ডা. শাহীন মাহমুদ:
১৯১৮ সাল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে ঢাকা পড়ে গেলেও, ঠিক বর্তমান সময়ের মতো এক দুর্যোগ দেখা দিয়েছিলো পৃথিবী জুড়ে। একটি ফ্লু দেখা দেয় ও বৈশ্বিক মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে, আমরা যাকে আজ ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ বলে জানি। নাম শুনে মনে হতে পারে, ফ্লু-টি বোধহয় স্পেনে দেখা দিয়েছিলো কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে ও বিশ্বযুদ্ধে এর প্রভাবের কথা চিন্তা করে যুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত দেশগুলো এটির ব্যাপারে তথ্য চেপে যেতে থাকে; ইউনাইটেড স্টেটস, ইউনাইটেড কিংডম ও ফ্রান্সসহ যুদ্ধকালীন সময়ের বেশিরভাগ মিডিয়া প্রাণহানিকর এই রোগটির বিস্তার সম্বন্ধে কোন প্রতিবেদন প্রকাশ করতো না এবং যুদ্ধ নিরপেক্ষ স্পেন এ ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে থাকে। এজন্য আপাতঃদৃষ্টিতে এই ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ স্পেনে হয়েছিলো বলে মনে হয়, কিন্তু আসলে সেটি একটি বৈশ্বিক মহামারী ছিলো এবং এই মারাত্মক ফ্লু-টি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে।
হিসাব করা হয় যে, এটি তৎকালীন পৃথিবীর ১.৮ থেকে ১.৯ বিলিয়ন জনসংখ্যার ২৭% কে এটি আক্রান্ত করে। প্রকৃত সংখ্যাটি জানতে পারা কঠিন এবং হিসাবটির ব্যাপারে ব্যাপকরকম ভিন্ন ভিন্ন মতামত দেখা যায়। কিন্তু মোটামুটি যে হিসাব পাওয়া যায় তাতে, এই ফ্লু-তে মৃত্যুসংখ্যা ছিলো অন্তত ৫০ মিলিয়ন, এমনকি তা ১০০ মিলিয়নও হতে পারে। অর্থাৎ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মৃত্যুর চাইতে সংখ্যার চাইতেও বেশি।তাত্ত্বিকভাবে এই স্প্যানিশ-ফ্লুটি পৃথিবীর সকল প্রান্তেই দেখা দিয়েছিলো। ইন্ডিয়াতে দেশটির মোট জনসংখ্যার ৫%, বা মোট ১৭ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ডাচ ইস্ট-ইন্ডিজে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ৩৯০,০০০ জন জাপানিজ এই মারাত্মক রোগটি দ্বারা আক্রান্ত হয়। ব্রিটেনে ২,৫০,০০০ মানুষ মারা যায় এবং ফ্রান্সে ৪,০০,০০০ মানুষ মারা যায়। ইরানে ৯,০২,৪০০ থেকে ২,৪৩১,০০০ জনের মধ্যে একটি সংখ্যার মানুষ মারা যায়। কিছু গ্রাম্য সমাজে তাদের ঘনবসিতপূর্ণ জীবনযাত্রার দরুণ এই মৃত্যু-অনুপাত ছিলো সবচেয়ে বেশি। যেমন বলা যায়- জার্মানের সামোয়া এলাকার ৯০% জনসংখ্যা স্প্যানিশ ফ্লুটিতে আক্রান্ত হয়। ৩০% প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও সাথে ২২% প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা এতে মৃত্যুবরণ করে এবং সাথে ১০% শিশু মারা যায়। সেসময় এই ফ্লুতে ইউনাইটেড স্টেটসের প্রায় অর্ধ-মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। ১৯১৭ সালে ইউনাইটেড স্টেটসের প্রত্যাশিত আয়ু ছিলো ৫১, যা ১৯১৮ সালে ৩৯ তে নেমে যায়।

কিন্তু আজকের আলোচ্য বিষয়, স্প্যানিশ ফ্লু সম্বন্ধে সংবাদ পরিবেশন নয়। প্রাথমিকভাবে, এই ফ্লু-টির একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই সংবাদটুকুর আয়োজন। এর বিস্ময়কর দিকটি হচ্ছে- ফ্লু’টিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছিলো ২০ থেকে ৪০ বৎসর বয়সের মানুষগুলো, যাদের ইমিউনিটি থাকার কথা সবচেয়ে বেশি। এই হিসাবটাকে বিবেচনায় রাখলে, যাদের সবচেয়ে শক্তিশালী রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা ছিলো, তারাই এই ফ্লুয়ের জীবন-সংহারের শিকার হয়েছে! কিন্তু কেন!
