ডা. শাহীন মাহমুদ:
বর্তমানে কভিড-১৯ একটি মারাত্মক সংক্রমণ এবং বিশ্বজুড়ে এর আরোগ্যের জন্য সম্ভাব্য ঔষধগুলো নিয়ে বেশ চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বেশকিছু চিকিৎসক ইতোমধ্যে কিছু রোগীকে চিকিৎসা করার সুযোগ পেয়েছেন এবং বিভিন্ন গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের দ্বারা আমরা এখন এর প্যাথজেনেসিস, লক্ষণাবলী, জটিলতা ইত্যাদি সম্বন্ধেও কিছুটা ধারণা লাভ করতে পেরেছি। এগুলোর উপর ভিত্তি করে আমি কিছু সংখ্যক সম্ভাব্য ঔষধের চিত্র বর্ণনা করতে চেষ্টা করবো- যেগুলোর সাথে কভিড-১৯ এর চিত্রের সাদৃশ্য দৃষ্ট হয়।
ইতোমধ্যে আমরা সম্ভাব্যে ঔষধের পাঁচ পর্বে আর্সেনিকাম এল্বাম, ফসফরাস, ব্রায়োনিয়া, জেলসিমিয়াম, লাইকোপডিয়াম, ক্যাম্ফর এন্টিম টার্ট, গ্রিনডেলিয়া স্কোয়ারোসা, ইউপোটেরিয়াম পারফোলিয়াটাম, কার্বো ভেজিট্যাবিলিস, ল্যাকেসিস মিউটাস ও সেনেগা‘র চিত্র প্রকাশ করেছি। সেই ধারাবাহিকতায় আজ শেষ পর্বে থাকছে- সালফার এবং সকল পর্বগুলো নিয়ে পর্যালোচনা।
Sulphur (সালফার)
আজকে সালফার ঔষধটা নিয়ে আলোচনা করেই এই ধারাবাহিক লেখাটার আপাতত সমাপ্তি টানতে যাচ্ছি। সর্বশেষ এই ঔষধটিকে বেছে নেবার বেশ কিছু বিশেষ কারণ আছে। ল্যাকেসিসের আলোচনা প্রসঙ্গেই উল্লেখ করেছি, আমি মনে করি, কভিড-১৯ সংক্রমণটির বাজে অবস্থা আসলে সোরিক ভিত্তির উপর গড়ে উঠা সিফিলিটিক আক্রমণের ফল। আপনারা সমগ্র বিশ্বের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে লক্ষ করবেন, এর একটি বিশাল সংখ্যক রোগী অতি মৃদু, মৃদু, মাঝারী আক্রমণের পর এমনিতেই ভালো হয়ে যায়- এমনকি কোন চিকিৎসা নেয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। তাদের লক্ষণগুলো বিশ্লেষণ করলেও এক প্রকার সোরিক বহিঃপ্রকাশের বেশি কিছু সেখানে প্রায়ক্ষেত্রেই পাওয়া যাবে না। কিন্তু রোগীর মাঝে সিফিলিটিক প্রভাবের দরুন রোগ-প্রতিরোধক্ষমতার ঘাটতি খুবই বাজে অবস্থায় গিয়ে পৌঁছায় তখনই তার ক্রিটিক্যাল অবস্থা এসে উপস্থিত হবার সম্ভাবনা তৈরি হয়। নয়তো ১০৩ বছরের বৃদ্ধাও এই সংক্রমণ কাটিয়ে উঠতে পারে (আপনারা সংবাদে যা দেখেছেন)।
কাজেই, কভিড-১৯ এর কেইসে তার লক্ষণভিত্তিক ঔষধ হিসাবেই হোক, আর তা থেকে বা তার জের থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হবার লক্ষেই হোক- আমার ধারণা, একটা সময় পর আমরা দেখতে পাবো, সালফারকে চিকিৎসার কোন না কোন পর্যায়ে প্রচুর পরিমাণে, এমনকি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতে হয়েছে।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায়, যখন জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, বা অন্য কোন সোরিক উপসর্গের শেষে তার মধ্যে তা রয়ে যাবার বা তার জের থেকে যাবার প্রবণতা লক্ষ করেছি, লক্ষণতাত্ত্বিক ঔষধে যখন সমস্যাটির সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব হচ্ছে না- বহু সময়ই এরকম ক্ষেত্রে সালফার প্রয়োগ করতে হয়েছে এবং তার আরোগ্যের গতি ও প্রকৃতি আমাকে বিস্মিত করার সাথে সাথে, মায়াজমেটিক থিউরির প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা দু’টোই বৃদ্ধি করেছে।
