অনুবাদ: ডা. শাহীন মাহমুদ
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা আর হোমিওপ্যাথিক প্রেসক্রিপশন এক জিনিস নয়। একিউট প্রেসক্রিপশন, প্রথম প্রেসক্রিপশন তুলনামূলক সহজ। এগুলো সঠিক হলেও সেটা- ছিপ ফেলে যারা বড় মাছ শিকার করেন তাদের বড়শি মাছে গেলার মতো অবস্থা অনেকটা। এটা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় নিঃসন্দেহে কিন্তু নৌকায় মাছ উঠেনি- কাজেই আলাদাভাবে তার বিশেষ কোন গুরুত্বও নেই। কত কায়দা-কানুন- সুতো ছাড়া, সুতো টানা, নেটে তোলা – মাছ উঠাতে আরো বহু পথ বাকী। তেমনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় প্রথম প্রেসক্রিপশনের পরে বাকী থাকে বহু কাজ। বলা যায়, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা আসলে শুরুই হয় দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র থেকে। আর এ কারণেই হোমিওপ্যাথির সব মনীষীই এটাকে বিশেষ গুরুত্বসহকারে বর্ণনা করেছেন। এর সফল ও দক্ষ প্রয়োগের উপরই নির্ভর করে চিকিৎসার সফলতা ও ব্যর্থতা।
নিম্নোক্ত লেখাটি ডা. অশোক কুমার দাসের “A treatise on organon of homeopathy” এর “Second Prescription” অধ্যায়টুকুর অনুবাদ:
সংজ্ঞা: ডা. কেন্ট দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রকে (Second Prescription) “প্রথম ক্রিয়াকারী ব্যবস্থাপত্রের পরেরটা” হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের পূর্বশর্তগুলো হচ্ছে-
ক. প্রথম ব্যবস্থাপত্রটি সঠিক ছিলো।
খ. সেটা ক্রিয়াশীল হয়েছে।
গ. তাকে তার পুরোটা সময় কাজ করতে দেয়া হয়েছে।
পর্যালোচনা: সাদৃশতম ঔষধটি প্রয়োগ করার পর- চিকিৎসক কিছু প্রতিক্রিয়া, কিছু সাড়া আশা করেন। রোগীগণ প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করার পর, হয়তো এবং খুব সম্ভবত- একটা সময় আসবে যখন চিকিৎসককে আরো একবার একটি লক্ষণচিত্রের মুখোমুখি হতে হবে। এটাই সেই সময় যখন চিকিৎসককে অবশ্যই দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের কথা চিন্তা করতে হবে।
সোজাসুজি বললে, যে ব্যবস্থাপত্রটা ক্রিয়াশীল হয়েছিলো সেটাই প্রথম ব্যবস্থাপত্র। একজন চিকিৎসক কোনো একটা ভুল করতে পারেন এবং সাদৃশ ঔষধ নাও নির্বাচন করতে পারেন- কাজেই সেখানে কোনো প্রতিক্রিয়াও থাকবে না। সেক্ষেত্রে, যখন মনে হচ্ছে যে, আমরা একটি দ্বিতীয় প্রেসক্রিপশন অনুসন্ধান করছি- আসলে সেখানে আমরা প্রথম প্রেসক্রিপশনটাই সন্ধান করছি, যেটাতে রোগী সাড়া দেবে। অন্য কথায়, প্রেসক্রিপশনটিকে অবশ্যই সাদৃশতম (Simillimum) ছিল বলে বিবেচিত হতে হবে। যদি একটি ঔষধ প্রয়োগ করার পর রোগী সাড়া না দেয়, তা যদি কোন ফল প্রসব না করে, তবে তা সঠিক প্রেসক্রিপশন নয়; এ কারণে এটাও পরিস্কার যে- সেটা সাদৃশতম ঔষধ নয়।
দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের প্রকার:
দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র নিম্নলিখিত ধরণগুলোতে হতে পারে-
ক. প্রথম ব্যবস্থাপত্রটিই পুনরায় প্রদান (Repeatation)
খ. ক্রিয়ানাশক (Antidotes)
গ. ঔষধের পরিবর্তন (Change of remedy)
ঘ. সম্পূরক ঔষধ প্রদান (Complementary)
ঙ. সম্পর্কিত ঔষধ প্রদান (Cognate) চ. চিকিৎসা-পরিকল্পনা পরিবর্তন (Change of treatment plan)
ক. প্রথম ব্যবস্থাপত্রটিই পুনরায় প্রদান:
ইঙ্গিতসমূহ:
* যখন পূর্বের মূল লক্ষণগুলো ফিরে আসে-
প্রথম ব্যবস্থাপত্রের দ্বারা যদি একটি উপশম সৃষ্টি হয়, রোগীর মধ্যে কিছু সময়ের জন্য বর্তমান লক্ষণগুলো না থাকে এবং পরবর্তীতে কম-বেশি একটি সময় (বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভিন্ন ঔষধের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে এই সময়টা কম-বেশি হয়। এটা কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাসও হতে পারে) বিরতির পরে পূর্বের সেই একই সার্বদৈহিক ও স্থানীয় মূল লক্ষণগুলোই ফিরে আসে, তাহলে এটা বোঝায় যে-
১. প্রথম ব্যবস্থাপত্রটা ভালো হয়েছে
২. কেইসটি আরোগ্যযোগ্য
৩. দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রটি নিশ্চিত আগের ঔষধেরই পুনঃপ্রদান হবে
* যখন কেইসটিতে একটি অচলাবস্থা দেখা দেয়-
প্রথম ব্যবস্থাপত্রটি সঠিক হলে- লক্ষণগুলো একটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে পরিবর্তিত হওয়া শুরু করে। তারা পরিবর্তিত হয়, উঠা-নামা করে এবং নতুন লক্ষণেরও উদ্ভব হয় কিন্তু অনেক-সময় পরিশেষে আলাদা কোন তাৎপর্য বহন না করে, রোগীর বিশেষ কোন দুর্ভোগ ছাড়াই লক্ষণগুলো তাদের মূল চিত্রটাতে ফিরে যায় এবং রোগী একটি অবলাবস্থায় পতিত হয়। রোগী বলে, “আমার (নতুন) কোন লক্ষণ নেই, কিন্তু আমার উন্নতিও হতে পারছে না। আমি মনে হয় একটা জায়গায় আটকে গেছি।” (আসলে) এটা সে তার নিজের সম্বন্ধেই বলে- তার লক্ষণগুলোর ব্যাপারে নয়। সে নিজেই একটি অচলাব্স্থায় পতিত হয়েছে।
সেখানে চিকিৎসকটির একটি লম্বা সময় অপেক্ষা করাই কর্তব্য। কিন্তু বহু মাস বাদেও যদি নতুন কোন লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ না ঘটে, তাহলে আগের ঔষধটিই একবার পুনঃপ্রয়োগ হয়তো পূর্ণ আরোগ্যে সহযোগীতা করতে পারে। একটি নতুন ঔষধ প্রদানের বিলাসিতাটা করা যাবে না, কারণ এখানে সে ব্যাপারে কোন নির্দেশনা নেই। বরং একই ঔষধের আরেকটি মাত্রা রোগীকে উন্নতির দিকে অগ্রগতি সৃষ্টি করার কারণ হতে পারে। তবে এটা নিয়ে কোন তারাহুড়ো করা উচিৎ নয়।
*ঔষধের শক্তির পরিবর্তন:
