সংকলনে ডা. শাহীন মাহমুদ:
প্রশ্ন: সাধারণভাবে স্বাস্থ্যরক্ষায় হোমিওপ্যাথির ভূমিকা কি?
উত্তর: অনুকূল পরিবেশে শরীর এবং মনের সাম্যাবস্থাই হল স্বাস্থ্য। এই সাম্যাবস্থায় মানব দেহের সমস্ত ক্রিয়া ছন্দোবদ্ধ গতিতে চলতে থাকে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে দেখা দেয় শারীরিক অসুস্থ্যতা। আবার স্বাস্থের নিয়ম মেনে চললেই যে অসুস্থ্যতা দেখা দেবে না তা নয়। প্রতিকূল পরিবেশ, দূষণ, বংশগত রোগপ্রবণতা, অবদমিত রোগ অবস্থা, ভাইরাস ইত্যাদিও অসুস্থতার কারণ হতে পারে। কারণ যাই হোক না কেন, হোমিওপ্যাথিতে রোগের লক্ষণসমষ্টির স্থায়ী অবলুপ্তিই হল আরোগ্য। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সরাসরি রোগজীবাণু ধ্বংস করতে পারে না। হোমিওপ্যাথিতে রোগের আপাতগ্রাহ্য কারণেও কোন চিকিৎসা করা হয় না। রোগের মূল কারণকে খুঁজে বের করে তাকে সমূলে উৎপাটিত করাই হোমিওপ্যাথির আদর্শ। এবং সেটা সম্ভব হয় রোগীর প্রকৃতিদত্ত স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উজ্জীবিত করার মাধ্যমে। এই ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে রোগজীবাণু স্বাভাবিক নিয়মেই ধ্বংস হবে।
প্রশ্ন: ক্ষুধামান্দ্য এবং অনিদ্রা এই দুই রোগের ক্ষেত্রে এলোপ্যাথিক ওষুধ প্রয়োগ করলে দেখা যায় যে যত দিন ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে ততদিনই সুফল পাওয়া যাচ্ছে। ওষুধ বন্ধ করার কিছু দিনের মধ্যেই আবার পুরনো জটিলতা ফিরে আসে। হোমিওপ্যাথিতে কি এর স্থায়ী প্রতিকার সম্ভব?
উত্তর: ‘ক্ষুধামান্দ্য, অনিদ্রা বা মাথাধরা’ -এইগুলি কোনো রোগ নয়, রোগের লক্ষণমাত্র। হোমিওপ্যাথির কাজ হল এই ক্ষুধামান্দ্য, অনিদ্রা বা মাথাধরার মূল কারণটি খুঁজে বের করা। এবং তাকে নির্মূল করা। প্যাসিফ্লোরা, নাক্স ভমিকা প্রয়োগে হয়তো ঘুম আসবে এবং চেলিডনিয়াম নিয়মিত ব্যবহার করলেও খিদে বাড়বে কিন্তু অনিদ্রা বা ক্ষুদামান্দের কোনো স্থায়ী প্রতিকার এইভাবে সম্ভব নয়। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ডায়াবেটিস মেলিটাসের আপাতগ্রাহ্য কারণ হল ইনসুলিনের স্বল্পতা। কিন্তু হোমিওপ্যাথি ইনসুলিনের অভাব পুরণের চেষ্টা করে না। হোমিওপ্যাথির কাজ হল ইনসুলিন তৈরির গ্রন্থিকে (Pancreas ) উজ্জীবিত করা যাতে স্বাভাবিক নিয়মে রোগীর দেহে ইনসুলিন তৈরি হয় এবং রোগী ডায়াবেটিস মেলিটাস থেকে মুক্তি পায়। কিন্তু ওই গ্রন্থি যদি স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে যায় তা হলে হোমিওপ্যাথিতে কিছু করার থাকে না।
প্রশ্ন: হাঁপানি এবং একজিমা আরোগ্যের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি কতখানি সফল?