অনেকেই মনে করেন, আর্সেনিকাম এল্বাম, সালফার এই ঔষধগুলো রোগের শুরুতে দেয়াটা ঠিক নয়, বা জ্বরের মাঝে ব্যবহার করা ঠিক নয়। কিন্তু কথাটা এভাবে বললে, তা নিতান্তই অতি-সাধারণীকৃত (Over-generalization) করা হয়ে যায়। কোন রোগীর রোগটি কেন, কোন পর্যায়ে, কি মাত্রায় দেখা দিয়েছে –সিদ্ধান্তে আসার জন্য এই প্রশ্নগুলোর উত্তরটি নিজের মনে নিয়ে নিতে হয়। যেমন- সোরিক বেইজমেন্টের উপর দেখা দেয়া রোগীর লক্ষণ যদি এতটাই তীব্র হয়ে থাকে যে, তাকে গভীর এন্টিসোরিক দিলে সেই গভীরতা নিয়ে কাজ করে রোগীকে পুনর্জীবিত করার মতো জীবনীশক্তি রোগীর মাঝে অবশিষ্ট নেই- সেক্ষেত্রে তাকে শুরুতে উপশম প্রদান করে, ক্রমান্বয়ে কিছুটা উন্নত অবস্থানে এনে তারপর গভীর ঔষধগুলো প্রয়োগ করতে হবে। সেক্ষেত্রে শর্তটা কেবল এই দু’টা ঔষধের জন্যই প্রযোজ্য- ব্যাপারটি এরকম নয়, সেটা সব গভীর এন্টিমায়াজমেটিকের জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু রোগীর যদি সামাল দেবার মতো জীবনীশক্তি থাকে এবং ঔষধটি যদি লক্ষণসাদৃশ্যে ঠিকঠাক উপযুক্ত হয়- তাহলে কি হবে? তাহলে সেটা জ্বরই হোক, আর কভিড-১৯ ই হোক- বিস্ময়কর ফলাফল পাওয়া যাবে। অতীতে অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রে আমি যেমনটা দেখেছি।
যাই হোক, এবার ঔষধটির বর্ণনা-প্রসঙ্গে আসি এবং বুঝতে চেষ্টা করি, সালফার তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে কভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে কিভাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। মূলত ঔষধটির বিচিত্র কর্মক্ষমতা ও বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যের দরুন- আমরা যে কোন রোগের, যে কোন পর্যায়েই সালফারের নিদর্শন পেতে পারি, বিশেষ করে তা যদি সোরিক বা সোরিক ভিত্তির উপর গঠিত হয়। কভিড-১৯ এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, একটি একিউট অবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে একটি সাব-একিউট অবস্থায় নিয়ে পৌঁছায় এবং সর্বশেষ হয় রোগীকে মেরে ফেলে নয়তো রোগী সুস্থ হয়; তবে সু্স্থ রোগীর শরীরেও তা একটি ক্রনিক জের রেখে যেতে পারে বা অন্য কথায়, তার মায়াজমকে উত্তেজিত করে কিছু বৈশিষ্ট্য আরোপ করে যেতে পারে। আমরা সালফারের চিত্র প্রদর্শনের সেই ধারাবাহিকতাটিই অনুসরণ করবো, যে রকমটি করার চেষ্টা আমি আগের বর্ণনাকৃত ঔষধগুলোতেও করেছি। একটু আগেই বলেছি, সালফার উপযুক্ত লক্ষণসাদৃশ্যে একিউট অবস্থাতেও প্রযোজ্য হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাবো-
সালফারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, জ্বালাপোড়ার প্রাধান্য নিয়ে তার উপসর্গগুলো শুরু হবে। নাকে ব্যাপক জ্বালাপোড়া ([Nose] Pain: Burning: Coryza, during:) করে সর্দি শুরু হবে। খোলা বাতাসে গেলে নাক জ্বালা করবে, নাক দিয়ে পানির মতো প্রচুর সর্দি ঝরবে কিন্তু সেই স্রাবও থাকবে জ্বালাকর ([Gentry] [The Nose]Water: Profuse catarrhal discharges of burning water:) কিন্তু গরম ঘরে গেলে নাক বন্ধ হয়ে থাকবে ([Gentry] [The Nose]Air: Burning coryza in open air, stopped up when in room:)। মূলত সালফারের সমস্ত কিছুরই গরম ঘরে গেলে বৃদ্ধি দেখা দেয়। রোগীর সর্দিটি ক্রমান্বয়ে বুকে প্রসারিত হয়ে ([Nose] Coryza: Extending to: Chest:), রোগীর অবনতির দিকে যাত্রা শুরু করবে। এবং রোগীর বুকে ব্যথা শুরু হবে ([Gentry] [The Nose]Chest: Coryza, with pain in chest:)।
বুকে টনটনে ব্যথার সাথে ব্রঙ্কাসে শ্লেষ্মা জমা শুরু করবে ([Knerr] [Cough and Expectoration]During: Chest: Soreness, in upper, in acute bronchial catarrh:)। বুকে আঁটোসাটো লাগা শুরু হবে, কাশি শুরু হবে, শুরু হবে শ্বাসকষ্ট। ক্রমান্বয়ে অবস্থা এতটাই বেগতিক হয়ে দাঁড়াবে যে, রোগী কথাই বলতে পারবে না ([Knerr] [Cough and Expectoration]During: Chest: Oppression, cannot talk (neglected influenza or pleuritis):)।
রোগীর শরীরে র্যাশসহ এর ইনফ্লুয়েঞ্জার সূত্রপাত হবার সম্ভাবনা এতে আছে ([Boericke] [Fever]Exanthemata, eruptive fever: Influenza (grippe):)। সাথে থাকবে মাথাব্যথা ও জ্বর। রোগীর সার্বিক অবস্থা সন্ধ্যার দিকে ও রাত্রে বৃদ্ধি পাবে। জ্বর সন্ধ্যায় তীব্র আকার ধারণ করবে ([Knerr] [Inner Head] Headache (undefined): Fever: Heat, with intense, in evening (pneumonia):)। সালফারের রোগীর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার হাত-পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জার জ্বরে রোগীর মাথার চাঁদি জ্বালাপোড়াটাই থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ([Knerr] [Inner Head]Vertex: Heat: Pneumonia, in:) । সন্ধ্যায় জ্বর বাড়ার পরে রোগী বার বার বেশ খানিকটা করে ঠান্ডা পানি পান করার ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারে ([Knerr] [Desires, Aversion Appetite, Thirst] Desire: Cold, for, things: Water, frequent mouthfuls, with intense heat, in evening)।
