[সম্পাদকের কথা: এটি শ্রদ্ধেয় ডা. জে. এন. কাঞ্জিলালের আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘Metamorphosis of an Allopath’ এর পর্যালোচনার ভিত্তিতে ডা. অমরনাথ চক্রবর্তীর অনবদ্য সৃষ্টি। এর আগের অংশটি ‘একজন অ্যালোপ্যাথের চেতনার উন্মেষ’ শিরোনামে হোমিও-ডাইজেস্টেরই প্রবন্ধ বিভাগে এর আগে প্রকাশিত হয়েছে। এখানে ডা. জে. এন. কাঞ্জিলালের হোমিওপ্যাথিকে চরমভাবে ঘৃণা করা একজন অ্যালোপ্যাথ থেকে হোমিওপ্যাথির একজন যুক্তিনিষ্ঠ প্রধান প্রবক্তায় রূপান্তরের বিবরণ ডা. কাঞ্জিলালের নিজের কথার ভিত্তিতেই সুন্দরভাবে অঙ্কিত হয়েছে। ডা. অমরানাথ স্যার তাঁর জীবনী থেকে উপযুক্ত শিক্ষাটিতে অঙ্গুলিনির্দেশ করে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন- কিভাবে সঠিক পথকে বেছে নিতে হয়, কিভাবে তাতে শত প্রতিকূলতায়ও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে হয়!]
আগের পর্বের লেখাটি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, হোমিওপ্যাথিও জরুরি অবস্থায় প্রাণদায়ী হতে পারে। তার থেকেও বড় কথা অণুজীব সংক্রমণ অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াও আরোগ্য হয়। তাহলে এর দ্বারা প্রমাণিত হল যে- সংক্রমণ এই রোগের প্রকৃত কারণ নয়। এটা যে কোন সংক্রমণের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, আগামী দিনে সংক্রমণজনিত রোগ মহামারী আকার ধারণ করবে।
নিত্য-নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার সত্ত্বেও সংক্রমণের ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সবচেয়ে বড় বিপদ এই সব অণুজীব আত্মরক্ষার জন্য নিজের চরিত্র বদল করে ফেলছে- ফলে পুরানো অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ হচ্ছে না। চরিত্র বদল করা অণুজীবের আক্রমণে মানুষ অসহায়।
এখনো অণুজীবের অন্তর্গত ভাইরাসের কোনো চিকিৎসা নাই। তাই টিকা দিয়ে এর সমাধান সম্ভব নয়। প্রশ্ন হচ্ছে কত প্রকার অণুজীবের টীকা নেওয়া সম্ভব? আর কত প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার সম্ভব? আমরা দেখতে পাচ্ছি- এর কোন সমাধান নেই। মানুষের আক্রান্ত হবার প্রবণতা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। আমরা মনে করি একমাত্র সমাধান হোমিওপ্যাথিতে আছে- মায়াজম নাশক চিকিৎসার মাধ্যমে।
পিউপেরাল সেপসিস আরোগ্য হবার পরে ডা. কাঞ্জিলালের মনে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তা তার নিজের ভাষাতেই শুনুন-
“Along with the gush of wind, this event brought in a flood of light to all my dark views of the field of therapeutics and a spirit of some hope in my vacant heart, coming to be aware of the existence of an effective therapy really beneficial to human race.”
আর আজ আমাদের হোমিও-চিকিৎসকদের মধ্যে (হোমিওপ্যাথ নয়) যারা জরুরি চিকিৎসার জন্য অ্যালোপ্যাথি ব্যবহারের জন্য আন্দোলন করছেন- তারা বাংলার হোমিওপ্যাথির ইতিহাস ভুলে গেছেন। হোমিওপ্যাথিকে ভালবেসে, কোনো কলেজে না পড়ে- বাংলার ভয়ংকর কলেরার সঙ্গে লড়াই করে হোমিওপ্যাথিকে বাংলায় প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর আপনারা হোমিওপ্যাথিকে কোথায় নামিয়ে আনছেন!
