ডা. শাহীন মাহমুদ:
বর্তমান সময়ে ঠিকঠাকভাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করতে চাওয়াটাও এক বিশাল ঝক্কির ব্যাপার। আমাদের শাস্ত্রের ব্যাপকত্ব, জটিল সব বিমূর্ত দর্শনগত চিন্তাসমৃদ্ধ ধারণা, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে মতবাদ বা মতানৈক্য জনিত আভ্যন্তরীণ এই বন্ধুরতা ছাড়াও- কিছু বিপদ উপস্থিত হয় রোগীদের তরফ থেকে। আজকে বহু ব্যাপারে এমন সব ধারণা জনমানুষের কাছে প্রচলিত, যার দরুণ তাদেরকে সঠিক পন্থায় চিকিৎসা করতে গেলে- তারা মনে করেন যেন নতুন কিছু দেখছেন।
এমন সব বিষয়ে তারা ঔষধ দাবী করেন, এবং এমন সব পন্থায় ‘অমুক হোমিওপ্যাথ চিকিৎসা করছেন’ বলে দাবী করেন- যেগুলো সর্বদিক দিয়েই হোমিওপ্যাথির নীতি-বিরোধী। রোগীদের সেই ভয়ংকর প্রত্যাশাগুলো পূর্ণ করতে অস্বীকার করলে, তাদের ঠোঁটে অথবা মনে প্রশ্ন লেগে থাকে, ‘অমুক ডাক্তার পারলে, আপনি কেন পারবেন না?’ বলুন, এবার কি রোগীকে বসে বসে Law of Similarity, Law of Individuality, Law of Diversity, Theory of Dynamism, Theory of Vitalism, Theory of Miasm বোঝাবো! আমাদের সেই ভাতৃকুলের কর্মকান্ডে প্রায়শই তখন যে লাইনটা মনে আসে, ‘তুমি মহারাজ, সাধু হলে আজ- আমি আজ চোর বটে!’
রোগীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে যে ধারণাগুলো প্রচলিত তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা দূষিত ধারণা হচ্ছে- প্যাটেন্ট, পলিফার্মাসি, টনিক, বায়োকেমিক, অয়েন্টমেন্ট ইত্যাদি সমস্ত কিছুকেই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বলে মনে করা। প্রস্তুতকারকরাও এগুলোতে ‘হোমিওপ্যাথিক’ শব্দটির একটা ট্যাগ লাগিয়ে সেগুলোকে হালাল বানিয়ে- রোগীদের প্রশিক্ষিত করছেন। এ বিষয়ে আগে একটি প্রবন্ধে আমি বিস্তারিত আলোচনা করায়, এখানে কেবল সংক্ষেপে এটুকু বলছি- ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। হোমিওপ্যাথি কোন ঔষধের ক্যাটাগরি নয়- এটা একটি চিকিৎসা-নীতির নাম। সেই নীতি, যাকে বলা হয় সদৃশবিধান (Law of Similarity, Homeopathy) অনুসারে চিকিৎসা করা হলে, যে প্রযোজ্য ঔষধটি নির্বাচিত হবে– সেটিই একটি নির্দিষ্ট রোগীর হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। যে ঔষধগুলোকে এই মূলনীতি অনুসারে ব্যবহার করা হবে, তাকেই কেবলমাত্র সাধারণভাবে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বলা যায়। কিন্তু উপরোল্লিখিত ক্যাটাগরিগুলোকে কোনভাবেই সদৃশবিধান অনুসারে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়; কাজেই সেগুলো কোনদিনও ‘হোমিওপ্যাথিক ঔষধ’ এবং এগুলোর দ্বারা করা চিকিৎসাকে কোনক্রমেই ‘হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা’ বলার উপায় নেই। কিন্তু আমাদের মধ্যে একটি শ্রেণি রোগীদের অবিরত এই সব ঔষধ দিয়ে এমনভাবে অভ্যস্ত করেছেন, আজ এগুলো ব্যবহার না করলেই বরঞ্চ হোমিওপ্যাথের দক্ষতা নিয়ে রোগীগণ সন্দিহান হয়ে পড়ে। কি হাস্যকর একটি অবস্থা!
