ডা. শাহীন মাহমুদ:
ইতোমধ্যে আমাকে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী কভিড-১৯ এর ঔষধ সম্বন্ধে লিখতে অনুরোধ করেছেন। হ্যা, ঔষধ সম্বন্ধে তো আমাদের জানতেই হবে- এটা আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। কিন্তু সবসময়ই মনে রাখতে হবে, অস্ত্র নয়- অস্ত্রের পেছনের মানুষটিই কিন্তু যুদ্ধ করে। কাজেই ঔষধ জানার আগে, তার প্রস্তুতিটা যথাযথ হওয়া চাই। আমরা ধারাবাহিকভাবে এই সংক্রমণে করণীয় ও প্রস্তুতি সম্বন্ধে বেশ কিছু আর্টিকেল প্রকাশ করেছি। এর সম্বন্ধে তথ্য, মহামারীর চিকিৎসাপদ্ধতি, এর রেপার্টরিয়াল পরিচিতি ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রকাশ করেছি। স্বাভাবিকভাবেই এবার মনোযোগ দিতে হবে, ঔষধের দিকে।
বর্তমান কভিড-১৯ একটি মারাত্মক সংক্রমণ এবং বিশ্বজুড়ে এর আরোগ্যের জন্য সম্ভাব্য ঔষধগুলো নিয়ে বেশ চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বেশি কিছু চিকিৎসক ইতোমধ্যে কিছু রোগীকে চিকিৎসা করার সুযোগ পেয়েছেন এবং বিভিন্ন গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের দ্বারা আমরা এখন এর প্যাথজেনেসিস, লক্ষণাবলী, জটিলতা ইত্যাদি সম্বন্ধেও কিছুটা ধারণা লাভ করতে পেরেছি। এগুলোর উপর ভিত্তি করে আমি কিছু সংখ্যক সম্ভাব্য ঔষধের চিত্র বর্ণনা করতে চেষ্টা করবো- যেগুলোর সাথে কভিড-১৯ এর চিত্রের সাদৃশ্য দৃষ্ট হয়। তবে তার আগে আমাদের জেনে নেয়া প্রয়োজন, কভিড-১৯ এর সম্ভাব্য ঔষধ বিবেচনা করতে গেলে আমাদের কি কি বিষয়কে মাথায় রাখতে হবে, কি কি ক্রাইটেরিয়া বিবেচনা করতে হবে। একারণে প্রথমেই ঔষধ বর্ণনার আগে, আমি দু’জন প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথ ডা. মনীষ ভাটিয়া ও ডা. অজিত কুলকার্নি সাম্প্রতিক যে ক্রাইটেরিয়াগুলো বর্ণনা করেছেন তা উল্লেখ করে নিচ্ছি।
ডা. মনীষ ভাটিয়া কভিড-১৯ এর ঔষধ বাছাই করার জন্য কোন রুব্রিক বা লক্ষণের কোন বৈশিষ্ট্যগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে খুঁজতে হবে, সে সম্বন্ধে তার নিজের একটি বিশ্লেষণ ও কিছু ক্রাইটেরিয়া প্রদান করেছেন। তার মতে-
১. আদর্শ ঔষধটিতে অবশ্যই শুকনো কাশির সাথে জ্বরটি থাকতে হবে। কিন্তু কেবল শুকনো কাশি থাকলেই হবে না বা এলার্জিক শুকনো কাশি হলে হবে না, সেই কাশিটির চলমান থাকার প্রবণতাও থাকতে হবে।
২. কভিড-১৯ এর রোগীদের নাক দিয়ে স্রাবের প্রবণতা কম- হয় একদমই হয় না, অথবা খুব অল্প হয়। কাজেই সচরাচর নাক দিয়ে স্রাবযুক্ত সর্দির চিত্র ও সে অনুযায়ী ঔষধকে বিবেচনা করলে চলবে না।
