ডা. শাহীন মাহমুদ:
বর্তমান কভিড-১৯ একটি মারাত্মক সংক্রমণ এবং বিশ্বজুড়ে এর আরোগ্যের জন্য সম্ভাব্য ঔষধগুলো নিয়ে বেশ চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বেশি কিছু চিকিৎসক ইতোমধ্যে কিছু রোগীকে চিকিৎসা করার সুযোগ পেয়েছেন এবং বিভিন্ন গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের দ্বারা আমরা এখন এর প্যাথজেনেসিস, লক্ষণাবলী, জটিলতা ইত্যাদি সম্বন্ধেও কিছুটা ধারণা লাভ করতে পেরেছি। এগুলোর উপর ভিত্তি করে আমি কিছু সংখ্যক সম্ভাব্য ঔষধের চিত্র বর্ণনা করতে চেষ্টা করবো- যেগুলোর সাথে কভিড-১৯ এর চিত্রের সাদৃশ্য দৃষ্ট হয়।
ইতোমধ্যে আমরা সম্ভাব্যে ঔষধের চার পর্বে আর্সেনিকাম এল্বাম, ফসফরাস, ব্রায়োনিয়া, জেলসিমিয়াম, লাইকোপডিয়াম, ক্যাম্ফর এন্টিম টার্ট , গ্রিনডেলিয়া স্কোয়ারোসা‘র চিত্র প্রকাশ করেছি। সেই ধারাবাহিকতায় আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে- ইউপোটেরিয়াম পারফোলিয়াটাম ও কার্বো ভেজিট্যাবিলিস।
EUPATORIUM PERFOLIATUM (ইউপোটেরিয়াম পারফোলিয়াটাম)
আগেও বেশ কিছু প্রবন্ধে আমি বলেছি, আবারও বলছি- একটি অঞ্চলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, সেখানকার আবহাওয়া, মানুষের গঠন-প্রকৃতি, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা, সংস্কৃতি, মায়াজমের প্রাদুর্ভাব ও প্রকাশভঙ্গি, আক্রমণের ধরণ ইত্যাদি বহুকিছুর উপরই সেখানকার মহামারীর আকৃতি-প্রকৃতি কি হবে, কি কি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে সে আত্মপ্রকাশ করবে- তা নির্ভর করে। কাজেই, একদিকে যেমন ঔষধগুলোর বৈশিষ্ট্য আমাদের মনে রাখতে হবে, তেমনি মনে রাখতে হবে- কোন ঔষধটা এই অঞ্চলের জন্য অধিক প্রবণ। আঞ্চলিক প্রবণতাকে (Regional Affinity) উপেক্ষা করাটা কোনক্রমেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
প্রাথমিক উপসর্গগুলোর দৃষ্টিকোণ থেকে, বর্তমানে চলমান ইনফ্লুয়েঞ্জাটি অন্যান্য বছরের ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে তেমন আহামরি কোন আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রকাশিত হয় না। কাজেই, এযাবৎ পর্যন্ত আমাদের এই অঞ্চলে, এই দেশে যে ঔষধগুলো সচরাচর প্রয়োজন হয়ে আসছে, অন্যান্য বৎসরের ইনফ্লুয়েঞ্জাগুলোতে যে ঔষধগুলো বেশি ব্যবহৃত হয়- এবছরও সেই ঔষধগুলোরই প্রয়োজনীয়তা প্রাথমিকভাবে বেশি হবার সম্ভাবনা। আর এরকম একটি আমাদের আঞ্চলিক-প্রবণতাযুক্ত ঔষধ হচ্ছে ইউপাটোরিয়াম পার্ফ। এটাকে কেবলে আমাদের অঞ্চলের সাথে সম্পর্কিতই বা বলছি কেন- অতীতে ভয়ানক স্প্যানিশ ফ্লুতে কার্যকরী প্রধান তিনটি ঔষধের একটি ছিলো এটি ([Gentry ] [The Nose] Influenza: Epidemic or Russian influenza:)।
