[পৃথিবীখ্যাত হোমিওপ্যাথদের একজন, যাকে হোমিওপ্যাথির সর্বকালের সবচেয়ে ভালো শিক্ষক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ‘হোমিওপ্যাথিক শিক্ষার পুনরূদ্ধার ও হোমিওপ্যাথদের সর্বোচ্চ মানের প্রশিক্ষণপ্রদানের অবদানের জন্য’ ১৯৯৬ সালে তিনি ‘Right Livelihood Award’ (‘বিকল্প নোবেল পুরস্কার’ নামে খ্যাত) সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৯৫ সালে তিনি গ্রিসের এলোনিসসে ‘International Academy of Classical Homeopathy’ প্রতিষ্ঠা করেন– যেখানে তিনি ‘Educational Department’ এর প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান সময়ে এই করোনা সংক্রমণে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের নির্বাচন ও প্রয়োগের ব্যাপারে যে মূল্যবান প্রস্তাবনা প্রদান করেন, নিচে আমি তার অনুবাদটি তুলে ধরছি…… ]
হোমিওপ্যাথি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যতার উপর ভিত্তি করে ঔষধপ্রদানের বৈশিষ্ট্য সম্বলিত একটি চিকিৎসা-পদ্ধতি এবং সে অনুযায়ী, এতে কোন নির্দিষ্ট প্যাথলজির সমস্ত কেইসকেই একটি ঔষধের মাধ্যমে আরোগ্য করতে পারার কোন সম্ভাবনাই নেই। (Dr. Aditya Kasariyans ও Dr. Rajan Sankaran এর) যে রচনাটি সর্বত্র প্রচারিত হচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে একটি ঔষধের দ্বারাই সমস্ত কেইস আরোগ্য হয়েছে!!! আসলে কি ঘটেছে?
এটি সর্বজনবিদিত যে, করোনা ভাইরাস ৯৭% কেইসে নিজে নিজেই আরোগ্য হচ্ছে, কাজেই যে কোন ঔষধ বা ভুল ঔষধ বা প্লাসিবোর দ্বারা এই কেইসগুলোতে উল্লিখিত একই প্রকারের সফলতা পাওয়া যাবে। এ ব্যাপারটিকেও অবশ্যই খেয়াল করতে হবে যে, সঠিক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ এই কেইসগুলোর তুলনায় ব্যাপকতর ভিন্ন-প্রকারের প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করবে: সেটি হবে তাৎক্ষণিক আরোগ্য- যেরকমটা এই কেইসগুলোতে বর্ণনা করা হয়েছে, তেমন বিলম্বিত আরোগ্য নয়।
আমরা যদি এই ব্যাপারটিতে যথাযথ গুরুত্ব দিতে চাই, ইউরোপের কোন একটা হাসপাতালে আমাদের একটি মহামারী-সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনা করতে চাওয়া উচিৎ, যেখানে দুইটি ভিন্ন গ্রুপে এলোমেলোভাবে বাছাই করা রোগীদের সুনির্দিষ্টভাবে বিন্যস্ত করা যেতে পারে, যার একটি দল প্রচলিত ধারার চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট হবে এবং অন্য দলটিতে (প্রতিটি রোগীকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যতার ভিত্তিতে চিকিৎসা করে) হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করা হবে এবং নমুনাস্বরূপ প্রতিটি গ্রুপ থেকে অন্তত ২০০ কেইসের ফলাফল বিচার করে এবং হোমিওপ্যাথিতে সার্বিক উন্নতি, টিকে থাকার ফলাফলটি অধিক শ্রেষ্ঠ কিনা এবং সেটি কি মাত্রায় বর্তমান- তা অনুসন্ধান করতে হবে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা এপিডেমিকে হোমিওপ্যাথির শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করে করা- অন্য আর সকল প্রকারের চিৎকার-চেঁচামেচি হচ্ছে দায়িত্বজ্ঞানশূণ্যতার প্রমাণ, যা আমাদেরকে সুযোগসন্ধানী বলে অভিযুক্ত করাবে।
