বয়স্ক মানুষের মধ্যে যে সমস্যাগুলি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তার মধ্যে প্রস্রাব সংক্রান্ত সমস্যা অন্যতম। আর এই ঘটনা পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। প্রস্রাব সংক্রান্ত সমস্যাগুলি যেহেতু খুবই ব্যক্তিগত, তাই রোগী প্রথমদিকে সমস্যাগুলি নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। বরং বিভিন্ন ঘরোয়া টোটকার সাহায্যে উপশমের চেষ্টা করেন। এমনকি তার এই সমস্যা নিয়ে অতি নিকটজনদের সাথেও কোনো রকম আলোচনা করতে চান না। কিন্তু সমস্যগুলি যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করে তখন অগত্যা ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। কিন্তু এই দেরী করাটা মোটেই ঠিক কাজ নয়।
বয়স্ক মহিলাদের সমস্যা:
বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে প্রস্রাব সংক্রান্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো আর্জেন্সি ইনকন্টিনেন্স। অর্থাৎ মূত্র ধরে রাখতে না পারা। সামান্য মূত্রের বেগ এলেই টয়লেটে যেতে হয়। না হলে অসাড়ে মূত্র হয়ে যায়। অন্য যে রোগটি মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়, সেটা হলো ‘স্ট্রেস ইনকন্সিনেন্স’ এই রোগে ব্লাডারের স্থিতিস্থাপকতা বা ইলাস্ট্রিসিটি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সামান্য নড়াচড়া হাচি-কাঁশি, দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসতে গেলে বা বসা ও শোয়া অবস্থা থেকে দাঁড়াতে গেলে মূত্র থলিতে চাপ পড়ে এবং আপনাআপনিই মূত্র বেড়িয়ে যায়। এটা অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং অসুবিধাজনক অবস্থার সৃষ্টি করে এবং ক্রনিক রেনাল ফেলিওরও হতে পারে। একারণে রেনাল স্টোন বা কিডনি সিস্ট অনেক সময় লক্ষ করা যায়।
বয়স্ক পুরুষদের সমস্যা:
বয়স্ক পুরুষদের প্রস্রাবজনিত রোগের প্রধান একটি কারণ প্রস্টেটজনিত সমস্যা। প্রস্টেট গ্লান্ট কেবলমাত্র পুরুষের দেহে থাকে। বেশি বয়সে এই গ্লান্টটির বৃদ্ধি হওয়ার ফলে মূত্রনালি সঙ্কুচিত হয়ে প্রস্রাব হওয়াকে রোধ করে। ফলে ধীরে ধীরে প্রস্রাবের পরিমাণ কম হয় এবং প্রস্রাব করা কষ্টকর হয়। ডাক্তারি ভাষায় এই ধরণের স্ফিতিকে B.P.H বা বিনাইন প্রস্টেটিক গ্লোসিয়া বলে।
- এছাড়া U.T.I বা ইউরিনারি ট্রাস্ট ইনফেকশন হতে পারে।
- সংক্রামণজনিত কারণে প্রস্টোইটিস হতে পারে।
- প্রস্টেটের ক্যান্সার হতে পারে।
- কিডনি বা ব্লাডারে স্টোন হতে পারে।
- কিডনিতে সিস্ট হতে পারে।
কি করণীয়:
রোগের কারণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসকের নির্দেশমত জল পান করতে হবে। পাঠার মাংস, ডিমের কুসুম প্রভৃতি খাওয়া কমাতে হবে। রোগের প্রকৃতি অনুযায়ী শরীর চর্চা বা যোগব্যায়াম করতে হবে। ধূমপান, মদ্যপান বন্ধ করতে হবে। অত্যধিক মানসিক চাপ নেওয়া চলবে না।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা:
- serum urea, creatininc, uric Acid.
- BS (F). BS (PP)
- U.S.G – KUB and residual win
- serum P.S.A (পুরুষের জন্য)
- U.S.G Prostate gland (পুরুষের জন্য)
- Urin analysis
জটিলতা :
- ক্রমিক রেনাল ফেলিওর ।
- হিমাচুরিয়া বা প্রস্রাবে রক্ত আসা।
- ইউরেপ্রাল স্ট্রিকচার বা মূত্রনালীর সংকোচন।
চিকিৎসা:
হোমিওপ্যাথিতে মূত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগের সফলভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব। মহিলাদের ক্ষেত্রে মূত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ নিয়ে অনেক সময়ই রোগী গোপনীয়তা বজায়ে রাখার ফলে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার দেরী হয়ে যায়। যা কখনোই কাম্য নয়। পুরুষের ক্ষেত্রে মূত্র সংক্রান্ত সমস্যা ফেলে রাখলে তা পরবর্তি সময়ে জটিল আকার ধারণ করতে পারে। ফলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা উচিৎ। কিডনি বা ব্লাডারস্টোন বা কিডনি সিস্ট, প্রস্টেটাইটিস বিনাইন প্রস্টেটিক হায়পারপ্লাসিয়া, ইউরিনারি ইনিকন্টিনেন্স প্রভৃতি রোগ হোমিওপ্যাথিতে সেরে যায়। তবে রেনাল কাস্টিনোমা বা প্রোস্টেট ক্যান্সারের রোগিদের ক্ষেত্রে রোগীর কষ্ট অনেকটাই লাঘব করা যায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে। রেনালস্টোনের মাপ যদি অত্যধিক বেশি হয় বা ক্যান্সারের পরিস্থিতি যদি অত্যন্ত জটিল হয় তবে সার্জারির সাহার্য্য নেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু এ কথাও ঠিক যে, রেনালস্টোন অপারেশনের পরেও আবার সোটান ফরমেশন হয়। এই ধরণের রোগী আমরা প্রতিনিয়তই পাই। ফলে শুরু থেকেই কিংবা যারা অগত্যা সার্জারি করিয়েই ফেলেছেন তারা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার আওতায় এসে রোগটিকে সমূলে বিনাশ করুন। তবে রোগীকে অবশ্যই ধৈর্য ধরে নিয়ম মেনে ওষুধ খেয়ে যেতে হবে।
Discussion about this post