উত্তর: যে কোনো ক্রনিক রোগই হোমিওপ্যাথির মতে সোরা, সিফিলিস এবং সাইকোসিস -এই তিনটি রোগাবস্থার অন্তর্ভুক্ত। রোগীর বংশ ইতিহাস, অতীত কোনো অসুখের বিবরণ এবং বর্তমান লক্ষণসমষ্টির ভিত্তিতে বিচার করে দেখতে হয় কোন রোগ -অবস্থার কারণে রোগী বর্তমানে আক্রান্ত। রোগীর হাঁপানির কারণ যদি সাইকোসিস হয় তাহলে তাকে আমরা অ্যান্টিসাইকোটিক ঔষধ প্রয়োগ করে সুস্থ্য করে তোলার চেষ্টা করি। আর একজিমার কারণ সোরা হলে অ্যান্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগ করি।
প্রশ্ন: এই তিনটি রোগ-অবস্থা মানব-দেহে কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর: সোরা সৃষ্টি হয় চর্মরোগ থেকে, সাইকোসিস -আঁচিলযুক্ত গনোরিয়া থেকে এবং সিফিলিস সিফিলিটিক ঘা থেকে। এগুলিতে রোগী সরাসরি আক্রান্ত হতে পারেন, দূষিত যৌন সংসর্গের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারেন, আবার পিতামাতার দেহ থেকেও সন্তানের দেহতে সংক্রমিত হয়। রোগ সম্পূর্ণ আরোগ্য না হয়ে যদি অন্য কোনো উপায়ে ক্ষতকে অবদমিত করা হয় তাহলে শরীরে এই ধরনের রোগ -অবস্থার সৃষ্টি হয়। হাঁপানি জন্মগত হতে পারে। আবার দীর্ঘদিনের এলার্জি থেকে প্রতিকূল এবং দূষিত পরিবেশেও এই রোগ দেখা দিতে পারে। জন্মগত হাঁপানির কারণ সাধারণত সাইকোসিস। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ প্রয়োগ করে এই রোগ নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়। একজিমার ক্ষেত্রেও মূল কারণটি খুঁজে বের করতে হবে। সাধারণত, খোস পাঁচড়া জাতীয় চর্মরোগ পুরোপুরি আরোগ্য না হয়ে রোগীর শরীরে অবদমিত আকারে থেকে যায়। পরে সেই অবদমিত চর্মরোগ স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতার সুযোগে রোগীর দেহে প্রকট হয়ে ওঠে এবং একজিমাতে পরিণতি লাভ করে। একজিমা যে রোগাবস্থা থেকে শুরু হয় তাকে বলে সোরা। সে ক্ষেত্রে সার্বিক লক্ষণ বিশ্লেষণ করে অ্যান্টিসোরিক ঔষধ দিয়ে থাকি। আবার কোনো রোগীর ক্ষেত্রে যদি হাঁপানি এবং চর্মরোগ একসাথে বর্তমান থাকে, তাহলে ডাঃ হেরিং এর আরোগ্যনীতি অনুসরণ করে আমরা প্রথমে হাঁপানি এবং পরে একজিমার চিকিৎসা করি। অর্থাৎ প্রথমে অধিক মূল্যবান এবং পরে কম মূল্যবান দেহযন্ত্রগুলি রোগমুক্ত হয়।
প্রশ্ন: আপনার সুদীর্ঘ চিকিৎসক-জীবনে এমন অভিজ্ঞতা কি হয়েছে যে হাঁপানি এবং একজিমায় আক্রান্ত রোগী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে?
