নিজস্ব প্রতিবেদক:
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নে ‘হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা আইন, ২০১৯’ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এ আইনের আওতায় বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড নামে একটি বোর্ড গঠিত হবে। ওই বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা হবে সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিবের সমমান। এছাড়াও আইনটি কার্যকর হলে এর আওতায় ডিপ্লোমা, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চিকিৎসকদের নিবন্ধনের জন্য ‘বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কাউন্সিল (বিএইচএমসি)’ গঠিত হবে। জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক তিনজন সংসদ সদস্যসহ ২০ সদস্যের এই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রের খবর, রোগী আকৃষ্ট করতে যেকোনো ধরনের বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে ধারা যুক্ত করা হয়েছে এই আইনে। ফলে চিকিৎসকরা কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন গণমাধ্যমে প্রচার করলে পারবেন না। আইন না মানলে এক লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছরের জেল বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এছাড়াও যত্রতত্র হোমিও চিকিৎসা শিক্ষা বন্ধে থাকছে কঠোর আইন। সরকারি অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতির চিকিৎসা শিক্ষা দিতে পারবে না। এমনকি এ চিকিৎসা পদ্ধতির কোনো ডিগ্রি, ডিপ্লোমা বা সনদ ইস্যু করতে পারবে না। করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা তিন লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।
তবে প্রস্তাবিত খসড়ার বেশ কিছু ধারার বিরোধিতা করে তা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড। পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ডিপ্লোমা (ডিএইচএমএস) এর মান নির্ধারণ ও উচ্চশিক্ষা কোর্সে অংশগ্রহণের সুবিধা আইনে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে তারা।
সূত্র জানিয়েছে- এই আইনের আওতায় ডিপ্লোমা, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চিকিৎসকদের নিবন্ধনের জন্য ‘বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কাউন্সিল (বিএইচএমসি) গঠিত হবে। জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক তিনজন সংসদ সদস্যসহ ২০ সদস্যের এই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন।
এর সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলো হলেন- স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে মহাপরিচালক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের চেয়ারম্যান (পদাধিকারবলে), স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হোমিও ও দেশজ), পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও উন্নয়ন), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের যুগ্মসচিব (চিকিৎসা শিক্ষা), বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের রেজিস্ট্রার প্রমুখ।গঠিত কাউন্সিল জাতীয় স্বাস্থ্য এবং ঔষধনীতিতে হোমিওপ্যাথিক মেডিসিনের উন্নয়ন ও তার বাস্তবায়ন পদ্ধতির সুপারিশ করবে। এই কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া কোনো চিকিৎসক হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতির চিকিৎসা করতে পারবেন না।
অপরদিকে এই আইনের আওতায় বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড নামে একটি বোর্ড গঠিত হবে। ওই বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা হবে সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিবের সমমান। তিনি ওই পদের বিপরীতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। ১১ সদস্যের এই বোর্ডের প্রধান নির্বাহী ও সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন রেজিস্ট্রার।
প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কাউন্সিল সরকার অনুমোদিত হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত ডিএইচএমএস এবং বিএইচএমএস কোর্সকৃতদের শুধু হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পেশার রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেবে। তারাই শুধু হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পেশায় নামের আগে ‘ডা.’ (ডাক্তার) পদবি লিখতে পারবেন। তারা নির্দিষ্ট হারে রোগীর কাছ থেকে ফি’ নিতে পারবেন। সরকার কর্তৃক স্বীকৃত বা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত ছাড়া কোনো কোর্সের নাম, ডিগ্রি বা উপাধি গ্রহণ করা যাবে না। কোনো ব্যক্তি তার নামের সঙ্গে এমন কোনো উপাধি, বর্ণনা বা কোনো অক্ষর বা সংক্ষিপ্ত রূপ যোগ করতে পারবে না, যাতে কোনো ডিগ্রি, ডিপ্লোমা বা সনদের মতো মনে হয়। এমন হলে ৬ মাস জেল বা এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
খসড়ার বিষয়ে হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের রেজিস্ট্রার-কাম-সেক্রেটারি ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা প্রস্তাবিত আইনের খসড়ার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। সেখানে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের প্রস্তাবিত ডিএইচএমএস ডিপ্লোমা সনদের মান স্নাতক নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা কোর্স গ্রহণ বা বিএইচএমএস তথা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছি। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের আগেই আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।’
Discussion about this post