মূল: Elaine Lewis
অনুবাদ: ডা. পি. গুপ্ত
“অবশেষে এ পর্যন্ত আসতে পারলাম” মি. সালফার মনে মনে ভাবছেন। “একটি ব্যাপক এ্যাডভেঞ্চার শুরু হতে যাচ্ছে। সারাদিনে ঘটা ঘটনাগুলোর একদম পরিষ্কার নোট নিয়ে রাখতে হবে- যাতে আমি যে বইটি লিখতে যাচ্ছি, তা লেখার সময় সব মনে পড়ে। আমি আসলে যে ভীষণরকম ব্রিলিয়ান্ট মানুষ, আজ থেকে শেষমেষ সেভাবেই পরিচিত হতে যাচ্ছি!”
সকাল ৫টা এবং মি. সালফার অভ্যাসবশতই জাগ্রত। তিনি ঘুমাতে পারছেন না, ভাবনার টানাপোড়েনে তিনি ভোর ৩টা থেকেই জেগে আছেন এবং পা দুটো কাঁথার বাইরে রেখে তার সিঙ্গেল বেডটিতে শুয়ে আছেন- যেভাবে সে সবসময় শয়ন করেন। শিল্পায়িত বিশ্ব সম্বন্ধে তিনি একটি বই পড়ছেন, যে কাজটি- তার বিছানা থেকে উঠার এবং ব্যবসায়িক পরিকল্পনার যে ফর্মটি ব্যাংক ম্যানেজার এক মাস আগে তাকে পূর্ণ করতে বলেছিলো- তা পুরোপুরি সম্পন্ন করার প্রারম্ভিক ইচ্ছাটি থেকেও বহু দূরে। তার বদলে সে পড়েই যেতে লাগলো এবং দুর্ঘটনাবশত আবার ঘূমিয়ে গেলেন, পরের প্রায় ৫টি ঘন্টায় কয়েকবার সে ক্ষণে ক্ষণে জেগে ও ঘুমিয়ে কাটালেন। ঘুমের মধ্যেই সে কয়েকবার ঝাঁকি দিয়ে উঠলেন, মুচড়ে উঠলেন।
মি. সালফারের ঘুম খুব পাতলা, কাজেই আমাকে খুব আস্তে-ধীরে বলতে হবে- আজ আমরা এখানে কেন এসেছি। আপনি যেরকমটি বুঝতে পারছেন- মি. সালফারের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর, আজ সে তার ব্যবসায় শুরু করার জন্য, তার কাছে থাকা কিছু আইডিয়ার ব্যাপারে ব্যাংকে সাক্ষাৎকার দিতে যাচ্ছেন। মি. সালফার ২০,০০০ ডলার ধার করতে চাচ্ছেন। তিনি তার বিজনেস-আইডিয়াটার উপর মাসের পর মাস গবেষণা করেছেন এবং এর প্রত্যেকটি দিক সম্বন্ধে সে ব্যাপক পরিমাণ তথ্য জেনে নিয়েছেন। সত্যি বলতে, যে সমস্ত তথ্য তিনি পড়েছেন, তার বেশিরভাগই আগামী এক মিলিয়ন বছরের মধ্যে কোন কাজে আসবে না কিন্তু এটাই মি. সালফারের কাজের ধরণ। তার এপয়েন্টমেন্ট সকাল ১১ টায়- যদিও বলা বাহুল্য, সময়টা তার জন্য খুব বেশি সুখকর না!
