অনুবাদ: ডা. শাহীন মাহমুদ
[অনুবাদকের কথা: কয়েকবছর ধরেই এটি অনুবাদ করে প্রকাশ করবো বলে ভাবছিলাম কিন্তু করা হয়ে উঠেনি। অবশেষে অনুবাদটা হয়েই গেলো। যদিও মূল লেখাটি ইন্ডিয়ার হোমিওপ্যাথিক শিক্ষার অবকাঠামোর ভিত্তিতে ইন্ডিয়ারই একজন লেখকের লেখা। তথাপি এটা বলার অপেক্ষা রাখে না- বাংলাদেশের হোমিওপ্যাথিক শিক্ষার অবকাঠামো কোনভাবেই ওখানকার চাইতে উন্নত নয়। তাদের সম্মুখীন হওয়া সমস্যাগুলোর মুখোমুখি তো আমরা হই বটেই- আমাদের নিজেদেরও আরো অতিরিক্ত বেশ কিছু নিজস্ব সমস্যা আছে। কাজেই, এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করার ব্যাপারে, লেখাটি একেবারে অপ্রাসঙ্গিক হবে না বলেই আমি মনে করি। তারচেয়েও বড় কথা, এখানে মূল লেখক আমাদের হোমিওপ্যাথিক শিক্ষার এমন কিছু সমস্যাগত দিক তুলে ধরেছেন- যা আসলে কোন দেশ-কালের সীমায়ই সীমাবদ্ধ নয়- সমস্যাগুলো সার্বজনীন।]
ইন্ডিয়াতে হোমিওপ্যাথির বেশ শক্তিশালী ও মজবুত একটি অবকাঠামো বর্তমান। তবু, শিক্ষার্থীগণ এই অবকাঠামো থেকে কিভাবে সর্বোচ্চ লাভ বের করে আনতে পারে এজন্য তাদের আত্মবিবেচনা প্রয়োজন। বহুবছর শিক্ষাক্ষেত্রে সম্পৃক্ত থাকায়, আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, বিএইচএমএস পড়তে আসা ৮০% শিক্ষার্থী পছন্দের ভিত্তিতে না এসে বরং দৈবক্রমে এসে পড়েছে। একারণে, এই ৮০% শিক্ষার্থীদের, হোমিওপ্যাথির প্রতি একটি সহজাত উদাসীনতা রয়েছে। আর এই সহজাত উদাসীনতার ফলে, হোমিওপ্যাথি হারায় এই ৮০% সৃষ্টিশীল তরুণ জেনারেশনের উৎসাহ-উদ্দীপনা। ছেলেদের অধিকাংশই হোমিওপ্যাথিতে আসে একজন হোমিওপ্যাথ হবার চেয়ে বরং ডাক্তার হবার উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে (স্রেফ এলোপ্যাথি অনুশীলন করতে পারার জন্য)। মেয়েদের বেশিরভাগ হোমিওপ্যাথিতে আসে নিছক চিকিৎসক হিসাবে একটি ডিগ্রি লাভ করার জন্য, যেন তারা বেশ একটি উচ্চশিক্ষিত বড় জোগাড় করতে পারে। সুতরাং বিএইচএমএস-দের কেবলমাত্র ১০-১৫% গ্র্যাজুয়েট নিষ্ঠার সাথে তাদের পেশায় লেগে থাকে। বাদবাকীরা হয় এলোপ্যাথিক প্র্যাকটিস করতে, এলোপ্যাথিক হসপিটালগুলোতে RMO হতে বা হাউজম্যানশিপ পেতে চলে যায়, অথবা তাদের এই পেশাকে সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করে। ইন্ডিয়াতে হোমিওপ্যাথির সবচেয়ে শক্তিশালী ও বৃহৎ অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও – এই ফলাফলটি এত নিয়ন্ত্রণহীন হচ্ছে কেন? চলুন দেখা যাক- দোষটা কার। হোমিওপ্যাথিকে যারা কেবল স্বীকৃতির জন্য গ্রহণ করছে এটি কি সেই শিক্ষার্থীদের ভুল?
শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে, শিক্ষা একটি সম্পূর্ণ আয়ুষ্কালের জন্য বিনিয়োগস্বরূপ। কাজেই, এটিকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই তাদের গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই ব্যাপারটি আরো গুরুত্বপূর্ণ যখন এটি চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষার ক্ষেত্রটির সাথে সংশ্লিষ্ট হয়। আমরা দেখতে পাই, শিক্ষামূলক অনুশীলন বাস্তব প্র্যাকটিসের সাথে প্রাসঙ্গিক নয়। যে তত্ত্বগুলো শেখানো হয় এবং বাস্তবে প্র্যাকটিসের মাঝে এক বিশাল দূরত্ব বিদ্যমান – ইন্টার্নিশিপ করার সময় শিক্ষার্থীগণ যার মুখোমুখি হবে। চিকিৎসাবিদ্যার বাস্তব অনুশীলনের ক্ষেত্রে, এটি আমাদের সম্প্রদায়ের সাথে সাথে আমাদের পেশার জন্যও ভয়ানক বিপর্যয়কারী পরিণতি বয়ে আনতে পারে। এসমস্ত পরিণতির কারণ হচ্ছে হোমিওপ্যাথির প্রতি আস্থার অভাব এবং পরিণামে জনসমর্থন ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব।
বিএইচএমএস ইন্সটিটিউটগুলো যেভাবে গজিয়ে উঠছে, এটি সুস্পষ্ট যে- আমাদের প্রয়োজনগুলোকে বিবেচনায় এনে কেবলমাত্র বর্তমান সময়ের জন্য নয়- ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েও, আমরা কি ধরণের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক তৈরী করতে চাই, সে ব্যাপারে আমাদের সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা থাকাটা বাধ্যতামূলক। অন্য কথায়, আমাদের এমন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সৃষ্টি করতে হবে যারা পেশেন্ট-কেয়ার ও স্বাস্থসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবর্তনশীল কাঠামোর সাথে নিজেদের সফলভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
এখন চলুন প্রথম বর্ষ থেকে সমাপনী বর্ষ পর্যন্ত তাদের শিক্ষাপ্রদান পদ্ধতি ও বাস্তবতার সাথে পাঠ্যবিষয়গুলোর প্রাসঙ্গিকতাকে আমরা যাচাই করি-
১. সমাপনী বর্ষে হোমিওপ্যাথিক রেপার্টরি প্রায় ছুঁয়েও দেখা হয় না। তাত্ত্বিক লেকচার প্রদান করে কেবল কোর্সকে সমাপ্ত করার ব্যাপারেই জোর দেয়া হয় এবং পরীক্ষাগুলো নিছক যেন স্মরণশক্তির ক্ষমতা পরখ করা। সবচেয়ে বাস্তবমূখী বিষয়ের একটিকে স্রেফ রেপার্টরির ইতিহাস, কোন একটি রেপার্টরির চ্যাপ্টারের সংখ্যা, সংস্করণগুলোর সংখ্যা, বিভিন্ন রেপার্টরির রুব্রিক ও পৃষ্ঠাসংখ্যার একটি স্মরণশক্তিচর্চার বিষয় হিসাবে উৎসর্গ করা হয়েছে। পরিষ্কারভাবে বললে, রেপার্টরাইজেশনের সত্যিকারের কৌশলটি এখানে একদমই হাওয়া।