মহামারীর যে সুনির্দিষ্ট ঔষধটি (The genus epidemicus) পাবার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সকল মহামারীতেই তা নির্দিষ্ট করা সম্ভব হবে না- এমনকি যে কেইসগুলোতে সেটি ধারণা করা যাবে, সেখানেও এটা বোঝাবে না যে, এই নির্দিষ্ট ঔষধের মাধ্যমে সকল কেইসই প্রভাবিত হবে।
একজন প্র্যাকটিশনার পর্যাপ্ত সংখ্যার কিছু কেইসকে চিকিৎসা করার পর, তার চিকিৎসার ফলাফলটিকে মূল্যায়ন করার পর এবং বলা চলে, ঔষধগুলো সেখানে সত্যিকারেই ঠিকঠাক কাজ করেছে বলে পর্যবেক্ষণ করার পরই- কেবল সুনির্দিষ্ট ঔষধ সম্বন্ধে নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে। তিনি যদি দেখেন যে, একটি ঔষধ- একটি ব্যাপক মাত্রায় সফল কেইসগুলোতে ব্যবহৃত হয়েছে, তাহলেই কেবল তিনি বলতে পারেন যে, হয়তো এটিই এই মহামারীর নির্দিষ্ট ঔষধ। আমাদের সমসাময়িক সমাজগুলোর স্বাস্থ্যাবস্থার স্তর হিসেবে (Level of health), এ প্রকারের একই লক্ষণাবলীর বিকাশ হওয়া কেইসগুলো পাওয়া বর্তমানে অসম্ভব।
আমি আগাম দেখতে পাচ্ছি, প্রত্যেকেই যদি অমোঘ ঔষধগুলো পাবার চেষ্টা করতে থাকে, তাহলে বোধহয় সবাই ভিন্ন ভিন্ন ঔষধ পেতে থাকবে। এতে হয়তো, পাঁচটি কেইসের চিকিৎসা করার পর ও দু’জন রোগীকে একই ঔষধ প্রদান করা হয়েছে বলে দেখতে পাবার পর- তিনি এটিকে নির্দিষ্ট ঔষধ বলে দাবী করবে। যেখানে প্রত্যেকেই এভাবে একটি করে ঔষধের প্রস্তাবনা পেশ করবে, সেখানে যে চরম হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত হবে, সেটা যে কেউ কল্পনা করতে পারে।
আমাদের যে উপসংহারে পৌঁছতেই হবে, তা হচ্ছে- জনসাধারণকে কোন নির্দেশনা দেবার আগে, গুরুত্বের সাথে করা একটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া প্রয়োজন; কল্পনার উপর ভিত্তি করে, অমোঘ ঔষধটির সন্ধান পাওয়া গেছে বলে দাবী করাটা- যে কারো জন্যই হাস্যকর।
এই ব্যাপারগুলো ছাড়াও, যদি কেউ রচনাটিতে থাকা তথ্যগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করেন, বিভিন্ন ঔষধ নির্দেশিত হচ্ছে বলে দেখতে পাবেন, কিন্তু আমরা যেমনটা শুরুতে বলেছি, আপনি যে ঔষধটিই প্রেসক্রাইব করুন না কেন, কোন না কোন প্রতিক্রিয়া রোগীতে দেখাচ্ছে বলে মনে হবে।
কিন্তু ইন্ফ্লুয়েঞ্জার মতো কেইসগুলোতে যখন সঠিক ঔষধ প্রেসক্রাইব করা হবে, ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সাথে সাথেই অনুভব করা যাবে।
সেক্ষেত্রে সতর্কতাস্বরূপ একটি কথা বলা জরুরী: এইসব পরিস্থিতিগুলোতে উপরোল্লেখিত পরীক্ষার দ্বারা পাওয়া গেছে বলে প্রমাণ পাবার আগে, হোমিওপ্যাথিক ঔষধটির ক্রিয়াতেই রোগী আরোগ্য হয়েছে বলে আমরা দাবী করতে পারি না।
Prof. George Vithoulkas
15.03.2020
INTERNATIONAL ACADEMY OF CLASSICAL HOMEOPATHY
Discussion about this post