রোগ যখন আরো বৃদ্ধি পাবে, স্বভাবতই তা এবার ফুসফুসের প্রদাহের রূপ নেবে। সালফারে তা Pleura pneumonia ও Croupous pneumonia দু’টো প্রকৃতিতেই এগিয়ে যেতে পারে। তবে কভিড-১৯ এর নিউমোনিয়ার যে বৈশিষ্ট্যটা তার চরিত্রের আদর্শ দিকটিকে প্রকাশ করে তা হচ্ছে ফুসফুসে ফাইব্রোসিস সৃষ্টি হওয়া, যেটি আমরা সালফারের প্লুরো-নিউমোনিয়াতে দেখতে পাবো ([Knerr] [Inner Chest and Lungs]Lungs: Pneumonia: Pleuro-pneumonia, fibrous:)। ব্রঙ্কাস ও ফুসফুসের একত্রে প্রদাহ সালফারেও আছে ([Boger] [Chest and lungs]Pneumonia & bronchitis:)।
রোগীর জ্বর লাগাতার চলতেই থাকে ([Boericke] [Fever]Type of fever: Enteric, typhoid fever: Concomitants: Pneumonia, bronchial symptoms:), কিংবা কোন এরকমও হতে পারে যে কোন শীতবোধ ছাড়াই দুই/একঘন্টা পর পর উত্তাপ বেড়ে যাচ্ছে ([Knerr] [Fever]Heat (in general): Periodical: Hours, every two, without any chills (pneumonia):)। সেই সাথে অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ থেকে অধিকতর খারাপ হতে থাকে। তবে সর্বাবস্থায়ই রোগীর জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গের সাথে উদ্বেগ ও অস্থিরতা রাত্রে বৃদ্ধির প্রবণতা থাকবে, এবং পূর্বে যেকরমটি উল্লেখ করেছি- রোগীর পানির পিপাসা লক্ষণীয় রকমের বৃদ্ধি পাবে ([Knerr] [Fever]Heat (in general): Night, at: Thirst and anxiety, with distressing (pneumonia):)। সালফারের রোগী নিউমোনিয়ার সময় ব্যাপক অস্থিরতা প্রদর্শন করতে পারে ([Knerr] [Nerves]Restlessness: Night, at:Pneumonia, in:)।
ক্রমাগত জ্বর ও উপসর্গ রোগীর চিন্তা ও মন কে আচ্ছন্ন করে ফেলে। ঠিকমতো চিন্তা করতে পারে না ([Knerr] [Mind and Disposition]Thoughts (thinking): Inability to think: Pneumonia, in:), সমস্ত চিন্তা ধীর হয়ে যায়, কথা বুঝতেও সময় লাগে। ([Knerr] [Mind and Disposition]Comprehension: Slow: In torpid typhoid pneumonia:)। কথা বলতে গিয়ে ভুলে যায়- কি বলতে যাচ্ছে ([Knerr] [Mind and Disposition]Forgetful: Say, of what he is about to: Pneumonia, in:)। প্রশ্ন করলেও উত্তর ধীরে ধীরে দেয়। মাথা ঘুরাতে থাকে, বিশেষ করে শোয়া থেকে উঠলেই ([Knerr] [Sensorium] Giddiness: Rising, on: Pneumonia, in:)। রোগীর হাত-পা ক্রমান্বয়ে ফুলে যায় ([Knerr] [Limbs in General]Limbs: Swelling: Pneumonia, in:)।
সাথে শ্বাসকষ্টও বৃদ্ধি পায়। গভীরভাবে শ্বাস নিতে গেলেই কাশি হয় ([Knerr] [Cough and Expectoration]Cough: Breathing: Deep, from, in pneumonia:)। এমনকি কাশি এত ঘন ঘন হতে পারে যে, রোগী ঠিকমতো শ্বাসও টানতে পারে না ([Knerr] [Cough and Expectoration]Cough: Breathing: Interrupted every few seconds (pneumonia):)। বুকে শ্লেষ্মা জমে থাকে কিন্তু তা উঠানো ব্যাপক কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়– প্রচুর পরিমাণ অত্যন্ত আঠালো শ্লেষ্মা ([Knerr] [Cough and Expectoration]Expectoration: Tenacious (tough): Adherent, in pneumonia:)। রোগীর শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হতে থাকে, এসময় নাকের পাখা উঠানামা করতে থাকে ([Nose]Motion of wings: Fan, like a: Pneumonia, in:) এবং শরীর ক্রমান্বয়ে শীতল ([Knerr] [Skin] Coldness: Damp (pneumonia):) হয়ে রোগী ক্রিটিক্যাল অবস্থাতে পর্যবসিত হয়। সালফারে আমরা কভিড-১৯ এর আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য, ফুসফুসের নীচের অংশ আগে আক্রান্ত হওয়া ও ডান দিকে আক্রান্ত হওয়াটিকে আমরা দেখতে পাবো ([Knerr] [Inner Chest and Lungs]Lungs: Congestion: Left, lower half of, and lower two-thirds of right (pneumonia):)। এবং সবশেষে ফুসফুসে পুঁযোৎপত্তি ঘটে ([Knerr] [Inner Chest and Lungs]Lungs: Abscess: Pneumonia, in:)।
মনে রাখতে হবে, যদিও সিফিলিটিক প্রভাবের উপস্থিতি ছাড়া কেবল সোরিক প্রভাবযুক্ত কভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির ক্রিটিক্যাল স্টেইজে যাওয়াটা আমরা প্রত্যাশা করতে পারি না কিন্তু টিউবারকুলার ক্ষেত্রে অনায়াসেই বাজে অবস্থাটিতেও সালফারের লক্ষণযুক্ত শেষ স্টেইজেও সালফার প্রয়োজন হতে পারে। রোগীর একদম সর্বশেষ ধাপ পর্যন্ত সালফারের পৌঁছানোর সক্ষমতা রয়েছে ([Special] [Pneumonia]Medicines in general: Stages of disease process: Fourth stage (late pneumonia):)। তবে সালফারের বিশেষ প্রয়োজন হতে পারে, যে কোন ভাবেই রোগী যদি কভিড-১৯ থেকে আরোগ্য হবার পরও এর জের থেকে যায়। নিচের রুব্রিকগুলো লক্ষ করলেই এ ব্যাপারে সালফারের অবস্থান ও প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে একটি ধারণা আসবে বলে আশা করি–
[Generalities]Convalescence, ailments during: Pneumonia, after:
[Knerr] [Cough and Expectoration]Cough: Hoarse: Pneumonia, sequel of:
[Knerr] [Cough and Expectoration]Cough: Suffocative: Pneumonia, sequel of:
[Knerr] [Cough and Expectoration]During: Chest: Smarting, sequel of pneumonia:
[Knerr] [Skin]Eruption: Measles: Sequel, chronic cough, originating in remnants of partial pneumonia:
তবে আবারও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি- এই ধারাবাহিকতা পাওয়া গেলেও বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে সালফারের রোগীর সার্বিক বৈশিষ্ট্যগুলোর দিকে। বিশেষ করে ঠিক ঠিক ভাবে নির্বাচিত ঔষধও যখন কাঙ্ক্ষিত কাজ করছে না বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে, বা সমস্যা বার বার ফিরে আসার প্রবণতা দেখা যাবে- তখন একবার এই ঔষধটির কথা চিন্তা করতে হবে। এছাড়া আমরা এর বৈশিষ্ট্যসূচক যে লক্ষণগুলোকে মনে রাখবো-