গবেষকগণ পরবর্তীতে এর কারণ নির্ণয় করতে ব্যাপক গবেষণা পরিচালনা করেন এবং এই বেছে বেছে এই শক্তিশালী ইমিউনিটি সম্পন্ন ব্যক্তিগণের মৃত্যুর কারণের জন্য দায়ী বলে তারা দেখতে পান – “Cytokine explosion” কে [১]। অনেকের কাছেই ব্যাপারটি সম্বন্ধে ধারণার অস্বচ্ছতা থাকতে পারে বলে, সংক্ষেপে এ ব্যাপারে আমি আলোচনা করে নিচ্ছি।
Cytokine (প্রদাহের বিরুদ্ধে কোষকে সংকেত প্রদানের কাজে সক্রিয় ক্ষুদ্রাকৃতির প্রোটিন) explosion, যাকে বইপত্রের ভাষায় Cytokine release syndrome (CRS) বলা হয়, এটি আসলে এক ধরণের Systemic inflammatory response syndrome (SIRS); অর্থাৎ শরীরের প্রদাহের বিরূদ্ধে তার নিজস্ব ইমিউনিটির প্রতিক্রিয়া ও অতিপ্রতিক্রিয়া থেকে যে সার্বিক উপসর্গগুচ্ছের সৃষ্টি হয় তাকে CRS বলে অভিহিত করা হয়। এটিকে Cytokine storm syndromes (CSS) ও বলা হয়। এবং বিভিন্ন সংক্রমণ (Infections) ছাড়াও, কিছু এলোপ্যাথিক ঔষধের প্রতিক্রিয়া থেকেও এই অবস্থার উদ্ভব ঘটতে পারে। যখন কোন ঔষধ থেকে এই প্রতিক্রিয়ার উদ্ভব ঘটে তখন তাকে Infusion reaction বলে অভিহিত করা হয়। এই প্রক্রিয়াটিতে শরীরের প্রদাহের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ একটি বিশাল সংখ্যক White blood cell সক্রিয় হয় ও Inflammatory cytokines মুক্ত করতে থাকে, কিন্তু এই কাজের দরুন আরো বেশি White blood cells সক্রিয় হয়ে উঠে এবং এই চক্রাকার কর্মকান্ডে (Positive feedback loop) শরীরে Inflammatory cytokines এর একটি তান্ডব শুরু হয়।
শরীরের ইমিউন সিস্টেম যখন কোন প্যাথজেনের বিরুদ্ধে কাজ করা শুরু করে, প্রদাহের বা সংক্রমণের স্থানে শরীরের ইমিউন কোষগুলো এই cytokines উৎপন্ন করা শুরু করে এবং এটি আরো প্রতিক্রিয়াশীল ইমিউন কোষ, যেমন – T-cells, Inflammatory monocytes ইত্যাদি কোষগুলোকে আরো বেশি সক্রিয় করতে থাকে। তার সাথে, Immune cell গুলোর সাথে Pro-inflammatory cytokines এর Cognate receptor এর বন্ধন সৃষ্টি হয়- যা আরো দ্রুতগতিতে, আরো বেশি সাইটোকাইন উৎপন্ন করতে থাকে। আর এই প্রক্রিয়াটি যখন অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় বৃদ্ধি পায়, তখন Systemic hyper-inflammation, Hypotensive shock, ও Multi-organ failure সৃষ্টি করে রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

ঘটনাটি অনেকটা এরকম, শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য কিছু আহ্ববায়ক ও যোদ্ধাকে নির্বাচন করা হলো এবং তারা ডাকাডাকি করে কেবল যোদ্ধা নয়, দেশ-বিদেশ থেকে আরো আহ্ববায়ককে ডেকে রাজ্যে জড়ো করতে শুরু করলো এবং সবশেষে দেখা গেলো এই আহ্ববায়ক-যোদ্ধাদের দাপটে ও ভীড়ে, তাদেরই হৈ-হট্টগোলে, ডাকাডাকি-চেচামেচির বহরে ও সেখানিই নিজেদের প্রতাপ প্রদর্শনের দরুণ রাজ্যটির সমস্ত কর্মকান্ড বাঁধাগ্রস্ত হয়ে, স্থবির হয়ে- যুদ্ধ ছাড়াই ধ্বংস হয়ে গেলো। হাস্যকর মনে হলেও, ঠিক এই ঘটনাটিই ঘটে এই Cytokine release syndrome এর বেলায় এবং তাদের এই তান্ডব বা বিস্ফোরণকেই Cytokine storm বা Cytokine explosion বলা হয়।