উত্তর: হ্যাঁ, হাঁপানি এবং একজিমার বহু প্রাথমিক অবস্থার রোগিকে আমি সুস্থ করে তুলেছি। তবে এই ধরনের চির-রোগের (Chronic diseases ) ক্ষেত্রে অধৈর্য হলে চলবে না। দ্রুত উপশমও সম্ভব নয়। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সরাসরি হার্ট, লাংস, লিভার, কিডনি প্রভৃতির উপর কাজ করে না। এই ঔষধ রোগীর জীবনীশক্তির সাহায্যে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে উজ্জীবিত করে রোগজীবাণু বিনষ্ট করে।
প্রশ্ন: অনেকে বলেন, হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করলে রোগ বেড়ে যায়। এটা কি ঠিক?
উত্তর: চিকিৎসার শুরুতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর লক্ষণের সাময়িক বৃদ্ধি হতে পারে। এর জন্য উদ্বিগ্ন না হওয়া উচিত। একটু ধৈর্য ধরলে খুব শীঘ্রই রোগী আরোগ্যের পথে এগিয়ে যাবেন। ঔষধের শক্তি বা মাত্রা বেশি হলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে রোগীর রোগ-লক্ষণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। তবে একসঙ্গে একাধিক ঔষধ হোমিওপ্যাথির নীতি বিরুদ্ধ। এতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
প্রশ্ন: অম্বল (Acidity) একটি সাধারণ রোগ। হোমিওপ্যাথিতে কী এর কোন স্থায়ী প্রতিকার আছে?
উত্তর: অম্বলের মূল কারণ নিহিত থাকে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে। বিশেষ করে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকা, প্রচুর মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া, অত্যধিক ধূমপান এবং মদ্যপান, চা-কফির প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি, টেনশন, সময়ে না খাওয়া ইত্যাদি অম্বলের মূল কারণ। দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এই অনিয়মগুলি পরিহার করলে অর্থাৎ স্বাস্থের নিয়ম মেনে চললে অম্বলের শতকরা পঁচাত্তর ভাগ আপনা আপনিই কমে যাবে। বাঁকি পঁচিশ ভাগ আমরা রোগীর লক্ষণসমষ্টির ভিত্তিতে ঔষধ নির্বাচন করে সারিয়ে তুলি।
প্রশ্ন: স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পর কোন ঔষধ খেলে অম্বল পুরোপুরি সারবে?
উত্তর: নির্দিষ্ট কোন ঔষধের কথা আমি বলতে পারি না। হোমিওপ্যাথিতে নির্দিষ্ট রোগের নির্দিষ্ট ঔষধ নেই। আর থাকলেও তাতে সাময়িক উপশম ছাড়া স্থায়ী ফল পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন: ছোট খাট অসুখ বিসুখের জন্য কিছু কিছু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ অনেকে নিজেরাই ব্যবহার করেন দেখেছি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়তেও এই সব ক্ষেত্রে কোনো কোনো হোমিওপ্যাথ স্পেসিফিক ঔষধ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ ব্যাপারে আপনার মত কী?
উত্তর: স্বল্প হোমিও জ্ঞান নিয়ে, পত্র-পত্রিকা পড়ে, কারণে অকারণে দোকান থেকে খেয়াল-খুশি মতো ঔষধ কিনে খাওয়া খুবই ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন এরকম করতে থাকলে দুরারোগ্য রোগের সৃষ্টি হয়। কারণ একটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধে অনেক লক্ষণ নিহিত থাকে। রোগীর লক্ষণ যদি সেই ঔষধের লক্ষণের সাথে না মেলে তা হলে ঔষধের লক্ষণগুলি একদিন না একদিন শরীরে প্রকট হবেই। হোমিওপ্যাথিতে বর্তমানে ঔষধজনিত রোগ তথা রোগীর সংখ্যা যথেষ্ট বেড়ে গেছে। এ ধরনের রোগীর সম্পূর্ণ আরোগ্যের সম্ভাবনাও বেশ কম।
প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথিক ঔষধে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলেই অনেকে মনে করেন। কিন্তু আপনি যা বলছেন?