এটিতে নিউমোনিয়া পর্যন্ত প্যাথলজি সৃষ্টি করার সক্ষমতা আছে, তবে তা এই ঔষধটির কেন্দ্রীয় কোন প্যাথজেনেসিস নয়। এর প্রধানতম গুরুত্ব- এর চরিত্রগত বহিঃপ্রকাশে এবং রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে এই চরিত্র নিয়ে আবির্ভূত হলে- এর প্রয়োগ যে কোন প্রকারের রোগ, বিশেষ করে তা যদি এই পর্যাবৃত্তিকভাবে দেখা দেয়া কোন একিউট হয় (যেমন- ইনফ্লুয়েঞ্জা, ম্যালেরিয়া ইত্যাধি)- তাহলে সে রোগটির অগ্রগতিকে রূদ্ধ করে দেবে।পর্যাবৃত্তিকতা ([Generalities] Periodicity:) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আমাদের দেশের ইনফ্লুয়েঞ্জাগুলোতে এটি বার বার ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং এর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা দেখা দিলে (সেটা নামে কভিড-১৯ ই হোক, সার্স বা মার্স- যাই হোক না কেন)- এই ঔষধটিই তাকে আরোগ্য করবে। এজন্য এই ঔষধটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যটিতে আমরা আমাদের মূল মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত করবো।
এর মূল কথাটি হচ্ছে- হাঁড়ে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে এর রোগীর ইনফ্লুয়েঞ্জা শুরু হয় ([Complete ] [Generalities]Pain: General: Bones: Malaria or influenza, in:)। ব্যথার সাথে জ্বর ও মাথাব্যথা। প্রচণ্ড ব্যথায় রোগীর মনে হয় হাঁড়গুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে ([Generalities]Pain: Broken, breaking, as if: Bones:)। জ্বর সকাল ৭ টা থেকে ৯টার মধ্যে শুরু হয় এবং এসময় হাতে, পায়ে ও মাজায় প্রচণ্ডরকম থাকে- মনে হয় মাজার হাঁড় ভেঙ্গে যাচ্ছে ([Gentry ] [Bones and Limbs in General]Back: Violent aching in limbs and back, as if bones were broken (in influenza, grip, or intermittent):)। জ্বর ওঠার আগে রোগীর পানির পিপাসা থাকে কিন্তু একবার জ্বর শুরু হয়ে গেলে বা শীত লাগা শুরু হলে আর পানি পান করতে পারে না। পানি পান করতে গেলে তার শীতবোধ প্রচণ্ড বাড়ে ([Complete ] [Chill, Chilliness]Drinking: Agg.:)। এমনকি রোগী পানি কিছুক্ষণ আগের মতো পান করতে পারছে না- এটা দেখেই, বুঝতে পারে যে, কিছুক্ষণ পর তার জ্বর বাড়তে শুরু করবে। প্রথমে পিপাসা ও বমির ভাব, তারপর প্রচণ্ড শীতবোধ কোমড় থেকে শুরু হয়ে, মেরুদণ্ড বেয়ে উপরের দিকে উঠে। মাথাব্যথা স্পন্দনশীল। শীতবোধের পর উত্তাপ এবং উত্তাপের পর ঘাম দেখা দেয় ([Fever, Heat]Succession of stages: Chill, followed by heat: Perspiration: Followed by:)। ঘামলে মাথাব্যথা ছাড়া আর সকল সমস্যাই কমে যায় ([Generalities]Perspiration: Amel.: During: Headache, except:)। ঠোঁটে জ্বরঠুঁটো দেখা দেবার প্রবণতা থাকে ([Face]Eruptions: Vesicles: Lips: Fever blisters:)।