যেহেতু শক্তিশালী ইমিউনিটি এই আপাতঃসাধু কর্মকান্ডটি ব্যাপকভাবে উদ্দীপিত করতে পারে, কাজেই শক্ত ইমিউনিটযুক্ত ব্যক্তিবর্গের এই Cytokine storm এ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর এটিই ছিলো স্প্যানিশ ফ্লু-তে ২০ থেকে ৪০ বৎসর বয়সের বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যুর কারণ- যেখানে ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী থাকার দরুন সাইটোকাইনের একটি বড়সড় ঝড় শুরু হয়েছিলো এবং তাদের শরীর অতি-প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিলো।
T-cell therapies ও Non-infectious diseases গুলোতেও এই CRS বা Cytokine reactions ঘটতে পারে কিন্তু আমি এই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছি কারণ অতীতের সমস্ত ইনফ্লুয়েঞ্জা ও সংক্রমণগুলোতে তীব্র CRS বা cytokine reactions ঘটতে বরাবরই দেখা গেছে। Graft-versus-host disease (GVHD), Acute respiratory distress syndrome (ARDS), Sepsis, Ebola, Avian influenza, Smallpox, ও Systemic inflammatory response syndrome (SIRS) তে সুস্পষ্টভাবে এই Cytokine storm তো হতে দেখা গেছেই- বর্তমানের Coronavirus disease 2019 (COVID-19) তেও এটি সহজাতভাবেই পরিলক্ষিত হয়েছে [২]। এতেও এই Cytokine storm এর দরুণ একটি অতি-প্রদাহজনিত অবস্থা (Hyperinflammatory condition) পরিলক্ষিত হয়েছে, যা প্রায়শই ফুসফুসের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে জীবন-সংহারক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। এই অতি-প্রদাহজনিত অবস্থার দরুণ ফুসফুসে এবং হৃদপিণ্ডে Inflammatory lymphocytic ও Monocytic infiltration ঘটেছে, যা পরিণতি পেয়েছে ARDS (Acute respiratory distress syndrome) and Cardiac failure এ। হঠাৎ করে তীব্র লক্ষণ প্রকাশকারী COVID-19 and ARDS রোগীগণের CRS এর ক্লাসিক সিরাম বায়োমার্কার, যেমন – CRP, LDH, IL-6, ও ferritin গুলোর সুস্পষ্ট বৃদ্ধিও দেখতে পাওয়া গিয়েছে।
এবার এই সিনড্রোম যদি দেখা দেয়, তাহলে কি উপসর্গগুলো প্রকাশ পায়? এর প্রাথমিক উপসর্গ সাধারণত জ্বর (তীব্র), দুর্বলতা, ক্ষুধামান্দ্য, পেশী ও সন্ধিগুলোর ব্যথা, বমির ভাব, বমি, ডায়রিয়া, চর্মোদ্ভেদ, শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হওয়া, দ্রুত হার্টবিট, নিম্ন রক্তচাপম, আক্ষেপ, মাথাব্যথা, চিন্তার অস্বচ্ছতা, প্রলাপ, চোখে ভুল দেখা, কম্পন ও হাত-পায়ের ব্যবহারে অসংলগ্নতা [৩]। লক্ষণ ও পরিণতি, দু’দিকেই চলমান কভিড-১৯ সংক্রমণের সাথে কি অপূর্ব সাদৃশ্য, তাই না?
খাস-বাংলায়, এটাকেই বলে মড়ার উপর খাড়ার ঘা। এক ভাইরাসের সংক্রমণেই বিশ্বের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। তার উপর আরো এক কাঠি হয়ে এসেছে, এই Cytokine storm এবং বিষয়টি এমন যে, সাধারণ চোখে, রোগী কি ভাইরাসের আক্রমণে মারা যাচ্ছে, নাকি নিজেরই সাইটোকাইনের আক্রমণে, তা আর বোঝার উপায় নেই। যাই হোক, এই বিষয়টি নিয়ে বললে আরো বহুকিছু বলা যায়। কিন্তু আমি সেদিকে যাচ্ছি