মেয়ে। এখন আমি বিবেকের দংশনে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি।
সম্পত্তির লোভ- AVARICE। আবার অভিনয় করাকে বলে- DECEITFUL। আবার বিবেকের দংশনকে বলে- ANXIETY, CONSCIENCE OF (AS IF GUILTY OF A CRIME)। এখানে মেয়েটিকে ঠকানোর চেষ্টা পরে একই কার্যের জন্য বিবেকের দংশন দুটি বিপরীত আবেগ যখন একজন রোগীর মধ্যে পাওয়া যায়- তখন এই লক্ষণের জোড়াকে বলে BIPOLARITY। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এখানে আলাদা ভাবে লক্ষণের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আমি এই আলোচনার মাধ্যমে এটাই বোঝাতে চেয়েছি- রেপার্টরি কিভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে। এখানে লক্ষণ তৈরী করতে যে পরিস্থিতি বা উদ্দেশ্য বা পারিপার্শিক কারণ থাকে তাকে গুরুত্ব দিয়ে কি ভাবে লক্ষণ সংগ্রহ করতে হবে সেটাই সহজ সরল ভাবে বলার চেষ্টা করেছি। এরপরে মায়াজমের দৃষ্টিভঙ্গিতে রেপার্টরিকে বিচার বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। আজ পর্যন্ত কোন রেপার্টরি লেখা হয় নি মায়াজমের ভিত্তিতে। আমি ভবিষ্যতে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। বন্ধুদের সুপরামর্শ প্রার্থনা করি হোমিওপ্যাথির স্বার্থে।
১৯৮৫ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত প্রতিটি রোগীর রেপার্টরি করে নিশ্চিন্ত হয়ে তবেই ওষুধ দিয়েছি। সকাল ৮ টা থেকে শুরু আর শেষ রাত ১০/ ১১ টায়। প্রচুর রোগী। গুরু ডা. দাস বলতেন এত রোগী দেখিস না। রোগী কম দেখে পড়াশোনা করতে উপদেশ দিতেন। তখন পাঁচটি চেম্বারে বসতাম। এত সাফল্যের মধ্যেও কিছু ঘটনা কাঁটার মত অন্তরে বিধছিল। আমার ধারণা ছিল রেপার্টরি করে ওষুধ দিলে ভুল হয় না। তবে যেগুলি পারতাম না সেই রোগী ঠিক বলেনি তাই আমি ব্যর্থ। কিন্তু নিজের ভুল খুব কমই চোখে পড়তো।
তখন কয়েকটি ওষুধ বেশি নির্বাচিত হত যেমন সালফার। ডা. কেন্ট সালফারের ভুল নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন,
“It seems that the less a physician knows of the Materia Medica the oftener he gives Sulphur, and yet it is very frequently given, even by good prescribes; so that the line between physicians’ ignorance and knowledge cannot be drawn from the frequency with which Sulphur is prescribed by them.”
