অনুবাদ: ডা. শাহীন মাহমুদ:
অনুবাদকের কথা: ডা. জর্জ ভিথোলকাসের “Medicine of the New man” বইয়ের “The Patient’s Responsibility” চ্যাপ্টারটার অনুবাদ। হোমিওপ্যাথিক লিটারেচারে, বিশেষ করে রোগীদের জন্য প্র্যাকটিক্যাল এবং গুরুত্বপূর্ণ অল্প কয়েকটি লেখার মধ্যে এটা একটা। চিকিৎসক এবং রোগী- পক্ষেরই উপকার হতে পারে ভেবে অনুবাদ করলাম।
নিখূঁতভাবে সঠিক ঔষধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ রোগীর চিকিৎসাকালীন সময়ের প্রতিটি স্টেজে একটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন, কিন্তু রোগীরও সেক্ষেত্রে প্রভূত পরিমাণ দায়িত্ব-কর্তব্য থাকে। হোমিওপ্যাথি একটি শক্তিশালী এবং কার্যকরী চিকিৎসাব্যবস্থা, কিন্তু সেই সাথে এটা একটা বিরাট রকমের ধৈর্য্যও দাবী করে। কিছু না দিলে, কিছু পাওয়া যায় না। রোগীকে অবশ্যই জীবনের সেই সব ক্ষেত্রগুলোকে মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যেগুলো বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ উপেক্ষা করে যায় এবং এই পর্যবেক্ষণ অবশ্যই নিরপেক্ষ ও নিরাসক্তরূপে করতে হয়।
নিছক রোগের বিস্তারিত বর্ণনাসমৃদ্ধ একটা নোটবুক রেখে, তার মধ্যে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটা নয়- তা বিবেচনার জন্য সেটা চিকিৎসকের কাছে দিয়ে দেয়াটাই রোগীর জন্য যথেষ্ঠ নয়। লক্ষণগুলো হচ্ছে জীবনীশক্তির প্রকাশভঙ্গি, কাজেই তারা হোমিওপ্যাথিক প্রেসক্রিপশনের মূল ভিত্তি। হোমিওপ্যাথদের কাছে সেই লক্ষণগুলোই গুরুত্বপূর্ণ, যা (কেইস) “পুরো” করার চাপে নিছক বলে যাওয়া তথ্য নয়- রোগীর ব্যাপারে যেগুলোর কোন না কোন তাৎপর্য আছে।
দৈনিক জীবনযাত্রার সেইসব পর্যবেক্ষণগুলোই রোগী নোট করবে, যেগুলোর কোন তাৎপর্য আছে; জৈবসত্তা-নিহিত জীবনীশক্তির সৃষ্টি করা প্রত্যেকটি লক্ষণ, তা সে যতই ছোট হোক না কেন, প্রেসক্রিপশনের জন্য পথ দেখাবে।
অন্যদিকে এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে, রোগী আবার ভিন্নপথেও না অতিরিক্ত এগিয়ে যায়। কিছু কিছু মানুষ- প্রেসক্রাইবার যেন ভুল পথে চালিত না হন, সে ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্ক থাকেন, এবং এ কারণে তারা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রায় সমস্ত পরিবর্তনগুলোকেই উপেক্ষা করেন। উদাহরণস্বরূপ, এই ধরণের কোন রোগী যদি বিকেলের কোন একটা বিশেষ সময়ে শীতবোধ হওয়ার একটি নির্দিষ্ট প্রবণতা লক্ষ করেন, তার মন এভাবে সম্ভাব্য ব্যাখ্যা খুঁজতে পারে- হয়তো কেউ ঘরের তাপমাত্রা কমিয়ে দিয়েছে, অথবা হয়তো সে লাঞ্চে কিছুটা বেশি ঠান্ডা পানি পান করেছে, অথবা গতরাত্রে ঠিকমতো ঘুম না হওয়ায় তার মেটাবলিজম স্বাভাবিকের চেয়ে কম হচ্ছে। কেউ যদি আদাজল খেয়ে খোঁজে, বস্তুত সবকিছুকেই এরকম সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারবে। এই পন্থাটি হোমিওপ্যাথদের বিরাট সমস্যার সম্মুখীন করতে পারে, কারণ তাহলে সেখানে প্রেসক্রিপশন করার জন্য প্রায় কোন লক্ষণই পাওয়া যাবে না।