উত্তর: এটা ভুল ধারণা। কোনো চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে লেখা কোনো ঔষধপত্র পত্রিকা থেকে জেনে নেয়া কোন ঔষধ, চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া একটানা দীর্ঘদিন ব্যবহার করা কোনও ক্রমে উচিত নয়। এতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে ১ম, ১০ম, ৫০ম, সি এম, ইত্যাদি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ঔষধ অত্যন্ত দ্রুত কাজ করে।
প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় কি টাকে চুল গজানো সম্ভব?
উত্তর: টাক দু’ধরণের হয়। এক, আধুলির মত গোল গোল স্পট টাক এবং দুই, বিস্তৃত টাক। প্রথমটির ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিতে কারণ চিহ্নিত করা হয় সাইকোসিস রোগ অবস্থার মধ্যে অ্যান্টিসাইকোটিক ঔষুধ প্রয়োগ করে এই ধরণের টাক নিরাময় সম্ভব। কিন্তু গোছা গোছা চুল উঠে গিয়ে দীর্ঘ বিস্তীর্ণ এলাকা জুরে টাক পড়ে তা হলে তার কারণ সিফিলিস। এক্ষেত্রে অ্যান্টিসিফিলিটিক ঔষধ প্রয়োগে সারিয়ে তোলা যায়। তবে এর চিকিৎসাও যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু বংশগত টাকে কিছুতেই চুল গজানো সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: এমন কিছু কিছু অসুস্থতার কথা কি বলতে পারেন যে সমস্ত ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবহার করলে তাৎক্ষণিক ফল পাওয়া যায়?
উত্তর: সঠিক ক্ষেত্রে সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করলে, বিশেষ করে তরুণ রোগে, কয়েক মিনিটের মধ্যে ফল পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবহার করা কি নিরাপদ?
উত্তর: শুধু নিরাপদই নয় সঙ্গতও। ডাঃ হ্যানিম্যানের মতে এটাই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার সর্বত্তম সময়। এই সময়ে মায়ের শরীরে অনেক সুপ্ত লক্ষণের প্রকাশ ঘটে। এর ফলে তার শরীরেরের প্রকৃত অবস্থা এবং তার জন্য সঠিক ঔষধ নির্বাচন সহজতর হয়। তাকে বহু অবাঞ্ছিত উপসর্গ থেকে রেহাই দেওয়া যায়। তার থেকেও বড় কথা ভাবী সন্তানকে বংশগত রোগপ্রবণতা থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়।
প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা চলাকালে শিশু রোগিকে কি পোলিও, ভ্যাক্সিন ট্রিপ্ল অ্যান্টিজেন জাতীয় প্রতিষেধক দেয়া উচিত?
উত্তর: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা চলাকালে এগুলি ব্যবহার করলে আরোগ্যলাভে অসুবিধা দেখা দিতে পারে। যদি দিতেই হয়, তাহলে রোগী যখন অপেক্ষাকৃত সুস্থ থাকবে, সেই সময়ে ১০/১২ দিনের জন্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বন্ধ রেখে এগুলি দেয়া উচিত।
প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবহার করলে কছু কিছু খাদ্য-পানীয় গ্রহণের উপর নাকি কঠোর বিধিনিষেধ থাকে। এটা কত খানি সত্য?
উত্তর: পথ্যাপথ্য নির্বাচনে দুটি বিষয় মনে রাখতে হবে- এক, ঔষধের ক্রিয়া নষ্ট বা ব্যহত করে এমন কিছু এবং দুই, রোগী যে রোগে ভুগছেন সে রোগের পক্ষে ক্ষতিকর কিছু খাবার খেতে আমরা নিষেধ করে থাকি। যেমন- পেঁয়াজ থুজাকে অ্যান্টিডোট করে। তাই থুজা ব্যবহার করলে আমরা পেঁয়াজ খেতে নিষেধ করি। আবার ল্যাকেসিস টকজাতীয় খাবারের দ্বারা অ্যানটিডোট হয়। সুতরাং, ল্যাকেসিস দিলে আমরা টকজাতীয় খাবার খেতে নিষেধ করি। ঔষধের কাজে বাধা দেয় বলেই আমরা ক্ষেত্র বিশেষে কফি, হিং, কর্পুর, কাঁচা পেঁয়াজ, তুলসির রস, রসুন খেতে নিষেধ করে থাকি। কারণ গন্ধপ্রধান এই খাবারগুলি ঔষধের মতই স্নায়ুর মধ্যে কাজ করে।
প্রশ্ন: মদ্যপান এবং ধূমপান কি হোমিওপ্যাথিক ঔষধের কাজ বিঘ্নিত করে?