এই ব্যথা বেদনার সাথে দেখা দেয় দুর্বলতা। এসময় তার হৃদপিন্ডের গতিও দুর্বল হয়ে যায় ([Knerr ] [Heart, Pulse and Circulation]Pulse: Weak (feeble): Influenza, in:)। ইনফ্লুয়েঞ্জাতে এই হাঁড়ভাঙ্গা ব্যথা ও দুর্বলতা ([Generalities] Weakness, enervation, exhaustion, prostration, infirmity: Influenza, after:) দেখেই এই ঔষধটা সম্বন্ধে অনেকাংশে নিশ্চিত হওয়া যায়। সাথে পেশীগুলোতেও টনটনে ব্যথা থাকে ([Generalities]Pain: Sore, bruised: Muscles:)। মাথাব্যথায় মাথা ভারী মনে হয়, সাথে মাথাঘুরানো থাকে। রোগী বামপাশে পড়ে যাবে বলে মনে করতে পারে। সেই সাথে চোখেও টনটনে ব্যথা থাকে। এবং সাথে রোগীর বমি বা বমি বমি ভাব থাকে, যা শীত ও উত্তাপ যে কোন সময় দেখা দিতে পারে। এর বমির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- বমির আগে পানির পিপাসা বৃদ্ধি পায় ([Stomach]Thirst: Vomiting: Before:)। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এটা যে, পানি পানে তার বমির বৃদ্ধি ঘটে ([Stomach]Vomiting: General: Drinking, after: Agg:)। শীতবোধের শেষের দিকে বমি করে, তাতে বাইল থাকে।
হাঁচি সহযোগে এর ইনফ্লুয়েঞ্জা শুরু হয়। তারপর কাশি, গলাভাঙ্গা ও বুক ব্যথা– যে লক্ষণগুলোকে আমরা কভিড-১৯ এর আত্মপ্রকাশের আদর্শ চিত্র বলে দেখতে পাচ্ছি। গলাভাঙ্গার ভাবটি সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বেশি থাকে। বুকে এত ব্যথা থাকে যে, কাশি দেবার সময় বুক হাত দিয়ে ধরে রাখতে হয় ([Cough] Hands: Holding: Chest with both, while coughing:)। নড়াচড়ায় বা কাশিতে যকৃতের স্থানটিতে টনটনে ব্যথা। বুকে ও ব্রঙ্কাসের এলাকায় ব্যথা, গভীরভাবে শ্বাস নিলে বৃদ্ধি পায় ([Chest] Pain: General: Breath: Deep: Agg,:)।
ব্যথার প্রচণ্ডতায় রোগী শুয়ে থাকতে পারে না- কাঁদে ও কোঁকায়। প্রচণ্ড অস্থির; চুপচাপ বা স্থির হয়ে থাকতে পারেনা ([Mind]Restlessness, nervousness: Tendency: Heat: With:), যদিও ব্যথার জন্য সে স্থির থাকতে চায়; নড়াচড়ায় ব্যথা মোটেও কমে না- তবু অস্থিরতার জন্য রোগী নড়াচড়া করতে থাকে।অন্যের সাথে কথাবার্তায় ব্যস্ত থাকলে তার কষ্ট-যন্ত্রণা কম অনুভূত হয়, বিশেষ করে মাথাব্যথাটি ([Head Pain] General: Talking: Amel.:)। রোগী ভয় পায়, সে হয়তো পাগল হয়ে যাবে ([Mind]Fear: Insanity, of losing his reason:)। সে পাগল হয়ে যাবে বলে এক প্রকারের বিভ্রম তার মধ্যে তৈরি হয়। রোগী বাসায়ই থাকতে চায় ([Mind]Homesickness, nostalgia:), বাইরে থাকতে ভালো লাগে না। ([Mind]Home :Desires to: Go:)।
যে ইন্ফ্লুয়েঞ্জাতে শরীরে র্যাশ দেখা দেবার প্রবণতা থাকবে, যেমনটি আমরা কভিড-১৯ এর কিছু কিছু কেইসের ক্ষেত্রে জানি- সেখানে এই ঔষধটির কথা আমাদের একটু ভেবে দেখতে হবে ([Boericke] [Fever]Exanthemata, eruptive fever: Influenza (grippe):)।
পূর্বেই উল্লেখ করেছি, Pneumonitis বা Pneumonia পর্যন্ত প্যাথলজি অগ্রগামী হবার সম্ভাবনা এই ঔষধটিতে থাকলেও, রোগটির অগ্রবর্তী স্টেইজগুলোতে এর প্যাথজেনেসিস আমরা প্রুভিং সিম্পটম্পস থেকে খুব বেশি পাই না। একারণে ব্রায়োনিয়া বা জেলসিমিয়াম যেমন কভিড-১৯ এর যে কোন স্টেইজে কার্যকরী ফলাফল আনতে পারবে বলে মনে হয়, এই ঔষধটির ক্ষেত্রে ততটা মনে হয় না। বরঞ্চ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে বা রোগের দ্বিতীয় পর্যায় সুস্পষ্ট হলে, লক্ষণ-সাপেক্ষে আমাদের অন্য ঔষধ লাগবে; তবে এটাও সত্যি যে, যদি এর লক্ষণসমষ্টি বর্তমান থাকলে, সেই-সাদৃশ্যে প্রথম স্টেইজটিতেই এই ঔষধটি প্রয়োগ করা হলে, রোগটির আর অগ্রবর্তী হবার সম্ভাবনা অন্তত কভিড-১৯ এর মারাত্মক রূপ নিয়ে দেখা দেবার সম্ভাবনা আর নেই বললেই চলে।