১. হালকা-পাতলা, একহারা গড়নের, সামনে কুঁজো হয়ে হাঁটে এমন ব্যক্তি।
২. রক্তপ্রধান ব্যক্তি, যার মেজাজ খিটখিটে ও অস্থিরতা থাকে। দার্শনিকতাসুলভ মানসিকতা। অত্যন্ত স্বার্থপর প্রকৃতির, প্রচণ্ড অলস।
৩. আবহাওয়া পরিবর্তনে রোগী অত্যন্ত সংবেদনশীল- এসময়ে তার কোন না কোন রোগ দেখা দেয় বা পূর্বতন রোগের বৃদ্ধি ঘটে।
৪. রোগী মূলত গরমকাতর। তবে কিছু কিছু রোগীতে শীতকাতরও দেখা যায়।
৫. শরীরের সমস্ত স্রাব দুর্গন্ধযুক্ত। ঘামে দুর্গন্ধ। স্রাবগুলো ক্ষতকারী ও চুলকানো সৃষ্টিকারী।
৬. জ্বালাপোড়া এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যা সমস্ত উপসর্গের সাথেই দেখা যায়।
৭. পর্যাবৃত্তিক প্রবণতা সালফারে প্রবল।
৮. রোগী দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, এটি সর্বাবস্থায় তার কাছে অসহ্য।
৯. রক্ত-সঞ্চালনে ভারসাম্যহীনতা, যার দরুন কোন নির্দিষ্ট স্থান ও হাত-পায়ের তলায়, মাথার চাঁদিতে জ্বালাপোড়া, মাথায় রক্তসঞ্চয় ও স্পন্দনশীলতা, বুকে-হৃদপিণ্ডে-মাথায় রক্তোচ্ছাস ও উত্তাপ-উচ্ছাস।
১০. শরীরের বিভিন্ন রন্ধ্র বা কোন নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, যেমন ঠোট, কান, নাক, চোখের পাতা, মলদ্বার ইত্যাদি স্থান টকটকে লাল থাকা। শিরার রক্তসঞ্চালনে, বিশেষ করে পোর্টাল সিস্টেমে রক্তসঞ্চয়-প্রবণতা।
১১. রোগী মিষ্টি, চর্বি, ঝাল, মদ্যজাতীয় সমস্ত কিছু, আইসক্রিম, ঠান্ডা পানি, কাঁচা খাদ্য, মশলাদার খাদ্য, চকোলেট, শসা, আটা-ময়দার তৈরি খাদ্য, তরল খাদ্য, ঝিনুক, আচার, টক-জাতীয় খাদ্য, শাক-সব্জি পছন্দ করে। এবং গোশত, ডিম, জলপাই, পুরোনো পনির, মুরগী, চর্বি, তেলযুক্ত ভারী খাদ্য, দুধ, তামাক, ক্ষেত্রবিশেষ টক খাবার ও মাছ অপছন্দ করে।
১২. রোগী গন্ধে অত্যানুভূতিপ্রবণ। নিজের গায়ের গন্ধ ছাড়া অন্য যে কোন প্রকারের দুর্গন্ধ সহ্য করতে পারে না।
১৩. চর্ম শুস্ক, নোঙড়া প্রকৃতির। রোগীর গোসলে ব্যাপক অনীহা থাকে এবং তার অধিকাংশ রোগই গোসলে বৃদ্ধি পায়।
১৪. শরীরে প্রতিক্রিয়া-শক্তির অভাব থাকে অথবা ঔষধের অতি-সংবেদনশীলতা থাকে।
শেষকথা
যে কোন সংক্রমণের বিরূদ্ধে আমাদের হোমিওপ্যাথদের নিকট ঔষধ হিসাবে যে অস্ত্র মজুদ আছে, এমনকি কভিড-১৯ তেও সম্ভাব্য যে ঔষধগুলো আমরা ব্যবহার করতে পারি তার একটা ক্ষুদ্র অংশের বিবরণ আমি প্রকাশ করেছি। এবং এই কাজটুকু করেছি একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে, বিশেষ ভাবে।
