বহু সময় ও সংগ্রামের পর আজ বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিতে একটি নতুন দিগন্ত সূচনার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বিগত সময়ের চাইতে একদিকে যেমন হোমিওপ্যাথি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে জনমানুষের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা। এটি একই সাথে যেমন একটি উপভোগ্য পরিস্থিতি, তেমনি থাকে এক আশঙ্কা ও দায়িত্ববোধের প্রশ্ন। কারণ সংখ্যাগত বৃদ্ধির সাথে গুণগত মানটি অনেকসময়ই ব্যস্তানুপাতিক।
বিগত কয়েক দশকে এদেশে বহু হোমিওপ্যাথিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু সংখ্যায় বাড়লেও গুণগত মানটি কিন্তু এখনো প্রশ্নবিদ্ধই রয়ে গেছে। এদের মধ্যে কতজন শিক্ষার্থী হ্যানিমানের মূল লেখাগুলো পড়েছে ও উপলব্ধি করতে পারছে? কলেজ থেকে বেরোনোর পর কতজন দাবী করতে পারবে যে তারা হ্যানিমান, বাউনিংহোসেন, ক্লার্ক, কেন্ট, বোগার, লিপ, হেরিং বা আমাদের প্রবীণ শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো পড়েছে? কলেজের শিক্ষাব্যবস্থায়ই বা এদের মূল লেখাগুলোকে কতটা অনুসরণ করা হয়? হোমিওপ্যাথিক শিক্ষার্থীদের কতজন প্রকৃত ধারার চিকিৎসার ফলপ্রসূ ক্লিনিক্যাল ট্রেনিং পায়? হ্যানিমানের মূলনীতিগুলোর ব্যাপারে কতটা দক্ষতা শিক্ষার্থীদের মাঝে অর্জিত হয়?
সময়ের প্রয়োজনে হোমিওপ্যাথিতে বহু নতুন চিন্তার আবির্ভাব ঘটেছে। এর মধ্যে সবই যে হোমিওপ্যাথির মূলনীতি দ্বারা সমর্থিত তা নয়- আবার সবকিছুকে এককথায় উপেক্ষা করাও বাস্তব উপযোগী নয়। কিন্তু মূলধারায় দক্ষতা লাভের আগেই একজন শিক্ষার্থী হুটহাট কোনো একটা নতুন কনসেপ্ট বা আইডিয়ার পেছনে অনেক সময় ছুটতে শুরু করে। প্রথম জেনারেশনের হোমিওপ্যাথদের শিক্ষার ব্যাপারে কোন ধারণা লাভ না করেই, নিজেদের ভিত্তিকে হোমিওপ্যাথির প্রকৃত নিয়ম-নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত না করেই, তারা এসব ধারণাগুলোতে প্রবিষ্ট হয় কিংবা এই ধারণাগুলো তাদের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়। এর ফলাফল কিন্তু অত্যন্ত নেতিবাচক হবার সম্ভাবনাই প্রবল।
মূলত আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রটিতে, একদিকে যেমন হোমিওপ্যাথির ক্লাসিক্যাল শিক্ষার ভিত্তিটি অপরিহার্য, অন্যদিকে সময়ের প্রয়োজনে হোমিওপ্যাথির সেই মূল নিয়ম-নীতি ও ভিত্তির উপর গড়ে উঠা আধুনিক অগ্রগতিকেও প্রত্যেকটি হোমিওপ্যাথের জানতে হবে। তার সাথে, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন যথাযথ ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণ। শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা, তাকে একটি আদর্শ রূপদান করা এখন সময়ের দাবী।
মাঠপর্যায়ে এই কাজের দায়িত্ব থেকে আমরা, অনুশীলনকারী হোমিওপ্যাথগণও মুক্ত নই। হোমিওপ্যাথিক শিক্ষার্থী ও অনুরাগীদের এই বিশাল সংখ্যাকে রাতারাতি আদর্শ অবস্থানে নেয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। যার যার অবস্থান থেকে এই প্রচেষ্টা আমাদের সবারই করতে হবে। এজন্য এগিয়ে আসতে হবে- আমাদের সকলের সম্মিলিত শক্তিতে। আর তারই একটি প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করার তাগিদে আমাদের এই অনলাইন ম্যাগাজিনটির সূচনা।
আমাদের লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী। আপাতঃদৃষ্টিতে সাধ্য সীমিত মনে হলেও, আমাদের হোমিওপ্যাথিক সমাজের এ বিষয়গুলোর যথাযথ গুরুত্বের উপলব্ধি ও আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে, সেই সাধ্যই অসীম হয়ে দেখা দিতে পারে। তবে ক্ষুদ্রই হোক আর অসীম- সৎপ্রচেষ্টা সবসময়ই সৎকর্ম হিসাবে বিবেচিত এবং প্রতিটি সৎকর্মেরই কোন না কোন ইতিবাচক ফল দেখা দেবেই। আর এ আশাবাদ নিয়েই, সকলকে সাথে নিয়ে শুরু করছি এই বিস্তৃত যাত্রা …
Discussion about this post