এর যে কি-নোটসগুলোর দিকে আমাদের বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে-
১. সমস্ত প্রকার প্রদাহ-জনিত (কভিড-১৯) ও সবিরাম জ্বরে খুব শীতবোধ চলমান থাকে, সাথে থাকে টনটনে, থ্যাতলানো ও হাঁড় ভাঙ্গা অনুভূতির ব্যথা। সারা শরীরে হাঁড়-ভাঙ্গার মতো ব্যথা।
২. শীত, উত্তাপের আগে প্রচণ্ড পিপাসা, কোনভাবেই পিপাসা মিটতে চায় না।(ক্ষেত্র বিশেষ উত্তাপের সময়ও পিপাসা থাকতে পারে)
৩. ঠান্ডা পানির অদম্য পিপাসা কিন্তু পানি পানে তার শীতভাব, কাঁপুনি ও বমির ভাব বৃদ্ধি পায়।
৩. গাউটের ব্যথার সাথে মাথাব্যথা পর্যায়ক্রমিকভাবে দেখা দেয়।
৪. লোকসঙ্গে বা অন্যের সাথে কথাবার্তায় ব্যস্ত থাকলে তার কষ্ট-যন্ত্রণা কম অনুভূত হয়।
৫. শীতবোধের তুলনায় কাপুঁনিটা বেশি থাকে।
CARBO VEGETABILIS (কার্বো ভেজিট্যাবিলিস)
এটি হচ্ছে আরেকটি ঔষধ- যার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কভিড-১৯ এর বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যগত একটি চিত্র আমরা দেখতে পাবো। সেই সাথে দেখতে পাবো- পূর্বে আলোচ্য ঔষধগুলোর সাথেও এর বিভিন্ন আঙ্গিকের সাদৃশ্য। যেমন এন্টিম টার্ট বা গ্রিনডেলিয়ার ফুসফুসের পক্ষাঘাত, ফসফরাসের ফুসফুসে পচনপ্রবণতা, ক্যাম্ফরের অক্সিজেন স্যাচুরেশনগত সমস্যা ও জীবনীশক্তির নিতান্ত ঘাটতি, লাইকোপোডিয়ামের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার সাথে গ্যাস্ট্রো-ইনটেসটাইনাল সমস্যার সংযোগ- এসকল ব্যাপারেরই সমাবেশ আমরা কার্বো-ভেজ ঔষধটিতে দেখতে পাবো।
লক্ষণসাদৃশ্যে এটি কভিড-১৯ এর শুরুতেও নির্দেশিত হতে পারে কিন্তু এর পূর্ণাঙ্গ চিত্রটি মূর্ত হয়, মূলত রোগীর ফুসফুসে নিউমোনিয়া শুরু হবার পরে, যখন রক্ত চলাচল বিঘ্নিত হয়। অক্সিজেন স্যাচুরেশনে ঘাটতি সৃষ্টি হয়- তখন থেকে। রোগীর জীবনীশক্তি ব্যাপক মাত্রায় হ্রাস পায়। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সায়ানোসিস দেখা দেয়। ফুসফুসে পূঁযোৎপত্তি ঘটে। রোগীর শ্বাসরূদ্ধতা সৃষ্টি হয়, রোগী কোলাপ্স করে ও মারা যায়- ঠিক যে ঘটনাপরম্পরা আমরা কভিড-১৯ এর ক্রিটিক্যাল রোগীদের মাঝে দেখতে পাই। কাজেই অক্সিজেন প্রাপ্তির ঘাটতিকে কেন্দ্র করেই পূর্ণাঙ্গ চিত্রের আবির্ভাব ঘটে ([Knerr ] [Heart, Pulse and Circulation]Blood: Oxidation, imperfect:)। কেবল তাই নয় কার্বো-ভেজে আমরা দেখতে পাবো, ফুসফুসের বায়ুথলিগুলোতে পূঁয ও আবর্জনা (Exudate) জমে তা পূর্ণ হয়ে, তাকে অক্ষম করে তোলে ও ক্রমান্বয়ে এক বা একাধিক লোবগুলোক অকার্যকর করে ফেলে, তাতে পক্ষাঘাত সৃষ্টি করে- এককথায় Croupous বা Lober pneumonia ([Boericke ] [Respiratory System]Lungs: Inflammation: Croupous pneumonia:) সংঘটন করে, যা প্রকৃতপক্ষে কভিড-১৯ এর ক্রিটিক্যাল রোগীদের আদর্শ প্যাথজেনেসিস।