২. অসুস্থ হবার ঘটনাপরম্পরা বা মানবজাতির দুর্ভোগ থেকে তাকে উপশম অথবা আরোগ্য করার বিজ্ঞান ও প্রয়োগকলাটির ব্যাপারে একজন শিক্ষার্থী হিসাবে তাদের খুব কমই আগ্রহ থাকতে পারে। কারিকুলামটি তার সম্পাদনায়, অসুস্থতার ব্যাপারে হ্যানিমানিয়ান কনসেপ্টে তাদের আগ্রহ উৎপাদনে বা সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ। কোর্সটি নিছক এমন একটা কিছু বলে মনে হয়- যেন একটি ডিগ্রি পাবার জন্য অথবা প্র্যাকটিসের লাইসেন্স পাবার জন্য পুরোটা শেষ করতে হবে।
৩. মেটেরিয়া মেডিকা ও অর্গাননের লেকচারসমূহ; এই দুটো সবচেয়ে বাস্তবমূখী বিষয় পুরো চারটি বছর জুড়েই নিরস ও ফলহীন। ক্লিনিক্যাল সংশ্লিষ্টতা কখনোই ব্যাখ্যা করা হয় না- এমনকি দ্বিতীয় বর্ষে যখন থেকে শিক্ষার্থীদেরকে OPD (Out-Patient Department) গুলোতে নিয়োগ করা হয় তখনও।
৪. এনাটমি ও ফিজিওলজি প্রসঙ্গে যা বলা যায়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্যারা-ক্লিনিক্যাল এই সাবজেক্টগুলোতে মানুষকে সমগ্ররূপে বিবেচনা করে তার ফাংশন ও গঠন শিক্ষাপ্রদান সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত এবং পরবর্তী তিনটি বছরে তার প্রায়োগিক দিক, ক্লিনিক্যাল সাবজেক্টগুলোতে তথা- প্যাথলজি, সার্জারি এবং ঔষধপ্রয়োগবিদ্যায় তার ঘাটতি থেকে যায়।
মোদ্দাকথা, যে জায়গাটিতে আমাদের শিক্ষার্থীদের হোমিওপ্যাথিক ঔষধের দ্বারা মানুষের রোগের সবচেয়ে জটিল বিষয়সমূহ, তার প্রতিরোধ ও আরোগ্য শেখার কথা- এই হচ্ছে তার অবস্থা।
সমাধান
আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট লেভেলের জন্য আমাদের এমন একটি ট্রেইনিং পরিকল্পনা উদ্ভব করতে হবে যা আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে নিম্নোক্ত উপায়ে সহযোগিতা করবে:
১. আমাদের প্রশিক্ষণ ছাঁচটির জন্য এমনভাবে পরিকল্পনা করা উচিৎ যাতে অনুসন্ধানের উদ্দীপনা এবং খোলামনে লাগাতার স্ব-শিক্ষাগ্রহণকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। রোগ ও সুস্থতা উভয়ক্ষেত্রেই মানুষকে সমগ্র হিসাবে চিন্তা করে পড়াশুনা করার উপর জোর প্রদান করা উচিৎ। কোর্সটিকে কম্যুনিটির আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও প্রয়োজনের সাথে সঙ্গতিযুক্তও হতে হবে।
২. মূল কোর্সের সিলেবাস (সোজাসাপ্টা ডিগ্রি অথবা পোস্ট-গ্র্যাজুযেট ডিগ্রি), যদিও অত্যন্ত সু-পরিকল্পিত- তা বাস্তবায়নেও অবশ্যই চমৎকারিত্ব থাকতে হবে।
৩. সাধারণত, শিক্ষালয়গুলো শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের একটি শোষক হিসাবে দেখে। কিন্তু শিক্ষাগ্রহণ একটি সক্রিয় ও পারস্পরিক লেন-দেনযুক্ত প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষার্থীদের আচরণ ও অভিজ্ঞতা মৌলিক উপাদান; শিক্ষার্থীরা কেবলমাত্র গ্রহণই করবে না- তার নিজের বোধ ও উপলব্ধির ক্ষেত্রটিতে কি হচ্ছে না হচ্ছে- তা প্রদান করবে।

আমাদের লক্ষ্য, একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের যোগ্যতা বিকাশ করতে-