এরপর যে বিষয়টি নিয়ে খোদ আমাদের নিজেদের মধ্যেও অনেকের অস্বচ্ছতা রয়ে গিয়েছে, তা হচ্ছে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রসঙ্গ। এক পক্ষ ক্রিয়ার বিপরীতে থাকা প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে নিউটনের তৃতীয় সূত্রের যুক্তিতে- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে বলতে চাচ্ছেন, অন্যপক্ষ কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই ঘোষণা দিয়ে নিশ্চিন্তে ধুমসে ইচ্ছেমতো ঔষধ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। আসলে নিউটনের তৃতীয় সূত্রের প্রযোজ্যতার একটি সীমা (Area) ও মাত্রা (Dimension) আছে, সবকিছুতেই এটি টানাটানি করাটি, অনেক সময় হাস্যকর পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। তবে এটা অনস্বীকার্য যে, হোমিওপ্যাথিক ঔষধ শরীরে ও মনে লক্ষণের উদ্ভব ঘটাতে পারে। যদি সূক্ষমাত্রায় প্রয়োগ করা হয়- তাহলে রোগীর তাতে সংবেদনশীলতা (Susceptibility) না থাকলে কিছুই হবে না এবং ঔষধটি রোগীটিতে মোটেও প্রযোজ্য নয়। কিন্তু যদি রোগীর সদৃশতা না থাকা সত্ত্বেও আংশিক সংবেদনশীলতা থাকে, বা তিনি যদি অতিসংবেদনশীল হন; কিংবা ঔষধটি যে কোন মানুষের দেহে যদি প্রুভিং মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়- তবে যে অবস্থাটি সৃষ্টি হয়, তাকে আমি চিকিৎসাক্ষেত্রের সবচেয়ে বাজে অবস্থা বলবো। প্রুভিং মাত্রায় লাগাতার না দিয়ে গেলে হয়তো অন্য কোন উপসর্গের সৃষ্টি হবে না, কিন্তু এর কিছুদিনের অবিবেচক প্রয়োগও রোগীর লক্ষণগুলোকে এমনভাবে দুমড়ে-মুচড়ে পরিবর্তন করে ফেলতে পারে যে, তখন একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ চিকিৎসকেরও রোগীর অবিকৃত পূর্ণাঙ্গ লক্ষণচিত্র উদ্ধার করে, তার ভিত্তিতে সঠিক চিকিৎসা দেবার সুযোগ সুদূর পরাহত হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থাটিকে বলে কেইস বিশৃঙ্খলীকরণ (Case Disruption)। এবং এই ঘটনাটি মোটেও বিরল কোন ঘটনা নয়, এ নিয়ে তর্ক করারও অবকাশ নেই। কাজেই, যারা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে বেপরোয়া প্রকৃতির চিকিৎসাপ্রদানের পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন- তারা আদতে রোগী ও চিকিৎসক সমাজ উভয়পক্ষের অশেষ ক্ষতি সাধন করে চলেছেন।
যেহেতু উপর্যুক্ত বিষয়টিতে অনেকের ধারণা স্বচ্ছ নয়, কাজেই হোমিওপ্যাথি কি করতে পারে ও কি করতে পারে না- সেই ব্যাপারটিতেও অনেকের ধারণার স্বচ্ছতা সৃষ্টি হতে পারেনি। আমি এই ব্যাপারটিকে একবাক্যে যেভাবে মাঝে মাঝে আমার শিক্ষার্থীদেরকে বলি,
‘হোমিওপ্যাথিক উপায়ে প্রয়োগকৃত ঔষধ, প্রায় সব অস্বাভাবিককেই স্বাভাবিক করতে পারে কিন্তু কোন স্বাভাবিককেই অস্বাভাবিক করতে পারে না।’
একটা উদাহরণ দিয়েই বলছি, আমাদের মধ্যে এমন চিকিৎসক খুব কমই আছেন, যাদের কাছে এসময় গর্ভপাতের বা ভ্রুণ নষ্ট করার ঔষধের জন্য রোগীগণ আসেননি। কিন্তু সেটা হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিয়ে কতটা সম্ভব?
