Thursday, January 21, 2021
HomeoDigest | হোমিওডাইজেস্ট

Homeodigest

  • হোম
  • প্রবন্ধ
  • ফিচার
  • রিসার্চ রিভিউ
  • বুক রিভিউ
  • অনুবাদ
  • কেস রেকর্ডস
  • স্টুডেন্টস কর্নার
    • DHMS
    • BHMS
    • রেজিস্ট্রেশন
  • ইন্টারভিউ
  • বায়োগ্রাফি
  • করোনা সেল
  • আরও
    • হোমিওডাইজেস্ট চিকিৎসক তালিকা
    • হোমিও সংবাদ
    • ভেটেরিনারি এন্ড এগ্রো
    • ঔষধ পরিচিতি
    • কেস কুইজ
    • টিপস এন্ড সাজেশন
    • ডক্টরস পয়েন্ট
    • রোগীর জিজ্ঞাসা
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংকস
No Result
View All Result
  • হোম
  • প্রবন্ধ
  • ফিচার
  • রিসার্চ রিভিউ
  • বুক রিভিউ
  • অনুবাদ
  • কেস রেকর্ডস
  • স্টুডেন্টস কর্নার
    • DHMS
    • BHMS
    • রেজিস্ট্রেশন
  • ইন্টারভিউ
  • বায়োগ্রাফি
  • করোনা সেল
  • আরও
    • হোমিওডাইজেস্ট চিকিৎসক তালিকা
    • হোমিও সংবাদ
    • ভেটেরিনারি এন্ড এগ্রো
    • ঔষধ পরিচিতি
    • কেস কুইজ
    • টিপস এন্ড সাজেশন
    • ডক্টরস পয়েন্ট
    • রোগীর জিজ্ঞাসা
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংকস
No Result
View All Result
HomeoDigest | হোমিওডাইজেস্ট
No Result
View All Result
Home ফিচার

বর্তমান সভ্যতার পক্ষে হোমিওপ্যাথিকে স্বীকৃতিদানে মৌলিক বিপত্তি

January 11, 2020
in ফিচার
8 min read
0
85
SHARES
248
VIEWS
Share on FacebookShare on TwitterShare via Email

ডা. শাহীন মাহমুদ:

সত্য যেমন চিরকালই সত্য, তেমনি সমষ্টিগতভাবে সত্যকে অস্বীকার করার প্রবণতাও মানবজাতির চিরকালীন ইতিহাস। ধর্ম, বিজ্ঞান, সমাজ-ব্যবস্থা সর্বক্ষেত্রেই তার প্রভূত প্রমাণ বর্তমান। এই অস্বীকারের কারণ সবসময়ই যা ছিলো তা হচ্ছে- ক্ষমতাসীন বা ক্ষমতালোভীদের স্বার্থহানির ভয় এবং তাদের চাকচিক্যও প্রচারণায় মোহগ্রস্থ হয়ে, তাদের উচ্ছিষ্টের প্রলোভনে প্রলোভিত হয়ে যে অধিকাংশ মানুষ- তাদের মস্তিস্ক দিয়ে চিন্তা করতে অনিচ্ছুক, নিজেদের চোখ দিয়ে দেখতে অনিচ্ছুক এবং নিজেদের মন দিয়ে বিচার করতে অনিচ্ছুকদের অন্ধ অনুকরণ ও অনুসরণের স্রোত। এটাই মানব জাতির পুনরাবৃত্তি হওয়া ইতিহাস। বিজ্ঞানে গ্যালিলিও, কোপার্নিকাস, পিথাগোরাস যার ভুক্তভোগী ও প্রমাণ, ধর্মে প্রত্যেক অবতার বা নবী-রসুলগণ যার প্রমাণ, আর সমাজব্যবস্থায় আল্লাহ বা ঈশ্বর প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার অবমূল্যায়ন, অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান যার নিদর্শন। প্রতিটা ক্ষেত্রে কি ঘটনা ঘটে আসছে? কিছু স্বার্থান্ধ লোক, যারা নিজেদের ক্ষুদ্র হৃদয় ও ততোধিক ক্ষুদ্র দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে, কোনকিছু সত্য মনে হোক বা না হোক- নতুন ধ্যান-ধারণা, আবিষ্কার, দর্শন বা ব্যবস্থাকে কিছুতেই মেনে নেবে না- এই প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ। যারা তাদের এই স্বার্থবাদীতার অপশক্তিতে, যে কোন ভাবেই হোক সমাজের উচ্চস্থানগুলো দখল করে আছে এবং একই সমান গুরুত্ব দিয়ে, সেই প্রতিষ্ঠিত আসনগুলোকে রক্ষা করাকেই নিজেদের জীবনের লক্ষ্য হিসাবে নিয়ে নিয়েছে। তারা তাদের প্রচারে, প্রলোভনে, নিজেদের মিথ্যা অতিকথনে, অপবাদে সমাজের অধিকাংশ মানুষকে তাদের নিজেদের দলে ভিড়িয়ে বরাবর সত্যের বিরোধিতা করে এসেছে। এমনকি মানুষের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই এই ঘটনার অহরহ সার্থক দৃষ্টান্ত বিদ্যমান।

হোমিওপ্যাথিও একটা ব্যবস্থা, যা সত্যের বা মহাবিজ্ঞানী আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী পরিচালনার যে লক্ষ কোটি নিয়ম, শৃঙ্খলা প্রদান করেছেন, সেই নিয়মের উপর প্রতিষ্ঠিত। এটা পৃথিবীর একটি প্রাকৃতিক শাশ্বত নিয়ম বা ধর্ম । আর পৃথিবীর এই প্রাকৃতিক ধর্মগুলোর আবিষ্কৃত বা উৎঘাটিত তথ্য-উপাত্ত ও সংখ্যাগত যৌক্তিক জ্ঞানকেই বলা হয়- বিজ্ঞান। হোমিওপ্যাথি মানুষের প্রাকৃতিক আরোগ্যকলা। যা প্রায় ২৫০ বৎসর যাবৎ পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ চিকিৎসা কেন্দ্রে কোটি কোটি মানুষকে আরোগ্য উপহার দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এর কাজের একটা ক্ষুদ্র হিসাব দিচ্ছি :
France, United Kingdom, Denmark, Finland, Hungary, Ireland, Latvia, Malta, Norway, Poland, Portugal, Romania, Spain, Luxembourg, Austria, Andorra, Canada, Bosnie, Czechy, Belgium, Germany, Italy, Netherlands, Romania, Sweden, Switzerland, Australia, India, Bangladesh, United Arab Emirates, Abu-Dhabi, Afghanistan, Bahrain, Bermuda, Brunei, Iran, Pakistan, China, Hong Kong, Israel, Taiwan, South Africa, Nigeria, Vienna, Scotland, New Zealand, Russia, Greece, Camarone, Cyprus, Canada, Caribbean Islands, Dubai, Egypt, Fiji, Guinea, Holland, IMO State, Japan, Kenya, Lithuania, Mauritius, Muscat, Malaysia, Neth Antilles, Pakistan, Panama, Philippines, Qatar, Sri Lanka, Saudi Arabia, Scotland, Slovakia, Ukraine, Wales and in USA- Argentina, Brazil, Chile, Colombia, Costa Rica, Equador, Mexico, Paraguay, Peru, Uruguay ইত্যাদি দেশগুলোতে আজ হোমিওপ্যাথি প্রধানতম বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে অবস্থান করছে।

WHO কর্তৃক প্রদত্ত হিসাব মোতাবেক, পৃথিবীব্যাপি ৫০০ মিলিয়ন লোক পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম থেরাপি হিসাবে হোমিওপ্যাথিকে ব্যবহার করছেন। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানী এবং নেদারল্যান্ডসে, ভারতে এবং অতিসম্প্রতি বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিকে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। ১৯৮২ সালে ফ্রান্সের ২৯% জনসংখ্যা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহন করতো, যা ১৯৯২ সালে বেড়ে ৩৬% এ উন্নীত হয়, ফ্রান্সে ১৮০০০ চিকিৎসক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করেন। সেখানে ৭টি মেডিক্যাল স্কুল থেকে পোষ্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি প্রদান করা হয় এবং ২৩০০০ ফার্মাসি শুধু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বিক্রয় করে। ইংল্যান্ডে ৪২% ব্রিটিশ চিকিৎসক রোগীদেরকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের নিকট পাঠান। রাজ পরিবার ১৮৩০ সাল থেকে, তাদের ৪ পুরুষ ধরে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকেন। সেখানে ৫টি হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল গড়ে উঠতে পেরেছিলো, যার মধ্যে সবচাইতে প্রাচীনটি হচ্ছে ১০০ বৎসর আগে তৈরী রয়্যাল লন্ডন হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল, যার প্যাট্রন ছিলেন রানী এলিজাবেথ। জার্মানীর ১১.৫% জনসংখ্যা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাধীন, জার্মানীতে ২০% চিকিৎসক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবহার করেন। ইটালীতে ৭০০০০ লোকের উপর পরিচালিত জরিপ হতে জানা যায়, ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪.৭ মিলিয়ন লোক (যা মোট জনসংখ্যার ৮.২%) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন, যার মধ্যে ৭.৭% ছিলো শিশু। ১৯৯১ সালের হিসাবে, নেদারল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার ৪০% হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন এবং নেদারল্যান্ডের ৪৫% এলোপ্যাথিক চিকিৎসক মনে করেন হোমিওপ্যাথি ফলপ্রসূ চিকিৎসাব্যবস্থা। ১৯৯৬ সালের হিসাব মতে, সুইজারল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার ৪.৪% প্রাপ্তবয়স্ক লোক জীবনে অন্তত একবার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার দ্বারস্থ হন। ২০০৭ সালের হিসাব মতে, ইউনাইটেড স্টেটসে ১৮ বৎসরের উপরের বয়সের লোকদের মধ্যে ২.৩% লোক সে বছর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ভারতের উত্তরপ্রদেশের ৩৮৯৫০ জন এলোপ্যাথিক চিকিৎসকের সাথে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ২৭৫৪৮ জন। কেবলমাত্র ভারতেই ১০০০০০ চিকিৎসক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করেন এবং ১০০ এরও বেশি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষাক্ষেত্র ও হাসপাতাল বিদ্যমান।