প্রাথমিকভাবে হয়তো কাশির সাথে দেখা দেয়া একটি সর্দির আবির্ভাব হবে ([Nose] Coryza: Cough: With:), বিশেষ করে স্যাতঁস্যাতে গরম আবহাওয়ায়। সেটাই ক্রমান্বয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকৃতি ধারণ করবে ([Knerr ] [Nose] Coryza: Influenza, in:)। বার বার হাঁচি আসবে কিন্তু দিতে গেলে হাঁচি হবে না ([Nose]Sneezing: Ineffectual efforts:)। ক্রমান্বয়ে সর্দিটা বুকে প্রসারিত হবে ([Nose] Coryza: Extending to: Chest:) এবং বুকে তা বসে যাবে ([Lippe ] [Larynx and Trachea]Catarrh: Chest in:)। রোগীর গলাভেঙ্গে যাবে, বুকে জ্বালাপোড়া করবে, ক্রমান্বয়ে আঁটোসাটা অনুভূতি সৃষ্টি হবে- মনে হবে বুকের ভেতর ছিলে আছে ([Gentry ] [The Nose] Coryza: Severe: With hoarseness and rawness in chest:), বা কাঁচা ঘা হয়ে আছে। সেই সাথে ব্রঙ্কাসে শ্লেষ্মাসঞ্চয় দেখা দেবে; বুক, পাঁজরে টনটনে ব্যথা হয়ে যাবে ([Wards ] [C]Chest: Bronchial catarrh, hoarse, mucus rales, chest and ribs, as if bruised:) এবং সর্বশেষ তা ফুসফুস আক্রমণ করে ফুসফুসে প্রদাহের সূচনা করবে ([Chest]Inflammation: Lungs: Catarrhal:)।
আর একবার ফুসফুস আক্রান্ত হলে, রোগীর অবস্থা দ্রুতগতিতে খারাপের দিকে যাওয়া শুরু করবে। শরীরে রক্ত-সঞ্চালন ক্রিয়ার ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে শিরাগুলোতে রক্তসঞ্চালনে ধীরতা সৃষ্টি হয়, শিরাগুলো ফুলে উঠে। নিউমোনিয়ার সূচনাতে মুখ ফ্যাকাসে হয় ([Knerr ] [Upper Face]Pale: Pneumonia, in:), শরীরে শীতল ঘামের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ([Knerr ] [Fever] Sweat: Cold: Pneumonia, in:)। প্রচণ্ড কষ্টকর কাশি শুরু হয়। কাশিতে বুকে ঘর ঘর শব্দ হয় কিন্তু কফ খুব কষ্টে উঠে এবং তাতে কালো কালো রক্ত মিশ্রিত থাকে। কাশির সাথে বুকে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া হয় ([Chest]Pain:Burning:Cough:During:)। মুখ চোখ বসে যায়। মুখে, বিশেষ করে কপালে শীতল ঘাম দেখা দেয়।
ক্রমান্বয়ে উপসর্গ আরো এগিয়ে Lober pneumonia-র অবধারিত পরিণতি ফুসফুসের পক্ষাঘাত ঘটে ([Chest]Paralysis: Lung: Catarrhal states, from:)। জীবনীশক্তি ব্যাপক হারে হ্রাস পায় ([Generalities]Vitality decreasing:), রোগীর মুখমন্ডল, ঠোট, জিহ্বা ও ক্রমান্বয়ে সারা শরীর নীল-বর্ণ ধারণ করে ([Generalities]Cyanosis:)। শরীরের সর্বত্র শীতল অনুভব হয়- ঘাম, নিঃশ্বাস, চর্ম, জিহ্বা সব ব্যাপক শীতল হয়ে থাকে। এর শীতলতার একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- রোগী শীতল থাকা সত্ত্বেও বাতাস চায় ([Knerr ] [Respiration]Dyspnoea: Air: Fanned, must be, yet surface is cold:); বাতাস ছাড়া বা ফ্যান ছাড়া থাকতে পারে