[A DISCUSSION BY Dr. MIHIR KUMAR SEN, Transactions of the Scientific Discussions on the Occasion of 230th Birthday Celebration of Dr Samuel Hahnemann under the auspices of Homoeopathic Bijnan Parishad, Baruipur, 24 Parganas, 20th May1984]
শ্রদ্ধেয় সভাপতি মহাশয়, উপস্থিত সহযোগী চিকিৎসক বৃন্দ—
আলোচ্য বিজ্ঞান সভায় আমর প্রিয় শিক্ষক ডা. বি এন সেনগুপ্ত মহাশয় “Concept of man in disease” সম্পর্কে যে ভাবে তাঁর মূল্যবান বক্তব্যগুলি অতি সহজভাবে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন তা এক কথায় পুর্ণাঙ্গ এবং এরপর এ সম্পর্কে বিশেষ কিছু আলোচনা অবশিষ্ট নেই। তবুও এই বিজ্ঞান সভার অন্যতম আলোচক হিসাবে কিছু আলোচনা করতেই হয় এবং এই প্রসঙ্গের বিশেষ একটি দিক নিয়েই আমি আলোচনা করছি।
ডা. সেনগুপ্ত “Concept of man in disease” প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্যে Pathological findings বা যান্ত্রিক ব্যবস্থার সাহায্যে রোগ নির্ণয় এবং রোগের নামকরণকে কটাক্ষ করে বলেছেন এর দ্বারা আদৌ আমাদের চিকিৎসার কোন লাভ হয় কি? হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা কিভাবে একটি মানুষের অসুস্থতা বুঝি এবং সেই বোঝার মধ্য দিয়ে ওষুধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা কতখানি সাহায্য পাই, সেই আলোচনা তাঁর বক্তব্যের মধ্যে বিশদ থাকলেও- Pathological findings সম্পর্কে Details না বলায় চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে ।
যদিও আমি ডা. সেনগুপ্তের সঙ্গে সম্পুর্ণ একমত চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগ নির্ণয়ে যান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি ক্রমবর্ধমান নির্ভরতার মানসিকতা রোগ আরোগ্যের ক্ষেত্রে একটা বিরাট প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে এবং চিকিৎসক সমাজ ও ‘What is to be cured’ এই চিন্তাধারা থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছেন। ফলস্বরূপ আজকাল আমরা নিজেদের ডাক্তারখানায় প্রায়ই রোগীদের মুখে শুনি, ডাক্তারবাবু আমার ‘লিভার’ আছে, আমার ‘টনসিল’ আছে, আমার ‘প্রেসার’ আছে, আমার ‘গলব্লাডার’ আছে ইত্যাদি অর্থাৎ খুব কম ক্ষেত্রেই রোগী তার উপসর্গগুলি আমাদের কাছে বিবৃত করে।
ডাক্তারবাবুরাও এক একটি organ এর অসুস্থতাকে organ ভিত্তিক নামকরণ করেছেন বা শরীরের একটি বিশেষ System এর অসুস্থতাকে শরীরের অন্য অংশ থেকে আলাদা ভেবে তার চিকিৎসায় ব্রতী হয়েছেন এবং so-called modern system of medicine এই ধারণার উপর ভিত্তি করে শরীরের বিভিন্ন organ বা system এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করেছেন। তবে এর সবটুকুই যে অপ্রয়োজনীয় সেটা কখনোই বলবো না। আবার এটাও ঠিক এর সামান্য প্রয়োজনটুকুও সম্পুর্ণ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে “Concept of man in disease” এই ধারণাটা “Disease of a man as a whole” অর্থাৎ Disease of life Principle, which govern all the system in harmonious way এর বদলে Disease only of Particular organ or system ধারণাটা আমাদের মাথার মধ্যে ঘোরাঘুরি করে। আবার Pathological findings নির্ভর কোন প্যাথি- রোগ উপশমের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় এবং ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অহেতুক বিলম্ব ঘটায় সেটা আমরা সকলেই জানি।
সেক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথির জনক ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান স্বাস্থ্য রোগ এবং আরোগ্য সম্পর্কে যে তত্ব এবং তথ্য জীবনীশক্তির (Vital force) উপর নির্ভর করে দিয়ে গেছেন, তা শুধু Hahnemannian system of medicine বা হোমিওপ্যাথদের ক্ষেত্রে নয়- সকল শ্রেণীর চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের জন্য সমান ভাবে প্রযোজ্য। চিকিৎসা সহায়ক বিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতিতে রোগ নির্ণয়ে Pathological findings এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে- তা স্বীকার করি। অনেকেই বলেন ডা. হ্যানিম্যানের সময়ে রোগ জীবাণু বা দেহের মধ্যকার সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম পরিবর্তনকে দেখার সুযোগ ছিল না বলেই, উনি Concept of disease সম্পর্কে শুধু লক্ষণসমষ্টির উপরই জোর দিয়েছিলেন।