৩. সিটি স্ক্যান ফাইন্ডিংসে দেখা গেছে, কভিড-১৯ তে ফুসফুসের নিচের লোব আক্রান্ত হয়। বেশিরভাগ ক্ষয়ক্ষতিই ঘটে ফুসফুসের প্রান্তিক এলাকায়, প্লুরার কাছাকাছি। সাথে ডান ফুসফুসে আক্রমণের প্রবণতা বেশি দেখতে পাওয়া যায়, বা শুরুতে ডানদিক আক্রমণ করে তারপর বাম দিকে ছড়ায় এবং প্লুরো-নিউমোনিয়া সৃষ্টি করে। এতে আরো দেখা যায়- কভিড-১৯ এ ফুসফুসে ক্যাভিটেশন ও রক্তস্রাব প্রবণতা অতটা থাকে না। কাজেই, যে ঔষধগুলো এই পর্যায়ের প্যাথলজি সৃষ্টি করে- তাদের প্রয়োজন হবার সম্ভাবনা কম।
এবং ডা. অজিত কুলকার্নি যে ক্রাইটেরিয়াগুলো প্রদান করেন এবং যে ব্যাপারগুলো ঔষধটিতে থাকতেই হবে বলে মতামত প্রকাশ করেন-
১. শ্বাসযন্ত্রে এর আক্রমণ প্রবণতা থাকতে হবে, এবং সেটি আপার ও লোয়ার ট্র্যাকে উভয়স্থানেই, তবে বিশেষ করে ফুসফুসে।
২. নিউমোনিয়া ও তার সংগঠনপ্রক্রিয়াজনিত ঘটনাগুলোর সাথে সাদৃশ্য থাকতে হবে।
৩. তাকে ধ্বংসাত্মক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য-সম্পন্ন হতে হবে।
৪. রক্তবিষাক্ততা বা সেপসিসের পর্যায়ে পৌঁছানোর মতো সক্ষমতা থাকতে হবে।
৫. সার্বিক চিত্র কভিড-১৯ এর সামগ্রিকতাকে প্রদর্শন করার সক্ষমতা থাকতে হবে।
৬. রোগের প্রারম্ভ ও গতির সাথে এর সমন্বয় থাকতে হবে।
৭. তিনিও ডান ফুসফুসে আক্রমণ করে, তারপর বাম দিকে ছড়ানোর প্রবণতাটিকে বিবেচনা করেন।
৮. তিনি মনে করেন, এই সংক্রমণের বিবেচনার সময় ‘আবহাওয়া’ (শীত, দিন, রাত্রি ইত্যাদি) বিবেচনা করা অতটা গুরুত্বপূর্ণ না।
আমি অল্প কথায় এই বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করে নিলাম- যাতে পাঠকদের ঔষধটির সাথে কভিড-১৯ এ প্রযোজ্যতার মাত্রা নির্ণয় করতে কিছুটা সুবিধা হয়। আজ আমি অল্প কয়েকটি ঔষধ বর্ণনা করছি। ক্রমান্বয়ে আরো ঔষধ বর্ণনা করা হবে। তবে যে লক্ষণগুলো কভিড-১৯ এর কোন না কোন কনফার্মড কেইসে দেখা গেছে, সেগুলো আমি বোল্ড করে দিয়েছি এবং বহুজনের সুবিধা হতে পারে ভেবে বেশ কিছু লক্ষণের রেপার্টরিয়াল রিপ্রেজেন্টেশনকে পাশে ব্রাকেটে দিয়ে দিয়েছি:
আর্সেনিকাম এল্বাম (ARSENICUM ALBUM):
রোগী মানসিকভাবে ব্যাপক অস্থির থাকবে। রোগ নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়বে (Anxiety:Health, about:) এবং খুব শিঘ্রী মারা যাচ্ছে বলে প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে (Delusions, imaginations:Die:Time has come to:)। রোগ ও সংক্রমণ নিয়ে রোগীর মাঝে প্রচণ্ড উদ্বেগ কাজ করে (Fear:Disease, of:Impending:Contagious, epidemic, infection:) এবং স্বভাবগতভাবেই রোগীর মাঝে বার বার হাত