এব্রোটেনাম উৎস: উদ্ভিজ।
কাতরতা: শীতকাতর।
ধরণ: দীর্ঘক্রিয় ও গভীরক্রিয়, ব্যক্তিলক্ষণ ভিত্তিক, অন্তবর্তীকালীন, ক্রণিক ও শিশুপ্রধান ঔষধ।
ধাতুগত বৈশিষ্ট্য: চেহারা: শরীরের নিচের অংশ অর্থাৎ পায়ের দিক শীর্ণ ও শরীরের চামড়া ঢিলা।
ধাত/স্বভাব: অসুস্থ প্রকৃতির ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির।
মায়াজম: সোরিক, সাইকোটিক। (এর সকল সমস্যার মূলে সোরা)।
প্রবণতা: টিউবারকুলার

কারণ: হঠাৎ ডায়রিয়া বন্ধ হলে বা শরীর থেকে অন্যকোন তরল পদার্থ বের হওয়া বন্ধ হলে। ঠিকমত হজম না হওয়া, শরীরে পুষ্টি সাধন না হওয়া। ফুসফুসের পাশে প্লুরার ক্যাভিটিতে জমে থাকা জল অপারেশনের পর।
মূল কথা: এক রোগ থেকে অন্য রোগে রূপান্তরিত হয়, কিম্বা পর্যায়ক্রমে এক রোগ থেকে অন্য রোগ দেখা দেয়। নিষ্ঠুরতার সাথে জীব হত্যা করে বা কারো ক্ষতি করে। “নিষ্ঠুর ও পর্যায়ক্রমে” এই দু’টি শব্দ মনে রাখলে ঔষধটিকে সহজে চেনা ও মনে রাখা যায়। অর্থাৎ এরা খুব নিষ্ঠুর প্রকৃতির। আর পর্যায়ক্রমে এদের একটার পর একটা রোগ লেগেই থাকে।
ওষুধের নামের মধ্যেই মূল লক্ষণসমূহ অন্তর্নিহিত যথা:
Abrotanum
A: Alternating symptoms: পর্যায়ক্রমে লক্ষণ পরিবর্তন হয়।
B: Behave unfriendly: অভদ্র আচরণ।
R: Restlessness: অস্থির।
0: Obstinate: একগুঁয়ে।
T: Talk indisposed to: কথা বলতে অনীহা।
A: Anxiety: উদ্বেগ।
N: Navel of Newborn from, oozing of blood and moisture: জন্ম নেওয়া নতুন শিশুর নাভী হতে রক্ত, রস ঝরে।
U: Unfeeling: সহানুভূতিহীন।
M: Morose: বিষন্ন।

মানসিক লক্ষণ: খুব নিষ্ঠুর প্রকৃতির, নিষ্ঠুরভাবে কিছু করতে দ্বিধা করে না। ভীষণ রাগী, খিটখিটে (এব্রোটে. এবিসিন্থি, এনাকা, নাক্স-ভ. ওপিয়াম. প্লাটিনা) ও বাচাল। মায়া দয়াহীন। নিষ্ঠুরতার সাথে পোকা মাকড় বা প্রাণী মারে, বা তাদের ক্ষতি করে। শিশুরা মনমরা, খিটখিটে, বিরক্ত মেজাজের হয়। বয়স্ক মহিলারা উৎসাহহীন, উদ্বিগ্ন, বিরক্ত, মনুষ্যত্বহীন, বিবেকহীন, নিষ্ঠুর প্রকৃতির হয়। কারো সাথে কথা বলতে চায় না। বিষন্ন, বাচাল, খুঁতখুঁতে। উত্তেজনার সময় চিৎকার করে, বেশি কথা বলে। পায়খানা পরিষ্কার হলে মন খুশি থাকে, তখন বেশ কথা বলার প্রবৃত্তি থাকে।
অদ্ভুত লক্ষণ: মনে হয় পাকস্থলী যেন ঝুলে আছে বা পানিতে ভাসছে। মনে হয় পাকস্থলী যেন সুতা দিয়ে ঝুলানো আছে: (নেট্রাম মিউর)।