না ([Generalities]Fanned: Desire to be:)। ক্যাম্ফরে যেমন একটি জ্বালাকর শীতলতা থাকে বলে এই লক্ষণটি প্রকাশ করে, কার্বো-ভেজে তা নয়; এতে রোগীর শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতির দরুন ভেতরে একপ্রকারের জ্বালাপোড়ার অনুভূতি হয় ([Generalities]Pain: Burning: Internally:), সেজন্য রোগী বাতাস ছাড়া থাকতে পারে না এবং বাতাসেও তৃপ্ত হতে চায় না, ফ্যান কাছে এগিয়ে নিয়ে আসতে চায়। এরপর রোগীর কোলাপ্স ([Generalities] Collapse:) হতে শুরু করে, বার বার অজ্ঞান হতে হতে অচেতন অবস্থাতে চলে যায় ([Mind]Unconsciousness, coma:)। পক্ষাঘাতগ্রস্ত ফুসফুসে আরো ব্যাপক পূঁযোৎপত্তি ঘটে ও পচন শুরু হয় ([Chest]: gangrene, lungs:)।
যাই হোক, যাদের বেলায়ই এই পরিণতি ঘটবে, তাদের সবার মাঝেই কম-বেশি এই ধারাবাহিক ঘটনা-পরম্পরাই আসলে দেখা যাবে। কাজেই, উপযুক্তরূপে কার্বো-ভেজকে বিবেচনা করতে গেলে, আমাদের কার্বোভেজের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকে বুঝতে হবে ও স্মরণ রাখতে হবে।
কভিড-১৯ যেমন দুর্বল-জীবনীশক্তিযুক্ত ([Generalities] Vitality decreasing:) বৃদ্ধ-বয়স্কদের ([Generalities]Old: People, complaints in:) মূলত আক্রমণ করে, কার্বোভেজের লক্ষণও এ প্রকারের ব্যক্তিদের মাঝে বেশি দেখা দেবার প্রবণতা থাকে, এবং শিরার রক্তসঞ্চালনে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। মুখ-চোখ ফোলা ফোলা, নীলচে। জীবনীশক্তির ঘাটতিজনিত কারণে শরীর ঠান্ডা থাকে, রক্তের ঘাটতি থাকে। বিশেষ করে আগে থেকেই হাঁপানি, টিবি, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া ([Generalities]Convalescence, ailments during: Pneumonia, after:) বা এরকম কোন রোগে যে ব্যক্তি দুর্বল হয়ে আছে বা শ্বাসযন্ত্রের দুর্বলতা সৃষ্টি হয়ে আছে- তাদের বেলায় এই ঔষধের সাদৃশ্যযুক্ত চিত্র পরিস্ফূট হবার প্রবণতা বেশি থাকে। শরীরে বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমে নীলচে হয়ে থাকার প্রবণতা থাকে ([Skin]Ecchymose:)। অতীতে রস-রক্ত-বীর্য ইত্যাদি মৌলিক উপাদানগুলো অধিক মাত্রায় অপচয় হলেও ([Generalities]Loss of fluids: General:) এই প্রকারের দুর্বল অবস্থার সৃষ্টির কারণ হতে পারে।
শীতলতা ও জ্বালাপোড়ার সহাবস্থান কার্বো-ভেজে প্রবল। শিরা, বুক, ফুসফুস, পাকস্থলী সকল ভেতরের অঙ্গগুলোতে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি থাকে। এমনকি গ্যাংগ্রিন দেখা দেয়া অঙ্গেও জ্বালাপোড়া করে। এজন্য এর কভিড-১৯-এ ফুসফুস আক্রান্ত ব্যক্তির বুকে জ্বালাপোড়ার সাথে তীব্রভাবে ফ্যানের বাতাসের আকাঙ্ক্ষা আমরা প্রত্যাশা করতে পারি। মূলত ঔষধটির আলসার, গ্যাংগ্রিন তৈরি করার প্রবণতাটি প্রবল। সেই সাথে থাকে রক্তপাত প্রবণতা, শরীরের যে কোন রন্ধ্র দিয়ে রক্তপাত হবার সম্ভাবনা থাকে। শিরার রক্তপাতের (Passive or Secondary Hemorrhages) দরুণ এই রক্তের রং কালো বা নীলচে হবারই সম্ভাবনা বেশি থাকে ([Generalities]Hemorrhage: Tendency or actual: Blood: Black:)।