ধোয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায় (Washing:Always:Hands, her:)। রোগী প্রচণ্ড শীতকাতর। তবে মাঝে মাঝে তার শীতকাতরতার সাথে গরমভাবও পর্যাবৃত্তিক ভাবে দেখা দিতে পারে। একিউট অবস্থায় অধিকাংশ সময়ই রোগীর প্রচুর পানির পিপাসা থাবে। বিশেষ করে শুকনো গলা ভেজানোর জন্য অল্প অল্প করে বার বার পানি পান করার (Thirst:Small quantities, for:Often:) প্রবণতা থাকবে (কভিড-১৯) এর একটি বৈশিষ্ট্য। ভয়ানক দুর্বলতা। তারপরও কোথাও স্থির থাকতে পারে না। এমনকি সামান্য নড়াচড়া করাটাও তার কাছে ব্যাপক কষ্টকর। রোগী এসময় ভীড় পছন্দ করে না, মানুষের ভীড়ে তার রোগের বৃদ্ধি ঘটে(Room:Agg.:People, full of:)। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ রুব্রিক হচ্ছে [Nose]CORYZA: Extending to: Chest – যা COVID-19 (Corona Virus) infection এর একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। রোগীর মাথাব্যথা, ও তার সাথে চোখ ব্যথা থাকে। এটি একই সাথে যেমন একিউটের উপর ব্যাপক ক্রিয়া প্রদর্শন করতে পারে- তেমনি এটি গভীর পলিক্রেস্ট ঔষধ। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায়, অতীতে বহুবার আমি ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাথমিক অবস্থায় যখন অস্থিরতার সাথে প্রচন্ড দুর্বলতা থাকে ও নাক দিয়ে কাঁচা পানির মতো জ্বালাকর স্রাব হতে থাকে কিন্তু একোনাইটের স্টেইজ থাকে না- আর্সেনিকাম প্রয়োগে ব্যর্থ হতে হয়েছে বলে মনে পড়ে না। সেই সাথে নাক, গলায়ও জ্বালাপোড়া থাকে। নাক বন্ধ থাকে। ঠান্ডায় পানি পানে, ঠান্ডা-বাতাসে, ভেজা আবহাওয়ায় বৃদ্ধি হয়। কিন্তু অন্যদিকে আবার মানুষের প্রতিটি অর্গান ও টিস্যুর উপরও এর কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে। একারণে, রোগীর অকাধিক অর্গান ফেইলিউরের সময়ও এটি ক্রিয়া প্রদর্শন করার সক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ একদম শুরুর স্টেইজ থেকে শেষাবস্থা পর্যন্ত রোগীর মাঝে এর সদৃশ লক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
শ্বাসকষ্ট, রোগী শুয়ে থাকতে পারে না ([Respiration]Difficult: Lying, while:Agg.:)। উঠে বসতেই হয়। কোন কিছুর গন্ধে, হাসলে, উপরে বেয়ে উঠলে, বিছানায় পাশ ফিরলে বৃদ্ধি পায় ([Respiration]Difficult:Turning:Bed, in:)। কফি খেলে কমে। ঠান্ডা পানি খেলে বা গ্রীষ্মকালের মাঝামাঝিও রোগলক্ষণ বাড়ে। শুকনো কাশির সাথে ভেজা কাশির পর্যাবৃত্তি দেখা দিতে পারে। রাত্রে শুকনো কাশির দরুন উঠে বসতে হয়, পানি খেলে বাড়ে। ফুসফুসে