এবার একটু লক্ষ করুন অতীতের বিভিন্ন প্রাণঘাতী মহামারীতে হোমিওপ্যাথির অবস্থান ও তার ফলাফল: ১৯১৮ সালের পৃথিবীব্যাপী ইনফ্লুয়েঞ্জার মড়কে সারা পৃথিবীতে প্রায় ২২ মিলিয়ন লোক মারা যায় এবং যার মধ্যে ৫০০০০০ লোক ছিলো ইউনাইটেড স্টেটসের। প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসাব্যবস্থায় যাদের চিকিৎসা করা হয়, তাদের ৩০% এর উপরে লোক মারা যায়, যেখানে হোমিওপ্যাথি দ্বারা চিকিৎকৃত লোকের ৯৮% লোক সুস্থ হয়। ১৮৬০ সাল থেকে ১৯০০ সালের গোড়ার দিক পর্যন্ত সময়ে ইউরোপে যে কলেরা এবং টাইফাসের মড়ক দেখা দেয়, সেখানে যারা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছিলেন তাদের আরোগ্যের হার প্রচলিত চিকিৎসায় চিকিৎসিত ব্যক্তির চাইতে ৫০% এরও বেশি। ১৮১৩ সালে জার্মানীর লিপজিগে যে টাইফাসের মড়ক দেখা দেয়, সেখানে ডা. হানিম্যান ১৮০ টি রোগীর চিকিৎসা করেন, যেখানে মাত্র ২টি রোগীর ক্ষেত্রে তিনি ব্যর্থ হন, অপরদিকে প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থায় মৃত্যুর হার ছিলো ৩০% এর উপরে। ইউনাইটেড স্টেটসের ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যের সিনসিনাটিতে ১৮৪৯ সালে ঘটিত কলেরার মড়কে প্রাণরক্ষার হার ছিলো ৪০-৫২%, কিন্তু যারা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করেছেন তাদের ক্ষেত্রে ছিলো ৯৭%। এই পরিসংখ্যানটি তৎকালীন সময়ের স্থানীয় পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো।

হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা নেওয়ার পরিসংখ্যান ও সফলতা

এবার আসুন আমরা লক্ষ করি রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রটিতে হোমিওপ্যাথির অবস্থান: ১৯৫৭ সালে বুয়েনাস এয়ারসে সংঘটিত পোলিও-র মড়কে হাজার হাজার লোককে Lathyrus নামে একটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দেয়া হয়, যাদের মধ্যে একজনেরও পোলিও হয়েছে বলে রিপোর্ট পাওয়া যায় নি। ১৯৭৪ সালে ব্রাজিলের মেনিনগোকক্কাল মেনিনজাইটিসের এপিডেমিকে ১৮৬৪০ জন শিশুকে একটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ রোগ-প্রতিরোধের জন্য দেয়া হয়। তাদের মধ্যে মাত্র ৪টি শিশুর মেনিনজাইটিস দেখা দেয়। ১৯০২ সালে ইউনাইটেড স্টেটসের লোয়া-তে স্মলপক্স এর এপিডেমিক দেখা দেয় এবং সেখানে ১৫ জন চিকিৎসক রোগটি প্রতিরোধের লক্ষ্যে ২৮০৬ জন রোগীকে Variolinum নামের একটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রদান করেন। রোগ প্রতিরোধের হার ছিলো ৯৭%।

এভাবে পৃথিবীর এতগুলো দেশে প্রায় ২৫০ বৎসরে কতবার কতজন মানুষ এর মাধ্যমে আরোগ্য হয়েছেন, নিদেনপক্ষে উপকৃত হয়েছেন, একবার কল্পনা করতে পারেন! বর্তমান বিজ্ঞান (!) কর্তৃক অস্বীকৃত এই পদ্ধতি, এত বিরোধী প্রচারণার পরও শুধুমাত্র হুজুগের জোরে ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত হয়েছে? কোন ইতিবাচক ফল প্রদর্শন না করেই, হাজারো তদন্তের মুখে উত্তীর্ণ না হয়েই, ২২৫ বৎসর যাবৎ টিকে আছে? শুধু টিকে আছে বললে ভুল হবে, প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

হোমিওপ্যাথি একটা সত্য। আর তাকে এবং তার বিস্তৃতিকে কেউ রোধ করতে পারবে না। কিন্তু তথাপি এর বিরুদ্ধে অবিরাম পরিচালিত অপবাদ, ষড়যন্ত্র, বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী অপপ্রচার, সর্বশ্রেষ্ঠ আরোগ্যপ্রদানকারী এই ব্যবস্থাকে হেয় প্রতিপন্ন করার অবিশ্রান্ত প্রচেষ্টা ও তাতে প্রভাবিত হয়ে নেতৃত্বদানকারী জনগোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক চিকিৎসা-সমাজের পরিমন্ডলে অবহেলা এবং হোমিওপ্যাথির পূর্ণ সম্ভাবনার বিকাশ ও প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতেই আমার আপত্তি। এমনকি হোমিওপ্যাথিকে বিকল্পধারার চিকিৎসা বলাতেও আমার ব্যক্তিগতভাবে যথেষ্ট আপত্তি আছে।

সব চিকিৎসাব্যবস্থাতেই কমবেশি মানুষ আরোগ্য হয়। কিন্তু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার এই আরোগ্য- কেমন আরোগ্য? অস্থিতিশীল? পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত? না- এই আরোগ্য দ্রুত, নিরুপদ্রবে, বোধযোগ্য উপায়ে, রোগীর কোনরূপ কষ্টবৃদ্ধি না করে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে। আমাদের দুইশত বৎসরের সমস্ত প্রকৃত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক তাদের শত শত রোগীর বিস্তারিত বিবরণী এবং রোগ আরোগ্য হয়ে যাবার পরও দীর্ঘদিন পর্যন্ত তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থার বিবরণ লিপিবদ্ধ করে রেখে গেছেন এবং বর্তমানেও রাখছেন। কোন লুকোছাপা না করে তা বইপত্র, পত্রিকা, ইন্টারনেট সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছেন মানুষের অন্ধত্ব ঘোঁচানোর জন্য- প্রচলিত গবেষণাসমৃদ্ধ চিকিৎসাব্যবস্থা যা করার কথা চিন্তাও করতে পারে না। এই বিশাল সংখ্যক মানুষের এই পর্বতসম আরোগ্যের প্রমাণও মানুষের অন্ধত্ব ঘুচাতে পারে নি। কেন পারে নি – এটাই আজকের আলোচ্য বিষয়।

বর্তমান সভ্যতা- আত্মাহীন, আত্মগর্বিত, যান্ত্রিক, বস্তুবাদী সভ্যতা- এই প্রত্যেকটি বিশেষণই সত্যের প্রতিবন্ধক। বর্তমান বৈজ্ঞানিকদের ব্যক্তিগত মনোভাব যাই-ই হোক না কেন, প্রচলিত বিজ্ঞান কিন্তু আল্লাহ বা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে বিবেচনায় এনে কিছু করে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা বিজ্ঞানও এর ব্যতিক্রম নয়। আত্মা, ঈশ্বর, প্রত্যাদেশ ইত্যাদি বিষয়গুলো তাদের হিসাবের বাইরে এবং তারা হয়তো দাবী করবে- “এটা তাদের বিষয় নয়”। কিন্তু সর্বক্ষেত্রেই কি কথাটা সত্য? বিশেষ করে, যখন কোন একটা বিজ্ঞান মানুষ নিয়ে গবেষণা করবে, তার রোগ ও আরোগ্য নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে, তত্ত্ব প্রদান করবে, তার ভালো থাকা নিয়ে কথা বলবে? আল্লাহ আল-কোরআন এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে ঘোষণা করছেন যে, তিনি তার নিজের রুহ থেকে মানুষকে ফুঁকে দিয়েছেন। এজন্যই সে আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির সেরা ও অনন্য হওয়ার উপযুক্ত,- আর এটাই তার সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য। এই রুহ বা আত্মা ছাড়া কখনো কি কাউকে মানুষ নামে আখ্যায়িত করা যাবে? আর কেউ যদি এই মানুষকে আবিষ্কার করার জন্য, তার রোগের কারণ ও তার আরোগ্যের লক্ষ্যে গবেষণা পরিচালনা করেন, সেখানে কি মানুষের উপর এই আত্মার ভূমিকাকে প্রত্যাখ্যান করা যাবে? শুধুমাত্র মানুষের শরীরকে একটা বস্তু কল্পনা করে, তার মূল অস্তিত্বের স্বরূপকে উপেক্ষা করে গবেষেণা করে- তাকে ভালো রাখা যাবে?