প্রিয় পাঠক, এখন, আপনি গিয়ে এক কাপ চা খেয়ে নিন, আমরা আবার ১১টার দিকে দেখা করবো।
****
আবার ফিরে এসেছি এবং মি. সালফার এখনো ঘুমে! সময়ের দিকে তাকান! হায়, সর্বনাশ! তিনি তো সাক্ষাৎকারটি মিস করতে যাচ্ছেন! তাকে জাগাতে আমার বরঞ্চ একটু শব্দ করা উচিৎ। “কাশি, কাশি”…….. আহ, চমৎকার……..মি. সালফার ঘুম থেকে একটু নড়ে উঠেছেন….চমকে উঠেছেন…..চেহারা উৎকট দেখাচ্ছে, কারণটি বোধহয় হঠাৎ করে ঘুমিয়ে যাবার দরুন তার মাথার চাঁদিতে শুরু হওয়া জ্বালাময় ভয়াবহ ব্যথা; যেটি এখন সারাদিন চলতে থাকবে। এখন তার মনে পড়ছে –১০:৫০ টা বাজে, এবং এ সময় তার ব্যাংকে থাকা প্রয়োজন। তার এলোমেলো হয়ে থাকা ঘরটির চারদিকে তাকালেন, কিন্তু তারপরও সে আসলে জানে- তার যা যা লাগবে, তার কোনটা ঠিক কোন জায়গাটিতে আছে। তার বেমানান পোষাকটিকে তিনি মেঝে থেকে ছোঁ মেরে তুলে নিলেন। তার স্যুটটি কুঁচকানো, কারণ তিনি ওটার উপর বইগুলো স্তুপ করে রেখেছিলেন! মিটিংয়ের প্রস্তুতি নিয়ে এত ব্যস্ত থাকায়- তিনি সেটা ঠিক লক্ষ করেননি; আসলে সে অন্য কাজ করার সুযোগ তিনি খুব কমই পেয়েছে।
****
আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন, মি. সালফার ঠিক ধোপদুরস্ত কায়দার মানুষ নন কিন্তু আজ তাকে যেন ভালো দেখায় এর জন্য তিনি একটু অতিরিক্ত পরিশ্রম করছেন- তিনি আয়নাতে নজর বুলিয়ে, হাতে থুথু মেখে, বেশ কয়েকদিনের মধ্যে গোসল না করায়- তার খাড়া হয়ে থাকা চুলগুলোকে শোয়ানোর চেষ্টা করছেন। (তিনি বলেন- পানিতে তার চামড়া জ্বলে, এমনকি এটি তার শরীরকে আরো শুকিয়ে ফেলে, যে কারণে তা চুলকায়)। তিনি যখন তার জুতোজোড়া ও তার সাথে কিছুটা বেমানান মোজাগুলো পড়ে আয়নায় নিজের দিকে তাকালেন- খেয়াল করলেন তাকে বয়স্ক, মেছতাপড়া চেহারার লাগছে এবং তার চামড়া ফ্যাকাসে ও অসুস্থ-মতো মনে হচ্ছে। তিনি তার উজ্জ্বল, লালচে, ফেটে যাওয়া, জ্বালাময় ঠোটদুটোতে হাত ঘষলেন। বিগত সকল সময়ের চেয়ে- তার মুখের চামড়ার ভাঁজগুলো গাঢ় দেখাচ্ছে এবং তিনি এটিও খেয়াল করলেন যে, তিনি ইদানীং ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছেন না, কারণ শেষ যখন নিজেকে দেখেছিলেন তার চেয়ে এখন আরো ঢেঙ্গা ও টিমটিমে দেখাচ্ছে। এরপরই তার উপলব্ধিতে আসলো- তার উচ্চতাটি এ পরিস্থিতিতে তাকে কোন সহযোগিতা করবে না। জুতার ফিতা বাঁধার জন্য তিনি সামনে ঝুঁকলেন; মাথার ঝিম ঝিম ভাবটা এত বেশি যে, মাথা ঘুরিয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলেন। সৌভাগ্যবশত তিনি জুতাবাঁধার কাজটি শেষ করতে পারলেন এবং সোজাসুজি আয়নার দিকে চোখ রেখে এবং সকালের ঘটনাগুলোর কথা কল্পনা করে- পুরোপুরি দাঁড়াতে চেষ্টা করলেন কিন্তু কিছুটা সামনে না ঝুঁকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো তার জন্য সহজ কম্ম নয়।