না। এই পুরো বিষয়টি উত্থাপন করার কারণটি হচ্ছে, আমাদের মধ্যে যারা কেবলমাত্র ইমিউনিটির শক্তিকে চলমান সংক্রমণ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় ভেবে বসে আছেন, তাদের চিন্তার ফাঁকটিকে তুলে ধরা। আমাদের শক্তিশালী ইমিউনিটি নিয়েও নিশ্চিত থাকার কোন উপায় নেই। আমাদের এই শক্তিশালী ইমিউনিটিই তার পূর্ণশক্তি নিয়ে আমাদের জীবন-সংহারে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। যারা ইমিউনিটি বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ- খাদ্যাভ্যাস, বিশেষ পুষ্টিকর পথ্যগ্রহণ, ঔষধগ্রহণ, ভিটামিন গ্রহণ, ব্যায়াম ইত্যাদি ব্যবস্থার শরণাপন্ন হচ্ছেন- তাদেরকে এই অসংগতিটি স্মরণ করিয়ে দেবার ও তা থেকে মুক্তির উপায়টি জানানোর জন্যই এই লেখাটির অবতারণা।
এটা সত্যি, যে কোন সংক্রমণে দুর্বল ইমিউনিটির লোকের চাইতে শক্তিশালী ইমিউনিটির লোকগুলো বেশি নিরাপদ কিন্তু সেই সাথে স্প্যানিশ ফ্লুয়ের দৃষ্টান্তটিও আমাদের ভুললে চলবে না। ইমিউনিটর সুষমতার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে, শক্তির দিকে কেবল দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে থাকলে- আমাদের বার বারই এই পরিণতির কবলে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থায়, কোন ভাইরাল সংক্রমণেরই আরোগ্যকারী চিকিৎসা নেই- কভিড-১৯ এর কথা তো সুবিদিতই। কোন রোগীর শরীরে সাইটোকাইন বিস্ফোরণ দেখা দিলে, তারা একমাত্র যা করতে পারে তা হচ্ছে কর্টিকোস্টেরয়েড ঔষধের দ্বারা শরীরের ইমিউনিটির সাপ্রেশন। অর্থাৎ, জোর করে শরীরের ইমিউনিটিকে দুর্বল করা। স্প্যানিশ ফ্লু-তে এ্যাসপিরিন দিয়ে যে কাজটি করা হতো এবং কভিড-১৯ এ যে কাজটি করার সুপারিশ করা হয়েছে [৪]। অর্থাৎ, এত কসরৎ করে যে ইমিউনিটিকে আপনি তরতাজা করেছিলেন, সেটিকে আবার জোর করে, চেপে চুপে কমিয়ে ফেলা- যাতে প্রতিক্রিয়াটি কম দেখাতে পারে কিন্তু এর অবধারিত ফল আবার রোগীকে সংক্রমণের প্রতিও দুর্বল করে ফেলা। এটাকে কি সমাধান বলা যেতে পারে? এটাকে কি আরোগ্যকারী ক্রিয়া বলা যেতে পারে? এটাকেই কি ‘জলে কুমীর, ডাঙ্গায় বাঘ’ অবস্থা বলে না!
প্রকৃতপক্ষে, ইমিউনিটির একপাক্ষিক বৃদ্ধি ভ্যাকসিনগুলোও করতে পারে কিন্তু আমরা হোমিওপ্যাথগণ অন্তত জানি, মানুষের সার্বিক উন্নয়ন, তার প্রকৃত রোগারোগ্য ও সুস্থতায় এই ভ্যাকসিন আসলে ভূমিকা রাখতে পারে না। সামঞ্জস্যহীন, ভারসাম্যহীন, এক-পাক্ষিক, সীমাবদ্ধক্ষেত্রের শক্তিবৃদ্ধি করে কৃত্রিম ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি কখনো সুস্থতা হতে পারে না, এবং সেটি ইমিউনিটির ক্ষেত্রেও সত্য।
সত্যিকারভাবে বলতে গেলে, মানবজাতি আজ এমন এক বিপদের সম্মুখীন, যেখানে মানুষকে আরোগ্যকারী চিকিৎসাকে গ্রহণ করতেই হবে। নয়তো কোনকিছুই তাকে তার সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। প্রকৃত আরোগ্যকারী চিকিৎসা, ইমিউনিটির অসামঞ্জস্য বৃদ্ধি নয়- ইমিউনিটির সুষম ভারসাম্যসৃষ্টিকারী সুস্থতা-আনয়নকারী চিকিৎসাই মানুষের জন্য চিরকালীন কাম্য ছিলো। কিন্তু এর অস্তিত্ব কি পৃথিবীতে আছে?