১. ঔষধের শক্তির পরিবর্তন তখনই নির্দেশিত হয়, যখন রোগী ঔষধের কাজকে ব্যাহত করার মতো কিছু না করা সত্ত্বেও – হয় পূর্বের প্রয়োগকৃত মাত্রাটির ক্রিয়ায় অপর্যাপ্ত উপশম হয় অথবা তার ইতিবাচক ক্রিয়াটি দ্রুত স্থগিত হয়ে যাবার দরুন তা পর্যাপ্ত সন্তোষজনক নয়,
২. আবার যখন (সেই শক্তি থেকে) আর কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া সম্ভব নয়, তখনও এর শরণাপন্ন হতে হয়। অন্যভাবে বলা যায়, শক্তিটি যখন তার কার্যকারীতায় নিঃশেষ হয়ে যায় এবং আর কোন অগ্রগতি অর্জন করতে অক্ষম হয়- তখনও তা পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়।
এটা অবশ্যই লক্ষণীয় যে, রবার্ট কর্তৃক সমর্থিত এই রক্ষণশীল মতের সাথে সব প্রেসক্রাইবার একমত নন। যেহেতু, ডা. কেন্ট একই শক্তি দুইবারের বেশি পুনঃপ্রয়োগ না করার ব্যাপারে মতামত প্রদান করেছেন।
হানিম্যান তার শেষের বছরগুলোতে একই মাত্রা পুনঃরায় প্রয়োগ না করে পরবর্তী মাত্রাগুলোকে সামান্য পরিবর্তন করে প্রয়োগের ধারণার উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন এবং এর অনুকূল ফলাফলগুলো লিপিবদ্ধ করেন। তথাপি এই পদ্ধতিটি সাধারণভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে, এর পক্ষে বা বিপক্ষে আরো অধিক কোন সুনির্দিষ্ট মতামত প্রকাশে সমর্থ হয়নি।
খ. ক্রিয়ানাশক:
ইঙ্গিত: নতুন লক্ষণের উদ্ভব (যা পুরোনো-Old) কোন লক্ষণও নয়, প্রয়োগকৃত ঔষধের লক্ষণও নয়)
প্রথম ব্যবস্থাপত্র প্রদানের পর প্রচুর পরিমাণ নতুন লক্ষণের উদ্ভব-সম্ভব হলে, অবশ্যই ঔষধটির ক্রিয়ানাশ করতে হবে বলে অর্থজ্ঞাপন করে। আগের লক্ষণ ফিরে আসেনি কিন্তু তার বদলে নতুন লক্ষণের আবির্ভাব হয়েছে। রোগী বলে, “বেশ, ডাক্তার সাহেব- আপনি আমার অমুক অমুক লক্ষণগুলোকে সারিয়ে দিয়েছেন কিন্তু এখন এই সমস্যাগুলো জ্বালাচ্ছে।”
এই পরিস্থিতিতে নতুন লক্ষণগুলো প্রয়োগকৃত ঔষধটির নিজের লক্ষণ-বৈশিষ্ট্যের অন্তর্গত কিনা তা খুব সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করা উচিৎ। এমন হতে পারে যে, ঐ লক্ষণগুলো প্রয়োগকৃত ঔষধটিরই লক্ষণ এবং সেক্ষেত্রে এটি একটি প্রুভিংয়ের মতো দেখাবে। অধিকন্তু রোগীর মধ্যে আগে কখনো এই লক্ষণগুলো ছিলো কিনা- সে ব্যাপারে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে। যতক্ষণ এগুলো সত্যিই নতুন লক্ষণ বলে প্রতীয়মান না হচ্ছে, সে পর্যন্ত সে (রোগী) কোন ভুল করছেন কিনা তা বার বার সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ।
আর সেরকমটাই হলে, ঔষধটি ঠিকঠাক কাজ করেনি। এটা (ঔষধটি) কেইসটির সদৃশ (Homeopathic) ছিলো না-ছিলো একটি দুর্ভাগ্যজনক ব্যবস্থাপত্র, কারণ এটি (ঔষধটি) অন্য একগুচ্ছ লক্ষণের উদ্ভব করে রোগটিকে ভিন্ন একটি পথে এগিয়ে যাবার কারণ হয়েছে। সম্ভব হলে, এখানে ঔষধটিকে আমাদের অবশ্যই এন্টিডোট করতে হবে।