“ওহ!” তিনি আবার তার ঘড়ির দিকে তাকালেন। “ধুর্”,গজগজ করতে থাকলেন “আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে”। ঘরজুড়ে তুলকালাম করে, তিনি তার ছেড়া-ফাটা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের সবগুলো তুলে নেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে কিছু কাগজপত্রে ধূলোও জমে গিয়েছিলো। তিনি পিৎজার কার্টুনটি হাতে তুলে নেন, এবং পরক্ষণেই আবার সিদ্ধান্ত নেন পিৎজার কভারটি বাসায়ই ফেলে যাবেন; কারণ শহরজুড়ে এটি বয়ে নিয়ে যাওয়া ভীষণ কষ্টকর একটি ব্যাপার। পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে, দুর্বল শরীরে থপ থপ করে হেঁটে- তিনি প্রায় ১১টার সময় রান্নাঘর হয়ে বেরোলেন। তার পেটে তখন ক্ষুধায় ছুঁচোর কের্তন চলছে; তিনি বুঝতে পারছিলেন পেটে এ্যাসিড জমছে, পাশের বেঞ্চ থেকে একটি আপেল তুলে নিলেন। এরপর ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে মহান আইডিয়াটি শেয়ার করার উত্তেজনা নিয়ে বাইরের দরজা আটকে চলে গেলেন।
মি. সালফার যখন পৌঁছান, ব্যাংক ম্যানেজার মি. আর্সেনিকাম ততক্ষণে তার পরিপাটি অপিসে বসে বসে ম্যানিকিউর করা নখগুলো পরীক্ষা করছেন। ‘সে দেরি করেছে’ ব্যাংক ম্যানেজার আনমনে ভাবতে থাকেন ‘এখন ১১:১৩ বাজে!’ একটি নার্ভাস, উত্তেজিত কাশি দিয়ে মি. সালফার ঘোষণা করতে চাইলেন যে, তিনি উদিত হতে যাচ্ছেন।
মি. আর্সেনিকাম খুবই নিয়মতান্ত্রিক এবং তিনি মি. সালফারকে ঠিক কয়টায় বসতে অনুরোধ করেছেন- সেই সময়টাও তার পরিচ্ছন্ন নোটপ্যাডে নোট করে রাখলেন; কিন্তু সেটা অবশ্য মি. সালফারের উত্তপ্ত হাতে হাত মেলানোর আগে নয়। “ইয়াক” ব্যাংক ম্যানেজার মনে মনে বিতৃষ্ণা প্রকাশ করলেন, “কেমন নোংড়া, স্যাতস্যাতে তার হাত!”
“ওহ, ইয়াক!”, সালফারও মনে মনে ভাবলেন। “জীবাণু, ধুর! আজ আর আমার জীবাণুর কারণে অসুস্থ হবার উপায় নেই!” তিনি মুখ ফসকে কাতরে উঠলেন, “দুঃখিত, আপনার এখানে ওয়াশরুমটা কোথায়?”
“হ্যা, এইতো, হলের নিচের দিকে” – মি. আর্সেনিকামের উত্তর।
(ওয়াশরুম থেকে) মি. সালফার অফিসে হুড়মুড় করে ফিরে আসলেন এবং ফিরেই ঘরটা কত গরম হয়ে আছে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে- জানালা খোলায় সচেষ্ট হলেন। “কিছু মনে করবেন না, আমাদের এখানে একটু খোলা হাওয়া হলে ভালো লাগবে, তাই না?”
আসলে ব্যাংক ম্যানেজারও তাতে খুশিই হলেন কারণ মি. সালফারের গায়ের গন্ধ তার পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব হচ্ছিলো না। মি. সালফার আবারও মি. আর্সেনিকামের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন কিন্তু সেটা আসলে দায়সাড়াভাবে, তার দেরি হয়েছে বা কোনভাবে ব্যাংক ম্যানেজারের অসুবিধার কারণ হয়েছে বলে- সেগুলোকে আন্তরিকভাবে পরোয়া করে নয়। মি. সালফার মনে মনে ভাবছে, মি. আর্সেনিকাম কিছুক্ষণের মধ্যেই টের পাবে- সে আসলে কত বড় ব্রিলিয়ান্ট!
