The third essential requirement, for this purpose, is a complete mental freedom from the clutches of the traditional ideas about health, disease and cure.
হোমিওপ্যাথ হবার এই তৃতীয় উপদেশটি আমার মনে হয় সর্বাপেক্ষা কঠিন। হ্যানিম্যানের কথায় কুসংস্কার মুক্ত মন। আমরা সকলেই কম- বেশি কিছু বদ্ধমূল ধারনা ও বিশ্বাসে আবদ্ধ। একটু ভেবে দেখুন হ্যানিম্যান একাই একটি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানকে দৃঢ় বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়েছেন। শত সহস্র আক্রমণে দমিয়ে রাখা গেলেও, থামিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এই অসম্ভব প্রাণ শক্তির উৎস হচ্ছে প্রাকৃতিক বিধান। মানুষের লোভ বিজ্ঞানের সাহায্যে প্রকৃতিকে ধ্বংস করার খেলায় মেতে উঠেছে। প্রকৃতির রাজ্য আমরা অতিথি। বিজ্ঞানের বলে মালিক হবার চেষ্টায় প্রকৃতির মঙ্গলময় নীতিকে অবজ্ঞা করে বালির উপর উন্নতির ঝকমকে প্রাসাদ নির্মাণ আমরা করেছি। অন্যান্য বিজ্ঞানের মত চিকিৎসা বিজ্ঞানও মানব প্রকৃতিকে ধ্বংস করার খেলায় মেতে উঠেছে। তাই হ্যানিম্যানের উদাত্ত আহ্বান কুসংস্কার মুক্ত হও- তবেই মানুষের প্রকৃত মঙ্গল সম্ভব । এখানে সেই কথা ডা. কাঞ্জিলাল সহজ ভাষায় বললেন সনাতন ভাবনার মোহ বন্ধন থেকে আমাদের মনকে মুক্ত করতে হবে। মন মুক্ত হলে তবেই আমরা মানব প্রকৃতির সঠিক উপলব্ধি করতে পারবো।
মানব প্রকৃতিকে উপলব্ধি করার জন্য কারো মতামতের উপর নির্ভর না করে হ্যানিম্যান সুস্থ মানুষের উপর ওষুধ পরীক্ষণ করে প্রাপ্ত জ্ঞানের উপর নির্ভর করতে বলেছেন। মানুষ প্রকৃতির সন্তান ফলে মানুষের উপর পরীক্ষিত জ্ঞানের সমতুল্য জ্ঞান আর কোন ভাবেই পাওয়া সম্ভব নয়।আমি আমার চিকিৎসা জীবনের কিছু অভিজ্ঞতার কথা সংক্ষেপে বলছি।
(১) এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি অনেকদিন থেকে কাশিতে ভুগছেন। সারাদিনই চলে কম-বেশি। কিন্তু সারাদিনে কয়েকবার জোরে কাশির ঝলক আসে। কিন্তু ধূমপান করলে ঘন্টা দুয়েক কাশি বন্ধ থাকে। কোন ওষুধ কোন কাজ করে না। তাই আরামের জন্য সিগারেট ছাড়তে পারে না। সনাতন চিকিৎসার নিয়ম অনুসারে তাদের ধারণা সিগারেটে কাশি অবশ্যই বাড়বে। মেটিরিয়া মেডিকা তা বলে না। যেহেতু এটি সুস্থ মানুষের উপর পরীক্ষিত তাই পরীক্ষণের উপর নির্ভর করে সার্বিকভাবে বিচার করে সিপিয়া দুইশত শক্তির একটি মাত্রাতেই রোগী আরোগ্যলাভ করে। কেন্টের রেপার্টরিতে দেখুন: Generalities, Tobacco amel. [Page 1407]
(২) দুধ সম্পর্কে পড়েছি সুষম আহার। কিন্তু সনাতন পদ্ধতির এই কথা আসলে আংশিক সত্য। আমরা দেখেছি বহু মানুষ দুধ সহ্য করতে পারে না। আমরা এর চিকিৎসা সকলেই করি। কিন্তু যদি বলে দুধ খেলে গ্যাস অম্বল কমে যায়, সুন্দর পায়খানা হয়; সবদিন খেতে পারতো না পয়সার অভাবে- সনাতন পন্থার মতে এটা অসম্ভব। কিন্তু বাস্তবে আমি বেশ রোগী পেয়েছি। Generalities, Food, milk amel. [Page 1363]
(৩) আমি দেখেছি, ঘিয়ের লুচিতে কিছু হয় না অথচ তুষের তেলের লুচি খেলে অসুবিধা হয়। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে এটা হওয়া উচিত নয়। ডা. কেন্ট Hysterical stomach এর কথা বলেছেন। তিনি বলছেন, এই ক্ষেত্রে প্রচলিত সহজপাচ্য খাদ্য সহ্য হয় না কিন্তু গুরুপাক খাদ্যে খুব ভাল থাকে।
প্রতিটি রোগের অনেক কারণ পাবেন সনাতন পদ্ধতিতে। কিছুদিন পরে পরে কারণ বদল হয়। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে রোগের কারণ নির্দিষ্ট। মায়াজম সব রোগের মূল কারণ। তাই মায়াজম নাশক চিকিৎসা করলেই রোগ আরোগ্য হবে। সনাতন পদ্ধতিতে যে অংশে রোগটি আছে সেটা দূর করাই লক্ষ্য। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে রোগীকে আংশিক ভাবে বিচার না করে, রোগীকে একক হিসাবে বিচার করে সার্বিক লক্ষণ সমষ্টির ভিত্তিতে চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসার পরে যদি পূর্বের স্বাস্থ্য ফিরে পায় তবেই আরোগ্য বলা হয়। এসব সনাতন পন্থার সাথে মেলে না। তাই ডা. কাঞ্জিলাল সনাতন চিন্তা ভাবনা থেকে মনের মুক্তির কথা বলেছেন। আমরা কী কাঞ্জিলাল উপদেশে নিজেদের পরিবর্তন করবো?
