অনুবাদ: ডা. পি. গুপ্ত:
Dr. Luc De Schepper, হোমিওপ্যাথির গুরুস্থানীয় চিকিৎসকদের মধ্যে একজন। আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা, তিনি গ্রাজুয়েশন করেছিলেন এলোপ্যাথিক চিকিৎসক হিসাবে এবং এরপর তার হোমিওপ্যাথিতে আসার ব্যাপারে তিনি নিজেই যা বলেছেন……………
যখন কোন এলোপ্যাথিক চিকিৎসক, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসাবে নিজেকে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন, সাধারণত তার পেছনে একটি চিত্তাকর্ষক ঘটনা থাকে। আমার (এলোপ্যাথিক) চিকিৎসা শুরুর প্রথম দিনটির শুরু থেকে শেষ অব্দি ছিলো দুর্যোগপূর্ণ।
27 বৎসর আগে, বেলজিয়ামে মেডিক্যাল কলেজ থেকে যখন গ্র্যাজুয়েট হলাম, মনে হচ্ছিলো আমি ডা. সুইটজার আর সুপারম্যানের সম্মেলনে তৈরী একটা কিছু। আমার কালো ব্যাগ ভর্তি ঔষধ আর ইঞ্জেকশন, হৃদয়ভর্তি মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা আর উৎসাহ তখন সর্বোচ্চ শিখরে। প্রথমদিন যখন আমি আমার অফিস খুললাম, (সহকারী রাখার সামর্থ্য না থাকায়) আমার স্ত্রীকে বলে রেখেছিলাম, দৈবানুগ্রহে যদি কোন রোগী এসে পড়ে, সে যেন তাকে বলে, ডাক্তার সাহেব খুব ব্যস্ত এবং সে যেন রোগীকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করায়। কারণ ডাক্তার রোগীর জন্য পথপানে চেয়ে বসে আছে, এটা দেখতে মোটেই ভালো দেখায় না। অবশেষে যখন ডোরবেলটি বেজে উঠলো, আশার প্রদীপটি নিমেষেই জ্বলে উঠলো পূর্ণোদ্যমে। আমার স্ত্রী দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো আর আমি লুকানোর রাস্তা খুঁজছিলাম। অতঃপর যেভাবে তাকে শিখিয়ে পড়িয়ে রাখা হয়েছিলো, ঠিক সেভাবে আমার স্ত্রী দরজায় দাঁড়ানো লোকটিকে বললেন, “আমার স্বামী একটু পড়েই আপনার সাথে কথা বলবেন। তিনি ফোনে তার একজন রোগীর সাথে কথা বলায় ব্যস্ত।” লোকটি হতবুদ্ধি হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে, বললেন, “ব্যাপারটা তো সাংঘাতিক অদ্ভুত! আমি ফোন কোম্পানি থেকে এসেছি, আপনাদের ঘরে ফোন লাগানোর জন্য।”
কী ভীষণ লজ্জা! তথাপি আমার এই বেদনাদায়ক যাত্রা তখনও শেষ হয়নি। আমার প্রথম সত্যিকারের রোগী ছিলো, মাথাব্যথার সমস্যা নিয়ে আসা 15 বৎসরের একটি মেয়ে। তার মাথাব্যথা আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে দেখা দেয়, এবং গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো, বেলজিয়ামের আবহাওয়া দিনে চার বার পরিবর্তন হয়। বাজারে পাওয়া যায় এমন সমস্ত মাথাব্যাথার ঔষধ সে ইতঃমধ্যে ব্যবহার করে ফেলেছেন, এবং এখন ভাবছেন মেডিক্যাল কলেজ থেকে সবেমাত্র বেরোনো এই নতুন ঝরঝরে পিস্তলের অস্ত্রশালায় হয়তো তার মাথাব্যথা দূর করার কোন নতুন অস্ত্র আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমার কাছে তা ছিলো না।