মি. সালফার – মি. আর্সেনিকামকে কোন কথা বলারই সুযোগ দিলেন না; তার সমস্ত নোটগুলো প্রচণ্ড উদ্দীপনার সাথে সামনে ছুড়ে দিলেন- যেগুলো টেবিলের পুরোটা জায়গা জুড়ে অবতরণ করলো। মি. আর্সেনিকাম কিছুটা হতচকিত হয়ে গেলেন কিন্তু তার সামনে রাখা কাগজপত্রের বিপুলপৃষ্ঠাযুক্ত ভলিউমের স্তুপ দেখে কিছুটা সন্তুষ্ট হলেন; কিন্তু তারপরও এরকম পরিপাটি করে সাজানো তার দামী ডেক্সটির এই এলোমেলো দশা দেখে কিছুটা অসন্তুষ্টও হলো। মি. সালফার তার বক্তব্যটি এলোমেলোভাবে অস্ফূটস্বরে তালগোল পাকানো স্বরে বলতে শুরু করলেন এবং কথা বলার সাথেই একবার এই কাগজ- তো পরক্ষণেরই আরেকটি কাগজ হাতে তুলে নিতে থাকলেন। তিনি একটা প্রসঙ্গ থেকে আরেকটা প্রসঙ্গে লাফাতে ঝাঁপাতে থাকলেন। কথা বলতে বলতেই তিনি উত্তপ্ত হয়ে গেলেন, তার পুরো মুখমণ্ডলসহ চোখদুটোতে উজ্জ্বল লালচে ভাবের বিচ্ছুরণ হতে থাকলো।
তিনি একটির পর একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে করতেই- মি. আর্সেনিকামের স্ট্যাপলার ও হোল-পাঞ্চার ব্যবহার করা শুরু করে দিলেন; আর ঠিক সেই সময়টিতেই মি. আর্সেনিকাম তার অফিসের এই জিনিসগুলো উন্মত্তের মতো তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে আগের জায়গাটিতে ঠিকঠাক করে সাজিয়ে রাখা শুরু করলেন। মি. সালফার- মি. আর্সেনিকামের এই আচরণটিকে ঠিক বুঝতে পারছিলো না এবং তার ব্রিলিয়ান্ট পয়েন্টগুলোকে ভিন্নভাবে বোঝানোর জন্য ডেক্স থেকে কলম ও পেন্সিল তুলে নেয়াটা চালিয়েই গেলেন।
আর এই সময় মি. আর্সেনিকাম গভীর করে একটি শ্বাস নিলেন, তার চেয়ারে নড়ে চড়ে বসলেন, উত্তেজিত ভঙ্গিতে টেনেটুনে তার স্যুটটাকে ঠিকঠাক করলেন এবং অপ্রত্যাশিতভাবে তার সম্পূর্ণ হাতকে ব্যবহার করে- মি. সালফারের স্তূপ করা কাগজগুলোকে তার প্রিস্টিন-ডেক্সটির একপাশে সরিয়ে রেখে- এবার দায়িত্ব গ্রহণের উদ্যোগ নিলেন।
“মি. সালফার! যদি আমি কথা শুরু করতে পারি……..”। মি. সালফার কি ঘটছে তা দেখে বিমূঢ়। “(তাহলে বলবো) আপনার আবেদনটি পুরো করা প্রয়োজন!”
“কিন্তু আমি আপনাকে আমার আইডিয়াগুলো বলতে চাইছি” মি. সালফার বেশ জোর দিয়েই বললেন।
“আমরা এ বিষয়টিতে পরেও যেতে পারবো….প্রথমে, নাম….” তিনি তার (সালফারের) দিকে কঠোর দৃষ্টিতে থাকালেন।
“হুমম” লালচে মুখ নিয়ে মি. সালফার গজরাতে লাগলেন। পদ্ধতি মেনে চলার সময় তার কাছে নেই কিন্তু আজ এটাকে মেনে নিতেই হবে কারণ- তাহলে আর একটু পরেই তিনি তার বুদ্ধিমত্তার জন্যে প্রসংশিত হতে যাচ্ছেন। মি. আর্সেনিকাম ফর্মটা পূরণ করতে উদ্যত হলেন কিন্তু মি. সালফার এখন উত্তেজিত হয়ে আছেন তার মহান আইডিয়াগুলো বিশ্বের দরবারে মুক্তি দেয়ার জন্য – যে কাজটি মি. আর্সেনিকামকে দিয়ে শুরু হচ্ছে। (ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে আছেন)
“স্যার, স্যার!” মি. আর্সেনিকাম- মি. সালফারকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনার জন্য সতর্ক করছেন, “আমি কি আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনাটিতে একটু চোখ বুলাতে পারি?”
“ও, হ্যা, সব এখানেই আছে” মি. সালফার তার পর্বতসম উচ্চতার পৃষ্ঠাগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বললেন। “এখানে, এখানে এবং এখানে”।
“হুম………না” ব্যাংক ম্যানেজার বললেন, “গতমাসে আপনাকে আমি যে ফর্মটি দিয়েছিলাম, আপনি কি সেটা এরমধ্যে পূরণ করেছেন?”
