নাম: মি. জি. কে.
ঠিকানা: ঢাকা, বাংলাদেশ
বয়স: ৩৫ বৎসর
জেন্ডার: পুরুষ
ধর্ম: মুসলিম
পেশা: সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ
প্রধান সমস্যা:
ডান হাতের কব্জি ও কনুইতে বিগত ১ বৎসর যাবৎ ব্যথা। বাংলাদেশের শীতের দিন বা শুস্ক, ঠান্ডা আবহাওয়ায় ব্যথার বৃদ্ধি। বেশ কিছুক্ষণ স্থির থেকে বা একভাবে গেলে নড়াচড়া করতে গেলে প্রথমে খুব ব্যথা লাগে, কিছুক্ষণ নড়াচড়াতে কমে। উত্তাপ প্রয়োগে ব্যথা কম অনুভূত হয়। শীতের দিনে প্রস্রাব ঘন ঘন হয়।
গত ৩/৪ বৎসর যাবৎ ঘাড়ের মেরুদন্ডে ব্যথা, ব্যথাটি বেশি লাগলে নিচের দিকে ছড়ায়। ব্যথা ডানদিকে বেশি অনুভূত হয়।
১০/১২ বৎসর বয়স থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য। পায়খানার পাশে একটি ছোট গ্রোথ। তাতে কোন ব্যথা-বেদনা বা অন্য কোন অসুবিধা নাই (এসময় এটি ফিসার নাকি অর্শ্ব তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম, তবে যেহেতু এটি তেমন কোন কষ্টকর উপসর্গ সৃষ্টি করছে না, কাজেই আরো গভীর অনুসন্ধানের প্রয়োজন মনে করিনি)।
নাকের হাড় কিছুটা বামদিকে বাঁকা। বাম নাকে হাইপারট্রফিড নাসাল টারবিনেট আছে। মাঝে মাঝে নাক বন্ধ হয়ে থাকে। শীতের দিনে মাথা, হাত-পায়ের তলা ঘামে। গরমের দিনে হাত-পায়ের তলা জ্বালাপোড়া করে।
অতীত ইতিহাস:
এপেনডিসাইটিস হবার দরুণ, ১৫ বৎসর বয়সে এপেনডিকটোমি করা হয়েছে। ১৫ বৎসর আগে জন্ডিস হয়েছিলো; কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই স্থানীয় ফার্মাসি থেকে এলোপ্যাথিক ঔষধ গ্রহণ করে এবং জন্ডিস সেরে যায়।
পারিবারিক ইতিহাস:
বাবা: সন্ধিগুলোতে বাতজনিত ব্যথা আছে।
মা: হাইপো-টেনশন, অর্শ্ব
সার্বিক লক্ষণ:
ক) দেখতে বেশ শক্ত-সমর্থ, মাঝারি গড়নের, মাঝারি উচ্চতা, ফর্সা। সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে থাকে বা কুঁজো হয়ে থাকে।
খ) খাদ্যগ্রহণ: ক্ষুধা ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়- তখন অল্পতেই পেট ভরে যায়। মিষ্টি খুব পছন্দ করে। ঝালও বেশ খেতে পারে। চর্বি পছন্দ। গরম খাদ্য ও পানীয় পছন্দ। পিপাসাটা স্বাভাবিকের চেয়ে কম, তবে পিপাসা আছে কিন্তু পানি খেতে ভালো লাগে না।
গ) রেচন: পায়খানা কোষ্ঠকাঠিন্যের ধাত। মাঝে মাঝে শক্ত হয়, প্রথমে শক্ত পরে কিছুটা নরম। প্রস্রাব স্বাভাবিক।
ঘ) ঘুম: ভালো। ডানকাতে শোয়।
ঙ) তাপ-সংবেদনশীলতা: রোগী শীতকাতর। গোসলে অনীহা। খোলা বাতাসে তার ভালো লাগে কিন্তু মেঘলা আবহাওয়ায় খারাপ লাগে ও ব্যথা বেদনা বাড়ে।
চ) মানসিক বৈশিষ্ট্য: (স্ত্রীর বর্ণনা) রোগী কিছুটা খিটখিটে প্রকৃতির। সহজেই রেগে যায় এবং তার সাথে মতের মিল না হলে, বিশেষ করে ঘনিষ্ঠজনদের কেউ তার কথা আমলে না নিলে রাগ করে। এমনিতে গা-ছাড়া স্বভাবের। দায়-দায়িত্ব, পরিবারের কাজ-কর্ম যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে।
