[সিন্থেসিস রেপার্টরী ট্রেজারি ইডিসন, রবিন মারফির রেপার্টরী, এনসাইক্লোপিডিয়া হোমিওপ্যাথিকা, রাডার প্রোগ্রামের ১০.৫ ভার্সান থেকে সংগ্রহকৃত তথ্যের আলোকে এই সংকলনটি করা হয়েছে]
একটি ফেইসবুক পোস্টে আমি সোরিনাম বিষয়ে নিম্নোক্ত ৫টি কিনোট লক্ষণ উল্লেখ করেছিলাম-
১। দরিদ্রতা বা POVERTY
২। চুলকানি বা ITCHING
৩। বিশ্লিষ্টতা বা DECOMPOSITION
৪। সোরা বিষদুষ্টতা বা PSORIC CONSTITUTION
৫। শীতার্ততা বা CHILLINESS
Zaman sarker নামের একজন পাঠক আমার সোরিনাম বিষয়ক পোস্টটিতে POVERTY শব্দটির ব্যাখ্যা করার অনুরোধ জানিয়েছেন। নিম্নে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের দ্বারা আপনার অনুরোধের ব্যাখ্যা দেয়া হলো।
এক আঙ্গুল দিয়ে কোন কিছু শক্ত করে ধরা যায় না, দু আঙ্গুল দিয়ে এক চিমটি বস্তু ধরতে পারবেন, তিন আঙ্গুল দিয়ে তার চেয়ে বেশী কিছু ধরতে পারবেন, চার আঙ্গুল দিয়ে সেরকমই কিছু ধরতে পারবেন, কিন্তু পাঁচ আঙ্গুল দিয়ে বা একটি হাত দিয়ে আপনি একটি বস্তুর সবটুকুই ধরতে পারবেন, আশা করি এই ৫টি মূলসুরকে অনুধাবন করে সোরিনামকে আপনি চিনে নিতে পারবেন। উপরে উল্লেখিত সোরিনামের পাঁচটি মূল সুর বা কীনোট এবং এদের ব্যাখ্যা আপনাদের সামনে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করব ইন-শা-আল্লাহ। আজ “দরিদ্রতা বা POVERTY” নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছি।
১। দরিদ্রতা বা POVERTY – দরিদ্রতা বা দৈন্যতা বা অভাবকে বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ জর্জ ভিথোলকাস ও বিশিষ্ট হোমিও পন্ডিত ডা. রজার মরিসন সোরিনামের সর্বপ্রধান পরিচায়ক লক্ষণ বলে বর্ণনা করেছেন । এই দরিদ্রতা বাহ্যিক বা External এবং অভ্যন্তরীণ বা Internal এই দু’ভাবেই বর্তমান থাকে । বাহ্যিক দরিদ্রতা বা External Poverty তে আমরা দেখতে পাই যে, চরম দারিদ্রতা ও কষ্টকর জীবন যাপন একটি পরিবার বা একটি শিশুকে কিভাবে প্রথমে সোরা ও পরে সোরিনামের রোগীতে পরিণত করে । যেমন ধরুন একটি শিশু দরিদ্র পিতামাতার ঘরে বা দরিদ্র পরিবেশে জন্ম গ্রহণ করল, তার মা গর্ভাবস্থায় পরিমিত পুষ্টি পায়নি, স্বাস্থ্যপ্রদ জীবন যা্পন করতে পারেনি, হয়ত সে শিশুটির পিতা মাতা বিশ্বের হাজারো অভাবক্লিষ্ট শিশুর পিতা মাতার মত অনাহারে অর্ধাহারে থেকে এই শিশুটির জন্ম দিয়েছে, হয়ত মা অসুস্হ অবস্হায় চিকিৎসকের সহায়তা নিতে পারেনি, জনবহুল বস্তিতে থেকে হয়ত তার মা নানা রকম স্পর্শসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত অবস্হাতেই তাকে জন্ম দিয়েছে, এমতাবস্হায় শিশুটি জন্ম থেকেই দরিদ্রতাকে সাথে নিয়েই জন্ম গ্রহণ করল, জীবনীশক্তির একটি দুর্বলতর অবস্হা নিয়েই সে পৃথিবীতে পদার্পণ করল। দরিদ্র পরিবারে অনেক সময় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে প্রয়োজনীয় দৃষ্টি দেয়া সম্ভব হয় না । অপরিস্কার অপরিচ্ছন্নতা ও দরিদ্রতা এই দুটির সমন্বয়ে সতেজ জীবনী শক্তিও দুর্বল হয়ে