One should remember that Homoeopathy is nothing but a thorough revolution of all the traditional ideas with respect to health, diseases and cure i.e. with respect to the whole science and art of medicines.
“Thorough Revolution” শব্দ দুটি গভীর তাৎপর্য বহন করে। Revolution শব্দটির অর্থ আমূল পরিবর্তন। তা সত্ত্বেও ডা. কাঞ্জিলাল Thorough শব্দটি যোগ করলেন আমূল পরিবর্তনকে সঠিক গুণগত মানে উপলব্ধি করবার জন্য। বিপ্লবকে আরো গভীর ব্যঞ্জনাময় করবার জন্য এই শব্দটির যোগ- ডা. কাঞ্জিলালের মুনশিয়ানার প্রতীতি।
প্রধান চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রথমে প্রকল্প – গবেষণা ইতর প্রাণীর উপর – সীমিত সংখ্যার রোগীর উপর পরীক্ষা – ফলের পরিসংখ্যান করে ওষুধ বাজারজাত করা হয়। অনেক সময় এই পরিসংখ্যান ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে পরবর্তী কালে। আসুন আমরা একটি সহজ উদাহরণে মাধ্যমে দুটি পদ্ধতির তুলনামূলক আলোচনা করি।
বিষয় – অম্বলের রোগী তৎসহ তার বিভিন্ন উপসর্গ। রোগীর ব্যক্তিগত উপলব্ধি তার কষ্ট দুধ, রুটি ও ডাল খেলে প্রচন্ড বাড়ে।
(১) হোমিওপ্যাথি প্রাকৃতিক নিয়ম স্বতন্ত্রতার উপর নির্ভরশীল; তাই একটি ওষুধের পরিসংখ্যান নেওয়া হোমিও-নীতি বিরোধী। কারণ একই রোগ রোগীর স্বতন্ত্রতার জন্য বিভিন্ন ওষুধে আরোগ্য হবে। সদৃশ নীতির সঠিক প্রয়োগে আরোগ্যে বিশেষ বাধা না থাকলে, শতকরা একশ ভাগ সাফল্য।
কিন্তু প্রচলিত চিকিৎসার গবেষণায় নির্দিষ্ট নীতি থাকলেও, ওষুধ প্রয়োগ করা হয় পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে। ধরুন পরিসংখ্যান অনুসারে ওষুধটি ৯০% সফল। এবার এক কোটি অম্বলের রোগীর উপর প্রয়োগ করলে ১০ লক্ষ রোগী আরোগ্য হবে না। কেন হবে না- তার কোন ব্যাখ্যা নাই। পৃথিবীর জনসংখ্যা বর্তমানে ৬০০ কোটি। আমার বুদ্ধিমান বন্ধুদের আর কিছু বলতে চাই না। ফলে একদিন উন্নত পরিসংখ্যানের দাবী নিয়ে অন্য একটি ওষুধ আসবে। যে পরিসংখ্যান কারো পক্ষে যাচাই করা সম্ভব নয়।
(২) হোমিওপ্যাথিতে রোগীর Subjective Symptoms কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। অন্য প্যাথিতে Objective Symptoms কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই বিভিন্ন পরীক্ষার এত ঘটা। তাই ব্যবসায়ীরা সবসময় অর্থের যোগান দেয়।
(৩) ওষুধের মাত্রা সর্বাপেক্ষা কম, অন্যদিকে অন্য প্যাথিতে ওষুধের মাত্রা সর্বাপেক্ষা বেশি। তাহলে বন্ধুরা, ব্যবসায়ীরা কোন পক্ষে থাকবেন সেটা কী বলে দিতে হবে?
