কেইস-টেকিং নিয়ে আমাদের শাস্ত্রে লেখার পরিমাণ নিতান্ত কম নয়। কিন্তু দু’টো ব্যাপারের ঘাটতি এখনো প্রচণ্ডই বলা চলে-
১. বাংলা ভাষায় এ সংক্রান্ত বই এবং
২. পূর্ণাঙ্গ কেইস টেকিং পদ্ধতি অনুসরণকারী ডাক্তারের সংখ্যা।
এদেশের হোমিওপ্যাথদের একটি বিশাল সংখ্যা পূর্ণাঙ্গ কেইস-টেকিং করে চিকিৎসা করেন না। কেইস-টেকিং না করলে, প্রপার ফলো-আপের প্রশ্নই উঠে না। আর এদু’টো ছাড়া আর যাই হোক- সেটা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নয়। তারা যে পূর্ণাঙ্গ কেইস টেকিং করতে চান না- আমি সেটা বলছি না। বাংলাভাষায় এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত বইয়ের সঙ্কট, প্রচলিত অবস্থাটিতে এর রীতি প্রতিষ্ঠিত না থাকা, শিক্ষাগ্রহণকালীন সময়ে এর গুরুত্ব সম্বন্ধে যথাযথ সচেতন না হওয়া বা প্রশিক্ষণ না পাওয়া- বহুমুখী কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হয়তো করতে পারছেন না। এছাড়া কিছু ভুল ধারণাও এটি করা থেকে অনেক চিকিৎসককে নিরুৎসাহী করে।
বর্তমানে বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথির একটি টার্নিং পয়েন্ট চলছে। প্রচুর সংখ্যক আগ্রহী ও মেধাবী শিক্ষার্থী প্রতি বৎসর পাশ করে বের হচ্ছে। তারা যদি শেখার উপযুক্ত উপকরণ না পায়, তবে আগের সেই ভুল ধারাবাহিকতা অনুসরণ করতে তারা বাধ্য হবে। এজন্য বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই বই বা এধরণের বই অতি জরুরী।
মূলত কেইস-টেকিং কেবল একটি গৎবাঁধা পদ্ধতি অনুসরণ করা নয়। এটি করতে গেলে এর প্রাণপ্রবাহটা বুঝতে হবে। আপনি নিশ্চয়ই একটি কাজ করতে গেলে আপনার কতটুকু শক্তি প্রয়োজন হবে, কি কি অস্ত্র লাগবে, কোন অস্ত্র কোন সময়টিতে ব্যবহার করতে হবে, কিভাবে ব্যবহার করতে হবে- এগুলো আগে জেনে আয়ত্ত্ব করে নেবেন। হোমিওপ্যাথিতে যেহেতু আমাদের প্রতিটি কেইসই নতুন- এজন্য আমি মনে করি, পদ্ধতি মুখস্ত করার চাইতে, প্রাণপ্রবাহটিকে বুঝে নেয়াটা জরুরি। যে কাজটি এই বইটিতে ব্যাখ্যা করার হয়েছে।
কেইস-টেকিং ও ফলো-আপের বিষয় সম্বন্ধে বিচিত্র বিষয়বস্তুর সমাবেশ এই বইটিতে ঘটেছে। শিক্ষার্থী ও কেইস-টেকিং ও ফলো-আপ পূর্ণাঙ্গভাবে করতে চাওয়া চিকিৎসকদের যেন মূল বিষয়গুলোর জন্য অন্য কোথাও ছুটতে না হয় বইটিতে সে বিষয়টিই ফুটে উঠেছে। এমনকি কেন্ট বা ভিথোলকাসের সেন্টিসিমালের পর্যবেক্ষণের মতো, পঞ্চসহস্রতমিক ঔষধের পর্যবেক্ষণ, যা আসলে আমাদের ভাষায় এতদিন দুষ্পাপ্য ছিলো- তা বইটিতে একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। সঠিক কেইস টেকিং হয়েছে কিনা, তা যাচাই পদ্ধতি; একিউট, ক্রনিক, মহামারীতে এর ভিন্নতা, কেইস-টেকিং সম্বন্ধে বিশেষ পরামর্শ ও স্মরণীয় কথাসহ বহু বিষয়ের সমাবেশ পাঠকগণ এই বইটিতে দেখতে পাবেন। এক কথায় বইটিকে নবীন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের হোমিওপ্যাথি চর্চার একটি সঠিক পথনির্দেশনা বললে অত্যুক্তি হবে না।
Discussion about this post