সন্তানধারণ একটি স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া, একটি প্রাকৃতিক স্বাভাবিক বায়োলজিক্যাল ও ফিজিওলজিক্যাল প্রসেস। এটি কোন রোগ নয়, এটি কোন অস্বাভাবিকতা নয় বরঞ্চ এটি প্রকৃতির সবচেয়ে মৌলিক স্বাভাবিকত্ব ও লক্ষ্যের একটি। এখন কিভাবে এর ঔষধ হতে পারে! ঔষধ তো হয় অসুস্থতার! এটি জীবনীশক্তিকে বিকৃত করেনি, দুর্বল করেনি, এর সমন্বয়ে ও প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটায়নি বরঞ্চ তাকে সবল করেছে; এটিকে এখন কোন যুক্তিতে হোমিওপ্যাথিক (!) ঔষধ প্রদান করা যেতে পারে!
প্রকৃত সত্য হচ্ছে, কোন উপায় নেই। যতক্ষণ না একজন রোগীর জীবনীশক্তির বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে- ততক্ষণ কোন হোমিওপ্যাথিক ঔষধই কোন ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য নয়। ঔষধের প্রতি সংবেদনশীলতা তৈরি না থাকলে, সেই ঔষধটি উক্ত ব্যক্তির উপর কোন প্রভাবও ফেলতে পারবে না। কাজেই, স্বল্পমাত্রায় প্রয়োগে সেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে কোন ব্যত্যয়ই ঘটাতে পারবে না। এই ঘটনাটি মানুষের যে কোন স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়ার বেলায় সত্য।
কিন্তু যদি রোগীকে অতিরিক্ত মাত্রায়, প্রুভিং পরিমাণে কেবল হোমিওপ্যাথিক লেবেলকৃত ঔষধ নয়, যে কোন কিছু প্রয়োগ করা হয়- তবে বিষাক্ততা ঘটবে এবং বিভিন্নরকম ঘটনা-দুর্ঘটনা-চিত্রাবলী তখন প্রকাশ পাবে। বিভিন্ন চিকিৎসক রোগীকে বিভিন্ন বস্তু ও দ্রব্য প্রয়োগ করে এই সব কর্মকান্ড পরিচালনা করে- তাকে হোমিওপ্যাথির নামে চালিয়ে দেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, হোমিওপ্যাথি গর্ভগ্রহণসহ কোন স্বাভাবিক ফিজিওলজিক্যাল প্রক্রিয়ার ব্যাপারেই কিছু করতে পারবে না। এজন্যই আমি বলি, হোমিওপ্যাথিক প্রয়োগকৃত ঔষধ মানুষের কোন স্বাভাবিককেই অস্বাভাবিক করতে পারে না।
কিন্তু সেই একই মহিলার কোন কারণে গর্ভে সন্তান মারা গেলে, সেখানে ঘটনাটিতে তার জীবনীশক্তির ত্রুটি, বিশৃঙ্খলা, রোগ – বহুকিছুর প্রকাশ পায়। এই ঘটনাটি কোন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়, এবং মৃত গর্ভস্থ সন্তানও কোন স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় উপাদান নয়। কাজেই, এক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি কি করতে পারে? এক্ষেত্রে কেবল আমার অভিজ্ঞতার কথাই যদি শুধু বলি, এ পর্যন্ত এধরণের বহু নারীকেই আমার চিকিৎসা করতে হয়েছে, এমনকি কারো কারো অবস্থা সেপটিসেমিয়া না হলেও, জ্বর শুরু হয়ে গিয়েছিলো বা তার কাছাকাছি অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিলো; এবং সেই কেইসগুলোর কোনটাতেই হোমিওপ্যাথি আমাকে নিরাশ করেনি। প্রত্যেকের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত বাহ্যিক উপাদানটি (Foreign Body) শরীর থেকে বেরিয়ে গিয়েছে এবং রোগী সুস্থ হয়েছে।