এই প্রশ্নের উত্তরে, আমি স্প্যানিশ ফ্লু-য়ের প্রসঙ্গটিতে আবার একটু ফিরে যাচ্ছি। এই সংক্রমণে ব্যাপক সংখ্যক সাদা মানুষ মারা যাবার দরুণ এটিকে “The Great White Plague” নামেও ডাকা হয়। এর ভয়াবহতা ও তীব্রতা এতটাই বেশি ছিলো যে, সকালে যে মানুষটি ঘুম থেকে সুস্থ দেহে উঠতো, সন্ধ্যায় তাকে মৃত বলে ঘোষণা করতে হতো। এবার শোনাবো, এই সাইটোকাইন তান্ডবযুক্ত স্প্যানিশ ফ্লু সংক্রমণে হোমিওপ্যাথি কি করতে পেরেছিলো, তার কিছু বাস্তব তথ্য ও মন্তব্য-
আমাদের বায়োগ্রাফি সেকশনে Dr. H. A. Roberts এর জীবনী যারা পড়েছেন, তারা জানেন তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একমাত্র হোমিওপ্যাথ ছিলেন, যিনি ট্রুপ শিপে চিকিৎসক হিসাবে রত ছিলেন। “সেসময় ট্রুপ শিপগুলোতে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায়- শিপের সমস্ত কফিনগুলো মৃতদেহে পূর্ণ হয়ে যেতো। কোন কফিনই অবশিষ্ট থাকতো না। প্রচলিত চিকিৎসা বরাবরের মতোই সেখানে মৃতদের সংখ্যা কমাতে ব্যর্থ ছিলো। রবার্টের জাহাজ পোর্টে ফেরত এলে, কমান্ডার রবার্টকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আপনার সব কফিনই কি ব্যবহার করে ফেলেছেন?” একমাত্র জাহাজটিতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছিলো, সেই জাহাজের চিকিৎসক ডা. রবার্টের উত্তরটি ছিলো- “হ্যা, ব্যবহার করেছি কিন্তু একজন মানুষকেও আমরা হারাইনি” (অসুস্থদের শোয়ার কাজে ব্যবহার করেছেন)”।[৫]
“ফিলাডেলফিয়ার Dean W. A. Pearson এই ইনফ্লুয়েঞ্জার ২৬৭৯৫ টি কেইস সংগ্রহ করেন, যাদেরকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রদান করা হয় এবং এর মৃত্যুহার ছিলো ১.০৫%, যেখানে প্রচলিত ধারার চিকিৎসায় মৃত্যুহার ছিলো গড়ে ৩০%”। [৬]
“কানেকটিকাটের ৩০ জন ফিজিশিয়ান আমার চাওয়া তথ্যের ব্যাপারে সাড়া দেন। তারা ৬৬০২ টি কেইস রিপোর্ট করেন, যেখানে মৃত্যুসংখ্যা ছিলো ৫৫ জন, যা আসলে ১% এরও কম। পরিবহণ ব্যবস্থায় পরিভ্রমণরত অবস্থায় আমি ৮১ টি কেইস দেখেছি। প্রত্যেকেই আরোগ্য হয়েছে এবং সুস্থভাবে অবতরণ করেছে। প্রতিটি ব্যক্তিই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পেয়েছেন। অন্য একটি জাহাজে চলার পথেই ৩১ জন মারা গেছে” [৭]। [H. A. Roberts, MD, Derby, Connecticut.]
“৮০০০ লোকের কাজের একটি প্ল্যান্টে কেবলমাত্র একজন মারা গিয়েছিলো। রোগীদের ঔষধ দিয়েই মৃত্যুর দুয়ারে টেনে নেয়া হয়নি। বাস্তবে জেলসিমিয়ামই ছিলো একমাত্র ঔষধ যা ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা কোন এ্যাসপিরিন বা ভ্যাকসিন ব্যবহার করিনি” [৮]। [Frank Wieland, MD, Chicago]
“আমি ইনফ্লুয়েঞ্জার একটি মাত্র কেইসেও ব্যর্থ হইনি; নিউমোনিয়াতে আমার চিকিৎসায় মৃত্যুহার ছিলো ২.১%। প্রচলিত ধারার চিকিৎসায় এ্যাসপিরিন ও কুইনাইনের মতো স্যালিসাইটসগুলো ছিলো তাদের প্রায় একমাত্র সম্বল এবং তাদের নিউমোনিয়ার ৬০% রোগীতে ব্যর্থ হবার কথোপকথন শোনাটি ছিলো একটি অতি সাধারণ ঘটনা” [৯]। [Dudley A. Williams, MD, Providence, Rhode Island]
“কলম্বিয়া জেলার Homeopathic Medical Society তে ১৫০০ কেইসের রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে কেবলমাত্র ১৫টি মৃত্যু হয়েছে। National Homeopathic Hospital এর আরোগ্যের হার ছিলো ১০০%” [১০]। [E. F. Sappington, M. D., Philadelphia]
