“Disease is nothing more than changes in the general state of the human economy, which declare themselves as symptoms. “
ডা. অ্যালেন কেন্টের প্রায় সমসাময়িক ছিলেন তাই মনে হয় এটি অর্গাননের ৪-র্থ সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে হ্যানিম্যান বলছেন,
“রোগ মানুষের সার্বিক স্বাস্থ্যের পরিবর্তিত রূপ ছাড়া কিছুই নয়। যা লক্ষণের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করে।”
এই সূত্রটিকে হ্যানিম্যান ষষ্ঠ সংস্করণে একটু পরিবর্তন করেছেন,
Now, as diseases are nothing more than alterations in the state of health of the healthy individual which express themselves by morbid sings, and……
এখানে হ্যানিম্যান রোগ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দিলেন। এখানেই তিনি রোগ সম্পর্কে আবহমান প্রচলিত ধারণাকে বাতিল করে নতুন ধারণার প্রচলন করলেন যা একান্তভাবে যুগান্তকারী এবং আধুনিক। হ্যানিম্যান ষষ্ঠ সংস্করণে “পরিবর্তন” শব্দটি বাদ দিয়ে, “অবস্থান্তর” শব্দটি বললেন। দুটি শব্দের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে।
ডা. অ্যালেন ষষ্ঠ সংস্করণ পড়েন নাই। তবুও ১৯ নং সূত্রের ব্যাখ্যা মায়াজমের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রাঞ্জলভাবে দিয়েছেন। ডা. অ্যালেন বললেন,
“In other words; disease is but the influence of some subversive force, acting in conjunction with the life force, subverting the action and changing the physiological momentum.”
ডা. অ্যালেনের এই বক্তব্যটি বোঝা বেশ কঠিন। সহজ করে কিছু বলি। ধরুন একজন ব্যক্তি মুখের ঘা (Ulcer) ও উচ্চরক্তচাপ (High pressure) নামক অবস্থাতে ভুগছেন। অর্থডক্স স্কুলের নিয়ম অনুসারে, এটি ভিন্ন রোগ সুতরাং রোগের অবস্থানও ভিন্ন। ডা. অ্যালেন দৃষ্টিভঙ্গিতে দুটি রোগই একই রোগ-সৃজনী শক্তির দ্বারা সৃষ্ট। এখানে সোরা ও সিফিলিসে মিলিত আক্রমণের ফসল। আসলে ব্যক্তি স্বতন্ত্রতার জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশ হলেও দুটোই একই মায়াজমের ক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন রূপ। তাই রূপের মোহে অন্ধ না হয়ে মায়াজমের এই স্বরূপটি উপলব্ধি করতে পারলে রোগীকে সহজেই আরোগ্য করতে পারবো। মায়াজম নাশক ওষুধ দিলে মায়াজমের প্রভাব কেটে গেলেই প্রাণশক্তির প্রভাবে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে। তাই অবস্থান্তর বলাই শ্রেয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে অ্যালেনের কথা হ্যানিম্যানর ষষ্ঠ সংস্করণের প্রতিধ্বনি- যা তিনি পড়েননি। সেই কারণে বলা যেতে পারে ডা. অ্যালেন হ্যানিম্যানের যোগ্য উত্তরসূরী।
“Disease is the totality of the effects, by which we recognize or perceive the action of a peculiar order of subversive forces upon an organism which has been exceptionally or specially adapted to, or prepared for their reception. “