ওটা ছিলো অস্বাভাবিকতা, যাকে হোমিওপ্যাথির স্বাভাবিক করার প্রচণ্ড সক্ষমতা আছে। আর এজন্যই আমি বলি, হোমিওপ্যাথি প্রায় সব অস্বাভাবিকতাকেই স্বাভাবিক করতে পারে। বহুজন আপনাদের কাছে এরকম বহু স্বাভাবিককেই অস্বাভাবিক করার আবেদন জানাতে পারে- সেক্সকে স্বাভাবিকের চাইতে বৃদ্ধি করা, স্বাভাবিক থেকে কমানো, ফর্সা হওয়া, স্বাভাবিকের চাইতে বেশি লম্বা হওয়া, মোটা হওয়া, চিকন হওয়া ইত্যাদি রকমের। কিন্তু পরিষ্কারভাবে জেনে রাখুন, এর কোন স্বাভাবিক অবস্থায়ই হোমিওপ্যাথি কোন পরিবর্তন আনতে পারবে না। যে লোক খেয়ে খেয়ে, বিনা পরিশ্রমে বসে থেকে মোটা হচ্ছেন (কোন রোগজনিত নয়), তাকে অন্তত আপনি হোমিওপ্যাথিক উপায়ে ঔষধ দিয়ে ওজন কমাতে পারবেন না।
হ্যা, আরো একটি ভুল ধারণা, কিংবা আমি বলবো হোমিওপ্যাথি সম্বন্ধে ধারণার অস্বচ্ছতা বহুজনের মধ্যে বিদ্যমান। রোগীদের মধ্যে তো আছেই, আমাদের চিকিৎসকদের মধ্যে এবং তাদের অনুসরণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ধারণার প্রাবল্য দেখে দুঃখ, হতাশা, বিরক্তি সব একসাথে অনুভব করি। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে জিজ্ঞেস করতে থাকে, ‘হোমিওপ্যাথিতে অমুক রোগের ঔষধ আছে কি?, অমুক রোগের চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে হবে কি?, নতুন এই ভাইরাসের আক্রমণে হোমিওপ্যাথি কিছু করতে পারবে? এর ঔষধ বা চিকিৎসা কি হোমিওপ্যাথিতে আছে?’ ইত্যাদি ইত্যাদি। ২৩০ বৎসর আগে মহাত্মা হ্যানিমান সমাধান বলে রাখা সত্ত্বেও, কভিড–১৯ নিয়ে এই ধরণের প্রহসনমূলক প্রশ্নগুলোর দৃষ্টান্ত বোধহয় এখনো চলমানই দেখতে পাবেন।
কিন্তু এই প্রশ্নগুলোর সৃষ্টি বোঝায়, তারা হোমিওপ্যাথির একদম প্রাথমিক কথাটাকেই বুঝতে পারেননি এবং তাদের রোগীদেরকেও বোঝাতে পারেননি। তারা এখনো এলোপ্যাথিক চিকিৎসা-দৃষ্টিকোণের বেড়াজালেই আটকে আছেন। মূলত প্রকৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ মাত্রই জীবনীশক্তির বিশৃঙ্খলার উপর প্রতিক্রিয়া করবে, তাকে সংশোধন করতে চেষ্টা করবে। আর জীবনীশক্তির বিশৃ্ঙ্খলার এই বিভিন্ন-বিচিত্র প্রকারের বহিঃপ্রকাশের কিছু লক্ষণগুচ্ছকে একত্র করে করেই প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতি একেকটা নামকরণ করে থাকে।
