ডা. শাহীন মাহমুদ:
প্রথমেই স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি- বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের চিকিৎসা হোমিওপ্যাথগণ করতে পারবেন এই সংবাদটি শুনে। বলার অপেক্ষা রাখে না- জনকল্যাণে বাংলাদেশ সরকারের এ পদক্ষেপ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের এত দ্রুত এই অনুমোদন অর্জন করাটি নিঃসন্দেহে একটি অভাবনীয় সাফল্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হোমিওপ্যাথিক সমাজের সাফল্যের এটা কেবলমাত্র শুরু। আমরা যদি উপলব্ধি করি, সামনে যে পথটি আছে- সেটা আমাদের কাছে অসীম দায়িত্বপূর্ণ।
প্রথমত, হোমিওপ্যাথিক কম্যুনিটি সরকার কর্তৃক করোনা চিকিৎসার এই সুস্পষ্ট অনুমতি সম্ভবত পৃথিবীর আর কোন দেশে পায়নি। আমরা পেলাম। আর এর সাথে সাথে আমাদের যে কাজগুলো করার উপায় তৈরি হলো-
১. বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ রোধ করে- প্রায় ১৭ কোটি মানুষের জীবনের সুরক্ষার বন্দোবস্ত করা
২. হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাব্যবস্থার সক্ষমতার প্রমাণ সবার সমগ্র বিশ্বের সম্মুখে তুলে ধরা
প্রথমে আমি আমাদের সুরক্ষার ব্যাপারে কথা বলছি। আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি- অন্য কেউ জানুক না জানুক, আমরা হোমিওপ্যাথগণ জানি- যে কোন একিউট ও মহামারীতে হোমিওপ্যাথি কত বিস্ময়কর দ্রুততায়, নির্মূলভাবে, সফলতার সাথে আরোগ্যকারী ক্রিয়া প্রদর্শন করতে পারে। হোক সেটা ব্যাকটেরিয়াল, ভাইরাল বা ফাঙ্গাল। প্রচলিত ধারার চিকিৎসাব্যবস্থায় বলতে গেলে ভাইরাস-জনিত রোগ থেকে আরোগ্যকারী কোন ঔষধ নেই- তা সে যত সামান্য আক্রমণই হোক না কেন। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে বহু বার বহু সংক্রমণকে প্রতিহত করে সে এই আরোগ্যক্ষমতার বহু নজির স্থাপন করে আছে। আমরা জানি, আমাদের চিকিৎসাপদ্ধতির ভিত্তি, দর্শন ও বিজ্ঞান- এটিকে আমাদের কাছে সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত করে।
আমি আমাদের হোমিওপ্যাথিক সমাজকে বলতে চাই- এতদিন ধরে আমাদের মধ্যে যারা আশঙ্কা, ভীতি, ত্রাস নিয়ে সময় ব্যয় করেছেন সেটাকে ঝেড়ে ফেলুন। রোগ যত সামান্যই হোক, তার যদি আরোগ্যকারী উপায় না থাকে- তবে তা অসীমরূপে ভীতিকর। কিন্তু রোগ যত কঠিনই হোক, যদি তার আরোগ্যকারী উপায় থাকে- তবে সে সম্বন্ধে প্রকৃতপক্ষে ভয়ের আর কিছুই থাকে না। একবার কল্পনা করুন- পুরো বিশ্ব আজ যেমন প্রচলিত ধারার চিকিৎসার উপর নির্ভর করে বসে আছে; হঠাৎ এসময় যদি ঘোষণা করা হয় যে- করোনা ভাইরাস আরোগ্যের ঔষধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ আছে – তাহলে সর্বত্র কেমন স্বস্থির বাতাস বয়ে যাবে! আজকের এই উদ্বেগ, আরোগ্যকারী চিকিৎসা না থাকার উদ্বেগ।