কেইসের সুস্পষ্টতার লক্ষ্যে, পরবর্তীতে তার প্রকৃতি সম্বন্ধে স্ত্রীর নিকট আরো জিজ্ঞাসাবাদ করায় সে কিছুটা চালাক-চতুর ও কথা ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলে বলে উল্লেখ করে [ওটাকে আমি ধূর্ত, বুদ্ধিমান ও মিথ্যাবাদী বলে ধরে নিয়েছি]। খুব বেশি ভীড়-বাট্টা পছন্দ করে না, তবে সীমিত সংখ্যক ঘনিষ্ঠদের সঙ্গ পছন্দ করে। একা থাকার কোন বিশেষ আগ্রহ নেই। এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করায় জানা যায়, বাচ্চাদের সাথে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ সে হয় না বা বাচ্চা নেবার ব্যাপারেও তার কোন আগ্রহ দেখা যায় না।
কোথায় মেজাজের বহিঃপ্রকাশ বেশি ঘটায়, জানতে চাওয়ায়- দু’জনেই স্বীকার করে যে, মেজাজ খারাপ হলে তা কেবল পরিবারের পরিসরেই প্রকাশ করে। এছাড়া বাইরের পরিবেশে, নতুন মানুষের সামনে, বহু মানুষের সামনে কথা বলতে নার্ভাস অনুভব করে।

তারিখ: 22/12/11 ইং
Lycopodium – 1M/ 1 dose
SL for 15 days.
ফলো–আপ:
তারিখ: 30/01/13 ইং
প্রথম প্রেসক্রিপশনের পর রোগী ২ বৎসর পর এসেছে। রোগীর কথা মোতাবেক, প্রথমবার ঔষধ খাবার পর সে ভালো হয়ে গিয়েছিলো। ঘাড়ের, কব্জির ও কনুইয়ের ব্যথা চলে গিয়েছিলো। পায়খানার রাস্তার পাশের ফোলাটি একই রকম ছিলো ও এখনও তেমনি আছে। আজকে হাইপারট্রফিক নাসাল টার্বিনেটটা অনুপস্থিত, এমনকি নাকের হাড়ের বাঁকাভাবও কিছুটা কম। নাক এখন আর বন্ধও হয় না।
ইদানীং মাথার প্যারাইটাল অঞ্চল ও টেম্পলে ব্যথা, সেই সাথে চোখের সুপ্রা-অরবিটাল অঞ্চলেও ব্যথা করে। স্পন্দনশীল ব্যথা, মাথা সামান্য নাড়াচাড়া করলেও বেশি লাগে। মাথা টিপে দিলে আরাম পায়। সূর্যের তাপে খুব খারাপ লাগে। শব্দে বৃদ্ধি পায়, গরম ঘরে বাড়ে। মাথাব্যথার সাথে বমির ভাব থাকে। রোগী উষ্ণ পানিতে গোসল করতে পছন্দ করে।
Natrum carb – 1M/1 dose
SL for 15 days.
তারিখ: 11/04/13 ইং
(তিন মাস পর)
মাথাব্যথা প্রায় অনুপস্থিত, কেবলমাত্র রাতে শোয়ার পর মাঝে মাঝে দেখা দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে পেটে গ্যাসজনিত সমস্যা বেশি অনুভূত হচ্ছে। এজন্য রোগী নিজেই একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম করান।
Pathology (Shondhani Diagnostic centre: 30/03/13): USG of L/Abd-
Gut is loaded with gaseous materials.
এর মাঝে রোগী একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় কিছুটা আঘাত পান; এজন্য তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না, তবে মাথার ব্যথাটি আবার সামান্য অনুভব করছেন। মাথাব্যথা ইদানীং গাড়িতে উঠলে বাড়ে। রোগীর মনে এক্সিডেন্টের একটা ভয়ও কাজ করে।
Natrum carb – 1M/ 1 dose
SL for 15 days.
তারিখ: 18/05/13 ইং
মাথাব্যথা অনুপস্থিত। গ্যাস্ট্রিক সমস্যাও চলে গেছে। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ প্রস্রাবের রাস্তায় চিলিক দেয়া ব্যথা। প্রস্রাব পরিষ্কারভাবে হয় না, মনে হয় পেটে প্রস্রাব জমে আছে, তলপেট তখন ভারী লাগে। প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করে- বিশেষ করে যখন প্রস্রাব করে না। প্রস্রাবের রাস্তায় প্রস্রাব রয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়। প্রস্রাব ভাগ হয়ে পড়ে। সূর্যের তাপ অসহ্য লাগে।
Thuja – 200/ 3 ODE
SL for 15 days.
