নাম: মাস্টার বি.
ঠিকানা: কেরানিগঞ্জ, বাংলাদেশ
বয়স: ৬ বৎসর
জেন্ডার: পুরুষ
ধর্ম: মুসলিম
প্রধান সমস্যা:
বৎসর দু’য়েক যাবৎ জয়েন্টগুলোতে ব্যথা। শরীরের প্রায় সমস্ত সন্ধিতেই ব্যথা, বড় জয়েন্টগুলোতে তা ভালোভাবে লক্ষণীয়। বেশি ব্যথাযুক্ত জয়েন্টগুলো স্পর্শ করলে তাপ অনুভূত হয়। ফোলা জয়েন্টগুলো কিছুটা লালচে হয়ে আছে। প্রদাহিত জয়েন্ট। বাংলাদেশের শীতের দিনগুলোতে ব্যথা বেশি অনুভূত হয়। মাঝে মাঝে হঠাৎ জ্বর আসে।
এছাড়া বিগত ৩ বৎসর যাবৎ, হঠাৎ হঠাৎ পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হয়।
অতীত ইতিহাস:
বাচ্চাটিকে সবগুলো শিশু-টিকা দেয়া হয়েছে। হাঁটা ও কথা বলা কিছুটা দেরীতে শিখেছে। তার নয় মাস বয়স থেকে দাঁত উঠা শুরু হয় এবং খুব ধীরে ধীরে দাঁতগুলো গজায়।
পারিবারিক ইতিহাস:
বাবার হৃদপিন্ড সংক্রান্ত গোলাযোগ ও উচ্চ রক্তচাপ আছে, ডায়াবেটিসও আছে। মায়ের বাতজনিত সন্ধিপ্রদাহ ও হাঁটুর অস্টিও-আথ্রাইটিস আছে।
সার্বিক লক্ষণ:
ক) জীর্ণস্বাস্থ্য ও লম্বা। শুকনো শরীরের সাথে তুলনামূলক মাথাটি বড়। মুখে বিষণ্নতা ও যন্ত্রণার অভিব্যক্তি স্পষ্ট।
খ) খাদ্য ও পরিপাক: ক্ষুধা লাগে না। প্রায় সম্পূর্ণ ক্ষুধামান্দ্য। খাবার দাবারে খুব বাছ-বিচার করে। মিষ্টি খুব পছন্দ। আইসক্রিম, দুধ ও ডিম পছন্দ করে। চর্বি পছন্দ করে না। অল্প অল্প করে বার বার পানি পান করার প্রবণতা। ঠান্ডা পানি পান করতে চায়।
গ) রেচন: পায়খানায় কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা। প্রথমে শক্ত হয়, পরে নরম, অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত। মাঝে মাঝে এমনিতেই পায়খানার রাস্তায় রক্তস্রাব হয়। প্রস্রাব স্বাভাবিক কিন্তু দুর্গন্ধযুক্ত। প্রচুর ঘাম হয়। হাতের ও পায়ের তলা ঘামে। পিঠ বেশি ঘামে।
ঘ) ঘুম: ভালো ঘুমায়। ডান কাতে ও চিৎ হয়ে শোয়। ঘুমের মাঝে জলাশয়, ইদুর স্বপ্নে দেখে, মাঝে মাঝেই উড়ছে বলে স্বপ্নে দেখে।
ঙ) তাপ-সংবেদনশীলতা: ঠান্ডায় খুব কাতর। শীতের দিনে তার সমস্যাও বেড়ে যায়। আবার মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া বা বৃষ্টি পড়লেও ব্যথা বেদনা কিছুটা বাড়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। শরীর কাপড়-চোপড়ে ঢাকা রাখতে চায়।
চ) মানসিক বৈশিষ্ট্য: শিশুটি তুলনামূলক চুপচাপ এবং সত্যিকারেই কিছুটা বিষন্ন প্রকৃতির। সেটা বেশ দীর্ঘকাল যাবৎ কষ্টকর রোগে ভোগা ও এলোপ্যাথিক ঔষধের ব্যবহারজনিত নিস্তেজতার দরুনও হতে পারে। এছাড়া অভিভাবকদের তরফ থেকে বিশেষ কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে, এ ব্যাপারে আরো গভীর জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে বলে প্রথমদিন নোট করে রাখা হলো।

তারিখ: 10/04/12 ইং
Calcarea carb – 1M/ 1 dose
SL for 15 days
ফলো আপ:
তারিখ: 25/05/12 ইং
জয়েন্টগুলোর প্রদাহে সুস্পষ্টভাবেই উন্নতি লক্ষ করা গেছে। ফোলাগুলো লক্ষণীয় রকমের কমে গেছে। লালচে ভাবও কম। ব্যথা রোগীর কথায় অর্ধেকের মতো কমেছে। ক্ষুধা আগের চেয়ে বেড়েছে বলে অভিভাবকগণ জানালেন। ঘুম ভালোই আছে। প্রস্রাবের দুর্গন্ধও কমেছে।
SL for 15 days.