আপনারা হয়তো লক্ষ করে থাকবেন- আমার আলোচনাটি আমি মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার লক্ষণাবলীকে কেন্দ্র করে বর্ণনা করেছি। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ঔষধগুলো কিভাবে তার Affinity ও Pathogenesis-কে প্রকাশ করতে পারে, তার একটি ধারণা নেবার চেষ্টা করেছি। দেখাতে চেয়েছি বিভিন্ন স্টেইজে কিভাবে তার উপসর্গ ও প্রকৃতি পরিবর্তন হতে পারে, কিভাবে তার লক্ষণ দেখে তার সক্ষমতার মাত্রা ও বিভিন্ন স্টেইজে তার প্রয়োজনীয়তার ধারণা নেয়া যায়।
আমাদের মধ্যে বহু চিকিৎসকই আছেন- কেবলমাত্র ঔষধ পড়েই সফল চিকিৎসা করতে পারবেন বলে মনে করেন। কিন্তু ভুলে যান Arms সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়- গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘Man behind the Arms’। সৈনিকের মনে সাহস না থাকলে, কিংবা অস্ত্রটির ব্যবহার, প্রয়োগ-কৌশল না জানলে যেমন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ অস্ত্রটি হাতে থাকলেও – সৈনিকটির হয় মৃত্যুবরণ করা অথবা পালানো ছাড়া কোন উপায় থাকে না, তেমনি কিছু ঔষধের লক্ষণ মুখস্থ করলেও, তাকে উপযুক্তরূপে প্রয়োগ করাটি আত্মস্থ করতে না পারলে সেই জ্ঞান কোন কাজে আসে না। মহাত্মা হ্যানিমান চিকিৎসার জন্য যে তিনটি জ্ঞানের কথা উল্লেখ করেছেন –
১. রোগ সম্বন্ধে জ্ঞান
২. ঔষধ সম্বন্ধে জ্ঞান
৩. তার উপযুক্ত প্রয়োগ সম্বন্ধে জ্ঞান
তাকিয়ে দেখুন, এর দু’টোই চিকিৎসকের মৌলিক জ্ঞানের সাথে সংশ্লিষ্ট, একটি ঔষধের সাথে। মূলত ঔষধের জ্ঞানটিকে আমি মোটেও ছোট করে দেখছি না, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে। কিন্তু বহুদিন ধরে যারা ‘কভিড-১৯ এর ঔষধ’ তালাশ করছেন, কথাগুলো তার জন্যই বলা।
এটি একটি সংক্রমণ, যার প্রাথমিক অবস্থা অন্যান্য বছরে দেখা দেয়া ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই। কাজেই, প্রাথমিকভাবে অন্যান্য সময় যে ঔষধগুলো দিয়ে আপনি এই ঋতু-পরিবর্তনজনিত ঠান্ডা-সর্দির চিকিৎসা করেন, প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই তার চেয়ে বেশি কিছু প্রয়োজন হবে না। কিন্তু অল্প একটি অংশের রোগীতে, যে কোন মহামারীতেই যেমনটা দেখা যায় কিছু বিশেষ ঔষধ, প্রয়োগ কৌশল, সুক্ষ্ম চিন্তার প্রয়োজন পড়ে। আর তাদের আসলে কোন ঔষধটি লাগবে- তা আগে থেকে ধারণা করা প্রায় অসম্ভব। যেমন ধরুন, এভাবে বর্ণনা করলেও, আরো বহু ঔষধকে বর্ণনা করা যেতে পারে। কভিড-১৯ এর সাথে সদৃশলক্ষণ নিয়ে আমাদের মেটেরিয়া মেডিকাতে আরো বহু ঔষধই আছে, যেমন-
Kali.c, Merc.s, Kali.bi, Verat.a, Verat.v, Hep.s, Calc.c ইত্যাদি; কিছুটা ছোট ঔষধের মধ্যে Lobelia, Stann, Chel, Sang, Eucal, Sabad, Spong ইত্যাদি; এবং বিশেষ প্রয়োজনে বা আরোগ্যের নিমিত্তে বিশেষ কৌশলের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে Pyrogen, Tuberculinum, Pneumococcus ইত্যাদি ঔষধগুলো। বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে টটোপ্যাথিক বা আইসোপ্যাথিক রেমিডি। কভিড-১৯ এর নোসোড প্রয়োগের কথা চিন্তা করা যেতে পারে। এবং আমার বিশ্বাস, একটা সময় আমরা এই সবগুলো প্রকারের ঔষধপ্রয়োগজনিত দৃষ্টান্ত দেখতে পাবো।