প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা বিজ্ঞান কি ঠিক এই কাজটিই করছে না? চিকিৎসাবিজ্ঞান আজ এনাটমি, ফিজিওলজি, প্যাথলজি, সাইকোলজি, সাইকিয়াট্রি, বায়োকেমিস্ট্রি, মলিকিউলার বায়োলজি, বায়োফিজিকস এবং এরকম আরো বহু শাখা থেকে এক পর্বতপ্রমান তথ্য স্তূপীকৃত করেছে। দুর্ভাগ্যক্রমে, গবেষণার এই প্রত্যেকটি শাখা, ব্যক্তিকে একটি বিশেষ ও ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, পৃথক পৃথক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে আসছে এবং তার ভিত্তিতেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিচার-বিশ্লেষণ করে আসছে। কিন্তু শুধুমাত্র মলিকিউলার লেভেল নয়, শুধুমাত্র অরগান লেভেল নয়, অথবা শুধুমাত্র সাইকোলজিক্যাল লেভেলও নয়, সম্পূর্ণ অংশ নিয়ে ক্রিয়াশীল মানবসত্তা (Human Being) আসলে কি, এই গবেষণাগুলো আমাদের আজও পরিস্কারভাবে, পূর্ণ ও অখণ্ডরূপে ধারণা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আজও তাদের কর্মকাণ্ড, গবেষণা, এত বিচার-বিশ্লেষণ, সতূপীকৃত পর্বতপ্রমাণ তথ্যরাজি, অখণ্ড মানুষের ধারণা নিয়ে- রোগের অখণ্ড প্রকৃতি, তার রোগের কারণ ও আরোগ্যপদ্ধতির প্রাকৃতিক মৌলিক নীতি বা সূত্রের বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আজও তা মানুষকে আত্মিক, আধ্যাত্মিক প্রাণসত্তারূপে বিচার করে সমগ্রভাবে চিকিৎসাকার্য সম্পাদন করতে পারছে না। আপনারা খোঁজ করে দেখুন। প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থার কোথাও আত্মার স্বীকৃতি প্রদান করা হয় নি। প্রশ্ন করে দেখুন, তাদের চিকিৎসাব্যবস্থায় মানুষের আত্মাকে কোথায় স্থান দেয়া হয়েছে? তাদের যুক্তি হয়তো থাকবে, “আত্মাকে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করা যায় না। বিজ্ঞান ধর্ম নয়। কাজেই আত্মাকে বিবেচনা করে আমরা কাজ করতে পারি না, সেটা বিজ্ঞানসম্মত নয়”। সেক্ষেত্রে তাদের কাজের ভ্রান্তিটা কোথায় সে সম্বন্ধে একটা ছোট্ট উপমা দিচ্ছি:

কেউ যদি নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে দেখে তাকে নিয়ে মাইক্রোস্কোপে বেশ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, তার বৈশিষ্ট্য গুণাগুণ, ধর্ম ইত্যাদি আবিষ্কার করে- তাহলে কি সে নদীর উৎসের সন্ধান পাবে? এখন কেউ যদি তাকে বলে- ভাই, আপনার এই পানি তো হিমালয় থেকে এসেছে। আর তার প্রত্যুত্তরে সে যদি বলে, আমি তো হিমালয় দেখিনি! কাজেই পৃথিবীতে হিমালয় বলে কোন স্থান নেই, আর হিমালয় তার উৎসও হতে পারে না। তার পক্ষে কি এই পানির উৎস বের করা কস্মিনকালেও সম্ভব হবে- তা তিনি মাইক্রোস্কোপিক পর্যবেক্ষণে যতই দক্ষই হন না কেন? আমাদের বৈজ্ঞানিকরা তাদের জ্ঞান দ্বারা আত্মাকে উপলব্ধি করতে পারেন নি, দেখতে পান নি। আর একারণে হাজার হাজার সাধক, নবী-রসুল, অবতার, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সত্যবাদীদের অভিজ্ঞতা ও দর্শনকে এবং তার অস্তিত্বের লক্ষ লক্ষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রমাণকে তারা অগ্রাহ্য করে চলেছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞান তার মাইক্রোস্কোপের নীচে আত্মাকে দেখতে পান নি বলে, যা দেখেছেন অর্থাৎ শরীর রোগপ্রবণ ও দূষিত হবার ফলস্বরূপ, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে জীবাণু আক্রমণের উপযোগী হবার দরুন, যে জীবাণুগুলো আক্রমণ করে- সেই জীবাণুগুলোকেই আবার তারা রোগের কারণ নির্ধারণ করে তত্ত্ব প্রদান করছেন এবং সেই অনুযায়ীই এই পোকা মারার চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। এত বুদ্ধিমান বৈজ্ঞানিক ব্যক্তিত্বগণ এর ভেতরের আপাতবিরোধটা (Paradox) দেখছেন না (নাকি দেখতে চাচ্ছেন না?!!!)। নিজেরা হোচট খাচ্ছেন আর মানবজাতিকে নিয়ে যাচ্ছেন ধ্বংসের পথে। তারা উৎসকে বাদ দিয়ে ফলের মাঝে উৎসের সন্ধানে ব্যাপৃত। মানুষকে বিবেচনা তার আত্মাকে বাদ দিয়ে করলে কি মানুষকে বিবেচনা করা হয়? আত্মাবিহীন এক কাল্পনিক দেহের আরোগ্যসাধনের প্রচেষ্টা করছে এই চিকিৎসাব্যবস্থা। কাজেই, মানুষের সত্যিকারের আরোগ্য আজো তাদের কাছে কাল্পনিকই থেকে গেছে। শত শত বছর ধরে তাদের আবিষ্কৃত হাজার হাজার তত্ত্বের কোথাও মানুষের পরিচালক এবং পরিচায়ক এই শক্তিটির উল্লেখ তারা করতে পারেন নি। বিজ্ঞান যেখানে অগ্রগতির বাহন হওয়ার কথা ছিলো, অন্তত চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তা সীমাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে: চিন্তার, ধারণার, উপলব্ধির, বিচারের,পর্যবেক্ষণের সীমাবদ্ধতা।

এ ব্যাপারে এতগুলো কথা বলার কারণ, হোমিওপ্যাথি বুঝতে হলে এবং একে স্বীকৃতি দিতে হলে প্রথমে ‘মানুষ’-কে সমগ্রভাবে বিবেচনা করতে হবে, এমনকি মানুষের আত্মাকেও স্বীকৃতি দিতে হবে। আর এটাই বর্তমান বস্তুবাদী সভ্যতার হোমিওপ্যাথিকে অস্বীকার করার মূল কারণ। ডা. হানিম্যান কর্তৃক আবিষ্কৃত- স্বাস্থ্য ও রোগের কারণ, তার প্রতিকার ও ঔষধ প্রদানের ক্ষেত্রে তার প্রদত্ত চিকিৎসাতত্ত্ব মানুষের সমগ্রতাকে বিচার করে, তার আত্মাকে স্বীকৃতি দিয়ে, আত্মার প্রভাবকে সুস্থতা ও রোগের কারণের মধ্যে অর্ন্তভুক্ত করে প্রদান করা হয়েছে। আধুনিক যান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ (বাস্তবে যা ধর্মহীনতাকে প্রণোদিত করে), বস্তুবাদী সভ্যতা- চক্ষুলজ্জার কারণে হলেও আত্মার অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দিতে পারেন না। যে এই আত্মার কথা বলবে তাকে গোঁড়া-ধার্মিক, পশ্চাৎপদ, সেকেলে, অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক প্রমাণ করতে আদাজল খেয়ে নামবে, এটা আর আশ্চর্য কি? আর হোমিওপ্যাথিকে যে ব্যক্তিধর্ম হিসাবে ব্যাখ্যা করার অপচেষ্টা চলবে (যা ইদানীং কোন কোন স্থানে করা হচ্ছে), এতেই আর অবাক হবার কি আছে?

মানুষ, এবং তার রোগ ও আরোগ্য সম্বন্ধে মহাত্মা ডা. হানিম্যান কি বলেছেন? তিনি বলেন,

“In the healthy condition of man, the spiritual vital force (autocracy), the dynamism that animates the material body (organism), rules with unbounded sway, and retains all the parts of the organism in admirable, harmonious, vital operation, as regards both sensations and functions, so that our indwelling, reason-gifted mind can freely employ this living, healthy instrument for the higher purposes of our existence.”

অর্থাৎ,

“মানুষের সুস্থ অবস্থায় বিমূর্ত মৌলিক প্রাণশক্তি (স্বাধীন, একচ্ছত্র শক্তি) এই ভৌত দেহকে সঞ্জীবিত করে রাখে, অসীম প্রভাবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীর সংস্থানের সমস্ত অংশগুলোকে তাদের ক্রিয়া ও অনুভূতি উভয় বিষয়ে চমৎকার, সুসামঞ্জস্যরুপে, সজীব ক্রিয়াশীল অবস্থায় ধারণ করে, যাতে আমাদের অর্ন্তনিহিত বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন মন এই সুস্থ সক্রিয় যন্ত্রকে (দেহ) জীবনের উচ্চতর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অবাধে নিয়োজিত করতে সক্ষম হয়|” (Organon of Medicine, Aphorism – 9)

আর এর ভিত্তিতেই তিনি অসুস্থতার কারণ ও অবস্থানকে ব্যাখ্যা করেছেন,

“When a person falls ill, it is only this spiritual, self-acting (automatic) vital force, everywhere present in his organism, that is primarily deranged by the dynamic influence upon it of a morbific agent inimical to life. It is only the Vital force, derange to such an abnormal state, that can furnish the organism with its disagreeable sensation and incline it to the irregular process which we call disease; for, as a power invisible in itself, and only cognizable by its effects on the organism, its morbid derangement only makes itself known by the manifestation of disease in the sensations and functions of those parts of the organism exposed to the senses of the observer and physician, that is, by morbid symptoms, and in no other way can it make itself known. ”

অর্থাৎ,

“মানুষ যখন অসুস্থ হয়, তখন তার আত্মাসম্ভুত, স্বয়ংক্রিয়, শরীরের সর্বত্র বিরাজিত জীবনীশক্তিই মুখ্যত, জীবনের প্রতি বৈরীভাবাপন্ন রোগোৎপাদক শক্তির সক্রিয় প্রভাবে বিশৃংখল অবস্থাপ্রাপ্ত হয়; এরকম বিকৃতাবস্থাপ্রাপ্ত জীবনীশক্তি মানবদেহে যে সমস্ত অনাকাঙ্খিত অনুভূতি উৎপাদন করে এবং শরীর সংস্থানে যে সমস্ত বিশৃংখলা সংঘটন করে, তাদেরকেই আমরা রোগ বোলে থাকি; কারণ, জীবনীশক্তি মানুষের দৃষ্টির অগোচর এবং দেহযন্ত্রে কেবল তার বহিঃপ্রকাশিত প্রভাব দ্বারাই পরিজ্ঞাত হয়; পর্যবেক্ষক ও চিকিৎসকগণ রোগীর ইন্দ্রিয়গোচর অঙ্গগুলোতে বিকৃত অনুভূতি ও ক্রিয়া-বৈলক্ষণ্য অর্থাৎ রোগলক্ষনের বিকাশের দ্বারাই শুধুমাত্র তা উপলব্ধি ও দর্শন কোরতে পারেন, এছাড়া তা জানার আর কোন উপায় নেই|” (Organon of Medicine, Aphorism – 9)

এবং এর আরোগ্য কিরুপ?