(৪) হোমিওপ্যাথির ক্ষেত্রে অম্বলের নয় বরং অম্বলের আপাত কারণ (দুধ, রুটি ও ডাল) ও তৎসহ প্রকৃত কারণের (মায়াজম) সার্বিক লক্ষণ সমষ্ঠির উপর ভিত্তি করে একটি মাত্র ওষুধ ওষুধের নির্বাচন করা হয়। অন্য প্যাথির ক্ষেত্রে আপাত ও প্রকৃত কারণের কোনো মূল্য নাই। তাই বলা যায়, এখানে কারণের চিকিৎসা হয় না- শুধু ফলের চিকিৎসা হয়। এখানে সাধারণত একাধিক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। বন্ধু, কারণের চিকিৎসার থেকে ফলের চিকিৎসায় অর্থাগম বেশি। বাকীটা বুঝে নিন।
(৫) হোমিওপ্যাথিতে ওষুধ সুস্থ মানুষের উপর পরীক্ষা করে ওষুধের গুণাগুণ মৌলিক ভাবে জানা যায়। অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ ইতর প্রাণী ও অসুস্থ মানুষের উপর পরীক্ষা (পরীক্ষণ নয়) করার দরুণ ওষুধের মৌলিক গুণ জানতে পারা যায় না। তাছাড়া ইতর প্রাণীর শরীর ও মন অনুন্নত। এছাড়াও এদের জিনোম মানুষের সঙ্গে মেলে না।
(৬) এখানে একটি মানুষকে একক হিসাবে ধরা হয়। অন্য প্যাথিতে মানুষকে অংশ হিসাবে দেখা হয়।
(৭) একক হিসাবে দেখার জন্য একটি রোগী দেখতে বেশি সময় লাগে। অন্য প্যাথিতে সেই সময়ে অনেক রোগী দেখা যায়। এ কারণে, এই ব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বেশি। আর সেটা অর্থনীতির নিয়মে স্বাভাবিক।
(৮) এই ওষুধ প্রাকৃতিক সদৃশ নীতির ভিত্তিতে প্রয়োগ করা হয়। অন্য প্যাথিতে রসায়নের অম্ল ও ক্ষারের বিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে প্রয়োগ করা হয়। উপজাত হিসাবে যে লবণ পাওয়া যায়- তার ক্ষতিকারক দিক ভাবার সময় নাই। নেটে এইসব বিজ্ঞান সম্মত (?) ওষুধের বিষয়টি দেখলেই আপনাদের উপলব্ধি হবে।
(৯) নির্বাচিত ওষুধ কাজ না করলে, আমাদের পুনরায় বিচার করে ভুল সংশোধন করার উপায় আছে। আমরা জানি সদৃশ ওষুধ কাজ করবেই। তাই সদৃশ ওষুধের জন্য পুনরায় রোগীলিপি করতে হবে। অন্য প্যাথিতে, ভুল হলে ঐ ওষুধের রাসায়নিক ক্রিয়াকে দোষ দেওয়া হয় না।
(১০) বিশেষ জটিল ক্ষেত্রে একজন দক্ষ চিকিৎসক একটু বেশি সময় দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করতে পারেন। অন্য প্যাথিতে এই ক্ষেত্রে রোগীর দেহের বিভিন্ন অংশের জ্ঞানে দক্ষ চিকিৎসক এক জায়গায় মিলিত হয়ে তাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা প্রদান হয়। এতে অর্থ শ্রাদ্ধ হলেও সুচিকিৎসার এই মোহিনী মায়ায় আমরা সবাই মুগ্ধ ও তৃপ্ত হই।
ডা. কাঞ্জিলাল একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত (অবশ্যই অর্থকরী ) ত্যাগ করে সত্যের সন্ধানে হোমিওপ্যাথিতে এসে আজ একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। তিনি যেন বলছেন,
“তোমাদের হীনমন্যতায় ভোগার কোনো কারণ নাই। তোমরা দক্ষ হলে একাই অন্য চিকিৎসা পদ্ধতির কয়েকজন দক্ষের সমতূল্য হবে।”
(১১) ওষুধের সূক্ষ্ম মাত্রা শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। অন্য প্যাথিতে স্থূল মাত্রা দমন মূলক কাজ করে। নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী আর্নট সুলজও একই মত প্রকাশ করেন।
(১২) সদৃশনীতিতে ওষুধের কোন পার্শ্ব – প্রতিক্রিয়া নাই। অন্য প্যাথিতে প্রতিটি ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আছে। নেটে দেখে নিন।
(১৩) পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া না থাকায়, রোগী অনুসারে সূক্ষ্ম মাত্রায় ওষুধটি সব বয়সের রোগীকে দেওয়া যায়। অন্য প্যাথিতে স্বীকৃত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার জন্য সব ওষুধ সবাইকে দেওয়া যায় না।
রোগের কারণ তত্ত্ব সম্পূর্ণ আলাদা হবার জন্য স্বাস্থ্য, আরোগ্য সম্পর্কে হোমিওপ্যাথির সঙ্গে প্রধান প্যাথির কোন মিল নাই। তাই বলা যায় হ্যানিম্যান চিকিৎসা বিজ্ঞানে যুগান্তকারী বিপ্লব করেছেন। আমাদের দায়িত্ব তাঁর ছেড়ে যাওয়া পতাকাকে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া ।