মি. সালফার তার ঘামযুক্ত, খুসকিপড়া মাথায় হঠাৎ চুলকানি অনুভব করলেন। তিনি চুলকালেন কিন্তু তাতে মনে হলো তার যন্ত্রণা আরো বেড়ে গেলো- কারণ এখন তা জ্বলছে। তিনি (সালফার) এবার ঘোষণা করলেন, “ওহ, ওটা! আহহ……….” ভাবতে ভাবতেই তিনি তার পকেটগুলোতে হাতড়াতে লাগলেন এবং বলতে থাকলেন, “ওটা এখানেই কোথাও আছে……..”। তিনি এক পকেট থেকে আরেক পকেটে ছুটতে লাগলেন। “আহ, এই তো পেয়েছি…….ওহ, না- এটা তো গত সপ্তাহে বিল না দেয়ায় লাইব্রেরির জরিমানার কাগজ……..ঠিক আছে, হয়তো এই পকেটে…।” তিনি তার বৃহৎ স্যাতস্যাতে হাত অন্য পকেটটিতে চালান করলেন। “আচ্ছা, এখন পেয়েছি”।
এদিকে মি. আর্সেনিকাম এই বিশৃঙ্খলা ও সময়ের অপচয়ের দরুন দৃশ্যতই বিরক্ত। তিনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মি. সালফারকে দ্রুত করার জন্য তাগাদা দিচ্ছিলেন। ফর্মটি খুঁজে পাওয়ার আনন্দে মি. সালফার “পাইয়াছি” বলে চিৎকার করে উঠলেন। তিনি আট ভাজ করা দুমড়ানো মুচড়ানো একটি কাগজ বের করে তা সোজা-সাপ্টা করার চেষ্টা করতে থাকলেন এবং তারপরই কেবল বুঝতে পারলেন- এটিও সে কাগজ নয়। তিনি জানালেন, “এটি আমার গবেষণার প্রস্তাবনা”। তারপর হঠাৎ করে তার মনে পড়ায় অবশেষে জানালেন, “আমার কাছে সেটা নেই! আমার মনে হলো, সেটাতে লেখার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই, তাই ভাবলাম- এভাবে লিখলেই সবচেয়ে ভালো হবে।” তার সামনে থাকা বেশ কয়েক টুকরো কাগজ দেখিয়ে তিনি কথাটি সম্পন্ন করলেন। তাকে এখন বেশ উদ্ধত ও আত্মম্ভরীতাপূর্ণ দেখাচ্ছে, কারণ তিনি জানেন যে- তিনিই আসলে সবকিছু সবচেয়ে ভালো বোঝেন।
ব্যাংক ম্যানেজার হতাশ হয়ে তার দুই হাত দিয়েই নিজের কপালে ডলতে থাকলেন। আর এদিকে মি. সালফারও এই ব্যক্তির (আর্সেনিকামের) অজ্ঞতা দেখে আরো বেশি হতাশ হয়ে পড়ছেন। তিনি বুঝতে পারলেন, সাক্ষাৎকারটি ভন্ডুলের দিকে যাচ্ছে; এবং এটা ভেবে তিনি রাগান্বিতই হচ্ছিলেন যে, এরকম একজন নির্বোধ মানুষকে কেন বিজনেস লোনের দায়িত্বে রাখা হয়েছে!