রোগীর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার সাথে হাইপার-এসিডিটি থাকে। দুর্বল হজমশক্তি, পেট ফোলা, পেট ফাঁপা এবং তার সাথে কার্বো-ভেজের মূল বৈশিষ্ট্য বুক জ্বালাপোড়া। একদম সাধারণ খাদ্যও সহ্য হয় না। গ্যাস বুকের দিকে চাপ দেয়।
রোগী কফি, টক খাবার, মিষ্টি ও লবণাক্ত খাবার পছন্দ করে। এলকোহলে অভ্যস্ততা থাকতে পারে। দুধ, চর্বি, গোশত পছন্দ করে না। রোগী অসুস্থ অবস্থায় উদাসীন হয়ে যায় ([Mind]Indifference, apathy: Everything, to:)। মানসিক ও শারীরিক উভয়ভাবেই ধীর, অলস। বোধশক্তি ও চিন্তাশক্তির ধীরতা ও জড়তা থাকে। কোন কিছুতে মনোযোগ দিতে পারে না ([Mind]Concentration: Difficult:)। যা কিছু শোনে মনে কোন অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে না। এমনকি আগে যে গান সে খুব ভালোবাসতো, সেটিও এখন তার মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া আনতে পারে না। মেজাজ খুব খারাপ হয়ে যায়, বেশিরভাগ সময় যা তার পরিবারের সদস্যদের প্রতিই প্রদর্শন করে।
রোগীর প্রচণ্ড ভয় সৃষ্টি হয়। শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা থেকে মারা যাবার ভয় (Mind; fear; death, of; respiratory complaints, with:), দমবন্ধ হয়ে যাবার ভয় (Mind; fear; suffocation, of:)। তখন সে চোখ বন্ধ করতেও ভয় পায়। সন্ধ্যার দিকে উদ্বেগের সাথে কাপুনি শুরু হয় ([Mind]Anxiety: Trembling, with:)।
আমরা পুরো চিত্রটির দিকে তাকালে, রোগের একদম শুরু থেকে সর্বশেষ অবস্থা পর্যন্ত লক্ষণ সাদৃশ্যে এর উপযোগিতাটি উপলব্ধি করতে পারবো ([Special ] [Pneumonia]Medicines in general: Stages of disease process: Fourth stage (late pneumonia):)। এমনকি কোনভাবে নিউমোনিয়া থেকে আরোগ্য হবার পরও যদি এর জের থেকে যায়, তবে যে কয়টি ঔষধের কথা আমাদের বিবেচনা করতে হয়, কার্বো-ভেজ তার মধ্যে একটি ([Generalities]Convalescence, ailments during: Pneumonia, after:)।
এই ঔষধটির যে কি–নোটসগুলো আমরা বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে পারি–
১. যে সমস্ত খাদ্য তাকে অসুস্থ করে তোলে- সেগুলোরই আকাঙ্ক্ষা।
২. অবিরত ফ্যানের বাতাস আকাঙ্ক্ষা করে, তাতে আরাম বোধ করে।
৩. সন্ধ্যার দিকে উদ্বেগ ও গলাভাঙ্গা
৪. সারা শরীরে শীতল ঘাম, পা দুটো খুব ঠাণ্ডা থাকে।
৫. সমস্ত অসুস্থতায়ই পেটের উপরের দিকে গ্যাস-সঞ্চয়জনিত লক্ষণের আনুষাঙ্গিকতা থাকে। ঢেকুরে সাময়িকভাবে উপশম হয়।
৬. ভেতরে জ্বালাপোড়া ও বাইরে শীতলতা, রোগী তীব্রভাবে পাখার বাতাস আকাঙ্ক্ষা করে।
৭. জীবনীশক্তির ঘাটতি, প্রতিক্রিয়াশক্তির অভাব ও বৃদ্ধ-বয়সের অবস্থাটির ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য।
৮ . যে কোন রোগের শেষ অবস্থায় যখন শীতলতা, নীলাভতা, জ্বালাপোড়া, অবসন্নতা দৃষ্ট হয়- তখন এর ক্ষেত্রটি দেখতে পাওয়া যেতে পারে।
Discussion about this post