পানিসঞ্চয় ([Chest]Edema, pulmonary:)। বুকে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি। কাশির সাথে রক্তমিশ্রিত শ্লেষ্মা। ফুসফুসের পচনপ্রবণতা ([Chest]Abscess:Lungs:)। ডান ফুসফুসের উপরের একতৃতীয়াংশ অঞ্চলে বিদ্ধকর ব্যথা। বুকে হলদেটে ছোপ দেখা যেতে পারে। নিউমোনিয়ার স্টেইজে গেলে রোগীর মধ্যে কোলাপ্স দেখা দেবার মাত্রা পর্যন্ত যেতে পারে। জীবনীশক্তি তখন সম্পূর্ণ নিঃশেষিত হয়ে যায়।
এছাড়া এই রোগে দ্রুতবর্ধনশীল তীব্র প্রাদাহিক অবস্থা। আচমকা তীব্র প্রতিক্রিয়াযুক্ত উপসর্গ। হঠাৎ করে, দ্রুত জীবনীশক্তির ক্ষয়। আপাতদৃষ্টিতে সঠিক ঔষধ নির্বাচন করার পরও তাতে রোগীর প্রতিক্রিয়াহীনতা। ইত্যাদি ব্যাপারগুলোও আর্সেনিককে ইঙ্গিত করে। সংক্রমণের বাজে অবস্থায় রোগীর মধ্যে ঠাণ্ডা ঘাম, মাথাঘুরানো, ঘরঘরে শ্লেষ্মা এসব প্রত্যক্ষ হতে পারে।
তাত্ত্বিক ধারণা হিসাবে বলছি না, ইন্টারেস্টিং ব্যাপার বলে উল্লেখ করছি- বলা হয়, করোনা সংক্রমণটি পশু-প্রাণীর গোশত খাবার পর সংক্রামিত হয়েছে। আর্সেনিকামে কিন্তু এই গোশত সংক্রান্ত বেশ কিছু রুব্রিক রয়েছে। Generalities; food and drinks; meat; agg.; spoiled, bad। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই একই রুব্রিকের অধীনে Bell Bry Camph Carb-v Crot.h Lach Pyrog Verat ঔষধগুলোও রয়েছে- যার প্রায় সবগুলোকেই কেউ না কেউ এই সংক্রমণের সম্ভাব্য ঔষধ বলে অভিহিত করেছেন। এছাড়া Maxico তে দেখা রোগীদের বেশিরভাগেরই সংক্রমণটি হঠাৎ করে দেখা দিয়েছে এবং সেখানে Ars-alb ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। [Complete] [Generalities] Sudden manifestations: রুব্রিকটির একটা Ars-alb ঔষধ। এই রোগীর ঠিক দুপুর ১২ থেকে ১টায় ও ঠিক রাত্রি ১২ টা থেকে ১টায় বৃদ্ধি দেখা দেবার একটা প্রবণতা থাকে।
এর ক্ষেত্রে যে কি-নোটসগুলোর দিকে লক্ষ রাখা যেতে পারে-
১. জ্বালাপোড়া ব্যথা (বিশেষ করে তা উত্তাপ প্রয়োগে কমে)
২. অস্থিরতা ও উদ্বেগ (সাথে মৃত্যুভয়)
৩. নাক দিয়ে পাতলা পানির মতো জ্বালাকর স্রাব
৪. প্রচণ্ড দুর্বলতা ও অবসন্নতা
৫. দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব
৬. মধ্যদুপুরে ও মধ্যরাত্রিতে বৃদ্ধি
ফসফরাস (PHOSPHORUS):
আমার মনে হয়েছে, কভিড-১৯ এর ঔষধ সাজেশনকারীর অনেকেই ফসফরাসকে উপযুক্ত গুরুত্ব দিয়ে বর্ণনা করেননি। এর বহু বহু সংখ্যক লক্ষণের সাথে ফসফরাসের সাদৃশ্যটি লক্ষণীয়।