কিন্তু আমরা হোমিওপ্যাথগণ জানি যে, আমাদের কাছে এর আরোগ্যকারী চিকিৎসা আছে, সেটা বলতে গেলে একমাত্র আমাদের কাছেই আছে এবং সেটা বাংলাদেশে পর্যাপ্ত-পরিমাণে মজুদ আছে। কাজেই, কেউ স্বীকার করুক না করুক এবং চলমান ধারার মানুষগুলোর কাছে যতটা হাস্যকারই মনে হোক- বর্তমানে বাংলাদেশকে রক্ষার দায়-দায়িত্বের আসলে পুরোটাই এখন আমাদের কাঁধে। আমরা যদি কাজটি দক্ষতার সাথে, যথাযথরূপে সম্পন্ন করতে পারি- তাহলে এটি বিশ্বের বুকে সৃষ্টি করতে যাচ্ছে একটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখন- সেই দক্ষতাটির, সেই সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনাটির।
প্রথমে, আমাদের কম্যুনিটির এই রোগটি সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরো একটু গভীরভাবে বিচার করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। হোমিওপ্যাথি অতীতে বহুবার কলেরা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ইয়ালো ফিভার, স্প্যানিশ ফ্লু, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া ইত্যাদি মারাত্মক সব মহামারীতে ব্যাপক সফলতার সাথে চিকিৎসা প্রদান করেছে। আমাদের সামনে আরেকটি প্রাণহানিকর মহামারী এসে উপস্থিত। কিন্তু আমি একটু আগেই বলেছি, সেটা কতটা প্রাণহানিকর তা নির্ভর করে, চিকিৎসাব্যবস্থাটিতে আরোগ্যকারী উপায় কতটা আছে- অনেকটাই তার উপর। কাজেই, অন্য সবাই এটিকে যত বড় সন্ত্রাস হিসাবে দেখছেন, রোগটির সামনে যতটা হীনমন্য, নিরাশ হয়ে পড়ছেন, যত বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন- আমাদের তা হবার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
একটা সর্দি, যা ধীরে ধীরে কয়েকদিন ধরে বাড়তে থাকে এবং ৭/৮ দিন ধরে সেই সর্দি বা শ্বাসযন্ত্রসম্বন্ধীয় লক্ষণগুলোরই বৃদ্ধি ঘটায়- সেখানে আমাদের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় থাকে রোগীকে আরোগ্য করার। বিশেষ করে, যদি রোগী আগেই তার জীবনীশক্তিকে Immuno-suppressant, বিভিন্ন এলোপ্যাথিক ঔষধ, মাদক ইত্যাদি এবং আগে থেকেই জটিল কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনারোগ্য পর্যায়ে ধ্বংস না করে থাকে। আমি মনে করি, আমাদের মোটামুটি মানের একজন চিকিৎসকও যদি যথাযথ পর্যবেক্ষণ করে, লক্ষণসমষ্টি সাদৃশ্যে ঔষধ প্রয়োগ করেন- তাহলে রোগী প্রথম ঔষধের পরই আরোগ্য হবে। শ্রদ্ধেয় ডা. জর্জ ভিথোলকাস আরো জোরে দিয়ে বলেন, সে আরোগ্যটি হবে ত্বরিৎ আরোগ্য- ঢিমেতালা কিছু নয়।
এবার এমনকি আমাদের সেই চিকিৎসক যদি খুব বেশি দক্ষও না হন, তাহলেও তার অন্তত ৭দিনে ৭ বার সুযোগ থাকছে- নিজেকে সংশোধন করার এবং আরোগ্যকারী ঔষধটি রোগী গ্রহণ করা-মাত্রই রোগ যে স্টেজেই থাকুক, সুস্পষ্টরূপে আরোগ্য হওয়া শুরু হবে। হোমিওপ্যাথির আরো একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা অভিজ্ঞ চিকিৎসক মাত্রেই জানেন- রোগীর অবস্থা যত জরুরি থাকে, ঔষধের ক্রিয়াশীলতা সেখানে তত দ্রুতগতিতে দেখা দেয়। যেখানে কলেরার মতো মহামারীগুলোতে আমাদের উত্তরসূরীগণ চমক দেখাতে বরাবর সক্ষম হয়েছেন, সেখানে এতটা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এই ইনফ্লুয়েঞ্জাতে রোগীকে আরোগ্য করা কাজটিতে আমাদের একটিবারও ব্যর্থ হওয়ার কথা নয়।