রোগী: ভুল চিকিৎসার ফলে কোন রোগ থেমে, বা উপশম হয়ে অন্য রোগ হলে এব্রোটেনাম ভাবা উচিত (ডা. নীলমনি)। এক কথায় এক রোগ থেকে অন্য রোগ হওয়ার প্রবনতা। শরীরের কোন যন্ত্র আক্রান্ত হওয়ার পর অচিকিৎসা বা কুচিকিৎসার ফলে অন্য কোন যন্ত্র আক্রান্ত হলে এব্রোটেনাম। এব্রোটেনামে সাধারণত শিশুরা শীর্ণতা বা পুঁয়ে পাওয়া রোগে আক্রান্ত হয়। জন্মের পর নাভী শুকাতে দেরী হয়। প্রচুর রক্ত, রস ঝরে। নাভী শুকাতে দেরী হচ্ছে বা দেরী হয়েছিল। অনেক দিন পর্যন্ত রস-রক্ত পড়ছে বা পড়তো এমন লক্ষণ পেলে ভাবতে পারেন: এব্রোটে, ক্যাল্ক-কার্ব, ক্যাল্ক-ফস, কেলি কার্ব, নেট্রাম মিউর।

এর যে কোন রোগ পা হইতে শুরু হয়ে উপর দিকে যায়। যদি পায়ের দিক থেকে শুকাতে আরম্ভ হয়ে ক্রমশ উপরদিক শুকাতে থাকে ও সর্বশেষ মুখমন্ডল শুকিয়ে যায় তবে এব্রোটেনাম (ডা, নীলমনি)। শরীরের উপরের অংশের তুলনায় নিচের অংশ চিকন, বিশেষত পায়ের নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত। শরীরের চামড়া বৃদ্ধ মানুষদের মত ঢিলা। মুখমণ্ডল বয়স্কদের মত। পেট বড়। রোগ ও মন পরিবর্তনশীল।
প্রচুর পরিমাণে অজীর্ণ মলত্যাগ করে। আবার মাঝে মাঝে পায়খানা হতে চায়না। শিশুদের নিম্নাঙ্গের শুস্কতা তার সঙ্গে প্রচন্ড ক্ষুধা ও খুব বদহজম। জ্বালাকর, খিচেধরা বেদনা, এবং কোন কোন সময়ে দুর্গন্ধ বমি (ডা. ক্লার্ক)। প্রচুর খায় তবুও শরীর শুকিয়ে যায় এবং শুকিয়ে যাওয়া লক্ষণটি পায়ের দিক থেকে শুরু হয়। এই লক্ষণদু’টি শুধুমাত্র এব্রোটেনাম ও ক্যারকেরিয়া-কার্বের মধ্যে আছে। তবে পর্যায়ক্রমে কোষ্ঠবদ্ধতা ও উদরাময় ক্যালকেরিয়া-কার্বে নাই। শুধু এব্রোটেনামে আছে (ডা. এ. আলী)।

এব্রেটেনামের রোগীর রাক্ষুসে ক্ষুধা থাকে অথচ এরা যতই খায় গায়ে লাগে না। এই লক্ষণে: আয়োডাম, নেট্রামমিউর, স্যানিকুলা, টিউবারকুলিনাম।
শীর্ণতা রোগে এব্রোটেনামের সাথে তুলনীয়: ইথুজা, আয়োডি, ট্রোম-মি, সাইলি, ক্যালকে-ফস, টিউবারকুলি, সালফ) ডা. দুবে।
প্রথমে পায়ে শীর্ণতা প্রকাশ পেলে: এব্রোটে, এপিস, বোভিষ্টা, ক্যালকে-কা, ক্যাপসি, নাক্স-ভ। (সেলি, সিফিলি, থুজা, চায়না, নাই-এসি, বেঞ্জ-এসিড)।
নিম্নাঙ্গের, অর্থাৎ কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত শীর্ণতা: এব্রোটে, এপিস, আর্জেন্ট-না, আর্স, প্লাম্ব, ল্যাকে, নেট্টা-মি, নাই-এ, ফস-এ, সেলিনি।