এই রোগে রোগীর সার্বিক শুষ্কতা, পানি পান করার ইচ্ছা। ঠাণ্ডা পানির আকাঙ্ক্ষা ও ঠান্ডা পানি পানে হ্রাস (Food and drinks:Cold:Drinks, water:Amel:)। বমি ও বমির ভাব, প্রচণ্ড দুর্বলতা, জ্বালাপোড়া প্রবণতা, ডায়রিয়া ইত্যাদি প্রকারের বহুমাত্রিক লক্ষণ কভিড-১৯ এর লক্ষণের সদৃশ।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, ফসফরাস বাম পাশে আক্রমণ প্রবণতাকারী প্রধান ঔষধগুলোর মধ্যে একটি হলেও, ফুসফুসে সে ডান ফুসফুস আগে আক্রমণ করে। কেবল তাই নয়, কভিড-১৯ এর আক্রমণের ধরণ হচ্ছে, সে ফুসফুসের পেরিফেরাল অংশটিতে আগে আক্রমণ করে এবং নিচের লোবে আগে সংক্রমণ প্রকাশ করে। ফসফরাসে আমরা রোগীর সেই অবস্থাটিই দেখতে পাবো [Chest]Inflammation:Lungs:Right:Lower lobe: । এর একই সাথে আপার ও লোয়ার উভয় রেসপিরেটরি ট্র্যাকে কাজ প্রকাশ করার ক্ষমতা আছে। ডান ফুসফুসে আক্রমণের প্রবণতা বেশি থাকলেও, এটি বাম ফুসফুসেও আক্রমণের ক্ষমতা রাখে।
বুকে চাপ ধরা অনুভূতির সাথে শ্বাসকষ্ট, সামান্য নড়াচড়ায়ও কষ্ট ([Respiration] Difficult:Motion:Agg.:)। দমবন্ধকরা আটোসাটো অনুভূতি, কাশলে সেটা বৃদ্ধি পায়। ল্যারিংস ব্যথাযুক্ত, টনটনে হয়ে থাকে- কথা বলতে গেলে ব্যথা লাগে। স্বর ভেঙ্গে যায়, নেমে যায়– সকালে ও সন্ধায় বৃদ্ধি পায়। প্রথমে গলায় ঠান্ডা লাগে– তারপর তা বুকে বসে। ব্রঙ্কাইটিস। কষ্টকর, শুকনো, তীব্র, ব্যথাযুক্ত, সুড়সুড়িযুক্ত, দুর্বলকর কাশি। কাশির সাথে বমির ভাব। কাশলে পেটে ব্যথা লাগে ([Abdomen]Pain:General:Cough, during:)। পেটে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি, এজন্য অনেক সময় পেটের উপর কাপড় রাখতে চায় না ([Abdomen]Covering:Intolerance to:)। শ্বাসনালীতে জ্বালাপোড়া, জোরে কথা বললে বা পড়লে বৃদ্ধি পায়।
আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় রোগ দেখা দেয় (Weather: Change of:Agg:)। হাসলে, পরিশ্রম করলে, গান গাইলে গলার ব্যথা বৃদ্ধি পায়। কফ ফেনাযুক্ত, ময়লা-রংয়ের, কালচে, নোনতা, মিষ্টি বা টক স্বাদযুক্ত, শ্লেষ্মা ঠান্ডা অনুভূত হয়।
বুকে পূর্ণতার অনুভূতি, ভারীভাব; বুকের ব্যথা গলায় ছড়ায়, ব্যথা পার্শ্ব পরিবর্তন করে ([Chest]Pain:General:Extending to:Throat:)। রোগীর প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা পানি ও পানীয় পানের ইচ্ছা (Food and drinks:Cold:Drinks, water:Desires:) থাকে কিন্তু তা খেলে রোগ বৃদ্ধি পায়। ঘড়ঘড়ে শ্বাসপ্রশ্বাসের বৃদ্ধি ঘটে। বুকের ভেতর শুস্কতা ও উত্তপ্ততার অনুভূতি, সাথে কাশি। প্রথমে বেশি শুকনো থাকে- পরে কিছুটা হালকা হয়। কাশির পরে শ্বাসকষ্ট ([Respiration]Difficult:Cough:With:)। বার বার রক্তযুক্ত, ফেনাময় শ্লেষ্মা নির্গমন ([Expectoration]Bloody, spitting of blood:Frothy, foaming:), যা নিউমোনিয়ার প্রধান লক্ষণের একটি।