“ঠিক আছে!” মি. আর্সেনিকাম দ্রুতই বুঝতে পারলেন যে, মি. সালফার আসলে তার ব্যাংক থেকে অর্থ-ঋণ পাবার অবস্থানে নেই কিন্তু তারপরও তিনি ঋণের দরখাস্তটি সাবমিট করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন, যাতে সম্পূর্ণরূপে জানানো যায় যে তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তার চলমান সুস্পষ্ট অসন্তোষকে প্রকাশ করার জন্য- তিনি তার পরিচ্ছন্নভাবে কাটা ছোট ছোট চুলগুলো হাত দিয়ে আচড়াতে আচরাতে বললেন, “মি. সালফার, আমার এখন আপনার কোন আইডি প্রয়োজন, যাতে এই দরখাস্তের সাথে তা আমি দিয়ে দিতে পারি।”
“কি লাগবে?” মি. সালফার জিজ্ঞেস করলেন।
“আইডি” তিনি আবার বললেন।
“এখন আমার কাছে নেই!” সালফারের উত্তর।
মি. আর্সেনিকাম উঠে দাঁড়ালেন; এই আনমনা, বিশৃঙ্খল, অকর্মার ধাড়ির সাথে তিনি আর সময় অপচয় করতে পারছেন না। দ্রুতগতিতে তিনি তার ডিজাইনার স্যুটের ভাজগুলোকে সোজা করতে করতে, কর্তৃত্বসূচক কন্ঠে ব্যাখ্যা করলেন, “মি. সালফার” – তিনি তার হাত সামনে বাড়িয়ে দিলেন (যেটিতে দরখাস্তটি ধরা) – “আপনার দরখাস্ত নিয়ে যান এবং ব্যবসায়িক পরিকল্পনাসহ তা পুরো করে, কিছু আইডি আপনার ফর্মের সাথে যুক্ত করে, যে কোন সময় ব্যাংকে ফিরে আসুন।”
মি. সালফার চরমভাবে বিমুঢ়। মি. আর্সেনিকাম যখন তার নির্দেশনাগুলো সতর্কতার সাথে উচ্চারণ করছেন, মি. সালফারের লাল চোখগুলো তখন বিস্তৃতভাবে খোলা, যেমনটি খোলা তার মুখ। মি. আর্সেনিকামের দিক থেকে তিনি পেছন ফিরলেন এবং বিড় বিড় করে বলতে থাকলেন যে- এরকম নির্বোধ মানুষের দেখা তিনি জীবনে এর আগে কখনো পাননি। তিনি তার কাগজপত্রগুলো যে গতিতে তার ঘর থেকে একত্র করেছিলেন- সেই একই দুর্দান্ত গতিতে এবার মেঝে ও টেবিল থেকে তুলে নিলেন।
মি. আর্সেনিকাম এদিকে মি. সালফারকে যে ফর্মটি পূরণ করতে হবে- সেটি সহ তার হাতটি বাড়িয়ে দিলেন। মি. সালফার সেটি ছিনিয়ে নিলেন এবং কোন বিদায়-সম্ভাষণ ছাড়াই, ঝড়ের মতো দরজা ঠেলে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে এলেন। অভিশাপ দিতে দিতে রাস্তায় এলোমেলোভাবে হাটতে লাগলেন, ব্যাংকের ফর্মটি দুমড়ে মুচড়ে ময়লার বাক্সে ফেলে দিয়ে আনমনে বলতে লাগলেন, “আমার ব্যবসায় কোনভাবে যুক্ত হতে পারাটা ছিলো তাদের জন্য সৌভাগ্য!”
তিনি ব্যাপকভাবে মর্মাহত হলেন এবং তারা তাকে বুঝতে ভুল করেছে বলে অনুভব করলেন; কিন্তু তিনি দিনটিকে- মি. আর্সেনিকাম, যে বুদ্ধিবৃত্তিক ধী-শক্তিতে তার ধারে কাছেও নেই- এরকম একজন ব্যক্তির সাথে একটি দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা পাবার দিন হিসাবে চিহ্নিত করে রাখলেন। হাটতে হাটতে তিনি সিদ্ধান্তে চলে এলেন যে, বর্তমান পৃথিবী তার ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া এবং তার মতো মহান মানুষদেরকে গ্রহণ জন্য এখনো প্রস্তুত নয়।
কাজেই আজকের জন্য, সে তার তিক্ত হতাশাকে এক বোতল হুইস্কিতে ডুবিয়ে দেয়ার ইচ্ছায় মদের দোকানের দিকে হাঁটা দিলেন।
সুতরাং এখানে আপনি তাকে পাচ্ছেন। মি. সালফার বাড়ী যাবার পথে স্থানীয় কারি-হাউসে গেলেন এবং সারাটি রাত নতুন, ফ্যান্টাসটিক, রঙচঙে আইডিয়াগুলো কল্পনা করে ব্যয় করলেন; আগামীকালের এই আশাটি নিয়ে যে- খুব শিঘ্রীই একদিন, তিনি সত্যিকারে কতটা জিনিয়াস সেই পরিচয়েই পরিচিত হবেন!
Discussion about this post