দ্বিতীয়ত, এতদিনে মিডিয়া মারফত সঞ্চিত জ্ঞানে আরেকটি ভাবনা আমাদের চিন্তার জগতে বিরক্তি উৎপাদন করতে পারে। তা হচ্ছে- এই ভাইরাসটির মিউটেশনের ধরণ। অনেকেই চিন্তা করতে পারেন- এটি যেহেতু রোগীদেহে মিউটেশন হয়, সেখানে আমরা কি করবো! প্রথম কথা হচ্ছে- এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। হোমিওপ্যাথি যেভাবে কাজ করে- সেখানে সে কোন বিরূপ অস্তিত্বের অবস্থানকেই অসম্ভব করে তোলে। তা সেটার বৈশিষ্ট্য যাই হোক না কেন। মিউটেশন রাতারাতি হবার মতো কোন বিষয় নয়। এবং হোমিওপ্যাথ মাত্রই জ্ঞাত যে, এর যে কোন পরিবর্তনের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে- বহিঃপ্রকাশিত লক্ষণ ও লক্ষণসমষ্টির পরিবর্তিত রূপের মাধ্যমে। কাজেই, যারা যথানিয়মে হোমিওপ্যাথির মূলনীতিতে চিকিৎসা পরিচালনা করে যাবেন, তাদের আশঙ্কার কিছু নেই। বরঞ্চ এটি সেইসব হোমিওপ্যাথদের জন্য জন্য শংকার বিষয় হবে যারা লক্ষণসমষ্টি বাদে অন্য আর কোন কিছুর উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করতে চাইবেন। ঠিকঠাকভাবে চললে, আপনার সম্মুখে সবসময় পথ ও পথনির্দেশ দু’টোই থাকছে।
কিন্তু তাই বলে, কেবল করোনা নয়- যে কোন সংক্রমণকেই অবহেলার দৃষ্টিতে দেখবে- সেটাও কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং সেটা করলে, তার খেসারত নিজের জীবন দিয়েও দিতে হতে পারে। হোমিওপ্যাথি সবকিছুকে তার স্ব-আকৃতিতে, তার সত্যিকারের নিজস্ব প্রকৃতিতে দেখতে সেটায় কিন্তু সে দেখাটা সিরিয়াসভাবে- হালকা ভাবে নয়। এটিকে আমরা যেমন ভয় পাবো না, তেমনি এটিকে ছড়িয়ে পড়ার বিন্দুমাত্র সুযোগও দেবো না। আধুনিক স্বাস্থ্যবিধির আবিষ্কারক আমাদের শিক্ষাগুরু মহাত্মা ডা. হ্যানিমান- এটা আমাদের ভুললে চলবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, মাইক্রোস্কোপ প্রস্তুতেরও আগে জীবাণুর অস্তিত্ব সম্বন্ধে সতর্ককারী শিক্ষাদাতা, হোমিওপ্যাথির আবিষ্কারকও এই ডা. হ্যানিমান। আমাদের পর্যাপ্ত ও উপযু্ক্তরূপে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং রোগীদেরকেও সে ব্যাপারে পরিপূর্ণরূপে সজাগ করতে হবে।
যাই হোক, এবার আরেকটু গভীর প্রসঙ্গে আসি। এত সুযোগ ও সক্ষমতা নিয়ে আমরা কাজটি কিভাবে করবো? আজকেই একজন প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আমাদের মাঝে অনেক হোমিওপ্যাথেরই চিকিৎসাক্ষেত্রে খুব বেশি দক্ষতা নেই, এবার তাহলে কি হবে?’। হ্যা, উপরের দু’টো ব্যাপারকেই আমাদের গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। কারণ, আজ হোমিওপ্যাথিক সমাজের উপর অর্পিত দায়িত্বটি যথাযথভাবে সম্পন্ন না করা হলে, একদিকে যেমন এই সংক্রমণটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। অন্যদিকে, এতবড় সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও এর যথাযথ ব্যবহার করতে না পারাটা মানব-ইতিহাসে একটি কলঙ্ক হয়ে থাকবে। আজকে আপনি যথাপ্রমাণে যথাযথ ভূমিকা রাখুন- কালকে আমাদের ভিন্ন ধারার চিকিৎসক ভাতৃসম্প্রদায় আপনাকে সম্মান করতে বাধ্য হবে। আর এজন্য প্রথমেই চিন্তা করতে হবে- আমরা কি করবো? কিভাবে করবো?