যায়, আর সুপ্ত সোরা তখন ভেতরে ভেতরে শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে এবং এর পরিণাম ফল হিসেবে দেখা দেয় জীবনী শক্তির দুর্বলতা, তখন এটিকে বলা হয় অভ্যন্তরীণ দ্ররিদ্রতা বা Internal Poverty । ডাঃ ভিথোলকাস একে Depletion of vital force বা জীবনী শক্তির নিঃশেষিত অবস্হা বলে অভিহিত করেছেন । আমরা একে জীবনী শক্তির দৈন্যতাও বলতে পারি । সোরা প্রচ্ছন্ন অবস্হায় সবার মধ্যেই আছে, সে যখন অনুকুল পরিবেশ পায় তখনই কেবল সরূপে আবির্ভূত হয় । অন্য দিকে কোন শিশু হয়ত সুস্হ মায়ের গর্ভে ভাল পরিবেশে জন্ম গ্রহণ করার পরেও বেড়ে উঠার সময় ডে কেয়ার সেন্টারে বা স্কুলে অন্য শিশুদের সাথে মেলামেশা করার কারণে সোরা দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে । আমরা জানি যে সোরা এতটা স্পর্শসংক্রামক যে সেটি বংশ পরম্পরায় বা সামান্য স্পর্শের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে । আবার লন্ড্রিতে একই সাথে অনেকের কাপড় ধুতে দেয়া হয়, সেখান থেকেও যে কোন ব্যক্তি কাপড়ের মাধ্যমে সোরা সংক্রমণের শিকার হতে পারে । তাই দেখা যায় জনবহুল দরিদ্রক্লিষ্ট পরিবারের শতকরা ৮০% লোকজন চর্মরোগে বিশেষকরে স্কাবিজ বা খোস পাঁচড়ায় অধিক আক্রান্ত হয়ে থাকে । সোরিনামের চর্মরোগের অন্য একটি প্রধান উত্তেজক কারণ হচ্ছে অপরিচ্ছন্ন বিছানায় বা পরিধেয় বস্ত্রে ক্ষুদ্র উকুন বা Lice এর সংক্রমণ । এই ক্ষুদ্র উকুনগুলো চর্মে প্রদাহের সৃষ্টি করে এবং জীবনী শক্তির প্রতিক্রিয়ায় উদ্ভেদ রূপে প্রকাশিত হয় । উকুনগুলোকে সরানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই পরিচ্ছন্নতার নির্দেশ দিতে হবে । অপরিচ্ছন্নতা সোরার বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়ক । অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বাস করার কারণে বা অশিক্ষা কুশিক্ষার কারণেও স্বাস্হ্যবান মানুষের জীবনী শক্তিরও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে ।
দরিদ্রতা কারও কাম্য নয়, এমন অবস্হায় কারো কারো মনে হতাশা দেখা দিতে পারে, অনিদ্রা দেখা দিতে পারে, নিজকে হেয় মনে করা, নিজকে গরীব মনে করা বা সম্পদহীন মনে করা, একাকীত্ববোধ, অস্হিরতা, বিষন্নতা ইত্যাদি নানা রকম মানসিক অবস্হা দেখা দিতে পারে । রাত্রে বিছানায় শুয়ে তার অস্থিরতা দেখা দেয়, বিছানার গরমে সে শরীরের এখানে সেখানে চুলকাতে থাকে, মনের অজান্তেই শরীরের এখানে সেখানে চুলকানোর জন্য চামড়া ছড়ে যেতে পারে,পরে সেখানে উদ্ভেদ দেখা দেয়, তখন সে আরও চুলকায়, যত বেশী উদ্ভেদ দেখা দেয় তত বেশী চুলকায়, চুলকাতে চুলকাতে রক্ত বের না হওয়া পর্যন্ত তার নিবৃত্তি হয় না । তার কাপড় পরীক্ষা করলে উদ্ভেদের স্রাব ও রক্ত পাওয়া যায় । চুলকানীর যন্ত্রণায় সে হতাশাগ্রস্হ হয়ে পরতে পারে । কেন্ট রেপার্টরীর মানসিক অধ্যায়ে এ লক্ষণটির রুব্রিকে একমাত্র সোরিনাম ওষুধটিকে প্রথম শ্রেণীর একক ওষুধ হিসাবে পাওয়া যায়,