একটি বিশেষ লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, কভিড-১৯ এর মায়াজমেটিক বৈশিষ্ট্যটি সোরার ভিত্তির উপর সিফিলিটিক প্রকৃতির দিকে ইঙ্গিত করে। এজন্য বহু হোমিওপ্যাথ এটাকে টিউবারকুলার প্রকৃতির বলে মনে করেন। ফসফরাস টিউবারকুলার মায়াজমের প্রধানতম ঔষধের মধ্যে একটি। এর বিধ্বংসী ক্ষমতা প্রচণ্ড এছাড়া হঠাৎ করে উপসর্গের প্রাদুর্ভাব ফসফরাসের প্রধানতম বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি। এছাড়া তীব্র প্রদাহ দ্রুত শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতাও এতে ব্যাপকভাবেই থাকে। ফুসফুসের সম্পূর্ণ কনসোলিডেশন ও সলিডিফিকেশন ([Chest] Inflammation: Lungs: Stages: Consolidation:) । প্লুরো–নিউমোনিয়া ([Chest]Inflammation:Lungs:Pleura pneumonia:)। নিউমোনিয়ার তৃতীয় স্টেইজ, যেখানে ফুসফুসে পনিরের মতো ডিজেনারেশন হয়, পূঁয জমে থাকে। যেখানে পর্যায়ে ব্রায়োনিয়া ও রাসটক্স আর কাজ করতে পারে না, সেখানে ফসফরাসের প্রয়োজন হবে। তার সাথে যদি কভিড-১৯ রোগীর এই অবস্থাটি ডায়াবেটিসের সাথে দেখা দেয়, তাহলে এই ঔষধটি প্রযোজ্য কিনা, তা একবার বিচার করে দেখতেই হবে ([Knerr ] [Urinary Organs]Urine:Diabetes:Mellitus, with cheesy degeneration of lungs:)। রোগীর সিস্টেম অতি-সক্রিয় থাকলেও, রোগী থাকে প্রচণ্ড দুর্বল। প্লুরিসির সাথে, ঘর্মহীন, শুকনো, তীব্র জ্বর, শেষ স্টেইজে এটি প্রয়োজন হবে। সেখানে পূঁয জমার প্রবণতা।
এর মানসিক লক্ষণের বিভিন্ন ব্যাপারে ভয়ের প্রবণতা থাকে। মানুষের সঙ্গ প্রার্থনা করে। খোলামেলা মনের আমোদপ্রিয় মানুষ। রোগীর লবণের প্রতি আকাঙ্ক্ষা থাকে। একিউট অবস্থায় রোগী বার বার স্যালাইন খেতে চাইতে পারে। কভিড-১৯ এ রোগীর নিউমোনিয়ার সাথে কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিলে এই ঔষধটির কথা বিশেষভাবে স্মরণ করতে হবে ([Knerr ] [Inner Chest and Lungs] Lungs:Congestion: Engorgement, with fatty or amyloid degeneration of kidneys:)।
যে কি-নোটসগুলোর দিকে লক্ষ রাখা যেতে পারে-
১. মিউকাস মেমব্রেন ও নার্ভের প্রদাহ
২. ঠান্ডা পানি পানের আকাঙ্ক্ষা
৩. লবণ, ফলমূল, চকোলেট খাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা
৪. রক্তপাত প্রবণতা
৫. বাম পাশে আক্রমণ প্রবণতা (কিন্তু ফুসফুসে ডান দিকে আক্রমণ)
৬. হঠাৎ করে রোগলক্ষণের প্রকাশ
৭. লোকসঙ্গ ও সান্ত্বনা প্রার্থনা
৮. যে কোন ধরণের শারীরিক ও আবেগজনিত ব্যাপারে সংবেদনশীলতা