“……Annihilate the internal change, that is to say, the morbid derangement of vital force – consequently the totality of the disease, the disease itself. But when the disease is annihilated, health is restored, and this is the highest, the sole aim of the physician who knows the true object of his mission, which consists not in learned-sounding prating, but in giving aid to the sick”

অর্থাৎ,

“…..শরীরাভ্যন্তরের এই পরিবর্তনটাকেই নির্মূল করা, যাকে বলা যায়, জীবনীশক্তির বিশৃংখল অবস্থা- বা রোগের সমগ্রতাকে বা সমগ্র রোগটাকেই। যে চিকিৎসক নিছক বাগাড়ম্বরপূর্ণ বকবকানি সমৃদ্ধ নয়, বরং অসুস্থকে সাহায্য করবেন, তিনি জানেন যখন এই রোগটাই উৎখাত হয়, তখন স্বাস্থ্য পুনঃসংস্থাপিত হয় এবং এটাই তার চূড়ান্ত ও একমাত্র লক্ষ্য।”(Organon of medicine, Aphorism – 17)

সেই সাথে এই আরোগ্যের প্রাকৃতিক পদ্ধতি হিসাবে বললেন,

“A weaker dynamic affection is permanently extinguished in the living organism by a stronger one, if the latter (whilst differing in kind) is very similar to the former in its manifestations.”

অর্থাৎ,

“সজীব দেহযন্ত্রে অল্পশক্তিসম্পন্ন ব্যাধি, প্রবলতর ব্যাধি কর্তৃক চিরনির্বাপিত হবে, যদি শেষোক্ত (শক্তিশালী) ব্যাধিটি (ভিন্ন প্রকৃতির হলেও) তার ক্রিয়াবিকাশে পূর্বোক্ত (কম শক্তিশালী) ব্যাধির অত্যন্ত সাদৃশ্যগত লক্ষণরাজি প্রকাশ করে|” (Organon of medicine, Aphorism – 26)

এটাই মানুষ, তার রোগ, তার রোগোৎপত্তির কারণ ও রোগারোগ্য সম্বন্ধে হোমিওপ্যাথির মূল দর্শন। এটাকে এখন কিভাবে মাইক্রোস্কোপের নীচে নেয়া সম্ভব? অতি সংক্ষেপে বলতে গেলে, এখানে বলা হচ্ছে- মানুষ ও তার সম্পূর্ণ, অখণ্ডরূপ সুস্থাবস্থায় এক আত্মাসম্ভূত (Spiritual), স্বয়ংক্রিয় (Automatic), শরীরের সর্বত্র বিরাজিত জীবনীশক্তি (Vital force), যা বিমূর্ত মৌলিক প্রাণশক্তি, স্বাধীন একচ্ছত্র শক্তি (Autocracy) দ্বারা সুসামঞ্জস্যরূপে চালিত হয়, এর এই স্বত:স্ফূর্ত প্রবাহের বিশৃঙ্খলাই রোগ ও এই বিশৃঙ্খলাকে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনাই আরোগ্য।

হোমিওপ্যাথির আবিষ্কৃত এই বিমূর্ত প্রাকৃতিক সত্যের উপলব্ধির অক্ষমতাটাই হোমিওপ্যাথিকে সার্বজনীনভাবে স্বীকৃতি প্রদান না করে, তাকে বিকল্প ধারা বলে প্রচার করার মূল কারণ। এখানে আত্মাকে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে এবং তাকে মানুষের মূল চালিকাশক্তি, অস্তিত্বের মূল উপকরণ হিসাবে ঘোষণা করা হচ্ছে; দেয়া হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ, অখণ্ড মানুষের ধারণা। এ প্রসঙ্গে একটা কথা উল্লেখ্য, আমি আত্মাসংক্রান্ত ধর্মীয় আলোচনাতে ও সূফিবাদীদের আত্মার প্রকারভেদসংক্রান্ত বিতর্কে প্রবেশ করবো না। আমাদের হোমিওপ্যাথিক বন্ধুদের মধ্যেও অনেকেই হয়তো এই Vital force কে আমি আত্মার প্রভাব বলেছি বলে চমকে উঠতে পারেন, বিরোধিতা করতে পারেন। দাবী করতে পারেন, ডা. হানিম্যানের এই ‘Spiritual’ শব্দটা অলংকারিক অর্থে ব্যবহার করেছেন। আমি তাদের সাথে কোন বিতর্কে যাব না। যার ইচ্ছা সে এটাকে মানুষের এনার্জি প্যাটার্ন বলুন, যার ইচ্ছা সে এটাকে সিম্পল সাবস্ট্যান্স বলুন। যে নামেই এটাকে ডাকা হোক না কেন, পরিভাষা যাই-ই তৈরী করা হোক না কেন, ডা. হানিম্যান উল্লেখ করে গেছেন, এটা ছাড়া মানুষ মৃত।

“The material organism, without the vital force, is capable of no sensation, no function, no self preservation; it derives all sensation and performs all the functions of life solely by means of the immaterial being * (The Vital Principle) which animates the material organism in health and diseases (* Foot note: it is dead, and now only subject to the power of the external physical world; it decays, and is again resolved into the chemical constituents.”

অর্থাৎ,

“জীবনীশক্তি ছাড়া এই পার্থিব দেহে কোন অনুভূতি থাকে না, কোন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াও থাকে না, কোন আত্মরক্ষার সক্ষমতাও থাকে না; এই পার্থিব দেহের সকল অনুভূতি ও জীবনের বৈশিষ্ট্য-সম্বলিত সর্বপ্রকার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া- এই অপার্থিব সত্তা* থেকেই সঞ্জাত, যা সুস্থ এবং অসুস্থ অবস্থায় তাকে সচল রাখে। (*ফুটনোট: এই অপার্থিব সত্তা ব্যতীত এই দেহ মৃত এবং তখন তা শুধুমাত্র বাইরের ভৌত জগতের শক্তির অধীন; তাতে পচন ধরে এবং আবার রাসায়নিক উপাদানে বিশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে।)” (Organon of medicine, Aphorism – 10 & its Footnote)|

আর এ কারণেই এটাকে আমি আত্মা বা আত্মার প্রভাব বলেই অভিহিত করছি। আর এ ব্যাপারে, শুধু এই প্রশ্নই আমি করছি? আপনি কি আত্মায় বিশ্বাস করেন? উত্তর দিতে দ্বিধাগ্রস্থ হচ্ছেন? কিংবা এটা কি ভাবছেন যে, এটা নিয়ে তো চিন্তা করা হয় নি! যদি দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে থাকেন, তাহলে হোমিওপ্যাথিতে আস্থা আনার ব্যাপারে আপনার দ্বিধাগ্রস্থতা অত্যন্ত স্বাভাবিক| এবং বর্তমান বস্তুবাদী জগতে যা প্রায় বেশিরভাগ মানুষের নিকটই ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

হোমিওপ্যাথির আরোগ্যপ্রক্রিয়া বুঝতে না পারার দরুন, এই শত সহস্র আরোগ্যের প্রমাণকে অগ্রাহ্য করে হোমিওপ্যাথিকে অবহেলা করা হচ্ছে। কিন্তু যে বিজ্ঞান নিয়ে এত অহংকার, সেই বিজ্ঞান কোন ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে? যে মাধ্যাকর্ষণের আবিষ্কারকে এত বড় বৈজ্ঞানিক মাইলস্টোন হিসাবে ধরা হয়, এই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণ কি কোন বিজ্ঞানী এখনো নিশ্চিত করতে পেরেছেন? বিজ্ঞান যে গাণিতীক হিসাব নিকাশের উপর দাঁড়িয়ে আছে, তার প্রথম অংক ‘শূণ্যে’-র ধারণা করা কি কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব! এমন কোন কিছু কি আপনি কল্পনা করতে পারেন, যেখানে স্থান, কাল, বস্তু, বায়ু কোন কিছুই নেই কিন্তু অস্তিত্ব আছে? এমন কোন কিছু কি এই ত্রিমাত্রিক পৃথিবীতে থাকতে পারে যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা নেই, শুধুমাত্র অবস্থান আছে? কিন্তু মজার ব্যাপার, জ্যামিতির ভিত্তি হচ্ছে, এই জিনিসটিই- বিন্দু। যার কতগুলো একত্র হয়ে রেখা হয় এবং জ্যামিতি শুরু হয়। মানুষের পক্ষে কি অসীমের ধারণা করা সম্ভব? যা বর্তমান গণিতে, বৈজ্ঞানিক হিসাব নিকাশে অপরিহার্যভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব কিছুই আমাদের ধারণার বাইরে কিন্তু কোন এক আশ্চর্য প্রক্রিয়ায় কোন কোন সত্যকে অত্যন্ত প্রাচীন কাল থেকে জেনে আসছি যে- এগুলো সত্য, আর বর্তমানে তার উপর স্থির বিশ্বাসে দাঁড়িয়ে আছি, রকেট তৈরী কোরে চাঁদে যাচ্ছি, বোমা মেরে মানুষ হত্যা করছি। আর সত্যকে দেখার প্রশ্ন যদি উঠে, আইনষ্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব কেউ কি তার ল্যাবরেটরিতে দেখাতে পেরেছিলো? এই সত্যের হিসাব আছে কাগজে কলমে, তত্ত্বে এবং এর অনুসিদ্ধান্তগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগে। পদার্থবিজ্ঞানে এরকম না দেখতে পাওয়া প্রাকৃতিক সত্যগুলোর জন্য “তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা” নামে একটা শাখাই খোলা হলো, তাকে স্বীকৃতিও দেয়া হলো। কিন্তু হোমিওপ্যাথির বেলায়, এর শত সহস্র ব্যবহারিক প্রমাণ, আরোগ্যের অবিসংবাদিত পরিসংখ্যান, এর নিখুঁত প্রাকৃতিক সূত্র এবং ২২৫ বৎসরের প্রায়োগিক অভ্রান্ততা- সবকিছুই অবৈজ্ঞানিক বলে প্রচার করা হলো কোন্ যুক্তিবলে? শুধু তারা বুঝতে পারেন নি বা বুঝতে চান নি বলে!