কেন্টের উপদেশের পরেও আমি সালফার নির্বাচন আমি কমাতে পারি নি।ডা. জে. এন. কাঞ্জিলালের বইতে পড়লাম,
Sulphur can never be indicated without manifestation………..In the first degree or grade……..Of congestion, burning and redness।
First degree burning সম্পর্কে তিনি এক জায়গায় বলেছেন, First degree burning বলতে বোঝায় সারা বছর একটানা ভয়ংকর জ্বালা। যদি না থাকে তবে সালফার হবে না। বাস্তব হচ্ছে, রেপার্টরি করলে সালফার বেশি আসে। আবার আর একটি পর্যবেক্ষণ আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল। পুরোনো কিছু রোগী- আবার পুরোনো লক্ষণ বা পুরানো লক্ষণের সাথে কিছু নতুন লক্ষণ নিয়ে ফিরে এল। প্রমাণ হল সালফারে এদের আরোগ্য হয় নি।
যাদের First degree burning ছিল না তাদের অন্য ওষুধ দিলাম। কয়েকটি সফলতা পেলাম। রেপার্টরি করে সালফার এসেছিল কিন্তু ডা. কাঞ্জিলালের উপদেশে পরীক্ষামূলক ভাবে এটা করেছিলাম। এরপর দুটি চেম্বার বন্ধ করে নতুন ভাবে পড়াশোনা শুরু করলাম। ধীরে ধীরে বুঝলাম যে- রোগী হেরিং ও কেন্টের আরোগ্যকারী পর্যবেক্ষণ অনুসরণ করে যাদের আগে আরোগ্য হয় নি- সেই রোগীই পরে ফিরে এসেছিল। আবার দর্শন নতুন ভাবে পড়তে শুরু করলাম। ইতিমধ্যে লন্ডন থেকে একটি রেপার্টরি আনিয়েছি তবুও সমস্যা রয়ে গেল।
এরপর ডা. তপন কাঞ্জিলালের সান্নিধ্যে এলাম। তার কাছে শিখলাম অনেক সালফারের রোগী আসলে মেডোর রোগী যা রেপার্টরি করে আনা সম্ভব নয়। এইভাবে ভুল থেকে সত্যের দিকে পরিচালিত হলাম। ডা. কাঞ্জিলালের নির্দেশে আরো দুটি চেম্বার বন্ধ করে তাঁর নির্দেশ অনুসারে পড়া শুরু করলাম। ডা. কাঞ্জিলালের “রেপার্টরি প্রসঙ্গে” নামে একটি বই আছে। সেখানে রেপার্টরির ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন। তার ওপর ভিত্তি করে বিষদ ভাবে আলোচনা করবো।
ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা:
(১) কোন রেপার্টরি সম্পূর্ণ নয়, কারণ প্রতিদিনই হোমিওপ্যাথিক শাস্ত্রে নতুন ওষুধ ও লক্ষণের সংযোজন হচ্ছে এবং আগামী দিনে তা আরো হবে।
(২) বিভিন্ন রেপার্টরি বিভিন্ন সংখ্যক ওষুধ নিয়ে তৈরি। যেমন কেন্টের রেপার্টরিতে ৬৪৮ টি আর সিন্থেসিস রেপার্টরিতে (৭•১ সংস্করণ ) ৩৬৮০ টি। তাই বিভিন্ন রেপার্টরি ব্যবহার করলে কিছু ওষুধ বাদ পড়ার সম্ভবনা আছে।
(৩) বিভিন্ন ওষুধের বিভিন্ন লক্ষণ বিভিন্ন রেপার্টরিতে পাওয়া যায় অর্থাৎ একটি ওষুধের সব লক্ষণ একটি রেপার্টরিতে পাওয়া যায় না। যেমন, Nat – mur ওষুধটিতে < Music লক্ষণটি, তাঁর (কেন্টের মেটিরিয়া মেডিকা) রেপার্টরিতে Rubric – SENSITIVE, oversensitive, music, to: এইভাবে আছে। আবার বোনিংহাউসেনের রেপার্টরিতে এই ওষুধটির Rubric – Sensitive: music, to: এইভাবে আছে। কিন্তু কেন্টের রেপার্টরিতে Nat- mur আছে কিন্তু বোনিংহাউসেনের রেপার্টরিতে পাওয়া যায় না।