কাজেই, উভয়দিকেই বাড়াবাড়ি করে ফেলা সম্ভব- হয় অসংখ্য লক্ষণের বর্ণনা দেবে, যার ব্যবহারিক গুরুত্ব আছে সামান্যই, অথবা এমন বহু লক্ষণকেই সে ব্যাখ্যা করে উড়িয়ে দেবে- যেগুলো প্রকৃতপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যমপন্থাই সর্বোৎকৃষ্ট। রোগীর এটা বোঝা উচিৎ যে, প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র্য- বিশেষ করে সে নিজে; কাজেই, সহজ কথায় (লক্ষণের) যে কোন ধরণের “খামখেয়ালী” তার এই স্বতন্ত্রতারই বহিঃপ্রকাশ। একই সময়ে, এই সমস্ত পরিবর্তনের উপর রোগীদের “চরম” গুরুত্ব দেয়াও উচিৎ নয়; সে যেগুলো লক্ষ করেছে, সেগুলোর ব্যাখ্যা করা থেকে নিজেদের বিরত রাখা উচিৎ। অন্যথায় তার কোন মারাত্মক রোগ হয়ে গেছে, বা আসলে যতটা না অসুস্থ তার চাইতে বেশি অসুস্থ বলে সে ভাবতে থাকবে। একারণেই আমি একটি নিরপেক্ষ এবং নিরাসক্ত মনোভাব গ্রহণ করার পক্ষে পরামর্শ দেই। এগুলো নিয়ে কোন বিচার বিবেচনা নয়। এগুলো শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তার নিজস্ব পদ্ধতিতে ভারসাম্য রক্ষার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে- স্রেফ তার প্রকাশভঙ্গি।
রোগীর কাজ হচ্ছে, শুধু শরীরের ক্ষেত্রটাতেই নয়- মানসিক ও আবেগের ক্ষেত্রটারও স্বাভাবিক কর্মকান্ড থেকে প্রত্যেকটি বিচ্যুতি প্রেসক্রাইবারের নিকট বর্ণনা করা। হোমিওপ্যাথগণ, শুধুমাত্র একটি এলোপ্যাথিক ডায়াগনোসিস করার লক্ষ্যে- নিছক শারীরিক লক্ষণগুলোতেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেন না। তাদের কাছে রোগীর জীবনের প্রত্যেকটি অঙ্গন থেকে আগত একটি সুবিস্তৃত ধরণের লক্ষণগুচ্ছ- যার মাধ্যমে রোগী নিজেই প্রতিফলিত হয়, যেমন – পারস্পরিক সম্পর্ক, কাজের চাপ, আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া, খাবারের প্রতি আকাঙ্খা ও বিতৃষ্ণা, যৌনচাহিদা, ঘুমের গুণগত মান ইত্যাদি বিষয়গুলোও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এমনকি এলোপ্যাথিক বিচারে নিতান্তই তাৎপর্যহীন ছোট ছোট পর্যবেক্ষণগুলো, হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে – বিশেষ করে তা যদি রোগীকে বোঝার জন্য অর্থবহ হয়। উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক আলসারেটিভ কোলাইটিসে ভুগছে এমন একজন রোগী এলোপ্যাথিক চিকিৎসককে দেখালো। সে তার পুরো কনসালটেশনটাই সাধারণত রোগীর খাদ্যাভ্যাসের পুঙ্খানুপুংখ বর্ণনা নিয়ে কাটিয়ে দেবে। নিশ্চয়ই একজন হোমিওপ্যাথও এগুলো নিয়ে কিছু মাত্রায় আগ্রহী হবেন, কিন্তু সে অনেক বেশি সময় ব্যয় করবে রোগীর জীবনের অন্যান্য অঙ্গনগুলোর ব্যাপারে। একজন হোমিওপ্যাথের কাছে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো হবে, রোগী প্রায়শই উদ্বেগে ভোগে- বিশেষ করে তার ভবিষ্যতের ব্যাপারে- হঠাৎ শব্দ হলে সহজেই চমকে উঠে, ডান কাত হয়ে শুলেই শুধুমাত্র ঘুমাতে পারে, এবং লবণের প্রতি তার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা বিদ্যমান। এলোপ্যাথির ক্ষেত্রটাতে এই রকম তথ্যের টুকরোগুলো অপ্রাসঙ্গিক, কিন্তু হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে এগুলো সরাসরি আরোগ্যকারী ঔষধটাকে পাওয়ার পথ দেখাবে।