উত্তর: এই দুটি নেশার রোগী যদি অভ্যস্ত হন, তাহলে মদ্যপান ও ধূমপান হোমিওপ্যাথিক ঔষধের কোনও ক্ষতি করে না।
প্রশ্ন: পুরনো রোগ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় করতে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?
উত্তর: যত বড় চিকিৎসকই হোন, দীর্ঘদিনের রোগাক্রান্ত রোগীকে সম্পূর্ণ আরোগ্য করতে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। রোগের স্থায়িত্ব এবং গভীরতার উপর এটা নির্ভর করে। সুতরাং হোমিওপ্যাথির দু-তিনটে ডোজ খেয়েই আরোগ্যলাভের আশা করা সঙ্গত নয়।
প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথির সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে কিছু বলুন।
উত্তর: হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা কোথায় কখন থামাতে হবে -এই বোধ প্রত্যেক হোমিওপ্যাথের থাকা অবশ্যই প্রয়োজন। চিকিৎসকের পক্ষে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। চিকিৎসকের এই বোধ না থাকলে রোগীর জীবনে সংশয় দেখা দিতে পারে। প্রধানত অস্ত্রোপচারযোগ্য ক্ষেত্র, চূড়ান্ত এপেন্ডিসাইটিস, ফ্রাকচার, ডিসলোকেশন, গর্ভবতী নারীর চূড়ান্ত রক্তাল্পতা, অন্তিম আয়রন ও ভিটামিনের অভাব, জরায়ুর চূড়ান্ত স্থানচ্যুতি, অন্তিম সিরোসিস অব লিভার ইত্যাদি ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিতে আরোগ্য সম্ভব নয়। হোমিওপ্যাথিক ঔষধের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা পদ্ধতির অধীন রোগকে আটকে রাখাও উচিত নয়। এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক উপশম প্রয়োজন যা এলোপ্যাথিক ঔষধে সম্ভব।
প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথিক আরোগ্য কি বিশ্বাস-নির্ভর? বিশ্বাস না থাকলে হোমিওপ্যাথিক ঔষধে কাজ হয় না -এরকম অভিযোগ অনেকের মুখেই শোনা যায়। আপনি কি বলেন?
উত্তর: এটি একেবারেই ভুল ধারণা। হোমিওপ্যাথির রোগনিরাময় ক্ষমতা প্রমাণিত সত্য। এখানে কোনও বিশ্বাস-অবিশ্বাস বা শর্তের অবকাশ নেই। রোগ শর্তাধীন কিন্তু ঔষধ শর্তনিরপেক্ষ। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় শিশু-রোগী, অচৈতন্য রোগী, উন্মাদ রোগীর আরোগ্য লাভ ঘটেছে – এটা আমি আমার অভিজ্ঞতায় বহু ক্ষেত্রে দেখেছি কিন্তু এদের মধ্যে কি কোনো বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্ন ওঠে?
[প্রথমে সাক্ষাৎকারটি ১৯৯৩ সালের ২৭ মার্চ, পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় দৈনিক আনন্দ বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো । পরে তা পরিমার্জিত করে তখনকার একটি বাংলা হোমিও পত্রিকায় ছাপা হয়েছিলো]
Discussion about this post