(৪) কোন বিশেষ লক্ষণে কোন ওষুধের মূল্যমান প্রতিটি রেপার্টরিতে এক নয়- যেমন, বোরিক ও লিপ্পিতে দুই রকমের, কেন্টে তিন রকমের, বোনিংহাউসেনে পাঁচ রকমের, জেন্ট্রিতে ছয় রকমের এবং নারের রেপার্টরিতে আট রকমের মূল্যমান আছে। এই মূল্যমান রেপার্টরি গ্রন্থকারের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে। মূল্যমান ভিন্ন থাকায় ক্ষেত্র বিশেষে যখন একটির বেশি রেপার্টরির সাহায্য একসাথে নিতে হয় তখন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।
কেন্টের রেপার্টরিতে Love, ailments, from disappointed – rubric টি, আবার বোনিংহাউসেনের রেপার্টরিতে Love, unfortunate। এখানে ভাষার পার্থক্য বিপথে চালিত করতে পারে। আমার মাথার উপর ডা. কে. সি. দাস ছিলেন তাই সামান্য শিখতে পেরেছি। কিন্তু বিশেষ করে নতুনদের কাছে বড়ই অসুবিধা। অভিধানের অর্থ অনেক ক্ষেত্রেই হোমিও ক্ষেত্রে অচল। আমি এই বিষয়ে RESURRECTION – Categorization and classification of symptoms এ বিশদ আলোচনা করেছি। কেন্টের রেপার্টরিতে love, ailments, from disappointed, rubric টিতে Nat – mur এর মূল্যমান প্রথম শ্রেণি কিন্তু বোনিংহাউসেনের রেপার্টরিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে আছে। সাংখ্য মান যথাক্রমে ৩ ও ৪। এই মূল্যমান মেলাবেন কিসের ভিত্তিতে? অনেকেই এই মূল্যমানের উপর ভিত্তি করে ওষুধ নির্বাচন করেন।
মনে রাখবেন, Picture is not a geometry but geometry is definitely picture। আমার ইঙ্গিত বুদ্ধিমান বন্ধুরা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন। গানে তাল বা ছন্দ (বিজ্ঞান) অবশ্যই থাকে, কিন্তু তালে গাইলেই সব গান- গান হয় না। এই আর্টের বৈশিষ্ট্য আপনাকে বলে দেবে এটা রবীন্দ্রসংগীত বা নজরুলগীতি বা অতুলপ্রসাদ বা রামপ্রসাদ ইত্যাদি ইত্যাদি। এই আর্টটি আপনি বুঝবেন মায়াজমের বৈশিষ্ট্য দিয়ে। তাই আর্টকে বাদ দিয়ে রেপার্টরি করলে বিপদ আছে। এখানে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। আশা করি রেপার্টরির দুর্বল জায়গাটা বোঝাতে পেরেছি। সমস্যা হচ্ছে, রেপার্টরিকে বাদ দিয়ে চলাও সম্ভব নয়। তাই মেটিরিয়া, রেপার্টরি ও দর্শনের ভারসাম্য বজায় রেখে আমাদের এগিয়ে চলতে হবে।
(৫) প্রতিটি রেপার্টরির দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। যেমন- ডা. কেন্টের দর্শন GENERAL TO PARTICULAR আবার ডা. বোনিংহাউসেনের দর্শন PARTICULAR TO GENERAL। দুটি বিপরীত দর্শনের সংঘাতের সম্ভাবনা প্রবল। কাকে রাখব আর কাকে ছাড়ব। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া বড়ই কঠিন আর নতুনদের পক্ষে খুবই বিভ্রান্তকর। বাস্তবে এদের দুইজনকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে- এদের কি ভাবে কাজে লাগাব? তাই এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত রূপরেখা দেবার চেষ্টা করছি।
(ক) GENERAL TO PARTICULAR – General & Particular symptom সম্পর্কে আমি অন্য একটি লেখায় (RESURRECTION) । আমি এখানে এই দর্শন অনুসারে কিভাবে লক্ষণ সাজাব এবং এর সুবিধা ও অসুবিধার সম্পর্কে কিছু বলব।