শরীরের উপর থেকে অর্থাৎ প্রথমে গলা থেকে শুকিয়ে পরে নীচ দিকে যায়: লাইকোপডিয়াম, নেট্রা-মিউর, সোরিনাম।
পায়খানা পরিস্কার হলে মন খুশি থাকে, তখন বেশি কথা বলতে চায়। বেশি কথা বললে, মাথায় দুর্বলতা অনুভব করে। শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। মাথা সোজা রাখতে পারেনা। ঘাড় দুর্বল। চোখের চারদিকে কালো দাগ পড়ে।
পরিবর্তনশীল রোগলক্ষণ: পর্যায়ক্রমে উদরাময় ও কোষ্ঠবদ্ধতা (এন্টিম-ক্রড, চেলিড, এসিড-না, নাক্স, ওপিয়া, পালস)। বাতের সাথে পর্যায়ক্রমে অর্শরোগ। হঠাৎ বাত চাপা পড়ে অর্শ। অথবা বাত ভাল হইয়া অর্শ দেখা দেয়। উদরাময়ের সাথে পর্যায়ক্রমে বাত (এক্টিয়া-রেসি, কেলি-বাইক)। আমাশয়ের সাথে পর্যায়ক্রমে বাত। হঠাৎ বাত চাপা পড়ে হার্টের রোগ, নাকের রক্ত পড়া, রক্তপ্রস্রাব, কাঁপুনি ইত্যাদি দেখা দেয়। উদরাময় চাপা পড়ে হার্টের অসুখ। হঠাৎ ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে অর্শ। কোষ্ঠবদ্ধ হলে বাত রোগে আক্রান্ত হয় কিম্বা বাত ব্যথা বাড়ে। মামসের ব্যথা বা গলা ব্যথা হতে অণ্ডকোষের প্রদাহ হয়। বাত গিট থেকে হৃৎপিণ্ডে যায় (লিডাম, ক্যালমিয়া, অরম-মেট)। বাত গিট থেকে মেরুদণ্ডে যায়। মাম্পস এর ব্যথা গ্রন্থিতে স্থান্তরিত হয়।
স্থানীয় লক্ষণ: খাবার ঠিকমত হজম হয় না, শরীরে পুষ্টি সাধন হয় না। শিশুদের খুব দুর্বলতা, মাথা সোজা করতে পারে না। ক্রমান্বয়ে শিশুদের পায়ের দিক থেকে শুরু করে শরীরের উপর দিক শীর্ণ হতে থাকে।
সহগামী লক্ষণ: প্রচণ্ড ক্ষুধা, যথেস্ট খায় তবুও ক্রমান্বয়ে শরীর শুকাতে থাকে। সেই সাথে খুব দুর্বলতা, অবসাদ ও এক। ধরণের জ্বর থাকে। শিশুরা প্রচণ্ড কোষ্ঠবদ্ধতা ও উদরাময়ের পর সাধারণত অজীর্ণ মল ত্যাগ করে। এর শিশুরা অবাধ্য, নিষ্ঠুর, খিটখিটে, উত্তেজনা প্রবণ ও অসুস্থ প্রকৃতির।
বাত ও গাউট: হঠাৎ উদারাময়, আমাশয় বা অন্য কোন তরল পদার্থ অবরুদ্ধ হয়ে বাত ও গাউট দেখা দেয়। বিশেষষত। পায়ের গোড়ালী ও কব্জি ফোলে। ফোলার পূর্বে খুব ব্যথা শুরু হয়। আড়ষ্ঠ হয়ে থাকে এবং সাঙ্ঘাতিক ব্যথা ও সুঁচ ফুটানোর মত অনুভূতি হয়। ব্যথায় রোগী কাতরায়। গোড়ালি, গিট, কব্জি ছাড়া বাতে আক্রান্ত অন্যান্য স্থান ফোলে না। তবে সাঙ্ঘাতিক ব্যথা হয়। গিটগুলি শক্ত, ফোলা, সাঘাতিক ব্যথা, সারা শরীরে পঙ্গু ও ঘা এর মত অনুভব হয়, বিশেষত গোড়ালি, গিট ও কব্জিতে। রাতে, ঠাণ্ডা থেকে বৃদ্ধি। নড়াচড়ায় উপশম (ডা. দুবে)।