তারিখ: 15/06/12 ইং
মাত্র এই কয়দিনেই প্রদাহ প্রায় সম্পূর্ণরূপেই চলে গেছে। দৌড়ালে বা সিঁড়ি বেয়ে উঠলে হাঁটুতে সামান্য ব্যথা অনুভব হয়। হাত দিয়ে ভারী কিছু তুললেও ব্যথা অনুভূত হয়। পায়খানা এখন স্বাভাবিক। প্রস্রাব ও ঘুম স্বাভাবিক।
SL for 15 days.
তারিখ: 29/06/12 ইং
জয়েন্টের ব্যথা, ফোলা ও লালচে বর্ণ সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত।
এইবার তার একবার পায়খানার রাস্তায় রক্তস্রাব দেখা গিয়েছিলো কিন্তু তা আগে যে মাত্রায় দেখা যেতো, তার চেয়ে বহু কম পরিমাণে। পায়খানা, প্রস্রাব ও ঘুম – ভালো।
SL for 21 days.
তারিখ: 21/07/12 ইং
ইতোমধ্যে রোগীর সর্দি লাগে ও গা-ব্যথাসহ সেই সর্দিজ্বরে ভোগে। সেটা অন্য কোন ঔষধ ছাড়াই কাটিয়ে উঠেছে কিন্তু তারপর থেকে বড় জয়েন্টগুলোতে হালকা অস্বস্তি অনুভব করছে। প্রদাহের কোন ভাব দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন জয়েন্টগুলো কিছুটা আলগা হয়ে আছে, একটু ব্যথার অনুভূতিও আছে। সর্দির পর থেকে খাওয়া দাওয়াও কমে গেছে। পায়খানা পরিষ্কারভাবে হচ্ছে না।
Calcarea carb – 1M/1 dose
SL for 15 days.
তারিখ: 10/07/12 ইং
জয়েন্টের অস্বস্তি ও ব্যথা আবারও সম্পূর্ণ চলে গেছে। মলদ্বারে রক্তপাত এর মধ্যে আর কখনো হয়নি। খাওয়া দাওয়াতেও উন্নতি হয়েছে। পায়খানা, প্রস্রাব, ঘুম সব ভালো আছে।
SL for 21 days.
তারিখ: 05/08/12 ইং
বাম হাতে তিনটি ধূসর রংয়ের ফুলকপির মতো আঁচিল দেখা দিয়েছে। এগুলো তারা ১৫ দিন ধরে লক্ষ করছে। এরমধ্যেই একটি বেশ বড় হয়ে গেছে- প্রায় অর্ধ-সেন্টিমিটারের মতো।
Thuja – 1M/1 dose
SL for 15 days
[বিঃ দ্রঃ – নতুন চিকিৎসকদের জন্য বলে রাখি, এগুলো আমার অনেক আগের, অর্থাৎ আমি যখন নতুন চিকিৎসক ছিলাম তখনকার কেইস। আমার বর্তমান অভিজ্ঞতা বলে – আমার আরো অপেক্ষা করা উচিৎ ছিলো; হয়তো এখানে থুজা প্রেসক্রিপশন করার কোন প্রয়োজন হতো না, বা দিলেও আরো অপেক্ষা করে ক্যালকেরিয়ার কাজ দেখে দেয়া উচিৎ ছিলো বা কেইসটির শেষে সাইকোটিক প্রবণতাকে দূর করার লক্ষ্যে প্রয়োজন হলেও হতে পারতো]
তারিখ: 29/08/12 ইং
অভিভাবকদের বক্তব্য মোতাবেক, আঁচিলগুলো শুকিয়ে পড়ে যাচ্ছে। বড়টিকে দেখে মনে হলো, সত্যিই সেটি শুকিয়ে আছে। অন্য দুটি ছোট আঁচিল নেই, শুধু চামড়ায় একটু ধূসর বিবর্ণতা রয়ে গেছে। এছাড়া রোগীর আর সব কিছু ভালো আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রোগীর সেই বিষণ্ন ভাব- ব্যথার উন্নতির সাথে সাথেই কমতে শুরু করে এবং বর্তমানে তার বয়সের সাথে মন-মেজাজের অবস্থা একদমই স্বাভাবিক। পায়খানার রাস্তায় রক্ত আর কখনো দেখা যায়নি।
SL for 21 days.
তারিখ: 22/09/12 ইং
রোগী সম্পূর্ণ ভালো আছে এবং আর কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। এবার রোগীকে একমাসের অনৌষধি দিয়ে দেয়া হলো এবং কখনো কোন সমস্যা হলে যোগাযোগ করতে বলে দেয়া হলো।
রোগী এরপর আর আসেনি।