ধৈর্য্যহীনতাকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে রোগীর আরেকটি কর্তব্য। এটা ক্রনিক রোগে ভোগা রোগীদের জন্য বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য। পেইন কিলার, ট্রাঙ্কুলাইজার, বা কর্টিসন প্রয়োগের কারণে উদ্ভূত সম্ভাব্য লক্ষণগুলো থেকে কেউ ত্বরিৎ নিরাময় আশা করতে পারে না। অনিদ্রা দূর করা, উদ্বেগ থামিয়ে দেয়া, ব্যথাকে দূর করা ইত্যাদি ব্যাপারগুলোর জন্য হোমিওপ্যাথিতে কোন স্পেসিফিক ঔষধ নেই। হোমিওপ্যাথিক প্রেসক্রিপশনগুলো সবসময়ই সম্পূর্ণ জৈবসত্তার আরোগ্য আনার পরিকল্পনা করে করা হয়। কিছু নির্দিষ্ট রোগলক্ষণের নিছক সাময়িক একটু আরাম নয়, সত্তার প্রতিটা স্তরের সুসামঞ্জস্যপূর্ণ ক্রিয়াকলাপ সৃষ্টিই এর উদ্দেশ্য। কোন কোন সময় এই প্রক্রিয়াটা সপ্তাহের পর সপ্তাহ অথবা মাসের পরে মাস সময় নিয়ে সম্পন্ন হয়, এবং আরো বেশি বাজে কেইসে এক বা দুই বছরও লাগতে পারে।
কারোরই অতিরিক্ত অধৈর্য্য হওয়া চলবে না। কখনো কখনো রোগীরা এই ধারণা নিয়ে হোমিওপ্যাথগণের সাথে কনসাল্ট করতে আসে- যেন সামনে একটা মিরাকল ঘটতে যাচ্ছে, এবং সেক্ষেত্রে উন্নতিটা যখন তাদের প্রত্যাশার চাইতে ধীরে পরিলক্ষিত হয়, তারা হোমিওপ্যাথির দুর্নাম করা শুরু করে ও অন্য থেরাপির আশ্রয় খুঁজতে থাকে। প্রকৃতির নিয়ম তার নিজের গতিতে চলবে, এবং ধৈর্য্যহীনের তাগাদায় তার অগ্রগতি বিন্দুমাত্রও ত্বরাণ্বিত হবে না।
আরোগ্যের জন্য প্রকৃত সময়টা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। প্রথমটা হচ্ছে, চিকিৎসাকালীন সময়ে রোগীর জীবনীশক্তির সাবল্য। শক্তিশালী কন্সটিটিউশনের একজন রোগী নাটকীয় দ্রততায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, কিন্তু দুর্বল জীবনীশক্তিবিশিষ্ট কারো আরোগ্যে আরো বেশি সময় লাগে। শক্তিশালী রোগীর হয়তো মাত্র একটা প্রেসক্রিপশন লাগবে, কিন্তু দুর্বলজনের ক্ষেত্রে হতে পারে খুব সতর্কভাবে প্রয়োগ করা ঔষধের একটা সিরিজই প্রয়োজন হবে।
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাবল্যের একটা বড় অংশই নির্ধারিত হয় বংশগত প্রভাবের উপর। বহু ক্রনিক রোগের প্রার্দুভাবযুক্ত পরিবার থেকে আসা রোগীর আরোগ্যের জন্য বেশি সময় প্রয়োজন হবারই সম্ভাবনা। তার সাথে, রোগীর যদি কঠিন রোগে ভোগার ইতিহাস থাকে, বিশেষ করে সেগুলো যদি বহু এলোপ্যাথিক ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে- তাহলে তা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে আরো বেশি ঝামেলা নিয়ে উপস্থিত হয়। এবং সর্বশেষ, রোগী যদি বাজে খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামহীনতা, ও মাদক বা এলকোহল ব্যবহারের লম্বা ইতিহাস নিয়ে আসে- সেখানে কেবলমাত্র একটা বিস্তৃত লম্বা সময়ের পরই সে আরোগ্য আশা করতে পারে।
চিকিৎসক নির্দেশিত ঔষধটি খুঁজে পেতে কতটা সময় নিয়েছেন, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটিও একটি বিষয়। এটা সহজ কাজ নয় এবং এটা সুসম্পন্ন করতে কিছুটা সময়ও লাগতে পারে। এলোপ্যাথিক প্রেসক্রিপশন পদ্ধতিতে আরামপ্রদানকারী ঔষধটা খুঁজে বের করতে আপেক্ষিকভাবে খুব বেশি বিচার-বিবেচনার প্রয়োজন হয় না, এবং তাতে অভ্যস্থ রোগীরা প্রথমে হোমিওপ্যাথিক ব্যবস্থাপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রণালীবদ্ধ এবং যন্ত্রণাদায়ক প্রক্রিয়া দেখে প্রথমে হতাশ হতে পারে। কদাচিৎ এমন রোগীর সাথেও সাক্ষাৎ হয়, আপাতঃদৃষ্টিতে অপ্রাসঙ্গিক খুঁটিনাটি বিষয়ে সতর্ক কৌতুহল এবং প্রচুর সময় নিয়ে বই ঘাঁটাঘাটি করতে দেখে- চিকিৎসকের যোগ্যতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে উঠে। এক্ষেত্রে রোগীদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, সঠিক ঔষধ খুঁজে বের করার প্রক্রিয়াটি- এই সন্দেহপ্রবণ বা অধৈর্য্য রোগীদের সাথে তাল মেলানোর কাজটি ছাড়াই যথেষ্ঠ কঠিন। অতএব হোমিওপ্যাথকে এত বেশি সময় ও যত্নœ নিতে দেখে রোগীদের বরঞ্চ খুশি হওয়া উচিৎ। রোগীদের উচিৎ হোমিওপ্যাথদের মানসিকভাবে যতটা সম্ভব স্বাচ্ছন্দ্যে রেখে এই প্রক্রিয়াটাতে সহায়তা করা।
আর যেসমস্ত বিষয় আরোগ্যের সময়ের দীর্ঘসূত্রিতার ব্যাপারে কর্তৃত্ব করে, তা হচ্ছে- রোগীর লক্ষণগুচ্ছের প্রাবল্যটি তার কোন লেভেল অধিকার করে আছে। প্রধানত আবেগপ্রসূত বা মানসিক সমস্যাগুলোতে আক্রান্ত রোগীর চাইতে- প্রাথমিক শারীরিক লক্ষণযুক্ত রোগীকে চিকিৎসা করা সাধারণত সহজ। এর কারণ, জীবনীশক্তি তার ক্ষমতায় যতদূর কুলোয়, সবসময়ই চেষ্টা করে জৈবসত্তার অসুবিধাগুলোকে বাইরের দিকে সীমাবদ্ধ রাখতে। মানুষ মানসিক এবং আবেগের ক্ষেত্রটাতে বেশ কিছু মাত্রায় ভালো থেকেও শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারে, কিন্তু এর বিপরীক্রমটা যথার্থ নয়। মানুষদের মধ্যে যারা এত গভীর লেভেলে আক্রান্ত হয়, তারা আসলে খুব কমই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এবং তাদের জীবনের প্রকাশভঙ্গিও অনেক বেশি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
একবার প্রেসক্রিপশন হয়ে গেলে এবং উন্নতি পরিলক্ষিত হলেও রোগীর কিছু দায়িত্ব থাকে। কিছু সংখ্যক প্রভাব আছে, যেগুলো হোমিওপ্যাথিক ঔষধগুলোর ক্রিয়াতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এই সকল বিষয়ের অনুপস্থিতিতে, ঔষধগুলো আক্ষরিক অর্থেই মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর কাজ করে যেতে পারে; কিন্তু যদি এর কাজকে ব্যাহত করা হয়, তখন তা পরবর্তী প্রেসক্রিপশন করাটাকেও আরো মুশকিল করে তোলে।
এলোপ্যাথিক ঔষধগুলো সবচেয়ে শক্তিশালী বিঘ্ন সৃষ্টিকারী বিষয়গুলোর একটি। সাময়িক ব্যাথা বা অস্বস্তির জন্য কদাচিৎ Aspirin গ্রহণে সাধারণত সমস্যা হয় না কিন্তু Analgesics, Antibiotics, Contraceptive pills এবং বিশেষ করে CortisoneCortisone এর লাগাতার ব্যবহার হোমিওপ্যাথিক ঔষধগুলোর একদম বিরূদ্ধে কাজ করতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে, দাঁতের চিকিৎসাগুলোও এই একই ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং হোমিওপ্যাথির রোগীদেরকে সত্যিকারের জরুরি অবস্থা ছাড়া, অন্য সব থেরাপি থেকে নিজেদের বিরত রাখা উচিৎ এবং জরুরি ক্ষেত্রেও সম্ভব হলে, প্রথমে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিৎ।