কোমর ব্যথা প্রায় রাতে বাড়ে। শীর্ণতা, বাত ব্যথাসহ যে কোন রোগ নিচদিক থেকে শুরু হয়ে উপর দিকে যায়। যদি জানা যায় বাত ব্যথা নিচ থেকে অর্থাৎ পা থেকে শুরু হয়ে উপর দিকে যাচ্ছিল হয়তো হাঁটু, কোমর, ঘাড় পর্যন্ত যাওয়ার পর ভুল চিকিৎসার কারণে বাতব্যথা চাপা পড়ে হার্টের সমস্যা দেখা দিয়েছে তবে এব্রোটেনাম ও লিডাম-পাল ও ক্যালমিয়া-ল্যাট।
এব্রোটেনাম ঠাণ্ডায় বৃদ্ধি, গরমে ও নড়াচড়ায় উপশম। লিড়াম পাল গরমে ও নড়াচড়ায় বৃদ্ধি, ঠাণ্ডায় উপশম। ক্যালমিয়া-ল্যাটে ঠাণ্ডা বাতাস, ঠাণ্ডা আবহওয়ায়, সন্ধ্যায় বৃদ্ধি, বিশ্রামে ও গরম সেঁকে উপশম। বুকে কষ্টদায়ক চাপবোধ থাকে। আক্রান্ত পাশে, বেদনা থাকার দরুণ, নিশ্বাস প্রশ্বাসে অসুবিধা হয়। এই সমস্ত ক্ষেত্রে আমরা এব্রোটনামের কথা চিন্তা করতে পারি। সন্ধি স্থানে, ওভারিসহ এখানে সেখানে খামচানো, তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা।
মুখমন্ডলে কোন প্রকার উদ্ভেদ হলে তা যদি কোন প্রকার বাহ্য প্রলেপ দিয়ে সারানো হয়, তবে বেগুনী বর্ণের দাগ থেকে যায়। সে ক্ষেত্রে এব্রোটেনাম দিলে, দাগ দূর হয়ে মুখের সৌন্দর্য ফিরে আসে।
অস্বাভাবিক লক্ষণ নিয়ে শিশুর জন্মলাভ। যথা: অণ্ডকোষে জল জমে থাকে। নাভী থেকে রস ও রক্ত ক্ষরণ হয়। বমির কারণে শিশু শীর্ণ হয়, চামড়া বৃদ্ধের কুঁচকানোসহ পানি স্বল্পতা থাকে।
ফিজিক্যাল জেনারেল: বেশি বেশি খায়। পাকস্থলীতে ঠাণ্ডা বোধ। রাক্ষুসে ক্ষুধার সাথে শরীর শুকিয়ে যাওয়া ঔষধগুলির মধ্যে এব্রোটেনাম, ক্যালকে-কার্ব, পেট্রোলি, ফসফরা, সালফ, সোরিণাম, টিউবারকুলিনাম শীতকাতর আর আয়োডিয়াম ও নেট্রাম গরম কাতর (ডা. এ, আলী)।
পছন্দ: রুটি, গরম দুধ, গরম দুধে রুটি ভিজিয়ে খেতে পছন্দ।
ঘাম: প্রচুর ঘাম।
নিদ্রা: নিদ্রাহীন বা ঘুমঘুম ভাব।
বৃদ্ধি: ঠাণ্ডায়, ঠাণ্ডা বাতাসে, শীতকালে, কুয়াশায়, স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায়, বর্ষাকালে, বৃদ্ধি। রাতে, উদরাময় ও স্রাব অবরুদ্ধ হলে ও কোষ্ঠবদ্ধে রোগ বৃদ্ধি।
উপশম: তাপে, সঞ্চালনে, আহারের পর, উদরাময়ে উপশম।
অনুপূরক: একোনাইট, ব্রায়োনি, হিপার। তুলনামূলক: বেঞ্জ-এসি, (গাউটের ব্যথায়), আয়োডিন, নেট্রাম মিউ (শুস্কতায়)।
Discussion about this post