ডা. শাহীন মাহমুদ:
বর্তমান কভিড-১৯ একটি মারাত্মক সংক্রমণ এবং বিশ্বজুড়ে এর আরোগ্যের জন্য সম্ভাব্য ঔষধগুলো নিয়ে বেশ চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বেশি কিছু চিকিৎসক ইতোমধ্যে কিছু রোগীকে চিকিৎসা করার সুযোগ পেয়েছেন এবং বিভিন্ন গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের দ্বারা আমরা এখন এর প্যাথজেনেসিস, লক্ষণাবলী, জটিলতা ইত্যাদি সম্বন্ধেও কিছুটা ধারণা লাভ করতে পেরেছি। এগুলোর উপর ভিত্তি করে আমি কিছু সংখ্যক সম্ভাব্য ঔষধের চিত্র বর্ণনা করতে চেষ্টা করবো- যেগুলোর সাথে কভিড-১৯ এর চিত্রের সাদৃশ্য দৃষ্ট হয়।
ইতোমধ্যে আমরা সম্ভাব্যে ঔষধের প্রথম পর্বে আর্সেনিকাম এল্বাম ও ফসফরাসের চিত্র প্রকাশ করেছি। সেই ধারাবাহিকতায় আজ দ্বিতীয় পর্বে থাকছে- ব্রায়োনিয়া ও জেলসিমিয়াম।
ব্রায়োনিয়া (BRYONIA ALBA):
খুব ধীরে ধীরে এর অগ্রগতি হতে থাকে (Slow manifestation:)। মনে হয়, যেন ঠান্ডা লাগতে গিয়েও লাগছে না। প্রচণ্ড মাথাব্যথা সহ সর্দি শুরু হয়। এর আক্রমণের পর থেকেই রোগী চুপচাপ হয়ে যায়। সামান্য নড়াচড়া করতেও ভালো লাগে না (Motion:Aversion to:)। এরপর নাক দিয়ে পানি পড়া ও হাঁচি শুরু হয়। নাকের স্রাব ও লক্ষণাবলী কভিড-১৯ এ বরঞ্চ কম দেখা দেয়। বরঞ্চ কাশি শুকনো, অত্যন্ত ব্যথাযুক্ত, কষ্টকর কাশি ([Cough] Painful:, ) দেখা দেবার প্রবণতা থাকে। কাশলে রোগীর বুকে ও মাথায় এত ব্যথা লাগে যে, কাশি দেবার সময় রোগী বুক ও মাথা হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখে ([Cough]Hands: Holding: Chest with both, while coughing:)। মাথাব্যথায় রোগীর মাথা ফেটে যাবে, বা মগজ নড়ছে বলে মনে হয় ([Head]Looseness, sensation of: Brain, of:)। বিশেষ করে মাথা সামনে ঝোকালে ব্যথা তীব্রতর হয়।
কাশি গলায় অত্যন্ত সুড়সুড় করে হয়, অনেক সময় মনে হয় পেট থেকে উঠে আসছে ([Cough]Stomach: Come from the, as if:)। কাশির দমকে উঠে বসতে হয় ([Cough]Sit up, must:)। খাওয়ার পর কাশি বৃদ্ধি দেখার প্রবণতা থাকে। যদিও সর্বত্র বলা হয়, পানি পান করলে কাশির বৃদ্ধি হয় তবে পানি পান করলে যদি কাশি হ্রাস পায় তবে তা ব্রায়োনিয়াকে বিশেষভাবে ইঙ্গিত করে। আমি বহু রোগীতে এই বৈশিষ্ট্যটিকে গুরুত্ব দিয়ে ব্রায়োনিয়া প্রেসক্রাইব করেছি এবং প্রায় সময়ই এর বিশেষ গুরুত্বের প্রমাণ পেয়েছি ([Cough]Drinking, after: Amel.:) ।
কাশির সাথে শ্বাসকষ্ট। রোগী বুক ভরে শ্বাস নিতে চায় কিন্তু শ্বাস নিতে গেলে কাশি বৃদ্ধি পায় ([Cough]Inspiration, on:)। রক্তমিশ্রিত অল্প শ্লেষ্মা, কষ্টকর শ্লেষ্মা– সহজে উঠানো যায় না। নিউমোনিয়াতে এটি হোমিওপ্যাথির শুরু থেকেই ব্যাপকভাবে ইঙ্গিতবাহী হয়ে, ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে ডানদিকের ফুসফুসের নিউমোনিয়া, যা এই কভিড-১৯ সংক্রমণের হওয়া নিউমোনিয়ার একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য- তা ব্রায়োনিয়ার মধ্যে ভালোভাবেই আছে। বুকে, অথবা ডান স্কাপুলাতে চিলিক দেয়া ব্যথা- কাশলে বা গভীরভাবে শ্বাস নিলে বৃদ্ধি পায়। গরম ঘরে কাশির বৃদ্ধি।