নতুন লক্ষণগুলোকে পুরোনো লক্ষণগুলোর সাথে মিলিয়ে আমাদের পুনরায় পর্যালোচনা করতে হবে এবং দ্বিতীয় ঔষধটিকে অবশ্যই পুরোনো লক্ষণের চাইতে নতুন লক্ষণগুলোর সাথে বিশেষভাবে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।
গ. ঔষধের পরিবর্তন:
ইঙ্গিতসমূহ:
১. ঔষধ প্রয়োগ করার পর, যেখানে লক্ষণীয় রকমের একগুচ্ছ নতুন লক্ষণ শরীরের কোথাও উদ্ভূত হয়, যেগুলোর সাথে রোগী এমনভাবে সম্পর্কিত যে- তা লক্ষণসমূহের ভিত্তিকে, রোগীর মাঝে আগে কখনো ছিলো না এরকম একটা সম্পূর্ণ পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায়; এই নতুন লক্ষণগুচ্ছ বোঝায় যে, অবশ্যই একটি নতুন ঔষধের কথা ভাবতে হবে। এই ধরণের পরিস্থিতিতে, ঔষধ পরিবর্তনটাই হবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র।
২. রোগীর উন্নতি না হয়ে, যদি লক্ষণসমূহের পরিবর্তন ঘটে- ঔষধ পরিবর্তন করুন। কিন্তু যদি রোগীর উন্নতি ঘটে থাকে, লক্ষণের পরিবর্তন হলেও- যতক্ষণ রোগীর উন্নতি হবে ঔষধটা চালিয়ে যান। রোগীর উন্নতি হতে থাকলে, লক্ষণসমূহের পরিবর্তন ঘটে থাকলেও- যতদিন পর্যন্ত আরোগ্যকারী ক্রিয়া পাওয়া যেতে পারে, ততদিন ভুলেও সে ব্যাপারে নাক গলাবেন না। যেখানেই দ্বিধা থাকবে- অপেক্ষা করবেন। শক্তিগুলো ক্রমহারে প্রয়োগ করার পর, একমাত্রা বা কয়েকমাত্রা উচ্চতর শক্তিতে কোন ফলপ্রাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োগ ও পরীক্ষা না করে, কখনোই ঔষধ ত্যাগ না করাটা- একটি নিয়ম। ঔষধটা এই রোগীর জন্য যেটুকু কল্যাণ করতে পারতো তার সবটুকু করা হয়েছে কিনা তা জানার এটাই একমাত্র উপায় এবং তা সম্পন্ন হলে- পরিবর্তনটা প্রয়োজনীয়।
ঘ. সম্পূরক:
মাঝে মাঝে আগের (ঔষধের) কাজকে সম্পূর্ণ করতে একটি দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদানের প্রয়োজন হয় এবং সর্বক্ষেত্রেই তা হয়- ঔষধের একটি পরিবর্তন। সাধারণত এটা সেই কেইসগুলো, যেখানে প্রথম ঔষধটা একটি একিউট ঔষধ ছিলো এবং আরোগ্য সম্পন্ন করার জন্য ধাতুগত ঔষধটি দিয়ে তাকে সম্পূরণ করতে হয়।
উদাহারণ- ধরা যাক, চার বা পাঁচ বছর বয়সের একটি ছোট বাচ্চা, যার মাথাটা বড়, বুদ্ধিমান, যার বার বার ঠাণ্ডা লাগে এবং প্রতিবার ঠাণ্ডাটা মুখের আরক্তিমতার সাথে মাথায় বসে যায় এবং ক্যারোটিডগুলো স্পন্দিত হয় ইত্যাদি। বেলেডোনা দেয়া হলো এবং এটা উপশম করলো, কিন্তু এটা একটি ধাতুগত ঔষধ হিসাবে কাজ করবে না। তার মাথাব্যথাটা নিয়েই সে চলতে থাকলো- যা তার সোরিক ধাতুপ্রকৃতির জন্য হচ্ছে এবং একটা সময় আসবে যখন বেলেডোনা আর তাকে উপশম দেবে না। কিন্তু কেইসটির একটি পরিপূর্ণ পর্যালোচনা করে দেখা গেলো যে, যখন তার তরুন লক্ষণগুলো না থাকে, যখন তার ঠাণ্ডা ও জ্বরটা না থাকে, তার যখন মাথাব্যথা না