হোমিওপ্যাথির আবিষ্কর্তাও বুঝেছিলেন, মূল প্রাকৃতিক নীতিগুলোর সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা কোন একটা নির্দিষ্ট সময়ে প্রায়শই স্থির নিশ্চিতভাবে করা যায় না। তিনি জানতেন, প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যাখ্যা না করা গেলেও তা ব্যবহৃত হতে থাকে এবং স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত যথাযথ সময়ে তার মৌলিক সূত্র ও ব্যাখ্যা আবিষ্কৃত হয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সূত্রটি ব্যবহৃত হওয়ার বহু পরে তার ব্যাখ্যা হয়তো আংশিকভাবে জানা যায়। বিজ্ঞান আজো কোনো বিষয়েই সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে পারে নি, বরঞ্চ জ্ঞানের সাথে সাথে আগের চাইতে অবিরত তারা প্রতিটি বিষয়ের উপর প্রশ্নবৃদ্ধি করে চলেছেন এবং এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে। যদি কোন শাখা তার সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে পারতো, তবে অন্তত বিজ্ঞানের সেই শাখাটা স্থবির হয়ে পড়তো। ডা. হানিম্যানও জানতেন, এই প্রাকৃতিক সূত্রগুলো নির্দিষ্ট করতে হয় তার নিশ্চিত, শাশ্বত ফল দেখে। যেমন, কেন আপেলটা নিচের দিকে পড়লো তা থেকে মাধ্যাকর্ষণ সুত্র, কেন সোনার আংটি পানিতে ভাসলো এ থেকে আর্কিমিডিসের সূত্র, কেন মৃত ব্যাং ধাতব রিং-এ কেঁপে উঠলো তা থেকে ফ্যারাডের সূত্র। তা থেকেই আসবে অনুমান, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা ও সর্বশেষে সিদ্ধান্ত। ঘটনাগুলো ঘটছিলো কিন্তু সৃষ্টির শুরু থেকেই। বিজ্ঞানের যেকোন একটি শাখার বিষয়গুলোর পূর্ণ ব্যাখ্যা হয়তো কোনকালেই পাওয়া যাবে না। আংশিক ব্যাখ্যাগুলোও আসবে ক্রমে ক্রমে, বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা, পৃথিবীর অন্যান্য জ্ঞানের উন্নতির সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে। আর এ কারণেই, তিনি ডা. হানিম্যান চিকিৎসাতত্ত্বের উপর তার প্রদত্ত ব্যাখ্যা থাকা সত্ত্বেও এবং আরোগ্যের প্রাকৃতিক নীতি ও তার ভিত্তিতে অসংখ্য প্রমাণ ও যুক্তি, ব্যবহারিক ও পরীক্ষামূলক নিদর্শন উল্লেখ করেও- অবশেষে বললেন,

“As this natural law of cure manifests itself in every pure experiment and every true observation in the world, the fact is consequently established; it matters little what may be the scientific explanation of how it takes place; and i do not attach much importance to the attempts made to explain it. but the following view seems to commend self as the most probable one, as it is founded on premises derived from experience.”

অর্থাৎ,

“আরোগ্যের এই প্রাকৃতিক নিয়ম- প্রত্যেকটি ত্রুটিহীন পরীক্ষা ও প্রতিটি অভ্রান্ত পর্যবেক্ষণে বিশ্বের সর্বত্রই স্বয়ং সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে, যার ফলস্বরূপ এটা স্বতঃসিদ্ধরূপে প্রমাণিত; সেখানে এই ঘটনাটা কিভাবে ঘটে এবং তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি হতে পারে তার গুরুত্ব আসলে সামান্যই; আমি এটার ব্যাখ্যা করার উদ্যোগে খুব বেশি গুরুত্ব প্রদান করছি না। কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে যখন এটা প্রতিপাদ্য হবে, তখন বোধহয় সবচাইতে সম্ভাব্য পন্থা হিসাবে এটাই গ্রহণীয় হবে|”(Organon of medicine, Aphorism – 28)

শেষের ঘোষণা দিয়ে তিনি নির্দিষ্ট করে দিলেন, মানুষের আরোগ্যের জন্য কি জানা প্রয়োজন। যাতে এই বিমূর্ততার অভিযোগে কেউ এই সত্যকে অস্বীকার করতে না পারে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই সহজ সরল কথাটিকেই আমাদের সমাজ, আমাদের শিক্ষিত শ্রেণী, এমনকি আমাদের অতি বড় বড় হোমিওপ্যাথদের মধ্যেও অনেকে দুর্বলতা হিসাবে বিবেচনা করেন। এখনো হোমিওপ্যাথির আরোগ্যকলাকে বিমূর্ত, অতি-তাত্ত্বিক বলে অস্বীকার করে যাওয়া হচ্ছে। যেখানে প্রায়োগিক ফলাফল এবং যুক্তি-প্রমাণ, দুটোই হোমিওপ্যাথির সত্যতার সাক্ষ্য হয়ে সর্বক্ষণ প্রজ্জ্বলিত। আর এ প্রসঙ্গে বর্তমান সময়ের কিংবদন্তী চিকিৎসক ডা. জর্জ ভিথোলকাসের কথাটাও প্রণিধানযোগ্য,

“Many times we have been asked to explain the action of the remedies, to understand the why’s and wherefore’s, the underlying causes, the correspondences, and when we see these phenomena and point them out as a matter of interest and research we are accused of being “meta-physicians,” even by so-called homeopathic-physicians, as if the logical mind could perceive and explain everything, and pretend in the name of science to be able to understand the totality where we only know a small part of a whole. Actually we still know very little on matters of health and disease, because for many decades we have been following the wrong path in investigation and research. Today tremendous amounts of money are spent on a heart transplanted in an old man, but with the same money homeopathy could have saved thousands of heart patients from arriving at a stage where they need a transplant.”

অর্থাৎ,

“বহুবার আমাদেরকে ঔষধগুলোর কার্যপ্রণালী, এর পেছনের ‘কেন’ ‘কী কারণ’ সম্পর্কিত ব্যাপার সমূহ, এর ভিত্তিমূলক কারণসমূহ, এর অনুরূপ ব্যাপারসমূহের ব্যাখ্যা করতে বলা হয় কিন্তু যখন আমরা এই সব ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করি এবং আগ্রহ ও গবেষণার বিষয় হিসাবে অনুসন্ধানের ফলস্বরূপ প্রাপ্ত কারণগুলোর দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করি, তখন এমনকি তথাকথিত কিছু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ দ্বারাও আমাদের “অতি-তাত্ত্বিক বিমূর্ত আরোগ্যকারী” (Meta-physician) হিসাবে অভিযুক্ত করা হয়, মনে হয় যেন যৌক্তিক মন সবকিছুই বুঝতে আর ব্যাখ্যা কোরতে সমর্থ এবং বিজ্ঞান নামটির অজুহাতে সমগ্রকে সে বুঝতেও সমর্থ, যেখানে আমরা শুধুমাত্র সমগ্রের একটা সামান্য অংশমাত্রই জানি। বহুদশক ধরে গবেষণা ও অনুসন্ধানের ব্যাপারে আমরা ভুল পথ অনুসরণ করায়, প্রকৃতপক্ষে আমরা এখনো স্বাস্থ্য ও রোগ সম্বন্ধে খুব সামান্যই জানি। আজ বিস্ময়কর পরিমাণ অর্থ- বৃদ্ধ ব্যক্তিদের হার্ট ট্রান্সপ্লান্টেশন করতে খরচ করা হচ্ছে কিন্তু সেই একই পরিমান অর্থে হোমিওপ্যাথি হাজার হাজার হৃদরোগীকে সেই পর্যায়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারতো যে পর্যায়ে গেলে এই ট্রান্সপ্লান্টেশনের প্রয়োজন হয়।”(VITHOULKAS G., Materia Medica Viva, APIS)

এবার আসুন, একটু বিবেচনা করি, অন্যান্য বিজ্ঞানের বেলায় না করে হোমিওপ্যাথির বেলায়- তবু কেন এই খোঁড়া যুক্তি ব্যবহার করে তাকে অবহেলা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে একটা প্রশ্নের উত্তর আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। বিশৃঙ্খলা কাকে বলে? মানুষের শরীর বিধানের বিশৃঙ্খলা কি? যেখানে (প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনুসারী) মানুষ তার শরীরবিজ্ঞানের প্রাকৃতিক নীতিকেই আবিষ্কার করতে পারেন নি, নিদেনপক্ষে মেনে নিতে পারেন নি- সেখানে শরীর বিধানের সবগুলো বিশৃঙ্খলার কারণ নির্ণয় করতে তার কতদিন লাগবে? এ পর্যন্ত কি মানুষ তার শরীরে, সমাজে এই অজ্ঞাত বিশৃঙ্খলাকে মেনে নিয়ে অবিরত রোগবৃদ্ধিই করতে দেবে? এর কোন সুস্পষ্টতা কি সৃষ্টিকর্তা আমাদের প্রদান করেন নি?