সত্যিকারের, দৃষ্টিকোণ থেকে এই নামগুলো একেকটা ‘মায়া’ মাত্র; নামটি সত্যও নয়, বাস্তবও নয়- বাস্তবতা হচ্ছে তার নেপথ্যের ঘটনাপরম্পরা (Phenomenon) ও তার ফলাফল (Expression)। সেটাকে একটি নির্দিষ্ট নামে ডাকলেও যেমন সত্য, না ডাকলেও তেমনি সত্য; নাম দিলেও যতটুকু সত্য, নাম না দিলেও ততটাই সত্য; ঘটনার কারণ ব্যাকটেরিয়াই হোক কিংবা ভাইরাস- ঘটনা ও বহিঃপ্রকাশ যদি থাকে, তাহলেই তা সত্য হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই, জীবনীশক্তির বিশৃঙ্খলাজনিত সত্যটি যেখানেই থাকবে– সেখানেই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ আছে। এবার তাকে আপনি ক্যান্সারই বলুন, আর কভিড-১৯ ই বলুন, কিংবা কোন নাম যদি না-ও দেন তবু।
এজন্যই আমার কথা ‘প্রায় সব অস্বাভাবিকতাকেই দূর করতে পারে’ কথাটা সবাইকে স্মরণ রাখতে অনুরোধ করছি। হোমিওপ্যাথি সমস্ত অস্বাভাবিকতাতেই ক্রিয়াশীল হতে পারে কিন্তু দূর করার সময় আমি ‘প্রায় সব’ শব্দদুটো উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে- আমাদের ভুলের জন্যই হোক কিংবা বহু স্বাভাবিক প্রাকৃতিক, ফিজিওলজিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল কারণে কিছু অবস্থা থেকে মানুষ আরোগ্য হবে না, প্রাকৃতিক নিয়মেই হতে পারে না; মানুষকে মরতে হয়। তাছাড়া এমন কিছু উপসর্গ আছে যেগুলোকে আমরা রোগ বলে মনে করি, কিন্তু সেগুলো আসলে রোগ নয় (False Chronic Diseases)- কাজেই তার সাথে ঔষধের তেমন কোন সম্পর্কও থাকতে পারে না। এই সত্যতার স্বীকৃতিস্বরূপ আমি ‘প্রায় সব’ শব্দটি এখানে যোগ করে রেখেছি- নয়তো নির্দ্বিধায় বলা যেতো, ‘হোমিপ্যাথি সব অস্বাভাবিকতাতেই ক্রিয়া করে এবং তাকে দূর করে’।
যাই হোক, আমার লেখাগুলো অতি-বিস্তৃত পরিসরে চলে যাওয়া নিয়ে পাঠককুলের অভিযোগ রয়েছে; কাজেই এর কলেবর বৃদ্ধি করে আর সবার বিরক্তি উৎপাদন করতে চাই না। নয়তো আমাদের মাঝে এরকম ভুল চর্চা ও ধারণার আরো বহু উদাহরণ এখানে উল্লেখ করার মতো ছিলো। কিন্তু এটাও সত্য- হোমিওপ্যাথির মূলমর্ম যদি একবার আমরা অনুধাবন করতে পারি, তাহলে একটা একটা করে সেগুলো আলোচনা করারও প্রয়োজন থাকবে না। ছোট এই প্রবন্ধে আমাদের ভ্রান্ত ধারণাগুলোর বিপরীতে সেই মর্মবানীটাকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সত্যকে নিজ স্বরূপে প্রকাশ করাটা- আমাদের কল্যাণ ছাড়া আর অন্য কিছু বয়ে আনবে না। কাজেই, নিজেদের মধ্যে থেকে ভ্রান্তি দূর করুন এবং সমাজের মানুষদের হোমিওপ্যাথির প্রকৃত স্বরূপ ও সম্ভাব্যতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিন; তাতে আমরা উভয়পক্ষই অশেষ উপকার লাভ করতে পারবো।
Discussion about this post