এই কাজটি আমরা মূলত দু’ভাবে করতে পারি-
ক) কোনরকম নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণ ও পারস্পরিক সমন্বয়, সহযোগিতা ছাড়াই সবাই চিকিৎসা করা শুরু করবে। যার যেমন ইচ্ছা চিকিৎসা দিতে থাকবে। বড়জোর কোন কলেজ বা সংগঠন থেকে সংঘবদ্ধ উদ্যোগে চিকিৎসা করা হবে। ফ্রি চিকিৎসার বিজ্ঞাপন হবে। চটকদার পাণ্ডিত্য হবে। এবং এভাবে আমাদের দেশের চিকিৎসকগণ একেকজন একেক ঔষধ সম্বন্ধে মতামত দিতে থাকবেন, একেক সংগঠন একেক ঔষধ সম্বন্ধে আশ্বাস প্রদান করবেন। এমনকি এটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, হৈ-হট্টগোল হওয়াও অসম্ভব নয়। মধ্যখান থেকে, একটি ব্যাপক সংখ্যক চিকিৎসক ‘করোনা রোগে’র ঔষধ কোনটা হবে- সে সম্বন্ধে বিচিত্র সব ধারণা লাভ করবেন।
খ) পূর্ণ ও সমন্বিত একটি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা। সমস্ত তথ্য মাঠপর্যায় থেকে যেরকম এই ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গুরুত্বসহকারে সংগৃহীত হবে। তেমনি উপযুক্ত কেন্দ্রীয় গবেষকবৃন্দের ও চিকিৎসক টিমের সিদ্ধান্ত, ঔষধ-সংক্রান্ত নির্দেশনা, জেনাস এপিডেমিকাস ফাইন্ডিংস, চিকিৎসকদের নিজেদের নিরাপত্তাজনিত বিষয়াদি ও সতর্কতা ইত্যাদি বিষয়গুলো মাঠপর্যায়ে সুশৃঙ্খলভাবে সরবরাহ করা হবে। বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডকে এখন এই দায়িত্বটি নিতে হবে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ের চিকিৎসা সেল তাকেই গঠন করতে হবে। এবং তারাই কলেজ ও সংগঠনগুলোকে কেন্দ্র করে তাদের অবকাঠামোকে সাজাবেন।
কোন সন্দেহ নেই, এ দুই ধরণের কাজের মধ্যে দ্বিতীয়টি অবশ্যই উত্তম হবে। বিশেষ করে, জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ, সম্মিলিত প্রচেষ্টার কোন বিকল্প নেই, বিকল্প থাকতেও পারে না। আর হ্যা, দ্বিতীয় কর্মপরিকল্পনাটির আরেকটি সুবিধা হচ্ছে- এখানে মাঠপর্যায়েও অবকাঠামোর সর্বনিম্ন পর্যায়ের গ্রুপটিতে অদক্ষ চিকিৎসকও যোগদান করে- কয়েকদিনের মধ্যেই এই ব্যাপারে দক্ষ হয়ে উঠার সুযোগ তার থাকবে। কাজেই, আমার দ্বিতীয় প্রশ্নটির সমাধানও এই সুশৃঙ্খল কর্মপদ্ধতিটিতেই আসতে পারে।
কেবল তাই-ই নয়। আমার আলোচনার যে দ্বিতীয় প্রসঙ্গটি আমি উল্লেখ করে এসেছি ‘হোমিওপ্যাথির সক্ষমতাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা’; একটু লক্ষ করলেই সবাই বুঝতে পারবেন- প্রথম উপায়ে তা বাস্তবায়ন করা কোনক্রমেই সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশে আজ কোরোনার ডায়াগনোস্টিক কিটসই নেই। হোমিওপ্যাথি যেহেতু লক্ষণনির্ভর চিকিৎসা। সেটি ছাড়াও এতে আরোগ্য প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে না। কিন্তু ব্যাহত হবে, এই ক্ষেত্রটিতে হোমিওপ্যাথদের ভূমিকাটির স্বীকৃতি। আজকে আমাদের চিকিৎসকগণ তাদের জীবন বাজি রেখে মানুষকে আরোগ্য করবেন। আগামীকালের সুদিনের আলোয় বসে অনায়াসেই বলা যেতে পারে, ‘বাংলাদেশে করোনা আসলে তেমন একটা আক্রমণই করে নি। আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় দেশটা সর্দি-কাশি-ঠান্ডা দিয়ে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলো; যেমনটা প্রতিবছরই হয়। হোমিওপ্যাথগণ সেগুলোর চিকিৎসা করে নিজেদের কেউকেটা ভাবছে। এলোপ্যাথরাই করোনার সাথে পারে না! আর হোমিওপ্যাথরা দাবী করে…………….” ইত্যাদি ইত্যাদি।