এই টেলিফোন ও মাথাব্যথার ফাঁড়া কাটার পরে, আমার নিজের মাথাব্যথার জন্যে Aspirin খেতাম আর সময়ে সময়ে ভাবতাম, এই এলোপ্যাথিক চিকিৎসার বাইরেও অবশ্যই মানুষের জীবন বাঁচানোর অন্য কোন পন্থা আছে। এরপর, সেই 27 বৎসর আগে থেকে এখন অব্দি, কখনোই (সেই পথটা জানার লক্ষ্যে) আমি পড়াশুনা করা বন্ধ করিনি। আমি আমার সমস্ত (প্রচলিত) মেডিক্যাল টেক্সটবুক সরিয়ে সেখানে আনলাম আকুপাংচার আর হোমিওপ্যাথির বই। আর তখন থেকে আমি বেশ কিছু Holistic (যারা সামগ্রিক মানুষটাকে একটা অখন্ড ইউনিট ধরে নিয়ে চিকিৎসা করেন) পদ্ধতি শিখেছি এবং প্রাকটিস করেছি, যার মধ্যে আছে Natural Food Nutrition, Vitamins, Supplements এবং Herbs। বিগত আট বৎসর যাবৎ আমি এককভাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করে যাচ্ছি, কারণ এটা সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী, কাজ করে সবচেয়ে গভীরভাবে, ও দ্রুত এবং অন্য সব পদ্ধতির চাইতে রোগী অনেক বেশি উপকৃত হয়। আজ আমি এর জন্য কোন অনুতাপ করি না। বরঞ্চ উল্টো আমি মনে করি, আমার রোগীদের নিকট থেকে অনেক বেশি সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা আমি পেয়েছি; এত বেশি আত্ম-সন্তুষ্টি পেয়েছি, যা আমি একজন এলোপ্যাথিক চিকিৎসাক হিসাবে থাকলে স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না।
আমি যতগুলো আরোগ্যকারী পদ্ধতি পড়েছি, তার মধ্যে হোমিওপ্যাথিকে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ হিসাবে পেয়েছি। হোমিওপ্যাথি রোগীকে স্বতন্ত্র হিসাবে গ্রহণ করে। ঔষধ নির্বাচন শুধুমাত্র রোগীর লক্ষণগুলো বিবেচনা করেই করা হয় না, রোগীর ব্যক্তিত্বের ধরণ ও তার অসুস্থতার কারণকেও বিবেচনা করে। কোন রোগীর ল্যাব টেস্ট স্বাভাবিক আসার পরেও যদি রোগী অসুস্থ বোধ করে, আমরা তাকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করি, তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি। ফলাফলস্বরূপ, আমরা সত্যিকারভাবে রোগীকে বোঝার, জানার জন্য সময় দিই, এবং অনেকসময় রোগী শুধুমাত্র এই নিরপেক্ষভাবে কথা শোনার দরূনই ভালো বোধ করতে থাকে বলে জানায়। হোমিওপ্যাথি আমাদের রোগীর ‘কেন’ গুলোর ব্যাপারে আগ্রহী: কেন সে অসুস্থ হয়েছে? কেন জীবনের কোন একটা বিশেষ অবস্থায় রোগী একটা বিশেষ ধরণের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে? কেন সে এধরণের আবেগ অনুভব করছে?
এটা মানবপ্রকৃতির গভীরতর অনুসন্ধ্যানে নিয়োজিত এবং আমাদের প্রেসক্রাইবিংয়ে রোগীর মানসিক/আবেগীয়-গঠন চূড়ান্ত গুরুত্ব পায়। হোমিওপ্যাথি শরীরের নিজস্ব আরোগ্যকারী শক্তি, Vital Force – এর সাথে সমন্বিতরূপে কাজ করে। এবং এটা রোগীকে সবল করে: প্রেসক্রিপশনের দিক-নির্দেশনা পাওয়ার লক্ষ্যে প্র্যাকটিশনার রোগীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং ঔষধের প্রতি রোগীর প্রতিক্রিয়াকে মূল্যায়ন করেন, রোগীকে তার নিজের শরীরের নির্দেশনা শুনতে উৎসাহী করে তোলেন। অন্য প্রায় সমস্ত পদ্ধতির চাইতে, হোমিওপ্যাথিতে রোগী এবং চিকিৎসকের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সবচেয়ে সুন্দরভাবে ভারসাম্যপূর্ণ, যা রোগী ও চিকিৎসক দু’জনের জন্যই উপকারী।