সাধারণ সর্দি-কাশিতে আমরা অহরহ এই ঔষধটি ব্যবহার করায়, অনেকেরই এর গভীরতা ও ক্রিয়াক্ষমতা সম্বন্ধে একটি আংশিক চিত্র বা ধারণা মনের মাঝে অবচেতনভাবেই অঙ্কিত হতে পারে। মূলত এর কাজ ব্যাপক শক্তিশালী ও গভীর হতে পারে। লাগাতার বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর চলতে চলতে নিউমোনিয়া দেখা দেয়াটা ব্রায়োনিয়ার একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে সেটা টাইফয়েডের বৈশিষ্ট্যসম্বলিত হলে ([Boericke] [Fever] Type of fever: Enteric, typhoid fever: Concomitants: Pneumonia, bronchial symptoms:), যে ধরণটির সাক্ষাৎ পাবো আমরা কভিড-১৯ তে।
প্রথম পর্যায় অতিক্রান্ত হলেও কিন্তু এর ক্রিয়াক্ষমতা বিন্দুমাত্র হ্রাস পায় না। Pleuro-pneumonia, Broncho-pneumonia বা Croupous pneumonia যে প্রকারেরই হোক না কেন, ব্রায়োনিয়ার সাথে লক্ষণসমগ্রতার সাদৃশ্য থাকলে তা এটি আরোগ্য করবে। এর লক্ষণচিত্রে রোগের দ্বিতীয় স্টেইজ পর্যন্ত আমরা অনায়াসেই সাদৃশ্যটি অনায়াসেই দেখতে পাবো ([Special ] [Pneumonia] Medicines in general: Stages of disease process: Second stage (frankly developed pneumonia))। এছাড়া যেখানে নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস একসাথে দেখা দেবে, সেখানে ব্রায়োনিয়াকে বিশেষ ঔষধ হিসাবে ডা. বোগার তার রেপার্টরিতে উপস্থাপন করেছেন।
প্লুরিসি ([Chest]Inflammation:Pleura:)। সর্বত্র শুস্কতা দেখা যায়- বিশেষ করে মিউকাস মেমব্রেনগুলো (Dryness of usually moist internal parts:)। রোগীর মুখ ও গলা শুকিয়ে থাকে। প্রচুর পরিমাণ পানি একবারে খেতে চায় (Thirst:Large quantities, for:)। রেপার্টরিসহ সর্বত্র ব্রায়োনিয়ার ঠান্ডা পানি পানের আকাঙ্ক্ষার কথা আলোচিত হলেও, ব্রায়োনিয়ার রোগীর ঈষদুষ্ণ পানিতেও (Luke-warm water) আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। প্লুরিসি ও প্লুরো–নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে ডা. জেন্ট্রি এর চিত্রটাকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা দেখলে মনে হয় তিনি কভিড-১৯ এরই দ্বিতীয় স্টেইজের বর্ণনা দিচ্ছেন-
“বুক ভারী হয়ে থাকে, প্লুরাতে পানিসঞ্চয় শুরু হয়; কেটে ফেলার মতো বা ছুড়ি দিয়ে বেঁধানোর মতো ব্যথা; সাথে ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাস; রক্তমিশ্রিত শ্লেষ্মা; তীব্র জ্বর; মনে হয় মাথা ফেটে যাচ্ছে, নড়াচড়ায় বা পুরোদমে শ্বাস নিলে ব্যথা বাড়ে। ভয়ানক শীতবোধের সাথে প্রচণ্ড উত্তাপ, সাথে চর্ম শুস্ক।”
এমনকি প্লুরো-নিউমোনিয়ায় যেখানে বুকে ছুড়ি মারার মতো ব্যথা থাকবে, সেখানে ডা. নার ব্রায়োনিয়াকেই একমাত্র ঔষধ হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন। ([Knerr ] [Inner Chest and Lungs] Lungs: Pneumonia: Pleuro-pneumonia, with stabbing pains:)