হ্যা, কে কি বললো, কে স্বীকৃতি দেবে কি দেবে না- তার উপর নির্ভর করে, মানবকল্যাণের এই কাজটি থেকে আমরা নিবৃত্ত হবো না। কিন্তু যদি উপায় থাকে, তবে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ আমরা কেন সংগ্রহ করে রাখবো না? অবাধে ‘যেমন খুশী, তেমন সাজো’ চিকিৎসা চলতে থাকলে- আমাদের চিকিৎসার কোন বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য রেকর্ড থাকবে না। বহু চিকিৎসক সেটা রাখার প্রয়োজনই মনে করবেন না। এটাও সত্যি যে, কোন কর্মকাঠামো না থাকলে- সাধারণ সর্দির চিকিৎসাকেই অনেক চিকিৎসকই অজ্ঞতাবশতই হোক কিংবা কোন পরিকল্পিত উদ্দেশ্যেই হোক- করোনা বলে নির্দিষ্ট করবে, তাকে আরোগ্য করেছে বলে তথ্যবিভ্রাট সৃষ্টি করবে; ফলে ভবিষ্যতে কোন পরিসংখ্যানেই সেই বিশৃঙ্খল তথ্যগুলো- যুক্তির ভিত্তিতে গ্রহণ করার উপায় থাকবে না। কিন্তু সুশৃঙ্খল উপায়ে, কাঠামোবদ্ধভাবে কাজ করলে- আমাদের প্রতিটি চিকিৎসার রেকর্ড থাকবে। ডায়াগনোসিস থেকে না হোক, লক্ষণ থেকে প্রমাণ করা সম্ভব হবে – করোনার চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিক সমাজের ভূমিকা কি থাকছে। ভবিষ্যতে এই তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান ও তুলনা করার সুযোগ থেকে যাবে।
তাছাড়া আমাদের পূর্ণ সক্ষমতাকে পরিপূর্ণরূপে কার্যকরী করতেও প্রয়োজন হবে দায়িত্বপূর্ণ কর্তৃপক্ষ। এই বিশাল সংখ্যক মানুষকে চিকিৎসা করতে গেলে নিরাপত্তা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। সরকার বা কেন্দ্র থেকে যদি তা সরবরাহ করতে নাও পারে- অন্তত এর ক্রয়মূল্যটি যেন ন্যায্য থাকে, সেটিতে তো অন্তত নজরদারী করতে পারবে! ইতোমধ্যেই আর্সেনিকাম ঔষধটি, সুগার অব মিল্ক, PPE এ সবগুলোর দাম অসাধু ব্যবসায়ীগণ কয়েকগুণ বেশি রাখতে শুরু করেছে। হোমিওপ্যাথগণের নিকট যাতে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও আনুষাঙ্গিক দ্রব্যাদি এই জরুরি সময়ে যতটা সম্ভব সহজলভ্য ও উন্নত মানের হয়- পরিপূর্ণ সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হলে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের কাজটি সহজ করার জন্যও প্রয়োজন কর্তৃত্বকারী কর্মকাঠামোর।
কাজেই, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড, হোমিওপ্যাথিক কর্তৃপক্ষ ও কম্যুনিটিকে আমি শুরুতেই এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ও সতর্ক থাকতে অনুরোধ করছি। আমার বিশ্বাস, আমি এবং আমার মতো আরো যত হোমিওপ্যাথ আছেন- সবাই চাইবেন, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন কর্মপরিকল্পনা থাকুক। আমাদের নিয়ন্ত্রণ, সহযোগিতা, পারস্পরিক সমন্বয়, পরামর্শ, নিরাপত্তা – সমস্ত ব্যাপারে একটি দৃঢ় ভিত্তি ও কাঠামোপ্রবাহ থাকুক। যাতে একদিকে, আমরা যেন এই বিশাল দায়িত্বটিকে আমরা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারি- অন্যদিকে কাজ শেষে, আমাদের সেই কর্তব্যপালনের স্বীকৃতিটি যেন নিশ্চিত হয়।
Discussion about this post