ওষুধ নির্বাচনের অনেক পদ্ধতি আছে। ডা. কাঞ্জিলাল এই পদ্ধতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলেছেন। যারা মায়াজম বোঝেন না- তারাও এই পদ্ধতি অবলম্বন করে অনেক অসাধ্য সাধন করেছেন। তিনি লক্ষণের গুণগত মান অনুসারে লক্ষণগুলিকে সাজিয়েছেন। এই পদ্ধতির সঙ্গে তাঁর মেটিরিয়া গভীরভাবে অনুশীলন করলে আমরা সাফল্যের আশা করতেই পারি। কারণ তাঁর মেটিরিয়ায় দর্শনের প্রয়োগের কথা, এমনকি মায়াজমের কথা ও তাঁর প্রয়োগের কথাও বলেছেন। এর সঙ্গে হ্যানিম্যান ও অ্যালেনের দর্শনের মিলন হলে অতি উত্তম।
ডা. কেন্ট কিভাবে সাজিয়েছেন সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা করছি। প্রথমে মানসিক (এর তিনটি গুণগত মান আছে। এর মান অনুসারে সাজাতে হবে ) লক্ষণ, পরে সার্বিক ( General ) হ্রাস – বৃদ্ধি বা কারণ এবং খাবার ইচ্ছা – অনিচ্ছা ইত্যাদি। এই সার্বিক লক্ষণগুলির মধ্যে বর্তমান ওষুধগুলিকে বাছাই করতে হবে।
এর পরের ধাপে PARTICULAR লক্ষণগুলি নিতে হবে। অবশ্যই এগুলি উচ্চশ্রেণির হবে। এই ভাবে আমরা ১ /২ /৩ টি সদৃশ ওষুধের সন্ধান পেতে পারি। তবে সিদ্ধান্ত দেবে মেটিরিয়া মেডিকা। এইভাবে সদৃশতম ওষুধটি আমরা পাব।
এই পদ্ধতির কিছু ত্রুটিও আছে। নতুনদের এই পদ্ধতি অনুসরণ করা বেশ কঠিন। মানসিক লক্ষণ বার করতে বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন- যা নতুনদের থাকে না। এই লক্ষণ বার করা খুব সময় সাপেক্ষ। তাই পরিশ্রম করার মানসিকতা অর্জন করতে হবে। বর্তমানে জটিল রোগীর সংখ্যা বেশি- তাই সময় বেশি দিতে হবে। সেই সহজের খোঁজ করতে গিয়ে অনেকেই বিপথে চলে যান। বেশি সময় প্রথমে দিলে পরে পরমানন্দ পাওয়া যায়। অভ্যাস করতে করতে বিষয়টা সোজা হয়ে যাবে। এটা বাস্তব অসুবিধা। অনেক রোগীর সার্বিক লক্ষণের অভাব থাকে সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অচল। সেখানে অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
আমরা যেভাবে এখন লক্ষণ পাই সেভাবে লক্ষণ হোমিওপ্যাথি আবিষ্কারের প্রথম দিকে ছিল না। হ্যানিম্যানের বন্ধু বোনিংহাউসেন লক্ষণকে একটি নির্দিষ্ট রূপ দিয়েছিলেন। হ্যানিম্যান তার অবদান মেনে নিয়েছিলেন। একটি সম্পূর্ণ লক্ষণের পাঁচটি অংশ। এই পাঁচটি অংশ সবসময় পাওয়া যায় না। এই পাঁচটি অংশ হল-
- কারণ (Causation)
- স্থান (Location)
- অনুভূতি বা যে কোন পরিবর্তন (Sensation)
- হ্রাস বা বৃদ্ধি (Modalities) (
- সহগামী লক্ষণ (Concomitant).
এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় ত্রুটি হল- স্থানের লক্ষণ কম থাকার জন্য কোন বিশেষ ওষুধ আমাদের চিন্তার বাইরে চলে যায়। এর বিন্যাস PARTICULAR TO GENERAL হবার জন্য রোগ চাপা পড়ার সম্ভবনা আছে। আরোগ্যের নীতি Centre to periphery। এখানে সাজান হচ্ছে Periphery to Centre. তাই এই পদ্ধতির ত্রুটি সংশোধন করে ডা. কেন্ট General to Particular রূপে সাজান।
Discussion about this post