ডা. শাহীন মাহমুদ:
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিতে যে কয়টি মৌলিক কারণে রোগীগণ অনীহা প্রকাশ করেন বা ভয় পান, তার একটা হচ্ছে- সমাজে প্রচলিত এক মহাবিভ্রান্তিময় বাগধারা- “হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ধীরে ধীরে কাজ করে”।
আমাদের অনেক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককেও মাঝে মাঝে বলতে শুনি, তারা রোগীদেরকে বলছেন- ঔষধটা খেতে থাকুন, ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যাবেন। আবার অনেকে সরাসরি সেই গণমানুষের বুলি, মহাপ্রচলিত বাগধারাটিই বলে বসে থাকেন- ধৈর্য ধরে খান, হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ধীরে কাজ করে।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত, এটা একটা বড় ধরণের ভুল এবং আমাদের নীতিবিরোধী এক ভ্রান্তির বিস্তার। এমনকি যে চিকিৎসকগণ রোগীকে জিইয়ে রাখার জন্য কোন ধরণের ব্যাখ্যা প্রদান না করে, এ ধরণের প্রচলিত ভ্রান্তিকে সমাজে আরো প্রতিষ্ঠিত হতে দেন, এটা তাদের কৌশলগত ত্রুটিও বটে।
যেখানে আমাদের মূল গ্রন্থ অর্গানন অফ মেডিসিনে যুক্তিসঙ্গত আরোগ্যের প্রধানতম শর্তের একটা, “রোগীর দ্রুতগতিতে আরোগ্য”– নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে এই ধারণা আমাদের শাস্ত্রবিরোধীও নিশ্চিত।
আমি মনে করি, রোগীর কাছ থেকে এভাবে অবৈধভাবে সময় দাবী না করে, রোগের সঠিক Prognosis করে, রোগী কেন ধৈর্য ধরবে তা বুঝিয়ে বলা আমাদের আরোগ্যপদ্ধতির দাবী। সেইসাথে সমাজে প্রচলিত এই ভ্রান্তির বিরূদ্ধে আমাদের চিকিৎসকদের আগে মনে রাখতে হবে, যে কোন একিউট রোগে, আমাদের পদ্ধতি অন্যান্য চিকিৎসাপদ্ধতির চাইতে অন্তত: ৫ গুণ দ্রুত রোগীকে আরোগ্য করবে এবং রোগীর তরফ হতে ধৈর্য ও চিকিৎসকের তরফ হতে সময় শুধু সেই সব রোগের ক্ষেত্রেই লাগবে, যেগুলোকে অন্যান্য পদ্ধতি আজীবনেও আরোগ্য করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে আমাদের যদি ২, ৩, ৫ বৎসরও সময় লাগে সেটাকে কি ধীরে ধীরে কাজ করা বলা যায়? তাছাড়া অনেক Irreversible কেইস থাকে যেগুলো কখনোই সম্পূর্ণ ভালো হবে না, তাদের Prognosis সঠিকভাবে না করে, চোখ বুঁজে শুধু “ঔষধ খেয়ে যান, ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যাবেন” জাতীয় কথাবার্তা পরবর্তীতে চিকিৎসকের জন্য সম্মান হানিকরও হবে, সেই অসম্মান হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাপদ্ধতি আর সমাজের গায়েও লাগবে।
এ পর্যন্ত কোন রোগীকেই পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার পর, সময়ের প্রশ্নটায় অসন্তুষ্ট হতে দেখিনি। সমাজে প্রচলিত এই ধারণাটাকে দূর করা আমাদের হোমিওপ্যাথিক সমাজের স্বার্থে, আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার স্বরূপ প্রকাশের স্বার্থে, অতি প্রয়োজনীয় বলে মনে করি। কাজেই, সবাইকে অনুরোধ রইলো, একটু পরিশ্রম করে, রোগীগণকে উপরোক্ত কথা কয়টা বলে, প্রশ্নটা করে দেখুন। আপনি রোগীর কাছে ধৈর্যের দাবী উত্থাপন না করা সত্ত্বেও তখন যুক্তিবোধের তাড়নায়, তিনি আপনাকে তার আস্থা ও সময় প্রদান করবেন।
Discussion about this post