১. শিক্ষার্থীদেরকে একটি উপযুক্ত পদ্ধতিতে শাস্ত্র ও বৈজ্ঞানিক বিষয়বস্তু ব্যবহার করতে হবে; বস্তুত রোগী এবং তার কম্যুনিটির সদস্যগণ থেকে প্রাপ্ত তথ্যকে প্রয়োজনমতো ব্যবহারের এবং নিজে নিজে অথবা বইপত্র, জার্নাল বা অন্য সহকর্মীদের সহযোগিতায় সমস্যা সমাধান করতে পারার সুবিধাজনক অবস্থানটিতে সে থাকে।
২. শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই মূল দক্ষতাগুলো (স্রেফ মূল-জ্ঞান নয়) আয়ত্ত্ব করতে হবে; সে যে কাজটি করতে পারবে সেটি তার প্রমাণ করার যোগ্যতা অবশ্যই থাকতে হবে। বার বার ব্যবহারের মাধ্যমেই স্মরণশক্তির স্থানটিতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। তাকে অবশ্যই কাজ করে করে শিখতে হবে।
৩. শিক্ষার্থীদের তাদের যোগ্যতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ক্রমবর্ধমান জটিলতাসমৃদ্ধ পেশাগত কাজগুলোর প্র্যাকটিসের মাধ্যমে তার পেশাগত যোগ্যতা অর্জন করা উচিৎ। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে প্র্যাকটিস মূল-নীতিগুলোকে উপলব্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
আমরা যদি রোগগ্রস্ত ও সুস্থাবস্থায় মানুষকে একটি সমগ্র হিসাবে চিন্তা করার হ্যানিমানিয়ান কনসেপ্ট তাদের মনে দৃঢ়ভাবে বপন করতে চাই- শিক্ষাপ্রদান ও শিক্ষাগ্রহণের এই সমন্বিত পদ্ধতিটি অপরিহার্য। এটি শিক্ষার্থীগণকে সেই উপলব্ধির দিকে নিয়ে যাবে যে, মানবীয় জটিল সংস্থিতিতে ভারসাম্য ও ভারসাম্যহীনতার পৃথকীকরণ সীমানাটি খুব সূক্ষ্ম। মানবিক ভারসাম্য সৃষ্টিতে সহযোগিতা করার যোগ্যতা অর্জনের জন্য মানুষের রোগাবস্থা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে হলিস্টিক এপ্রোচ বিকাশ করতে হবে।
শিক্ষামূলক প্রোগ্রামগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে- শিক্ষার্থীদের আচরণকে একটি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পরিবর্তন করার প্রক্রিয়া প্রবর্তন করা। আচরণ শব্দটি দ্বারা চিন্তা, অনুভূতি, কাজকে বোঝায়; কাজেই আচরণগত পরিবর্তন- নতুন ধারণা, অভ্যাস, গুণাবলী, আগ্রহ, চিন্তার পদ্ধতি ও পেশাগত দক্ষতাগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট। শিক্ষার্থীগণ যদি বারংবার সমস্যা সমাধানের অনুশীলনের প্রক্রিয়াটির মাঝে না থাকে- চিন্তার কাঙ্ক্ষিত শুদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে না। কাজেই, একটি নির্দিষ্ট কোর্সের পরিকল্পনাতে এরকম একটি শিক্ষাগ্রহণের পরিবেশ প্রদান করা প্রত্যাশিত- যেখানে শিক্ষার্থীগণ এমন সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হবে যার সমাধান করতে হবে। এটি তাদের বোধক্ষমতা অর্জনে এবং জটিল চিন্তাধারা বিকাশে সহযোগিতা করবে।
একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কাছে প্রত্যাশিত যে, যেসব মানুষদের নিকট সে তার পেশাগত সেবা প্রদান করছে তাদের ব্যাপারে তার একটি গভীর বোঝাপড়া তৈরী হবে এবং বিশেষ করে তাদের ব্যক্তিগত প্রেরণা, অনুভূতি, প্রয়োজন ও মানবিক আচরণের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আবেগপ্রসূত দিকগুলোর মিথষ্ক্রিয়াগুলোর ব্যাপারে একটি অন্তর্দৃষ্টি গঠিত হবে। পুরো ব্যক্তিকে বুঝতে পারা ব্যতীত, হোমিওপ্যাথিক এজেন্টগুলোকে- আরোগ্যকারীরূপে প্রয়োগ করাও সম্ভব নয়, বিচক্ষণ কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে অন্যান্য সমস্যাগুলোতে সহযোগিতা করাও সম্ভব নয়।

আমাদেরকে ফলপ্রসু চিন্তাধারা, মনোভাব ও আগ্রহের বিকাশ করার জন্য শিক্ষাধারার পরিকল্পনা করতে হবে। একজন শিক্ষার্থীর জন্য তার শিক্ষাক্ষেত্রটি- চিন্তা করা, অনুভব করা ও অবস্থার সাথে যথোপযুক্ত উপায়ে কাজ করার দিক-নির্দেশনার সাথে সংশ্লিষ্ট হতে হবে। একটি প্রোগ্রাম-পরিকল্পনায়, তত্ত্ব ও প্র্যাকটিসের মাঝে, পেশাটির প্রয়োগকলা ও বিজ্ঞানের মাঝে একটি নিবিড় ও অধিকতর সঙ্গতিপূর্ণ সংযোগ সাধন করা প্রয়োজনীয়। স্বাস্থ্যের বিচ্যুতাবস্থার বিভিন্ন চিহ্ন ও লক্ষণাবলী গবেষণার একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা দেখিয়ে দেয়, কিভাবে রোগাবস্থায় একজন মানুষ আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ‘শত্রুভাবাপন্ন’ প্রভাবসমূহের (এজেন্টস, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরিবেশগত, আবেগপ্রসূত ইত্যাদি) প্রতি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এ প্রকারের গাঠনিক ও ক্রিয়াগত পরিবর্তনের (প্যাথলজি) জ্ঞান ও শিক্ষার একটি অংশ।
মানবীয় রোগাবস্থায় হোমিওপ্যাথিক ঔষধের প্রয়োগে এমন ধরণের মানসিক দক্ষতা ও জ্ঞানের সংযোগসাধন প্রয়োজন হয় যা এলোপ্যাথিক ঔষধ পেসক্রিপশনের বেলায় সে রকমভাবে প্রয়োজন হয় না। হোমিওপ্যাথিক প্রেসক্রাইবারকে একজন শিল্পী হতে হয় এবং মানবীয় মনস্তত্বে সু-অবহিত হতে হয়। সুতরাং প্রশিক্ষণ, কারিকুলাম তদনুসারেই পরিকল্পিত হতে হবে এবং এলোপ্যাথিক শিক্ষাব্যবস্থায় কিভাবে করা হচ্ছে স্রেফ তার অনুকরণ হওয়া উচিৎ নয়। উপর্যুক্ত বিবেচনা থেকে, শিক্ষার্থীদেরকে তাদের প্রশিক্ষণের জন্য, ইন্সটিটিউশন এবং কারিকুলামের প্রয়োজনীয় আদর্শ মানটিকে এবং সবশেষে যে যোগ্যতা ও সফলতা অর্জনে তাদের উদ্দীপিত করা হচ্ছে, তা তাদেরকে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে। কি ধরনের শিক্ষামূলক মডিউল তাদের জন্য প্রস্তুত করা উচিৎ তা তাদেরকে চিন্তা করতে হবে – যাতে তারা সত্যিকারের যোগ্য ও আত্মপ্রত্যয়ী হোমিওপ্যাথে পরিণত হতে পারে।