বর্তমান সময়ে সিরিয়াসভাবে ক্রনিক রোগের চিকিৎসাকারী হোমিওপ্যাথ মাত্রই জানেন- মিশ্র মায়াজমের এই রাজত্বে নোসোডগুলো উপযুক্ত ব্যবহার কতটা অপরিহার্য। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায়, ক্রনিক রোগগুলির এমন কোন কেইস পাওয়াটা বিরল ঘটনা, যেখানে চিকিৎসার কোন না কোন পর্যায়ে, কোন না কোন নোসোডের ব্যবহার অনুপেক্ষণীয় হয়ে দাঁড়ায়। আর তার মধ্যে একটি বিশেষ অবস্থান দখল করে আছে – নোসোড গ্রুপের ‘মেডেরিনাম’ হোমিওপ্যাথিক ঔষধটি।
সেই সাথে নোসোডগুলো ব্যবহারের ভিন্ন ভিন্ন কয়েকপ্রকার উপযোগিতা থাকায়- বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রতিটি নোসোডকে বুঝে নেয়া, চিনে নেয়া ও উপলব্ধিতে তার পূর্ণ চিত্র অঙ্কন করে নেয়াটা অপরিহার্য। কাজেই, প্রতিটি নোসোড সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন লেখকের বর্ণনা, দৃষ্টিভঙ্গি, চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রয়োগ-কৌশল, সফল প্রয়োগের দৃষ্টান্তগুলো মনোযোগের সাথে পাঠ করার কোন বিকল্প থাকতে পারে না। আর মেডোরিনাম নোসোডটির ক্ষেত্রে, সেই কাজটি করারই এক উৎকৃষ্ট সুযোগ করে দেয় ডা. হরিমোহন চৌধুরীর ‘মেডোরিনাম’ পুস্তকটি।
খুবই স্বল্প পরিসরের মধ্যে ডা. হরিমোহন চৌধুরী মেডোরিনামের স্বরূপটিকে আমাদের মাঝে অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় উন্মোচন করছেন এই বইটিতে। যার শিরোনামের শুরুতে মেডোরিনাম সম্বন্ধে যে মূল্যায়নটি তিনি এককথায় প্রকাশ করেছেন – ‘মানব জাতিকে পাগল ও পঙ্গুত্বের হাত থেকে রক্ষা করার অন্যতম মুক্তিদূত’।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবুল ফজল মহোদয় বইটি সম্বন্ধে মন্তব্য করেন,
“এ গ্রন্থে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার আধুনিকতম পদ্ধতি ব্যাখ্যায়িত আর বিশ্লেষিত হয়েছে।”
আমাদের চট্টগ্রামের স্বনামধন্য চিকিৎসক সর্বজন-শ্রদ্ধেয় ডা. জাকের হোসেন চৌধুরী (অধ্যক্ষ, ইস্ট পাকিস্তান হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও সদস্য- বোর্ড অব হোমিওপ্যাথিক সিস্টেম অব মেডিসিন), বইটি সম্বন্ধে তার শুভেচ্ছাবার্তায় যথোপযুক্ত ভাবে যে কথাগুলো বলেছিলেন,
“ডা. চৌধুরীর ‘মেডোরিনাম’ নামক পুস্তক হোমিওপ্যাথিতে এক নূতন সংযোজন। কারণ ইহাই বাংলা ভাষায় নবতম শক্তির প্রথম মেটেরিয়া মেডিকা।তদুপরি ইহাতে অর্গানন শেষ সংস্করণ ও নূতন শক্তির ব্যবহার সম্পর্কে সঙ্গে সঙ্গে আলোকপাত করা হইয়াছে। সর্বোপরি নোসোডের উপর বাংলা ভাষায় এত তত্ত্ব ও তথ্যমূলক আলোচনা ইতোপূর্বে কখনও হয় নাই। তাই ইহার দ্বারা একটি অভাব পূর্ণ হইল।”
আর ডা. খগেন্দ্রলাল দাশ চৌধুরী (প্র্যাকটিক্যাল হোমিওপ্যাথি প্রণেতা) তার মতামতটি যেভাবে ব্যক্ত করেন,
“ইহা বাস্তবিকই প্রশংসনীয়। সে ‘মেডোরিনাম’ নামক একটি পুস্তক বাংলা ভাষায় লিখিয়োছে। ইহাতে পঞ্চাশ-সহস্রতমিক শক্তির ওষুধ ব্যবহার সম্পর্কেও আলোকপাত করা হইয়াছে। তদুপরি বাংলা ভাষায় নোসোডের উপর এত তথ্যমূলক আলোচনা ইতোপূর্বে আর কখনও কেহ করে নাই।”
উপযুর্ক্ত মহাবরেণ্য গুণীজনদের কথার পরে, আমার মতামতটি নিতান্তই বাহুল্যমাত্র। তথাপি বইটির বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে দু’টি কথা বলার ইচ্ছাটিকে সংবরণ করতে পারছি না। ছোট পরিসরের এই বইটিতে তিনি, মেডোরিনাম সম্বন্ধে একটি সুবিস্তৃত আলোকপাতের সাথে সাথে বইটিতে তিনি পঞ্চসহস্রতমিক পদ্ধতিতে এর ব্যবহার পদ্ধতি ও তার দৃষ্টান্তগুলো বাস্তব কেইসের উদাহরণের সাথে তুলে ধরেছেন। মেডোরিনামের ধাতুপ্রকৃতির রোগীর আকৃতি-প্রকৃতি, মানসিক লক্ষণাবলী ও তার বিভিন্ন অঙ্গনের লক্ষণগুলো তুলে ধরেছেন। এবং প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিজস্ব শিরোনামে এতে প্রকাশিত লক্ষণাবলীও সুবিন্যস্তভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং মেডোরিনামের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়- ঋতু ও আবহাওয়া, জ্বর, অবস্থান সাময়িকী, আক্রান্ত স্থান, অনুভূতি, সম্বন্ধ, ভেষজ শক্তির মতো বিচিত্র বিষয়গুলো নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে আলোচনা করেছেন।
এবং সবচাইতে চমকপ্রদ বিষয় তিনি পূর্ণ রোগীলিপিসহ পঞ্চসহস্রতমিক পদ্ধতিতে মেডোরিনামের ব্যবহারের বাস্তব কেইসের দৃষ্টান্ত ও শিক্ষাকে তুলে ধরেছেন। অনেকেই নোসোডগুলো পঞ্চসহস্রতমিক পদ্ধতিতে ব্যবহারের ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন; তাদের ব্যাপারে এটি একটি চিন্তার উপাদান উপস্থাপন করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
সর্বোপরি, শ্রদ্ধেয় ডা. হরিমোহন চৌধুরী ও তার রচনা সম্বন্ধে আলাদাভাবে বলার কোন প্রয়োজন আসলে থাকে না। উপমহাদেশে বাংলা ভাষা-ভাষী হোমিওপ্যাথদের জ্ঞান-তৃষ্ণা তিনি তার অনন্য গুণে তাঁর রচনাগুলিতে বহুভাবে নিবৃত্ত করেছেন- এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম পাওয়া যাবে না।
Discussion about this post