থাকে- একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ঔষধ নির্দেশিত হয়। তার পেশীগুলো থলথলে, গ্ল্যান্ডগুলোর বিবৃদ্ধি বর্তমান। আবহাওয়ার প্রতিটি পরিবর্তনেই তার ঠাণ্ডা লাগে এবং ডিম অত্যন্ত পছন্দ করে। ঐ সমস্ত লক্ষণগুলো সিদ্ধান্ত দেয় যে, কেইসটিতে ক্যালকেরিয়া প্রয়োজন। বাস্তবতা হচ্ছে, বেলেডোনা খুব ঘনিষ্ঠভাবে তার সাথে সম্বন্ধযুক্ত এবং বড়জোর এটা উপশমদানকারী হিসাবে কাজ করে। প্রথম অথবা দ্বিতীয় তরুণ আক্রমণের চাইতে বেশি সময় এর দ্বারা চিকিৎসা করাটা সময়ের অপচয়। ক্যালকেরিয়া (তরুণ) আক্রমণের সময়টাতে দেয়া উচিৎ নয়, কিন্তু তরুণ প্রকাশটা বেলেডোনার দ্বারা অতিক্রান্ত হলে- বেলেডোনার সম্পূরক ধাতুগত ঔষধ ক্যালকেরিয়া স্থায়ী আরোগ্যের লক্ষ্যে দিতে হবে।
ঙ. সম্পর্কিত (Cognates):
যে ঔষধগুলো একটা আরেকটার সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্বন্ধিত তারা সম্পর্কিত ঔষধ হিসাবে পরিচিত। এই ঔষধগুলো একটার সাথে অন্যটা এত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধযুক্ত যে- একটি ঔষধ সবসময়ই তার সম্পর্কিত অন্য আরেকটি ঔষধকে ইঙ্গিত করে।
১. সিপিয়া ধাতুযুক্ত রোগীর একটি বিলিয়াস ফিভারে নাক্সের প্রয়োজন পড়ার সম্ভাবনা থাকে এবং বিলিয়াস বা অবিরাম জ্বরটি উপশম হবার সাথে সাথে তখুনি সিপিয়ার লক্ষণ প্রকাশিত হওয়াটা- নাক্স এবং সিপিয়ার সম্পূরক সম্পর্কটাকে প্রদর্শন করে। যদি রোগী কিছুদিন সিপিয়ার প্রভাবে আবিষ্ট থাকে এবং কোন তরুণ প্রদাহসংক্রান্ত আক্রমণের শিকার হয়, নাক্স বা তার অন্য কোন সম্পর্কিত ঔষধের দিকে যাবার অত্যন্ত সম্ভাবনা থাকে।
২. ধরা যাক, প্রথম প্রেসক্রিপশনটি সালফার; সম্পর্কিত যে ঔষধটি পরবর্তীতে আসতে পারে তা ক্যালকেরিয়া কার্ব- যা আবার লাইকোপোডিয়ামের দ্বারা অনুসৃত হতে পারে। এই সম্বন্ধযুক্ত সম্পর্কগুলো আমাদের স্মরণে রাখা উচিৎ।
কিন্তু এটা দিয়ে তা (প্রয়োগ) অবশ্যম্ভাবী বলে বোঝায় না- যেহেতু আমরা জানি যে, হোমিওপ্যাথিক ব্যবস্থাপত্র লক্ষণসমগ্রের উপর নির্ভর করে। কাজেই আগের ঔষধের কাজ নিঃশেষিত হলে কিংবা প্রথম ঔষধের পর যদি আবার ঔষধ পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে, তা প্রাপ্ত লক্ষণসমগ্রের ভিত্তিতে বিচার করতে হবে। সদৃশতম ঔষধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথির এই মূলনীতি আমাদের বিস্মৃত হওয়া উচিৎ নয়।
চ. চিকিৎসা–পরিকল্পনার পরিবর্তন:
ক্রনিক রোগগুলোর এন্টিমায়াজমেটিক চিকিৎসাকালীন সময়ে এটা প্রযোজ্য। যখন কোন রোগীকে একটি বিশেষ মায়াজমের জন্য তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এন্টিমায়াজমেটিক ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়, সেখানে প্রায়শই দেখা যায় যে পূর্বের চিকিৎসাকৃত মায়াজমের অন্তর্ধানের সাথে সাথে অন্য আরেকটি মায়াজমের লক্ষণগুলো প্রকটাকারে বেরিয়ে আসে। এপ্রকার কেইসগুলোতে চিকিৎসা-পরিকল্পনা পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে এবং রোগীর বর্তমান লক্ষণাবলী অনুসারে একটি নতুন ঔষধ প্রেসক্রাইব করার প্রয়োজন হয়।
উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক, কেইসটি সোরিক; কেইসের সমস্ত লক্ষণ এবং এর ইতিহাস সোরাকে ইঙ্গিত করে। চিকিৎসাটা সেইসব ঔষধগুলো দিয়ে করতে হবে যারা এন্টিসোরিক হিসাবে সুপরিচিত। প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পরে সোরিক লক্ষণগুলো চলে গেলো, যেখানে অন্য আরেকটি মায়াজমের লক্ষণাবলী প্রকটিত হলো। লক্ষণগুচ্ছটির বিশ্লেষণ ইঙ্গিত করে যে, তারা হয় সিফিলিটিক নয়তো সাইকোটিক মায়াজমের। তাহলে এটা একটি দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রকে নির্দেশ করে। চিকিৎসককে বিষয়টির সম্পূর্ণ নতুন একটি অবস্থার সাথে ঔষধগুলোকে সমন্বয় করতে হবে। যে রোগীগণ এন্টিসোরিক চিকিৎসা নিচ্ছিলো, সুস্পষ্ট লক্ষণগুলোর ভিত্তিতে এন্টিসিফিলিটিক বা এন্টিসাইকোটিক চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। এভাবে দুটো মায়াজমেটিক অবস্থা একটার সাথে আরেকটা পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত হলে চিকিৎসা-পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হবে। যখন একটি (মায়াজম) সর্বোচ্চরূপে প্রকট থাকে, অপরটি থাকে নিশ্চুপ- কাজেই রোগীর অবস্থানুসারে চিকিৎসা পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হয়।
* অন্তর্বর্তীকালীন (Intercurrent) ঔষধ:
মাঝে মাঝে ক্রনিক কেইসের চিকিৎসায় আমরা দেখতে পাই যে, সুনির্বাচিত ধাতুগত ঔষধের ক্রিয়া রূদ্ধ হয় এবং রোগী আর উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে ব্যর্থ হয়। এ পরিস্থিতিতে, লক্ষণাবলী এবং ঘটনাটির পরিবেশ-পরিস্থিতির একটি বিশদ পর্যালোচনা আমাদের করা উচিৎ। মায়াজমেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা হলে কোন প্রকারের মায়াজম এই রূদ্ধতার জন্য দায়ী তা নির্দেশ করবে এবং একটি যথোপযুক্ত এন্টি মায়াজমেটিক ঔষধ তাকে দূর করতে ও ধাতুগত ঔষধের ক্রিয়া পুনরূদ্ধারে সহযোগীতা করবে। কখনো কখনো, টিউবারকুলোসিসের পারিবারিক ইতিহাসযুক্ত ক্ষেত্রে কয়েকমাত্রা টিউবারকুলিনাম উপকারী হিসাবে প্রমাণিত হতে পারে।
কেইসের এবং লক্ষণাবলীর ধারাবাহিকতার একটি সতর্ক ও দীর্ঘ পর্যালোচনা ব্যতিরেকে কোন রোগীর জন্য কোন ব্যবস্থাপত্র দেয়া যেতে পারে না। এটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আর তা হলেই কেবল আমরা অন্য আরেকটি ঔষধ প্রত্যয় ও বুদ্ধিমত্তার সাথে প্রয়োগ করতে পারি।
Discussion about this post