রোগের তৃতীয় স্টেইজেও আমরা অন্তত কিছু অবস্থাতে ব্রায়োনিয়ার কথা অনায়াসেই চিন্তা করতে পারি। বিশেষ করে, রোগীর অর্গান ফেইলিউরের উপক্রম হলে যদি হৃদপিন্ড আক্রান্ত হয়, এর কর্মক্ষমতাহীনতার মতো অবস্থা পরিলক্ষিত হয়, তাহলে ব্রায়োনিয়ার কথা আমরা চিন্তা করতে পারি। ([Knerr ] [Heart, Pulse and Circulation]Heart: Paralysis: Threatened, in pneumonia:)। এছাড়া রোগীর নিউমোনিয়ার সাথে লিভারে জটিলতা দেখা দিলে, সেই অঞ্চলটিতে ব্যথা অনুভব হলেও আমরা ব্রায়োনিয়ার একটি ক্ষেত্র পাবো ([Gentry ] [Chest, Lungs, Bronchia and Cough]Bronchitis: Pneumonia or bronchitis right lung affected complicating liver; pain under right)।
রোগীর একটি বিশেষ মানসিক বৈশিষ্ট্যের কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। শরীরের এই ভীষণ অসুস্থ অবস্থায়ও রোগী তার দৈনন্দিন কাজ ও ব্যবসা বা চাকুরি নিয়ে চিন্তিত থাকে (Business:Talks of:Delirium, during: & Anxiety:Business, about:)। লোকজন, আলো, নড়াচড়া রোগী একদমই পছন্দ করে না। গরম ঘর পছন্দ করে না। এমনও কেইসের বর্ণনা আমি শুনেছি, যেখানে রোগীর চোখের মণি নড়াচড়া করাতেও রোগের বৃদ্ধি হয় ([Generalities]Motion: Agg.: Slightest:)।
চিকিৎসকদের মনে রাখতে অনুরোধ করছি, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা যেহেতু COVID-19 এর উপসর্গগুলো কোন অঞ্চলে আক্রমণ করে তার প্রবণতা (Affinity), গঠন-প্রক্রিয়া (Pathogenesis) ও প্রকাশভঙ্গি (Manifestation) জানি, কাজেই সেগুলোই এখানে বেশি আলোচনা করছি। কিন্তু রোগীর আরোগ্যকারী ঔষধ নির্বাচন করতে গেলে ঔষধের সাথে রোগীর সার্বিক অবস্থার সমন্বয়, সার্বদৈহিক লক্ষণগুলোর সাদৃশ্য, তথা লক্ষণ-সমগ্রতার সাদৃশ্যের প্রয়োজন পড়বে। যার বেশ কিছু ব্যাপার এখানে আলোচিত হয়েছে এবং আরো যা আছে, আমাদের যে কোন মেটেরিয়া মেডিকাতেই অনায়াসে পেয়ে যাবেন।
কভিড–১৯ তে ব্রায়োনিয়ার যে কি–নোটসগুলোতে লক্ষ রাখা যেতে পারে–
১. নড়াচড়ায় বৃদ্ধি (এমনকি সামান্য নড়াচড়ায়ও)
২. ফেটে যাবার মতো বা চিলিক দেয়া ব্যথা
৩. মিউকাস মেমব্রেনগুলোর শুস্কতা
৪. পিপাসার বৃদ্ধি
৫. অসুস্থ অবস্থায় কাজ-কর্ম, ব্যবয়ায় নিয়ে চিন্তা
৬. মেজাজ খারাপ ও খিটখিটে
৭. লোকসঙ্গে অনীহা, একা থাকতে চাওয়ার প্রবণতা
জেলসিমিয়াম (GELSEMIUM SEMPERVIRENS):
অতীতেও বহু ফ্লু-তে জেলসেমিয়াম হোমিওপ্যাথদের একটি শক্তিশালী ও প্রয়োজনীয় অস্ত্র হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেছে। এবারের এই কভিড-১৯ ফ্লু-টিরও বেশ কিছু লক্ষণ, বিশেষ করে তার প্রাথমিক অবস্থার চিত্রটি ব্যাপকভাবে জেলসিমিয়ামের সাদৃশ্য বহন করে। প্রচণ্ড ক্লান্তি ও অবসন্নতা, শরীরে ভারবোধ, গায়ে–হাতে–পায়ে ব্যথা, ক্রমান্বয়ে উপসর্গের তীব্রতা বৃদ্ধি, মাথাব্যথার সাথে চোখ লেগে আসা, জ্বর ও শীত, অল্প অল্প পানি পানের প্রবণতা ইত্যাদি লক্ষণচিত্রটি জেলসিমিয়ামকেই প্রকাশ করে। জেলসিমিয়ামের লক্ষণযুক্ত রোগীর ঘুম ও ঘুম ঘুম ভাব বেড়ে যায় এবং জ্বরের মধ্যে রোগী গভীরভাবে ঘুমাতে থাকে- এই লক্ষণটি বহুবার প্র্যাকটিসে আমি প্রমাণ পেয়েছি।