কফি হচ্ছে আরেকটি সাধারণ হোমিওপ্যাথিক “ক্রিয়ানাশক”। কফি এমন একটি উত্তেজক যার ঔষধের মতোই শক্তিশালী প্রভাব থাকতে পারে। আলাদা আলাদা ব্যক্তির সংবেদশীলতায় বেশ পার্থক্য হয়, আর একারণে হয়তো কোন রোগীর হঠাৎ এক কাপ হালকা কফিতে কোন প্রতিক্রিয়াই হয় না, যেখানে অন্যদের এই সামান্য সংস্পর্শই কাজে বিঘ্নœ ঘটানোর জন্য যথেষ্ঠ। এই কারণেই, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নেয়া সমস্ত রোগীদের কফিকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলা উচিৎ। বিকল্প হিসাবে ডিক্যাফেইনাটেড কফি, ব্ল্যাক টি, ও গ্রেইন-বেইজড কফি- এগুলোর সবই গ্রহণযোগ্য।
প্রতিদিন ঔষধ খেতে হয় এমন রোগীদের ঔষধ নিয়ে নাড়াচাড়াটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারে। এমনকি ঔষধগুলো তাদের কাঁচের শিশি বা মোড়ানো কাগজের মাঝে থেকেও, সরাসরি সূর্যালোকে, তীব্র গন্ধে (বিশেষ করে ক্যাম্ফর ও অন্যান্য সুগন্ধি সামগ্রীর গন্ধে) এবং অতিরিক্ত তাপে বা ঠান্ডায় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ঔষধগুলো তীব্র গন্ধ থেকে মুক্ত, একটি মাঝামাঝি তাপমাত্রার ছায়াময় স্থানে সংরক্ষণ করা উচিৎ।
সর্বশেষ, যে দায়িত্বটি মাঝে মাঝে রোগীদের কাছে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত বিষয় হয়ে উঠতে পারে, তা হচ্ছে- যে ধরণের হিলিং ক্রাইসিসই তৈরি হোক না কেন- অপেক্ষা করে তা পাড়ি দেয়া। আরোগ্যের প্রক্রিয়ায়, জীবনীশক্তিকে শক্তিশালী করানোর দরুন- লক্ষণগুলোর সাময়িক বৃদ্ধি হতে পারে। সাধারণত এটা কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়, কিন্তু কোন কোন কেইসে তা আরো বেশি সময় নিতে পারে।
রোগী যদি এর সম্ভাব্যতা অনুধাবন করতে না পারে, প্রথমে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হচ্ছে বলে মনে করতে পারে, এবং প্রদর্শিত লক্ষণগুলি থেকে মুক্তির জন্য এলোপ্যাথির শরণাপন্ন হওয়ার ঝোঁক তার মধ্যে আসতে পারে। একই ধরণের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে- যেখানে রোগী মনে করে (ঔষধ প্রয়োগের পর) পুনরায় আর কখনোই রোগ বাড়বে না- যেখানে আসলে তার এই বিশেষ কেইটিতে পূর্ণ আরোগ্য সম্পাদনের জন্য কয়েকটি ঔষধ লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রোগীকে অবশ্যই কি হচ্ছে তা বুঝতে হবে এবং হোমিওপ্যাথের বিচারশক্তির উপর আস্থা রাখতে হবে। বলা বাহুল্য, রোগীকে আতঙ্কিত হয়ে যাওয়ার প্রবণতাকে রোধ করে, পরবর্তী অবস্থাগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
হোমিওপ্যাথি শুধু চিকিৎসকদের জন্যই নয়, রোগীদেরও একটি সুশৃঙ্খল পদক্ষেপ পদ্ধতির দাবী করে। এটি এমন কোন থেরাপি নয়- যেখানে রোগীরা কোন রকম চিন্তাভাবনা ছাড়াই এলোপ্যাথিক চিকিৎসকের করা ডায়াগনোসিসটা জানাবে, ঔষধ নিবে এবং সেরে যাবে। এতে বেশ ভালো রকমের নিরপেক্ষ আত্ম-পর্যবেক্ষণ, সহানুভূতিশীল মনোভাব, প্রেসক্রাইবার যে কাজগুলোর সম্মুখীন হচ্ছেন সেগুলোতে সহযোগিতার, বিঘ্নসৃষ্টিকারী প্রভাবগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ায় স্বেচ্ছাপ্রণোদনার, এবং যে ধরণের হিলিং ক্রাইসিসই তৈরি হোক তাতে ধৈর্য্য ধরার মতো প্রজ্ঞা প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ মানুষের জন্যই, এই দায়িত্বগুলো পালন করা বেশ সহজ এবং তার ফলও সে অনুযায়ীই সন্তোষজনক হয়।
Discussion about this post