আল্লাহ বা ঈশ্বর, যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তিনি নিখুঁত এবং দয়াময়। কিন্তু আমরা, অতিপণ্ডিত মানবজাতি বরাবরই তাঁর সত্যকে, তাঁর প্রদত্ত সমাধানকে অস্বীকার করে এসেছি। একটু বুঝিয়ে বলছি। আপনি যদি কোন কিছুকে বিশৃঙ্খল বলতে চান, তাহলে আগে আপনার প্রয়োজন হবে, শৃঙ্খলার সুস্পষ্ট নীতি। বর্তমান বিজ্ঞান কিছুদিন আগেও ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশনের অনুমতিক্রমে আমেরিকার লাইফ ম্যাগাজিনে ঘোষণা করেছে- সিগারেট হজমের জন্য উপকারী। ‘অন্তত হজমের খাতিরে হলেও থ্যাংকসগিভিং ডিনারের পর সর্বনিম্ন একটা সিগারট’ খাওয়ার সুপারিশ করে বিজ্ঞাপণ প্রচার করা হতো। আজ ঘোষণা করছে তা মৃত্যুসম, এমনকি ধূমপায়ীর আশেপাশে যারা থাকে তাদের জন্যও। একদিকে American Journal of Dental Association ঘোষণা করছে পানিতে ফ্লোরাইডের মিশ্রণের দরুন এই পানি ব্যবহারকারী ৫০% প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের অকালে নকল দাঁত ব্যবহার করতে হচ্ছে, দাঁতক্ষয়ের প্রধানতম কারণের মধ্যে একটা হিসাবে গন্য করা হচ্ছে এবং যে কারণে FDA এবং CDC পানির এই Fluoridation কে কখনোই অনুমোদন দান করেনি। আবার অপরদিকে নিউবার্গ, নিউইয়র্ক, গ্র্যান্ড র‌্যাপিডস, মিশিগান ইত্যাদি বৃহৎ শহরগুলোতেও অবলীলায় আজো এই Fluoridation চালু আছে এবং কোন এক রহস্যময় কারণে মানুষ বিশ্বাস করে- ফ্লোরাইডের এই সংমিশ্রণের ফলে দাঁতের উন্নতি ঘটে, দাঁত শক্ত হয়।

যেখানে কিছুদিন আগেও বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছে “Lose weight naturally, eat white sugar” অথবা “And sugar can help you cut down on the only kind of calories that can make you fat- they are the ones that come from overeating” ইত্যাদি, আজ একদম হাতে কলমে প্রমাণ করে দেয়া হচ্ছে, চিনি শরীরে চর্বিবৃদ্ধির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি, সুতরাং এটা বিষবৎ পরিত্যাজ্য। এ রকম হাজারো তথ্য, তত্ত্ব ও ঔষধপ্রয়োগবিজ্ঞানে অস্থিতিশীলতার কারণ হচ্ছে মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, তার অজ্ঞতা- যা চিরদিনই থাকবে। যে চর্বিকে বিষবৎ পরিত্যাগ করার পরামর্শ বহুদিন ধরে দেয়া হচ্ছে- বর্তমান কিটোজেনিক ডায়েট এই চর্বিপ্রধান মেটাবলিজমকেই শ্রেষ্ঠ বলে প্রমাণ করছে। মানুষের কাছে কোনকালেই শৃঙ্খলার সুস্পষ্ট নীতি ন-ই, থাকতে পারে না। তার নিজের ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে তা সম্পূর্ণরূপে আবিষ্কার করা কোনদিন সম্ভবপরও নয়। কারণটা আগেই বলেছি, বিজ্ঞান চিরদিনই অসম্পূর্ণ। সম্পূর্ণ জ্ঞান শুধুমাত্র এ সবকিছুই যিনি সৃষ্টি করেছেন, এই সমগ্র সৃষ্টির সার্বিক সমন্বয়ের জ্ঞান যার নিকট, সৃষ্টি পরিচালনা নীতির সম্পূর্ণ ধারণা যার কুক্ষিগত, সমগ্র প্রাকৃতিক নিয়ম, বিজ্ঞান সম্বন্ধে যিনি জানেন, সেই মহান সৃষ্টিকর্তার। আত্মার অস্তিত্বের স্বীকৃতি দিলে সাথে সাথে মানুষ সৃষ্টিকর্তা ও তার বিধানের স্বীকৃতি দিতেও বাধ্য। আর তিনি যুগে যুগে শৃঙ্খলার নীতি কোন না কোনভাবে প্রেরণ করেছেন এবং আজো যা সংরক্ষিত আছে কিন্তু বস্তুবাদী সমাজ ও তাঁর নির্দেশিত ও পরিচালিত বিজ্ঞান তা মানতে নারাজ। প্রকৃতপক্ষে, সৃষ্টিকর্তার বিধান থেকে বিচ্যুত হওয়াই রোগের কারণ, শরীর বিধানের বিশৃঙ্খলা উৎপত্তির মূল উৎস। মানুষ তার শরীরের ব্যাপারে স্রষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত বিধান ত্যাগ করে- তার প্রদত্ত শৃঙ্খলা পরিত্যাগ করে, এই মহাজাগতিক সুশৃঙ্খলতার মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ফলস্বরূপই রোগাক্রান্ত হয় এবং এই ধারণা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের মধ্যে ছিল (যদিও এর ব্যাখ্যা ছিল না বলে তাকে কুসংস্কার বলে বিবেচনা করা হতো)।

আমার এই কথার সাথে সাদৃশ্যযুক্ত একটা ইতিহাসের (কিংবা ধর্মের) কথা বলি। মানুষের আত্মা দুষ্ট প্রভাবের অধীনে, পাপের কলঙ্কে যখন কলুষিত হয়ে গেল, তখন মানুষের আত্মাকে সংশোধন করতে, মানুষের আত্মিক উৎকর্ষবৃদ্ধির লক্ষ্যে আল্লাহ ঈসা (আঃ) তথা যিশুকে পৃথিবীতে পাঠালেন। লক্ষ করুন তার প্রধান মোজেজা কি ছিলো- অসুস্থকে সুস্থ করা, মৃতকে জীবিত করা। আর তার উপাধি কি ছিলো? রুহুল্লাহ- আল্লাহর রুহ; যাকে কখনো পাপ স্পর্শ করতে পারে নি। এটা কে অস্বীকার করবেন যে, পৃথিবীতে যখন পাপ (অমানবিকতা, শরীরবিধানের ও সমাজের বিশৃঙ্খলা, আল্লাহপ্রদত্ত বিধান থেকে বিচ্যুতি) বৃদ্ধি পায়, তখন যে জিনিসটা সমানুপাতিক হারে বাড়ে- তা হচ্ছে মানুষের রোগ? আর যুগে যুগে প্রেরিতদের (সে যে ধর্মের বলেই তার অনুসারীরা দাবী করুন না কেন) কর্তৃক আনীত আল্লাহ প্রদত্ত বিধান নিজ নিজ যুগে, নিজ নিজ নিজ সমাজে প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে এই রোগ নামের প্রাকৃতিক দুর্যোগও তদনুযায়ীই হ্রাস পেয়েছে।

আরেকটা ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে, ব্যক্তিগত পাপের চাইতে সামাজিক, জাতিগত, আন্তর্জাতিক বা সম্মিলিত পাপের ফল আরো ভয়াবহ। মানুষের ব্যক্তিগত রিপুর দূষণে তার যে বিশৃঙ্খলাজনিত অবস্থা সৃষ্টি হয়- তার চাইতে বেশি হয়, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাতাসে কালো ধোঁয়া, সীসা, অতিরিক্ত কার্বন মেশানোয়, বিলাসদ্রব্যের প্রয়োজনে পানিতে রাসায়নিক বর্জ্য মেশানোয়, গাছ কেঁটে উজার করে ওজোন স্তর ক্ষয় করে ফেলায়, দামী বোতাম তৈরীর প্রয়োজনে, সমাজে স্ট্যাটাস বৃদ্ধির প্রয়োজনে অথবা খেয়ালের বশে বন্য পশু-পাখি হত্যা করে পৃথিবীর ইকোসিস্টেম নষ্ট করে ফেলায়; যার নিয়ন্ত্রণ কোন ব্যক্তি মানুষের উপর থাকে না- থাকে সেখানে প্রচলিত সিস্টেম, জীবনব্যবস্থার বিধানে, পৃথিবীতে আল্লাহ প্রদত্ত শৃঙ্খলাময় বিধানের বিচ্যুতিতে।