তারিখ: 12/09/13 ইং
(৪ মাস পর)
দীর্ঘ সময় পর, আসলেন এবং জানালেন, আগের সমস্যাগুলো ঔষধ খাবার পর চলে গিয়েছিলো এবং তিনি ভালো হয়ে গেছেন মনে করে আর আসেননি। কিন্তু কিছুদিন ধরে তার পুরোনো অর্শ্বটি বেশ ভালোরকম বেড়েছে। পায়খানা শক্ত হলে প্রচুর কষ্ট হয়। ব্যথার যন্ত্রণায় বসতে পারেন না। চিলিক দেয়া ব্যথা, বিশ্রামে থাকলে বেশি অনুভূত হয়। পায়খানা কখনো কিছুটা পিচ্ছিল ও আমযুক্ত, কখনো শক্তের ধাত। শক্ত হলে রক্তও যাচ্ছে।
Aloe – 200/5 ODM
SL for 15 days.
তারিখ: 08/10/13 ইং
রক্তস্রাব সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত। কিন্তু ব্যথা এখনো চলমান। এমনকি একবার পায়খানা করার পর দীর্ঘক্ষণ ব্যথা চলতে থাকে; ব্যথা সম্পূর্ণরূপে প্রায় কখনোই যায় না। এখন ব্যথাটি জ্বালাপোড়ার মতো এবং সেই সাথে সেখানে চুলকানি দেখা যাচ্ছে। ইদানিং পায়খানা কষার দিকেই বেশি থাকছে। পানির পিপাসা অন্য সময়ের চেয়েও কিছুদিন যাবৎ কম।
Sulphur – M/6 doses BD
SL for 15 days
তারিখ: 24/10/13 ইং
ব্যথা প্রায় নেই, চুলকানি সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। কিন্তু সামান্য জ্বালাপোড়া ও চিলিক দেবার মতো অনুভূতি এখনো মাঝে মাঝে অনুভব হয়। পায়খানা এখন স্বাভাবিক। প্রস্রাব, ঘুম – স্বাভাবিক।
SL for 15 days.
তারিখ: 17/11/13 ইং
এই প্রথম রোগীর পায়খানার রাস্তার ফোলাটি বেশ লক্ষণীয় রকমের কমে গেছে। ব্যথা, জ্বালাপোড়া, চুলকানি, চিলিক দেয়া কোনকিছু্ই নেই। রোগী অন্য সমস্ত দিকে ভালো আছে।
SL for 15 days.
তারিখ: 11/09/14 ইং
(প্রায় ১০ মাস পর)
রোগীর অর্শ্ব সম্পর্কিত কষ্ট আর দেখা যায়নি। সম্প্রতি বুকে একটি দলা থাকার মতো অনুভূতি হচ্ছে- না খেয়ে থাকলে বাড়ে, খাওয়ার পর কমে, চা খেলে বাড়ে। আর বেশ কয়েকমাস যাবৎ তার দুধ সহ্য হচ্ছে না। মিষ্টি পছন্দ করে কিন্তু খেলে তা সহ্য হয় না। পেট খারাপ হয়, গ্যাস হয়। পায়খানা আবারও কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের দিকে চলে গেছে- এবার শক্ত, বকরির পায়খানার মতো বড়ি বড়ি পায়খানা হয়। পিপাসাহীন। খাবার খেতে গেলে তা গলায় আটকে আছে বলে মনে হয়।
Zincum met – 1M/ 1 dose
SL for 15 days.
তারিখ: 17/09/15 ইং
(১ বৎসর পর)
রোগী সবদিক দিয়েই ভালো। আপাতত তিনি কোন সমস্যা অনুভব করছেন না। পায়খানা স্বাভাবিক। প্রস্রাব, ঘুম, ক্ষুধা সবই ভালো।
SL for 1 months
বুঝতেই পারছেন, এটি হচ্ছে সেই রোগীদের একজন, যে কোন কারণেই হোক- চিকিৎসা কখন করবেন আর কখন করবেন না, সে সিদ্ধান্ত তিনি চিকিৎসককে নিতে দেবেন না; নিজেই নেবেন। সুন্দরভাবে ও নিশ্চিতরূপে কেইসটি সমাপ্ত করার জন্য, রোগীকে আরো কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রাখার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু রোগী আর আসেনি। তবে, আমার ধারণা তার এই ব্যাপক উন্নতির পর, কোন সমস্যা হলে অবশ্যই আসার কথা।
Discussion about this post