“আমি ইনফ্লুয়েঞ্জার ১০০০ কেইস চিকিৎসা করেছি। প্রমাণস্বরূপ, আমি আমার কাজগুলোর রেকর্ড সংরক্ষণ করেছি। আমি একটি কেইসও ব্যর্থ হইনি। অনুগ্রহ করে এর সমস্ত সম্মান হোমিওপ্যাথিকে প্রদান করুন, এই স্কটিশ-আইরিশ আমেরিকানকে নয়” [১১]। [T. A. McCann, MD, Dayton, Ohio]
“পিটসবার্গ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বহুসংখ্যক কেইসে ব্যর্থ হওয়ায়, তার নার্সকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, করার মতো এর চাইতে ভালো কোনকিছুর খোঁজ সে (নার্স) জানে কিনা। নার্সের উত্তর, “হ্যা, ডাক্তার। এ্যাসপিরিন বন্ধ করুন এবং একটি হোমিওপ্যাথিক ফার্মাসিতে গিয়ে হোমিওপ্যাথিক ঔষধগুলো নিয়ে আসুন।” ডাক্তারের জবাব, “কিন্তু এটা তো হোমিওপ্যাথি!” নার্সের উত্তর ছিলো, “আমি তা জানি কিন্তু আমি আগে যে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের ওখানে চাকুরী করতাম, সেখানে তিনি একটি কেইসেও ব্যর্থ হননি” [১২]। [W. F. Edmundson, MD, Pittsburgh]
“একটি ঔষধ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে খোদ ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকেও বেশি মানুষের জীবন-সংহারের জন্য দায়ী ছিলো। আপনারা সকলেই ঔষধটিকে জানেন। তাকে স্যালিসাইলিক এসিড বলে দাবী করা হয়। এ্যাসপিরিনের ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে। আজ আপনারা অবগত নন, স্যালিসাইলিক এসিডের সিডেটিভ এ্যাকশনটা কেমন। এটি দুইভাবে ক্ষতি করে। এর পরোক্ষ ক্রিয়াটি এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আসে যে, যতক্ষণ না অবসন্নতা সৃষ্টি হতো ততক্ষণ এ্যাসপিরিন গ্রহণ করে যাওয়া হতো এবং এটি রোগীতে নিউমোনিয়ার উদ্ভব ঘটাতো” [১৩]। [Frank L. Newton, MD, Somerville, Massachusetts]
“৩৫০ টি কেইসের মধ্যে একটি কেইসে ব্যর্থ হয়েছি, যে কেইসটি একটি কু-চিকিসাকৃত নিউমোনিয়া নিয়ে আমার কাছে আসে, যেখানে সে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১০০ গ্রেইন এ্যাসপিরিন সেবন করেছিলো” [১৪]। [Cora Smith King, MD, Washington, DC]
“আমার ঔষধ ছিলো অল্প কয়টা। আমি প্রায় অবধারিতভাবে জেলসিমিয়াম ও ব্রায়োনিয়া দিতাম। প্রথমেই হাতে পেলে, একটি কেইসেও আমি কখনো ব্যর্থ হইনি, যদি না রোগীকে এ্যাসপিরিন কিনতে কোন ড্রাগস্টোর পাঠানো হতো, যে ক্ষেত্রগুলোতে আমার হাতে একটি নিউমোনিয়ার কেইস আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতো” [১৫]। [J. P. Huff, MD, Olive Branch, Kentucky]
“Raymond Seidel, MD, HMD সম্বন্ধে তাঁর এক শিক্ষার্থী বলেন, যে চিকিৎসকের নিকট আমি প্রথম হোমিওপ্যাথিক শিক্ষা গ্রহণ করি (Raymond Seidel), তিনি ফ্লু এপিডেমিকের সময় নিউ জার্সিতে হোমিওপ্যাথদের একটি ডেলিভারি বয় হিসাবে কাজ করতেন এবং সে সময়ই তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি (Raymond Seidel) বলেন, “আমি দেখতাম যে যে লোকগুলো এ্যাসপিরিন গ্রহণ করে- তারা মারা যাচ্ছিলো, সেই সংখ্যার প্রায় অর্ধেক- যারা প্রচুর মদ্যপান করতো, তারাও মারা যাচ্ছিলো এবং যারা হোমিওপ্যাথিক ঔষধ গ্রহণ করছিলো তারা বেঁচে যাচ্ছিলো”। আর এই পার্থক্যটি লক্ষ করেই তিনি ১০ বৎসর বয়সেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন [১৬]।” (একজন শিশুও পার্থক্যটি ধরতে পারে!)
মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে জটিলমাত্রায় সুসংহত ও সমন্বিত (Delicately integrated) এবং বহুমাত্রিক অস্তিত্বশীল (Multi-Dimensional Existent) প্রাণী। মানুষের সার্বিক উন্নতি ও কল্যাণ সাধন সম্ভব কেবল এর প্রতিট মাত্রার এর একটি সুষম উন্নয়নের দ্বারা। মানুষের অস্তিত্বে ইমিউনিটি অনেকটা বাইরের শক্তিস্তরের বিষয়। মানুষের বস্তুগত বা এর সাথে সম্পৃক্ত অংশটি আসলে মানুষের পূর্ণাঙ্গ অস্তিত্বের মাত্রাগুলোর ধারাবাহিকতায় (Hierarchy) নিচের দিকেই অবস্থান করবে। সন্দেহ নেই, ইমিউনিটির দুর্বলতা রোগের আক্রমণকে সুলভ করে তোলে। কিন্তু মহাত্মা হ্যানিমানের প্রশ্ন ছিলো- মানুষের ইমিউনিট কেন দুর্বল হবে! এবং অখণ্ড মানুষকে নিয়ে তার স্বভাবসিদ্ধ গবেষণায়, দু’টো উত্তর তিনি পেলেন। তা হচ্ছে-
১. মানুষের অসংযত জীবনাচরণ, অস্বাভাবিক, অপ্রাকৃতিক জীবনযাত্রার জন্য। এই অস্বাভাবিকতা তার ইমিউনিটিকে সাময়িকভাবে দুর্বল করে ও কিছু উপসর্গ বা কষ্টকর লক্ষণের সঞ্চার করে, যাকে তিনি নাম দিলেন কৃত্রিম চিররোগ (False Chronic Disease)। উন্নত জীবনযাত্রা, উত্তম খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম বা উন্নত স্বাস্থ্যবিধির পদ্ধতিগুলোর উপযুক্ত অনুসরণে ইমিউনিটির সেই দুর্বলতা কেটে যাবে এবং আগে থেকেই ব্যক্তির মাঝে থাকা সুষম ইমিউনিটি তার দুর্বলতা কাটিয়ে আবার যথারূপে সক্রিয় থাকবে। শক্তি (Strenght, Intensity) ও সুষমতা (Equilibrium, Balanced) এক জিনিস নয়। রোগীর ইমিউনিটির শক্তি কমে গিয়েছিলো কিন্তু যতটাই ছিলো, সুষম ছিলো- একারণে ক্রনিক রোগ হতে পারেনি। এবার সেই সুষম ইমিউনিটির শক্তিবৃদ্ধি হওয়ায়, সে দ্রুতগতিতে পূর্বের সুস্বাস্থ্যে ফিরে গেলো।
২. কিন্তু আগের পয়েন্টে উল্লেখ করা ইমিউনিটির এই দুর্বলতা মানুষের রোগের মূল কারণ নয়, তা কেবল রোগের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে বলা চলে। তিনি মূল কারণটিকে তার ১২ বৎসরের গবেষণায় খুঁজে বের করলেন এবং তার মায়াজম থিউরি দিয়ে ব্যাখ্যা করে জানালেন। তিনি তাঁর প্রামাণ্য গবেষণা দিয়ে প্রমাণ করলেন, ইমিউনিটির দুর্বলতাসহ তার স্বাস্থ্যের সমস্ত স্বাভাবিক অবস্থা থেকে বিচ্যুতির প্রকৃত কারণ হচ্ছে মায়াজম। মায়াজমই মানুষের শরীরে ও মনে রোগের প্রকৃত উদ্ভবকর্তা। আমরা এমনও হাজার হাজার ব্যক্তিকে দেখতে পাবো, যারা স্বাস্থ্যবিধির সমস্ত নিয়ম মেনে চলার পরও গুরুতর অসুস্থ, বরঞ্চ এসমস্ত ব্যাপারে অতিসতর্কতা অনেক সময় তার মানসিক রোগ তথা, Hypochondriasis, Neurosis বলেই সনাক্ত করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, এই মায়াজমই আমাদেরকে ক্রনিক রোগসহ, সমস্ত একিউটের প্রতি আক্রমণপ্রবণ (Vulnerable) করে তোলে, রোগের প্রতি আমাদের সংবেদনশীল (Susceptible) করে তোলে।
কাজেই, সেক্ষেত্রে মায়াজমযুক্ত রোগীতে নিছক ইমিউনিটির বৃদ্ধির প্রচেষ্টাটি অনেকটা- টাইফয়েডের রোগী যদি হাত দু’টোর শক্তিবৃদ্ধির জন্য বারবেল টানে- অনেকটা সেই রকম। এই মায়াজমই মানুষের ইমিউনিটির ভারসাম্যহীন (সেটা দুর্বলতা নাও হতে পারে!) অবস্থা সৃষ্টি করে এবং দুর্বলতাও সৃষ্টি করে।
মানুষের মতো সৃষ্টিগতভাবে সুসংহত, বহুমাত্রিক প্রাণীর উন্নয়ন নিছক ইমিউনিটিতেই আবদ্ধ নয়- সেটা আরো বহু উপরে, বহু গভীরে। প্রকৃত দৃষ্টিতে, হোমিওপ্যাথি এই একপাক্ষিক শক্তিবৃদ্ধিকে সমর্থনই করে না- কারণ,
ক) যে কারণে ইমিউনিট দুর্বল হয়েছে, তা দূর না করা হলে যত চেষ্টাই করা হোক সবই পণ্ডশ্রমে পরিণত হবে,
খ) কোন কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় এই এক-পাক্ষিক শক্তিবৃদ্ধি, তাতে আরো নতুন ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করবে, এবং এজন্য আমাদের খেসারতও দিতে হবে। (যেমন আলোচ্য বিষয়, সংক্রমণকালীণ সময়ে সাইটোকাইন বিস্ফোরণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি)