প্রতিষ্ঠিত সমাজব্যবস্থার হর্তাকর্তারা এবং একপাক্ষিকভাবে বিজ্ঞান-নির্ভর চিকিৎসকসমাজ খুব ভালোভাবেই জানেন, আজ হোমিওপ্যাথির স্বীকৃতি দিতে গেলে এই সমগ্র সত্যকেই স্বীকৃতি দিতে হবে। পরোক্ষভাবে ধর্মকে স্বীকৃতি দিতে হবে, ধর্মের বিভিন্ন বিধানগুলোকে সত্য বলে মেনে নিতে হতে পারে, এর প্রদত্ত বিধানগুলোকেই মানবজাতির জন্য সর্বজ্ঞানসম্পন্ন সমন্বিত চূড়ান্ত শৃঙ্খলা হিসাবে মেনে নিতে হতে পারে। হোমিওপ্যাথি প্রতিষ্ঠিত থাকলে- এর চিকিৎসকরা জোরদারভাবে এই বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কথা বলে যাবেন, হয়তো সোচ্চার আন্দোলনও করে যাবেন। কাজেই, এই অঘটনটা ঘটতে দেয়া তাদের পক্ষে কি করে সম্ভব? যেখানে তাদের গদিগুলো নিশ্চিত করাই হয়েছে অ-ধর্মের উপর, অন্ধ স্বার্থবাদীতার ভিত্তিতে এবং যেখানে তারা তাদের এই শিক্ষায়ই পৃথিবীবাসীকে শিক্ষিত করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে? শাসন, শোষণ ও আগ্রাসনের এই যুগে, বর্তমান সমাজের ধারক-বাহকদের পক্ষে নিজেদের স্বার্থ ধ্বংস করে মানবজাতির স্বার্থকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। কাজেই হোমিওপ্যাথির মূল সূত্রগুলো দেখার সাথে সাথে নাক ছিটকিয়ে (নাকি আঁতকে উঠে?) দূরে সরে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোন গত্যন্তর থাকে না। এর পর্বতসম ইতিবাচক দিক তাদের চোখের উপর পড়লেও তা দেখেন না- মাইক্রোস্কোপ নিয়ে এর ত্রুটি অন্বেষণে বের হন, নেতিবাচক দিকের সন্ধানে অভিযান পরিচালনা করেন।

এই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ত্রুটি খুঁজে বের করার অভিযানে, হোমিওপ্যাথির বিরুদ্ধবাদীরা হোমিওপ্যাথির স্বল্প মাত্রায় ব্যবহৃত ঔষধগুলোর সমালোচনায় মুখর থাকেন, এই স্বল্পমাত্রার ঔষধ ব্যবহারকে তাদের পক্ষে একটা শক্তিশালী যুক্তি হিসাবে বিবেচনা করেন। এ প্রসঙ্গেও যে তারা একমত, তা কিন্তু নয়। একজন হয়তো বলছে, এগুলোতে স্টেরয়েড দেয়া হয়, আরেকজন বলছে এটা প্লাসিবো এফেক্ট ছাড়া আর কিছুই নয়, আবার আরেকজন বলছে এরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে (যদিও হয়তো তার মতেই এর কোন প্রতিক্রিয়া শক্তিই নেই), অন্য জন হয়তো বলছে এটা শরীরে এলকোহল প্রবেশের পরিণাম ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা হয়তো এটা চিন্তা করে দেখেন না, মানুষের রোগ- এক্ষেত্রে যদি প্লাসিবো দিয়েও ভালো হতো- সেটাই কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট নয়? বিশেষ করে প্রায় ২৫০ বৎসর ধোরে লক্ষ লক্ষ মানুষের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত আরোগ্য এবং পৃথিবীতে জানা প্রত্যেক ধরণের রোগ থেকে অবিরত আরোগ্যের ঘটনা ঘটার পর। তাদের মতে, হোমিওপ্যাথিক ঔষধ মানে শুধু চিনি, এ্যালকোহল কিংবা পানি ছাড়া আর কিছুই নয়, কেবলমাত্র প্লাসিবো এফেক্ট। প্রশ্ন হচ্ছে, এ দ্রব্যগুলো কোন পদ্ধতির চিকিৎসকের নিকট নেই? প্রচলিত চিকিৎসকদের নিকট তো আরো রঙ্গচঙ্গে প্লাসিবো আছে। তাদের প্রতি মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাসও অনেক বেশি। তাহলে হোমিওপ্যাথি একিউট ও ক্রনিক উভয়ক্ষেত্রে আরোগ্যের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, ওগুলো দিয়ে এই পর্যায়ের সফলতার ৫০ ভাগের ১ ভাগ তারা করে দেখান- যদি তা পারেন।

যে বিমূর্ত শক্তির আক্রমণে মানুষ রোগাক্রান্ত হয়েছে তা দূর করার জন্য পদার্থে নিহিত বিমূর্ত, সূক্ষ্ম শক্তিকে হোমিওপ্যাথি ব্যবহার করে। মহাত্মা হানিম্যান বলেন,

“Our vital force, as a spirit-like dynamis, cannot be attacked and affected by injurious influences on the healthy organism caused by the external inimical forces that disturb the harmonious play of life, otherwise than in a spirit-like (dynamic) way, and in like manner, all such morbid derangements (diseases) cannot be removed from it by the physician in any other way than by the spirit-like (dynamic, virtual) alterative powers of the serviceable medicines acting upon our spirit-like vital force, which perceives them through the medium of the sentient faculty of the nerves everywhere present in the organism, so that it is only by their dynamic action on the vital force that remedies are able to re-establish and do actually re-establish health and vital harmony, after the changes in the health of the patient cognizable by our senses (the totality of the symptoms) have revealed the disease to the carefully observing and investigating physician as fully as was requisite in order to enable him to cure it.”

অর্থাৎ,

“যে সমস্ত বাহ্যিক প্রতিকূল শক্তি জীবনের ক্রিয়াশৃঙ্খলা ব্যাহত করে সুস্থ দেহযন্ত্রের বিকলতা সাধন করে, তারা আত্মাসদৃশ (এখানেও দিয়ে ‘spirit-like’ অলংকারকরণ!) সূক্ষ্ম উপায় ছাড়া অন্য কোনভাবে আমাদের আত্মা-সদৃশ সুক্ষ্ম জীবনীশক্তিকে আক্রমণ করতে এবং তার সঙ্কটজনক প্রভাবে আবিষ্ট করতে সমর্থ নয়; চিকিৎসক কর্তৃক প্রযুক্ত উপযোগী ঔষধসমূহের আত্মাসদৃশ (শক্তিসমন্বিত, গুণান্বিত)সূক্ষ্ম পরিবর্তন সৃষ্টিসাধ্য শক্তিরাজি দেহের সর্বব্যাপী সংজ্ঞাবাহী স্নায়ুসমূহের দ্বারা অনুভূত হয়ে, আমাদের আত্মা-সদৃশ জীবনীশক্তিকে আরোগ্য করে, এবং এই পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনভাবে আরোগ্য করা সম্ভব নয়; অর্থাৎ, রোগীর দেহক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়গোচর পরিবর্তনসমূহ (লক্ষণসমষ্টি), আরোগ্য সাধনের জন্য প্রয়োজনীয় রূপে উদ্ভাসিত হওয়ার পরে, যত্নশীল ও সর্তকভাবে তদন্তকারী চিকিৎসকের নিকট রোগ সম্যক ব্যক্ত হলে, ঔষধগুলি জীবনীশক্তির উপর কেবল তাদের তেজঃসম্ভুত ক্রিয়ার প্রভাবে স্বাস্থ্য পুনঃসংস্থাপনে সমর্থ হয়; তথা, বাস্তবিক এই পদ্ধতিতেই স্বাস্থ্য এবং জীবনের শৃঙ্খলা পুনঃসংস্থাপিত হয়ে থাকে। ”(Organon of medicine, Aphorism – 16)|

আর এ কারণেই আত্মার প্রতি, অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস করার মতো চিন্তাশক্তি ও যুক্তিগ্রহণের ক্ষমতা না থাকলে এই ঔষধকেও স্বীকৃতি দেয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়, চিকিৎসাপদ্ধতিকে অস্বীকার করবে এটা তো বলাই বাহুল্য। ফলাফলস্বরূপ, হোমিওপ্যাথিক ঔষধের পৃথিবী জুড়ে এই বিস্ময়কর ফলাফল সত্ত্বেও তা নিয়ে এত সংশয়, এত বিতর্ক, এত সমালোচনা।

যাই হোক, আমার আলোচনা আসলে এখানেই সমাপ্ত করা যেতো। কিন্তু কোন বিষয়ের মূল সমস্যা উৎঘাটন করা গেলে, তার সমাধানও আবিষ্কার করা সম্ভব। হোমিওপ্যাথির মতো একটা প্রমাণিত সত্যের প্রতি এই আন্তর্জাতিক দুর্নীতির কারণ যেহেতু যৌক্তিক ভাবে সংক্ষিপ্তরূপে জানা গেল, তাহলে এর সমাধান সম্বন্ধে অন্তত অগভীরভাবে হলেও সামান্য ধারণা দেয়া না হলে এ প্রসঙ্গের অসম্পূর্ণতা রয়ে যাবে। এ কারণেই আমি মুক্তকন্ঠে ঘোষণা করতে পারি করছি- আমি যত ভালো, প্রমাণসমৃদ্ধ ও যুক্তিসমৃদ্ধ লেখাই লিখি না কেন, আর আপনি যত ভালোভাবেই এটা বুঝে থাকুন না কেন- আজ এই প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসাব্যবস্থার লক্ষ লক্ষ চিকিৎসক, অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান, এর সাথে জড়িত কোটি কোটি কর্মী, এই দুর্নীতির থেকে ফায়দা হাসিলে লোলুপ, ক্ষমতাধর-ধান্ধাবাজ বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিকে এই সব ভালো ভালো, মৃদু মৃদু কথা বলে শুদ্ধ করা যাবে না। তারা তাদের পদ্ধতিকে ভ্রান্ত জানা সত্ত্বেও চক্ষুলজ্জার খাতিরে হলেও তা প্রকাশ করতে পারবে না। আজ যেখানে মানবজাতির মূল শিক্ষাই হচ্ছে জাগতিক উন্নয়ন (তা পৃথিবী ধ্বংসের কারণ হলেও!), জাতিগত স্বার্থবাদীতা (তা সার্বজনীন মানবতাবিরোধী হলেও!), ক্ষুদ্র জীবনে ব্যক্তিস্বার্থের প্রাধান্য- সেখানে কার দায় পড়েছে, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর! আর প্রায় প্রত্যেক দেশের সার্বভৌম শক্তি (?) তাকিয়ে থাকে এই স্বার্থপরতার পরীক্ষায় উর্ত্তীণ অর্থনীতিকভাবে সমৃদ্ধশালী ও সামাজিকভাবে ক্ষমতাশালী শ্রেণির মনোভাব, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ও স্বার্থের দিকে তথা তাদের অনুসরণকারী বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার সমর্থনের দিকে।