রোগীর মাথাটি ভার হয়ে যায়, বড় বড় বলে মনে হয় ([Knerr ] [Inner Head]Heaviness: Big, and (influenza):) এবং লাগাতার ব্যথা করতে থাকে ([Head Pain]General: Constant, continued:)। বিশেষ করে, মাথার পেছন দিকে। সাথে ঘুম ঘুম ভাব থাকে ([Sleep]Sleepiness: Headache: During:)। নাক দিয়ে ক্ষতকর স্রাব, উত্তপ্ত স্রাব নির্গত হতে থাকে- একদম পাতলা পানির মতো। সাথে চোখ দিয়েও পানি বের হয়। রোগ আরো অগ্রসর হলে, গলায় কফ জমে থাকার অনুভূতি হয় এবং তা তোলার চেষ্টায় রোগী কাশতে থাকে– কাশি কষ্টকর। জ্বরে রোগী প্রচণ্ড শীতবোধ করে, এমনকি শরীরও কাঁপতে থাকে ([Chill, Chilliness]Shaking, shivering, rigors:)। জেলসিমিয়ামের রোগীর জ্বরের উত্তাপের সময় পিপাসা থাকে না ([Stomach]Thirstlessness: Heat, during:)। শীতবোধের সাথে উত্তাপের পর্যাবৃত্তি জেলসিমিয়ামেও আছে ([Fever, Heat]Alternating: Chills, with:)। বিশেষ করে এপিডেমিক ইনফ্লুয়েঞ্জা (যেমন- কভিড-১৯) এর সময় সন্ধ্যার দিকে প্রচণ্ড শীত লাগার একটা অনুভূতি কাজ করতে পারে, মনে হবে শীত যেন গা বেয়ে উঠছে, শরীরের রোম সব দাঁড়িয়ে যায় ([Knerr ] [Fever]Chilliness: Creeping (crawling, horripilations): Evening, particularly toward (epidemic influenza):)। প্রচণ্ড শীত, রোগী আগুনের কাছ থেকে বা উত্তাপ থেকে সরতে চায় না ([Knerr ] [Fever]Chilliness:Warmth:Fire, cannot move away from (influenza):)।
গলা ব্যথা ও গলা বসে যায়। জ্বরের সময় শীতবোধটি পিঠে অনুভব হয় এবং তা উপরে-নিচে উঠানামা করে। রোগীর গায়ে-হাতে-পায়ে খুব ব্যথা থাকে। গ্রীষ্মের গরমে বৃদ্ধি পায়, রোগী তা সহ্য করতে পারে না। গলায় সুড়সুড় করে কষ্টকর কাশি জেলসিমিয়ামেও আছে। কোন কারণে ঘাম রূদ্ধ হয়ে উপসর্গের শুরু হলে, আমরা এই ঔষধটির কথা বিবেচনা করবো ([Knerr ] [Fever]Sweat: Suppressed: Pneumonia, congestive:)।
রোগীর মুখ ফোলা ফোলা থাকে, জিহ্বায় হলুদ আস্তর থাকে ([Mouth]Discoloration: Yellow: Tongue:), যা কভিড-১৯ রোগীর ক্রিটিক্যাল পর্যায়ের সূচনা বলে ডা. উলম্যান মতামত ব্যক্ত করেছেন। জেলসিমিয়াম Croupous pneumonia এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যার আরেকটি নাম Lobar pneumonia, যেখানে প্রদাহজনিত আবর্জনাগুলো ছোট ছোট বায়ুথলীগুলোতে (Intra-alveolar space) জমে Consolidation তৈরি করে ও ফুসফুসের লোব বা লোবগুলোর বৃহৎ অংশের ক্ষতি সাধন করে- যে চিত্রটি আমরা এই রোগটির প্যাথজেনেসিসে জানতে পাচ্ছি।
রোগীর দুর্বলতা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। মানসিকভাবে সে বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। কোনকিছুতে মনোযোগ দিতে পারে না। মানসিক অবসাদ তাকে গ্রাস করে নেয়। রোগীর ক্রমান্বয়ে প্যারালাইসিস প্রবণতা সৃষ্টি হয় এবং চোখের পাতা, গলা, বুক, ল্যারিংসে প্যারালাইসিস দেখা দিতে পারে (Weakness, enervation, exhaustion, prostration, infirmity: Paralytic:)। এমনকি রোগীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্যটিও বিঘ্নিত হয় (Confusion of mind: Muscles refuse to obey will, giddy:), একধরনের মানসিক পক্ষাঘাতজনক অবস্থা রোগীতে দৃষ্ট হয়। যদিও জেলসিমিয়াম কভিড-১৯ এর শুরুর স্টেইজেই প্রয়োজন হবার কথা কিন্তু রোগীর যদি এই পক্ষাঘাতসংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য শুরু হয়, এবং শ্বাসযন্ত্র বা ফুসফুসের ক্রিয়াক্ষমতা নষ্ট হয়ে ([Chest]Paralysis: Lung:) নিউমোনিয়া শুরু হয়, তখন সার্বিক লক্ষণ জেলসিমিয়ামকে নির্দেশ করলে- এটিই রোগীকে সেই অবস্থা থেকেও আরোগ্য করবে।