1. DESPAIR, itching of the skin from.
2. SADNESS, mental depression, itching from.
জীবনী শক্তির দুর্বলতা বা Internal Poverty এর কারণে এরা দীর্ঘস্হায়ী ব্যাধি বা ক্রনিক ডিজিজের রোগীতে পরিণত হয়ে যেতে পারে, সুনির্বাচিত ওষুধও এদেরকে রোগমুক্তি দিতে পারেনা,আপনি ওষুধের পর ওষুধ বদলাতে পারেন বা উচ্চ শক্তির ওষুধ প্রয়োগ করে যেতে পারেন, কিন্তু রোগীর জীবনী শক্তির প্রতিক্রিয়া জাগ্রত হয় না, রোগী আরোগ্য লাভ করেনা। কেন্ট রেপার্টরীতে এ লক্ষণটিকে Generalitis অধ্যায়ে Reaction lack of রুব্রিকের অধীনে দেখতে পাবেন । এমতাবস্থায় রোগী তখন আরও বেশী হতাশাগ্রস্হ হয়ে যেতে পারে, সে আরোগ্য সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়তে পারে, কেন্ট রেপার্টরীতে এ লক্ষণটিকে Mind অধ্যায়ে Despair রুব্রিকের অধীনে দেখতে পাবেন । বাহ্যিক দরিদ্রতা একটি রোগীতে সোরিনামকে সক্রিয় হতে সহায়তা করে । কোন রোগীতে হয়তো আমরা উদ্ভেদবিহীন চুলকানি পেতে পারি, কিন্ত সে চুলকানির জন্য যদি বিষন্নতা দেখা দেয় তখন সম্ভবত সোরিনামই হতে পারে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ওষুধ । দরিদ্রতা বা Poverty লক্ষণটিকে আপনারা কেন্ট রেপার্টরীতে, সিন্হেসিস রেপার্টরীতে ও কমপ্লিট রেপার্টরীতে মানসিক অধ্যায়ে ‘ভয়, দরিদ্রতার’ বা ‘Fear, Poverty’ রুব্রিক হিসেবে খুঁজে পাবেন, সেখানে ব্রায়োকে প্রথম শ্রেণীর, সোরিনাম, সিপিয়া, ক্যাল্কেরিয়া কার্ব, ক্যাল্কেরিয়া ফ্লোর কে দ্বিতীয় শ্রেণীর ওষুধরূপে দেখতে পাবেন ।
কিন্তু রবিন মারফির রেপার্টরীর মানসিক অধ্যায়ে ‘Fear, Poverty’ রুব্রিকের বিপরীতে আর্সেনিক, ব্রায়ো ও সোরিনামকে প্রথম শ্রেণীর ওষুধ হিসেবে দেখতে পাবেন। আমার মনে হয় রবিন মারফির গ্রেডিংটি এক্ষেত্রে সঠিক । আর্সের মনে দরিদ্র হবার ভয় থেকে সে কৃপণতা করে, কিন্ত আর্স পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার পরিচয় দেয়, সে সবকিছু গুছিয়ে রাখে, আর্স শীতকাতর, ব্রায়োনিয়াতে প্রলাপ কালেই দরিদ্রতার ভয় বেশী দেখা যায়, ব্রায়ো গরমকাতর, সোরিনাম দরিদ্রতাকে ভয় পায়, কেননা দরিদ্রের কশাঘাত কি মর্মান্তিক সে নিজে উপলদ্ধি করেছে বলে। সোরিনামের দরিদ্রতা একই সাথে মানসিক ও বৈষয়িক, সে জন্য বলা যায়, সোরিনামের দরিদ্রতা আর্থ-সামাজিক, দরিদ্রতা জীবনীশক্তির, দরিদ্রতা দেহের অভ্যন্তরের, দরিদ্রতা দেহের বাইরের অংশের । সোরিনাম প্রচন্ড শীতকাতর, কেন শীতকাতর – উত্তর হচ্ছে – দেহের জৈবনিক কাজ ঠিক মত চলে না বলে। কেন ঠিক ভাবে চলে না, উত্তর হচ্ছে – জীবনীশক্তির দরিদ্রতার জন্য । দেহের চর্ম নোংড়া,অপরিচ্ছন্ন । কেন ? – এখানেও একই উত্তর, জীবনী শক্তির দরিদ্রতার জন্য । আর জীবনী শক্তির দরিদ্রতার পরিপোষক কারণ হচ্ছে আর্থিক দরিদ্রতা । সুতরাং সোরিনামের দরিদ্রতা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন, (Poverty external, Poverty internal)।
(Robin Murphy)
Mind – FEARS, phobias, general –
poverty (32)
১ম শ্রেণীর ৩টি ওষুধ : ARS. BRY. PSOR.
২য় শ্রেণীর ৪টি ওষুধ : Calc. Calc-f. Carc. Sep.
৩য় শ্রেণীর ২৫টি ওষুধ : agath-a. aids. ambr. bamb-a. borx.
cadm-s. calc-s. calc-sil. chlor. coca gink-b. graph. hydrog. iris kali-c. lach.
lyc. meli. merc. moni. nit-ac. nux-v. puls. stann. sulph.
Discussion about this post