যাই হোক, আমার কথায় আবার কেউ ভেবে বসবেন না- আমি উন্নত জীবনযাত্রা, উত্তম খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, স্বাস্থ্যবিধি ইত্যাদি বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে। মোটেই তা নয়। বরঞ্চ আমিসহ, হোমিওপ্যাথি বলছে- এগুলো আমাদের অবশ্য পালনীয় কিন্তু এগুলোকে সত্যিকারভাবে কার্যকর, সামঞ্জস্যশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ হবার জন্য আমাদের ভারসাম্যহীনতার মূল কারণ, মায়াজম থেকে মুক্ত হওয়াটা অপরিহার্য, অনুপেক্ষণীয়।
আর এটাই হচ্ছে, স্প্যানিশ ফ্লু-তে হোমিওপ্যাথি কার্যকর হবার মূল কারণ। তাদের ইমিউনিটি শক্তিশালী ছিলো কিন্তু ভারসাম্যপূর্ণ ছিলো না। লক্ষ করে দেখুন, হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করার পর কিন্তু তাদের সাইটোকিনেটিক স্টর্মও অনিয়ন্ত্রিত হতে পারেনি! কারণটা একটু আগেই বলেছি, হোমিওপ্যাথিক ঔষধ মানুষের অস্তিত্বের আরো গভীরতর অস্তিত্বে তাকে ভারসাম্যপূর্ণ করেছে, আর সেই স্রোতটি তার বায়োলজিক্যাল, ফিজিওলজিক্যাল, সাইকোলজিক্যাল ও ফিজিক্যাল অস্তিত্বে ও তার আরোগ্যকার্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছে। পূর্বে দেয়া ‘আহ্ববায়ক’দের উদাহরণের সূত্র ধরেই বলছি, হোমিওপ্যাথি শক্তিবৃদ্ধির জন্য আহ্ববায়ক ও যোদ্ধাদের রাজ্যে একত্র করার আগে, তাদের সুষম নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থাটি আগে নেয় এবং একারণে পর্যাপ্ত যোদ্ধা সংগ্রহ করা হয়ে গেলে প্রক্রিয়াটিকে বন্ধ করতেও জানে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, ইমিউনিটি নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে, সে অনুযায়ী রোগের এই মৌলিক কারণটি বোধহয় দৃষ্টি, মন ও মস্তিস্কের আড়ালেই চলে যাচ্ছে! নতুন শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকগণের হয়তো রোগের প্রতি প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি ও রোগের প্রকৃত কারণ সম্বন্ধে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। একারণে, এই ব্যাপারটি সম্বন্ধে আলোকপাত করাটি জরুরি বলে মনে করেছি। তাছাড়া হোমিওপ্যাথির এই সক্ষমতা, ভারসাম্যপূর্ণ শক্তিবৃদ্ধি ও আরোগ্যের ক্ষমতাটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়- মানবজাতি হয়তো আজকের এই কভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে কোনভাবে রক্ষা পেয়ে যাবে; কিন্তু এটাই শেষ নয়! যতদিন মানুষ এই আরোগ্যকারী, ভারসাম্যসৃষ্টিকারী ও রোগের মূল কারণ দূরীভূত করতে সক্ষম হোমিওপ্যাথির আশ্রয় না নেবে – একটির পর একটি নিত্য-নতুন দুর্দশায় সে বিপর্যস্ত হতেই থাকবে। যৌক্তিক কারণেই, সে না পাবে রক্ষা, না পাবে মুক্তি।
রেফারেন্স:
১. Barry JM (January 2004). “The site of origin of the 1918 influenza pandemic and its public health implications”. Journal of Translational Medicine. 2 (1): 3. doi:10.1186/1479-5876-2-3. PMC 340389. PMID 14733617
[২, ৪] COVID-19: consider cytokine storm syndromes and immunosuppression, PDaniel F McAuley, Michael Brown, Emilie Sanchez, Rachel S Tattersall, Jessica J Manson, et al. ; The Lancet, March 16, 2020, DOI:https://doi.org/10.1016/S0140-6736(20)30628-0
[৩] Lee DW, Gardner R, Porter DL, Louis CU, Ahmed N, Jensen M, et al. (July 2014). “Current concepts in the diagnosis and management of cytokine release syndrome”. Blood. 124 (2): 188–95. doi:10.1182/blood-2014-05-552729. PMC 4093680. PMID 24876563
[৫,৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬] Influenza-1918: Homeopathy To The Rescue, The New England Journal of Homeopathy, Spring/Summer 1998, Vol.7 No.1
৬. Homeopathy In Influenza- A Chorus Of Fifty In Harmony, W. A. Dewey MD, Journal of the American Institute of Homeopathy, 1920
Discussion about this post