এর একমাত্র সমাধান, মানুষের জন্য স্রষ্টার নির্ধারিত যে জীবনব্যবস্থা প্রদত্ত হয়েছে, তার অনুসরণের মধ্যে। একমাত্র সত্যই সত্যের সমর্থক। সত্যই সত্যের মূল্যায়ন করতে পারে। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষীও নন। তিনি জনসংখ্যার সমর্থনের পরোয়াও করেন না। যখন সিস্টেম মানুষকে মানুষ হতে শেখাবে, মানবজাতির স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দেবার শিক্ষা দেবে এবং বাস্তবায়ন করে দেখাবে, তখন হাজারো সমস্যা, হাজারো বিশৃঙ্খলা, হাজারো পাপের সাথে সাথে এই চিকিৎসা-দুনীর্তিরও অবসান ঘটবে। আর পরিপুর্ণ জ্ঞানের অধিকারী, মহাবিজ্ঞানী আল্লাহর প্রদত্ত বিজ্ঞানময় জীবনব্যবস্থা অনুসৃত হলে, খুব কম মানুষই পৃথিবীতে থাকবে যার কোন ঔষধেরই প্রয়োজন হবে। যতদিন স্রষ্টা প্রদত্ত শৃঙ্খলা, তার প্রণীত জীবনব্যবস্থা পৃথিবীতে অনুসরণ করা না হবে, ততদিন ব্যক্তিগত পাপ থেকে অনেক সাধনায় ব্যক্তি কিছুটা মুক্ত থাকতে পারলেও, সম্মিলিত পাপ ও তার ফল থেকে কিছুতেই মুক্ত থাকতে পারবে না। কাজেই, রোগ থেকেও মুক্ত হতে পারবে না। অধিকাংশ মানুষ মিথ্যার অনুসরণ করতেই থাকবে, পৃথিবীতে স্রষ্টা প্রদত্ত শৃঙ্খলার ব্যত্যয় ঘটতেই থাকবে, পৃথিবীর মাটি, পানি, বায়ু সব দূষিত হয়ে যেতেই থাকবে, আর পৃথিবীতে নতুন নতুন রোগের উদ্ভব ঘটতেই থাকবে এবং মানুষ অপচিকিৎসায়, দুর্নীতিপরায়ন চিকিৎসায়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ক্ষিপ্ত, প্রক্ষিপ্ত চিকিৎসায় ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হবে।

Tags: homeodigestHomeopathyWHOহোমিওডাইজেস্টহোমিওপ্যাথি স্বীকৃতি

Related Posts

একই রোগীক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসকের ভিন্ন ভিন্ন ঔষধ নির্বাচন কতটা অসঙ্গত?

by sayeed
October 22, 2020
0
251

ডা. শাহীন মাহমুদ: হোমিওপ্যাথিক সমাজে একটি বিতর্ক প্রায়শই বিভিন্ন স্থানে আলোচিত হতে দেখা যায়। বিষয়টি নিয় বহু চিকিৎসককে দুঃখপ্রকাশ ও আবেগঘন কাতরোক্তিও করতে দেখা যায়। অভিযোগটি...

কোভিড-১৯ এর বিচিত্র লক্ষণ হার্ড ইমিউনিটি ও হোমিওপ্যাথিক ভাবনা

by ডা. নূরে আলম রাসেল
July 17, 2020
0
346

ইতিমধ্যে বিভিন্ন ভাবে  প্রায় সকলের জানা হয়ে গেছে  নোভেল করোনা ভাইরাস কী এবং এর দ্বারা  সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ সম্পর্কে। এবার  এই কোভিড-১৯ রোগের  কিছু নতুন...

কভিড-১৯ চিকিৎসা: হোমিওপ্যাথির সাফল্য নাকি বিপর্যয়!

by sayeed
July 7, 2020
0
381

ডা. মাহমুদুল কবির: কোন সন্দেহ নেই – বর্তমানের করোনা দুর্যোগে হোমিওপ্যাথগণ তাদের জীবন হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। বহু কেইসে দুর্দান্ত সাফল্য হোমিওপ্যাথদের চমৎকৃত করছে। নিজেদের ক্ষুদ্র...

Alan V. Schmukler এর নেয়া Dr. Timothy Fior এর সাক্ষাৎকার

by sayeed
June 28, 2020
0
168

[Dr. Timothy Fior  ২৯ বৎসর যাবৎ হোমিওপ্যাথি ও ফ্যামিলি মেডিসিন প্র্যাকটিস করছেন এবং তিনি Illinois Homeopathic Medical Association এর যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক প্র্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট। বর্তমানে...

করোনাভাইরাস আংশিকভাবে ল্যাবে তৈরি!

by sayeed
June 12, 2020
0
232

অনুবাদ: ডা. পি. গুপ্ত Professor Luc Montagnier একজন ফ্রেঞ্চ নোবেল প্রাইজ বিজেতা, যিনি ফ্রেঞ্চ চ্যানেল CNEWS (Canal+ Group) এর একটি সাক্ষাৎকারে বলেন যে, কভিড-১৯ আংশিকভাবে ল্যাবে তৈরি। তার...

Next Post

Dr. James Tyler Kent (MD)

মানসম্পন্ন হোমিওপ্যাথিক শিক্ষা – বর্তমান সময়ের জরুরি সংকট

Guillain Barre Syndrome (GB Syndrome)

Subscribe Us

Join 118 other subscribers

CATEGORIES

  • অনুবাদ
  • আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
  • ইন্টারভিউ
  • ঔষধ পরিচিতি
  • কেস রেকর্ডস
  • প্রবন্ধ
  • ফিচার
  • বায়োগ্রাফি
  • বুক রিভিউ
  • ভেটেরিনারি এন্ড এগ্রো
  • রিসার্চ রিভিউ
  • হোমিও সংবাদ

RECOMMENDED

রিসার্চ রিভিউ

হোমিওপ্যাথিক ঔষধে রোগ প্রতিরোধ: হিউম্যান রেকর্ডস, স্টাডিজ এবং ট্রায়ালস (৩য় ও শেষ পর্ব)

June 17, 2020
হোমিও সংবাদ

এলএমএইচআই বাংলাদেশের সেমিনার ও অভিষেক শুক্রবার

January 1, 2020

TAGS

biography Corona in homeopathy Corona in Repertory homeodigest Homeopathic remedy of Corona Homeopathic treatment of Influenza Homeopathy Phase of Corona Remedy Selection for Corona Remedy Selection for COVID-19 Repertorial analysis of Corona Repertorial Introduction for Corona Repertorial Introduction for COVID-19 Repertory about Pneumonia Repertory of Corona Repertory of COVID-19 Repertory of Influenza Rubrics about Corona Rubrics about COVID-19 Rubrics of Corona Stage-wise Symptoms of Corona Symptoms of Corona অর্গানন করোনা ভাইরাস করোনাভাইরাস কেস রেকর্ডস চিকিৎসক চিকিৎসা ডাক্তার মায়াজম মায়াজমের দর্শন-চিন্তা মেটেরিয়া মেটিকা হোমিও হোমিও ওষুধ হোমিও ঔষধ হোমিও চিকিৎসক হোমিও চিকিৎসা হোমিওডাইজেস্ট হোমিও ডাক্তার হোমিওপ্যাথ হোমিওপ্যাথ বুক রিভিউ হোমিওপ্যাথি হোমিওপ্যাথিক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
HomeoDigest | হোমিওডাইজেস্ট

বাংলাদেশের প্রথম আদর্শিক অনলাইন হোমিওপ্যাথিক প্লাটফর্ম। হোমিও বিষয়ক সংবাদ, প্রবন্ধ, কেস রেকর্ডস, কেস স্টাডি, বুকস রিভিউ, ইন্টারভিউ, বায়োগ্রাফিসহ বিভিন্ন বিষয়ের লেখার এক সমৃদ্ধ ভান্ডার। এছাড়াও স্টুডেন্টদের জন্য রয়েছে বিশেষ সাজেশন্স।
contact@homeodigest.com

Copyright © 2020 - Homeodigest | All Rights Reserved.

No Result
View All Result
  • হোম
  • প্রবন্ধ
  • ফিচার
  • রিসার্চ রিভিউ
  • বুক রিভিউ
  • অনুবাদ
  • কেস রেকর্ডস
  • স্টুডেন্টস কর্নার
    • DHMS
    • BHMS
    • রেজিস্ট্রেশন
  • ইন্টারভিউ
  • বায়োগ্রাফি
  • করোনা সেল
  • আরও
    • হোমিওডাইজেস্ট চিকিৎসক তালিকা
    • হোমিও সংবাদ
    • ভেটেরিনারি এন্ড এগ্রো
    • ঔষধ পরিচিতি
    • কেস কুইজ
    • টিপস এন্ড সাজেশন
    • ডক্টরস পয়েন্ট
    • রোগীর জিজ্ঞাসা
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংকস

Copyright © 2020 - Homeodigest | All Rights Reserved.