ডা. হ্যানিম্যান আজ বেঁচে থাকলে নিশ্চই তাঁর মত বদলাতেন। এখানে আমার বক্তব্য ডা. হ্যানিম্যান কি করতেন না করতেন সে তর্কে না গিয়ে বলতে পারি, তাঁর অনুগামী হিসাবে এই বিংশ শতাব্দিতে, প্রায় দুশো বছর আগে ডা. হ্যানিম্যনের দেওয়া সূত্র আজো অপরিবর্তনীয় বলে মনে করি। একটা মানুষ যখন রোগাক্রান্ত হয়- তখন কতকগুলি abnormal sensation or function এর মধ্য দিয়ে সে তা প্রকাশ করে বা চিকিৎসক হিসাবে আমরা মানুষটির রোগাক্রান্ত অবস্থার কথা জানতে পারি। খুব চিন্তা করলে এটা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে প্রায় ৯৯ শতাংশ Natural disease এই ভাবেই শুরু হয়। এখন যাঁরা Concept of disease-এর সঙ্গে Pathology কথাটা রাখতে চান, তাদের বলি- হ্যাঁ, ওটা রোগের Dynamic Pathology, যখন রোগী দেহে Material change হয় না বললেই চলে। Material change হয় অনেক পরে সেটা সঙ্গত ভাবেই রোগের end product হিসাবে স্বীকৃত হয়, যাকে আমরা বলি- Organic Pathology। এটা লক্ষ্য করার বিষয় কোন বিশেষ exciting factor দ্বারা এক বা একাধিক মানুষ অসুস্থ হলে তাদের সকলেরই Dynamic Pathology প্রায়ই ভিন্ন হয়। কিন্তু Organic Pathology প্রায় ক্ষেত্রে এক (same) ।
বাস্তবিক Hahnemannian concept of disease এর ক্ষেত্রে Dynamic Pathology-ই রোগ নির্ণয়ে বা ওষুধ নির্ণয়ে অধিক প্রাধান্য পায়। এখন এই Dynamic Pathology-র উপর নির্ভরতার যৌক্তিকতা কোথায় বা এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তিই বা কি, সে সম্পর্কে আমি দু-চার কথা বলে আমার বক্তব্য শেষ করব। তার আগে পুনরায় একটি পুরাতন কথার পুনরূল্লেখ করছি। Hahnemannian system-এ রোগের চিকিৎসা হয় না, চিকিৎসা হয় রোগীর এবং এর মূল ভিত্তি হল রোগী নিজ মুখে তার উপসর্গ সম্পর্কে যা বলে এবং চিকিৎসক ও রোগীর আত্মীয় পরিজন symptoms & signs হিসাবে যেটুকু সংগ্রহ করেন তার মূল্যায়নের উপর।
ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হয় সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ মহামারী আন্ত্রিক রোগ প্রসঙ্গ নিয়ে চিন্তা করলে। আপনারা সকলেই জানেন বর্তমানে সারা পশ্চিমবাংলা এবং তার সন্নিহিত রাজ্যগুলির কিছু এলাকা ভয়াবয় আন্ত্রিক (gastro enteritis) রোগের কবলে এবং এর মোকাবিলায় যথারীতি কুলীন (!) চিকিৎসক হিসাবে অ্যালোপ্যাথরাই আগে ডাক পেয়েছেন। কিন্তু আমরা দেখলাম উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া সত্তেও (অ্যালোপ্যাথি মতে) শ’য়ে শ’য়ে রোগী মরতে লাগল। কারণ কি?
কি ধরণের জীবাণু এই রোগের জন্য দায়ী সেটা ধরা যাচ্ছে না। পরে যদিও সেটা জানা গেল কিন্তু দেখা গেল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিকস কাজ করছে না অর্থাৎ পরিভাষায় যাকে বলে Drug resistance হয়ে গেছে। এর জন্য কঠিন মূল্য দিতে হ’ল- একটা বড় অংশ রোগীদের, অথচ পাশাপাশি কিছু সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে হোমিপ্যাথিক চিকিৎসায় দেখা গেল এই রোগ দমনে আশানুরূপ সফলতা। সেটা কিভাবে সম্ভব হ’ল?
Bactericidal বা ঐ ধরণের Drug বলে হোমিওপ্যাথি মতে তো কিছু নেই। রোগটির উত্তেজক কারণ হিসাবে একটি বিশেষ রোগ জীবাণু দায়ী হলেও চিকিৎসা পরিচালিত হয় রোগীর totality of symptoms-এর উপর Base করে- By the process of individualization। তাই একই রোগে কেউ নাক্স ভমিকা, কেউ মার্ক সল, কেউ পালসেটিলা এইভাবে বিভিন্ন Dynamic ঔষধের দ্বারা সুস্থ হয়েছে Dynamic disease, vital force এর সুস্থতার মধ্য দিয়ে। আবার বলি রোগ সম্বন্ধে organ ভিত্তিক conception এবং pathological findings রোগীর diet, regimen এবং রোগের prognosis ছাড়া, তার উপর ভিত্তি করে ওষুধ নির্বাচনের কোন সুষ্ঠু বা স্থায়ী পদ্ধতি হতে পারে না।
Natural disease এর ক্ষেত্রে এর ব্যাপক প্রয়োগ এবং সাফল্য আনতে পারে না বা কোনদিন আনতে পারবে বলে মনে করি না। তাইতো প্রায়শই শুনতে পাওয়া যায় অমুক রোগে অমুক অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ আর বেশী effective হচ্ছে না কিংবা মাত্রায় লাগছে অনেক বেশী। কিন্তু Hahnemannian concept of disease এর উপর ভিত্তি করে ওষুধ নির্বাচন অনেক বেশী নিরাপদ এবং effective সেটা আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য। এখানে মানুষের অসুস্থতাই বড় কথা এবং সেটাই প্রাধান্য পায়। যার জন্য হোমিওপ্যাথি মতে আজো ১০টি Typhoid রোগী ১০ রকম ওষুধে সারে আবার ১টি ওষুধ ১০ রকম রোগ সারায়।
Discussion about this post