আর এখানেই হচ্ছে আমার কথা। আপনার নিজের মধ্যেই সেই বিচারশক্তি, পর্যবেক্ষণশক্তি ও সিদ্ধান্তশক্তি আসতে হবে- কোথায়, কি দিয়ে, আপনি কি করবেন। কেবল কিছু লক্ষণ মুখস্ত ও তার প্রয়োগ হোমিওপ্যাথি নয়- হোমিওপ্যাথি তার চেয়ে আরও বহু গভীর, বহু তাৎপর্যপূর্ণ কিছু। নিজের মনে একটু তাকিয়ে দেখুন- সেই সক্ষমতাটুকু আপনার এসেছে কিনা। না এসে থাকলে দ্রুত সেটি অর্জন করুন, পরে ঔষধের লক্ষণ মুখস্থ করবেন। আর এসে থাকলে- আর এ প্রকারের ঔষধের বৃত্তান্ত প্রয়োজন হবে না। শত শত মেটেরিয়ায় ঔষধের সার্বিক বৈশিষ্ট্য ও শ্বাসযন্ত্রের, গলার, নাকের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা আছে। এবার সংশ্লিষ্টতা, উপযোগিতা, সক্ষমতা, পর্যায়, মাত্রা নির্ণয় করার জন্য আপনি নিজেই যথেষ্ঠ।
অনলাইনে একটু চোখ বোলালেই আপনারা অনেকে বিস্মিত হবেন, বিভ্রান্ত হবেন এবং অনেকে হ্যানিমানের নির্দেশনা অমান্য করে নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের প্রতি পক্ষপাতপূর্ণ হবেন। মাথার মধ্যে কেবল ঘুরতে থাকবে, ‘একবার শুধু কভিড-১৯ এর রোগী পাই না কেন, অমুক ঔষধের একটা দানা কেবল একবার খাওয়াতে পারলে…………….।” কিন্তু সুস্পষ্টরূপে শুনে রাখুন। এটা দূষিত চিন্তা। ড. হ্যানিমান কোনদিনও এভাবে চিন্তা করেননি, করতে শেখানওনি; বরঞ্চ তিনি তা করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
আগেও বলেছি, গুরুত্বের অগ্রাধিকারের দরুণ কথাটি আবারও উদাহরণসহ বলছি। আপনারা যদি একটু লক্ষ করে দেখেন, দেখতে পাবেন- যে চিকিৎসকগণ কভিড-১৯ এর চিকিৎসা করে এ পর্যন্ত সফল কেইসগুলো বর্ণনা করেছেন- তারা ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল থেকে, রোগের ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন ঔষধের কথা উল্লেখ করেছেন। আমি মনে করি না, তারা কেউই আসলে ভুল কোন পর্যবেক্ষণ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। তারা সংষ্কারমুক্ত চিন্তার দ্বারা তাদের নির্দিষ্ট অঞ্চলে, সেই নির্দিষ্ট গঠন-প্রকৃতির রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধটিকে খুঁজে বের করেছেন এবং প্রয়োগ করে সফলতা পেয়েছেন। তারাও যদি ‘অমুক ঔষধের একটা দানা………..’ থিউরি প্রয়োগ করতেন, তাহলে তাদের পক্ষেও কি সেই বিশেষ ঔষধটার সন্ধান পাওয়া সম্ভব হতো? রজন সংকরণের ক্যাম্ফর, ম্যাসিমোর চিনিনাম মিউর, কিংবা হেইনরিখ হ্যামারের লোবেলিয়ার কথা চিন্তা করাও কি তাঁদের পক্ষে সম্ভব হতো?
তারা হ্যানিমানকে অনুসরণ করে সফলতা পেয়েছেন, আমরা তাহলে কাকে অনুসরণ করবো?
Discussion about this post