ডা. অ্যালেনের মনে হয়েছে অন্যান্য (রোগের) দার্শনিক সংজ্ঞার তুলনায় হ্যাম্পেলের সংজ্ঞা যথাযথ। বিভিন্ন প্রকার রোগ সৃজনী-শক্তি ( Miasms) প্রাণ শক্তির ( Vital force ) সঙ্গে গাঁটছড়া বেধে আমাদের শরীরকে বাধ্য করে তাদের ( মায়াজম) মত পণ্য (এখানে লক্ষণ ) উৎপাদন করতে। যেমন কোলগেট কম্পানীর সঙ্গে আমাদের কয়েকটি কম্পানীর গাঁটছড়া বাধা। এরপর থেকে আমাদের কম্পানীগুলি কোলগেট কম্পানীর বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে যাতে অবশ্যই কোলগেটের ট্রেডমার্ক বা TM ব্যবহার করে। ঠিক অনুরূপ ভাবে মায়াজম, প্রাণশক্তির সঙ্গে গাঁটছড়া বেধে তার TM দিয়ে বিভিন্ন পণ্য (লক্ষণ) উৎপাদন করে। আর এই সব পণ্য একক বা মিশ্রিত যে ভাবেই প্রকাশ পাক না কেন, তাদের TM থাকবেই থাকবে।
হ্যানিম্যান আমাদের রোগীর ভাষায় রোগিলিপি করতে বলেছেন। সুতরাং মায়াজমকে রোগীর ভাষা থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। উদাহরণ দিয়ে বলতে গেলে-
(১) চেম্বারে কয়েকজন রোগী বসে আছে কিন্তু একজন রোগী ছটফট করছে। পরে তাকে ছটফটের কারণ জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, এক জায়গায় সে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না ইত্যাদি অর্থাৎ স্থান পরিবর্তন করতে হয়। এই পরিবর্তন সোরার TM।
(২) আবার কোনো রোগী রোনাল্ডোর মতো কানে দুল পড়ে আছে। ভালবাসার নামে রোনাল্ডোর দুল পড়লেও তার কঠোর পরিশ্রমের জীবনকে মোটেই এরা অনুসরণ করে না। এই যে ভালবাসার মধ্যে অসঙ্গতি সেটাই সাইকোসিসের TM।
(৩) একটি রোগী মনমরা হয়ে চুপচাপ বসে আছে। এই বিষন্নতা হচ্ছে সিফিলিসের TM।
এবার আশা যাক মিশ্র – মায়াজমের গাঁটছড়ার ক্ষেত্রটিতে। এখানেও প্রত্যেক মায়জম তাদের TM প্রকাশ করে। যেমন –
(১) সামনে পরীক্ষা থাকলে সাধারণত আমরা ভয় পাই। কিন্তু কোনো রোগীর পরীক্ষার আগে কুল কুল করে ঘাম দিচ্ছে, বুক ধড়্ ফড়্ ইত্যাদি করছে। এটি উদ্বেগকে (Anxiety) বোঝাচ্ছে। এটি পরীক্ষার ভয়ে। ভয় সোরার TM।
(২) এবার সোরার সঙ্গে সাইকোসিস যুক্ত হলে এই উদ্বিগ্নতা অন্য রূপ নেবে। দেখা যাবে পরীক্ষার কয়েকদিন আগে থেকে শুধু ভয় যেন মনে গেঁথে আছে- এটুলির মতো কিছুতেই ছাড়ছে না। এই যে একটানা চলছে, এটি সাইকোসিসের TM। এই মায়াজম সোরার সঙ্গে যুক্ত হলে সোরার কষ্টগুলি বহুগুণ বেড়ে যায়। এটাকে অনেকে টিউবারকুলার বলেন।
(৩) সোরার সঙ্গে সিফিলিস যুক্ত হলে পরীক্ষার আগে ভয়ে হাত-পা বরফের মতো ঠান্ডা হয়, আবার পরীক্ষা মিটে গেলে হাত-পা গরম হয়ে যায়। সাময়িক রক্ত সঞ্চালনের হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য এরূপ হয়। এই ঘটনাটিকে Physiological perversion বলা হয়। এটি সিফিলিসের TM।
তাহলে বোঝা গেল মিশ্রণেও মায়জমের TM ঠিক প্রকাশ পায়। ডা. অ্যালেন আরও সহজ করে বললেন,
“Disease is the vicarious embodiment of some miasmatic influence that has bonded itself with the life force, producing disease according to the type.”
সুতরাং বলতে পারি, TM কখনোই লুকানো যায় না।
Just as we see in a piece of lime or charcoal an external, visible type or embodiment of an internal dynamics that through the process of potentization develops the artificial subversive force.
এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির আলোচনার পূর্বে কিছু কথা বলে নিচ্ছি যা আগের পর্বে বলা হয়নি। ডা. অ্যালেন বলেছেন বিধ্বংসী প্রাকৃতিক রোগ-সৃজনী শক্তি, মায়াজম কীভাবে আমাদের প্রাণশক্তিকে ক্রীতদাস বানিয়ে নিজের (মায়াজমের) পছন্দ অনুসারে সৃষ্টি (লক্ষণ) করে। এই সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টার বৈশিষ্ট্য বা ছাপ বা TM বুঝিয়ে দেবে সে কার সন্তান!
ডা. হ্যানিম্যানই বিশ্বে প্রথম চিকিৎসক বিজ্ঞানী, যিনি এই রোগ-সৃজনী শক্তির স্বরূপ প্রকাশ করেছিলেন। হ্যানিম্যানের মায়াজম তত্ত্ব হ্যানিম্যানের সময় থেকে আজ পর্যন্ত ঘরে-বাইরে সমালোচিত ও আক্রান্ত। আবার আজকাল অনেকে আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মায়াজমের স্বরূপ উন্মোচনের চেষ্টা করছেন। আমি এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। এখনো পর্যন্ত সর্বজন-স্বীকৃত সমাধান বের হয়নি।
আসুন আমরা মায়াজম আবিষ্কারের ইতিহাসকে স্মরণ করি। হ্যানিম্যান ১২ বছর রোগী পর্যবেক্ষণ ও যুক্তির দ্বারা মায়াজম তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। হ্যানিম্যানের পথে রোগী পর্যবেক্ষণের শক্তিকে আরো ক্ষুরধার করে এগিয়ে চলার চেষ্টা করি। আমরা আরো যুক্তিবাদী হবার চেষ্টা করি।
মায়াজম চেনা যায় লক্ষণের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যকে অনুধাবন করে। যেমন সাইকোসিসের আক্রমণের বৈশিষ্ট্য ধীরে ধীরে আবার সিফিলিসের আক্রমণ দ্রুত গতিতে।
আপনি যে বাড়ীতে বাস করেন তার একটি ইট খুলে দেখুন- স্রষ্টার নাম খোদাই করা আছে। বিখ্যাত এক ছবি নিয়ে বিশ্ব তোলপাড়। অবশেষে বিজ্ঞানের সাহায্যে প্রমাণিত হল- এই ছবিটি ভিনসেন্ট ভ্যান গগের আঁকা। এটা বোঝা গেল কী ভাবে? এটা শিল্পীর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকে বিশ্লেষণ করে। আবার আদালতে একটি মামলা হয়েছে ছেলেটির বাবা কে? বিচারক জিন (Gene) পরীক্ষার নির্দেশ দিলেন এবং সমাধান হয়ে গেল। এখানেও বৈশিষ্ট্যর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
আজ আমাদের ভাবার সময় এসেছে আমরা মেটিরিয়ায় যে লক্ষণগুলি পড়ছি তার সব বৈশিষ্ট্য কী আমরা বুঝতে পারছি? যদি না বুঝি তাহলে কী সঠিক হোমিওপ্যাথি করতে পারবো? যারা শুধু লক্ষণের ভিত্তিতে চিকিৎসা করেন, তাদেরকে ডা. অ্যালেন ‘Symptom-Doctor’ বলেছেন। আমি কারো সমালোচনা করছি না। আমাদের আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে। আমি মনে করি সকল হোমিওপ্যাথগণই আসলে যোদ্ধা। যেহেতু মায়াজম বস্তু নয় বরং শক্তি তাই লক্ষণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই সফল হতে হবে। যুদ্ধের অস্ত্র হ্যানিম্যান সুস্থ শরীরের উপর পরীক্ষণ করে, অসুস্থ শরীরে প্রয়োগ করে, ফলাফল বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়ে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। সেখানে তিনি ক্যালকেরিয়া কার্ব ও কার্বো ভেজের উদাহরণ দিয়েছেন। দুটি ওষুধই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র।
Discussion about this post