কভিড-১৯ এর আক্রমণে রোগীর একাধিক মৌলিক অঙ্গের ক্রিয়াহীনতা দেখা দেবার মতো জটিলতা সৃষ্টি হয়। গর্ভবতী মহিলাগণ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে যদি গর্ভপাতের সম্ভাবনা দেখা দেয়, তাহলে এই ঔষধটার কথা স্মরণ করতে হবে ([Female Genitalia]Abortion, miscarriage:Influenza, during:)। এরকম পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে রোগীর মস্তিস্ক আক্রান্ত হয়ে মেনিনজাইটিস দেখা দিলেও এই ঔষধটির কথা আমাদের স্মরণ করতে হবে।
জেলসিমিয়ামের কারণতত্ত্বের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে-
১. দুঃসংবাদের পর রোগের উৎপত্তি (Ailments from:Bad news:)
২. আশঙ্কা ও উদ্বেগ থেকে রোগের উৎপত্তি (Ailments from:Anticipation, foreboding, presentiment:)
আশঙ্কা, উদ্বেগ ও রোগের যন্ত্রণায় রোগীর মাঝে ভীষণ বিষণ্নতা দেখা দেবার প্রবণতা থাকে। এমনিতেও সে লোকজন, ভীড় পছন্দ করে না। একা থাকতে চায়। যে কোন মানসিক আবেগ, হঠাৎ করে পাওয়া সংবাদে ব্যাকুল হয়। রোগের দরুন সে ব্যাপক উদ্বেগাকুল থাকে ([Knerr ] [Nerves]Nervousness: Influenza, in:), তার সাথে এতসব চাপের দরুন, রোগী বিষণ্নতা এতদূর যেতে পারে যে, রোগ আত্মহত্যা করতে উদ্যত হয় ([Mind] Suicidal disposition:)।
কভিড-১৯ এর আক্রমণ থেকে বেঁচে যাবার পর, তার কোন জের বা উপসর্গ যদি চলতেই থাকে, তাহলে এই ঔষধটিকে আমাদের আরেকবার স্মরণ করতে হবে ([Phatak ] [Phatak A-Z]Never well, since: Influenza:)।
চলমান মহামারীতে এই উদ্বেগ ও দুঃসংবাদ আমাদের নিত্য-সঙ্গী হিসাবে বর্তমান, সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি করতে আমরা বাধ্য এবং বহুমুখী কারণে বিষন্নতা আমাদের ঘিরে আসছে। কাজেই, বহু মানুষের মাঝে জেলসিমিয়ামের উপসর্গ নিয়ে রোগটির আত্মপ্রকাশ আশ্চর্যের কিছু নয়। তার সাথে আমরা শুরুতেই দেখেছি- কভিড-১৯ এর প্রাথমিক চিত্রটির সাথে জেলসিমিয়ামের কি পরিমাণ সাদৃশ্য দৃষ্টিগোচর হয়। কাজেই, রোগের শুরু থেকেই এই ঔষধটির প্রয়োগের সম্ভাব্যতার দিকে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে।
এর যে কি-নোটস গুলোর দিকে আমরা বিশেষভাবে লক্ষ রাখবো-
১. নির্জীবতা, মাথা ঘুরানো, ঘুম ঘুম ভাব, কম্পন
২. মানসিক অবসাদ, অবসন্নতা, উদাসীনতা এবং মনোযোগ ধারণ করতে অসামর্থতা।
৩. আশে পাশে কেউ থাকুক তা চায় না, কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে না।
৪. উদ্বেগজনিত স্নায়বিক ডায়রিয়া দেখা দেয়, তারপর থেকেই সমস্ত উপসর্গের শুরু।
৫. মানসিক, আবেগজনিত ও শারীরিক দুর্বলতা।
৬. ক্রমান্বয়ে পক্ষাঘাত প্রবণতা।
৭. পিপাসাহীনতা
৮. সমস্ত উপসর্গের সাথে তন্দ্রাচ্ছন্নতা
Discussion about this post