সত্যকে উপলব্ধি করে মনের আমূল পরিবর্তন হলো ডাঃ কাঞ্জিলালের। হোমিওপ্যাথ বন্ধুর পরামর্শে অ্যালেনের কি-নোট এবং এন. সি. ঘোষের কমপারেটিভ ও মেটেরিয়া মেডিকা বই দুটি কিনলেন। কিন্তু অচিরেই উপলব্ধি করলে এই পরামর্শটি মারাত্মক ভুল। প্রাথমিকভাবে এই উপদেশটি ন্যাসের ‘লিডার’ হলে ভাল হতো। এই বই দুটি পড়ে তখন তার কি দুরবস্থা হলো সেটা তাঁর লেখাতেই পড়ুন-
“But my initial enthusiasm was greatly damped on going into these books where I found all the medicines having all sorts of symptoms; any remedy being suitable for any and all diseases rather than being specific for certain groups of disease like quinine for Malaria, antimony for Kala-azar, arsenic for syphilis and so on; selection of medicine depending on whether they affect the right side or the left side, whether the pain is of burning or aching or cutting or lancinating character relieved by heat or cold and all such flimsy data having absolutely no significance to my mind, grounded in solid pathology.”
ফলে মেটিরিয়ার প্রতিটি বিষয় তার কাছে বিভ্রান্তিমূলক বলে মনে হলো। তবুও তিনি বই দুটি পড়ে যেতে লাগলেন। তিনি পড়লেন কারণ তিনি বিষয়টিকে মোটেই হালকা ভাবে গ্রহণ করেননি। যেটা তিনি একবার গ্রহণ করেন- তার শেষ দেখে তবেই ছাড়েন। এটা তার বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আমরা না পারলে হতাশ হতে শুরু করি আর হোমিওপ্যাথির নীতি-নিয়ম বিসর্জন দিয়ে অথবা হোমিওপ্যাথিকে ত্যাগ করে কেউকেটা বনে যাই। তিনি সত্য নিষ্ঠায় ছিলেন অবিচল। তার চারিত্রিক দৃঢ়তা আমাদের শিক্ষণীয়।
এই রকম হতাশাজনক পরিস্থিতিতে তিনি ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮ অধুনা বাংলাদেশের খুলনার দৌলতপুর গ্রামে প্রাইভেট প্রাকটিস শুরু করলেন। এই এলাকায় তখন ম্যালেরিয়া মহামারী আকার ধারণ করেছিল। এরূপ অবস্থায় তার মানসিক পরিস্থিতি কেমন ছিল সেটাই আজকের আলোচ্য বিষয়।
(ক) অর্গানন ও দর্শনকে বাদ দিয়ে মেটেরিয়া মেডিকার কিছু লক্ষণ না বুঝেই মুখস্থ করেছিলেন। সোজা কথায় নির্বোধের মতো মাথায় ঢুকিয়ে ছিলেন।
(খ) মেটেরিয়া মেডিকার লক্ষণগুলি সত্য বা এর দ্বারা রোগ আরোগ্যের উল্লেখযোগ্য প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বা আরোগ্যের প্রমাণ তাঁর হাতে বিশেষ ছিল না। তখন তার ধারণা ছিল, প্রকৃত হোমিওপ্যাথি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাল ফল প্রদান করে- যেখানে অ্যালোপ্যাথি ব্যর্থ। কিন্তু তিনি তখন জানতেন না- হোমিওপ্যাথিতে কিভাবে রোগ আরোগ্য হয়; সে সম্পর্কে তাঁর স্পষ্ট ধারণা ছিল না। মেটেরিয়া মেডিকাকে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তখন তিনি স্পষ্ট বুঝতেন না। তবুও তিনি হতাশ হননি। তার স্বভাব ছিল –
“It is never my habit to accept or reject anything without personal evidence.”
(গ) তখনও অ্যালোপ্যাথির কিছু সদর্থক দিক আছে এই রকমের ধারণা তার মনের মধ্যে গেঁথে ছিল। তার ধারণা ছিল যেমন কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া, আমাশয়, সিফিলিস চর্মরোগে অ্যালোপ্যাথির নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা আছে। এখানে দেখা যাচ্ছে যে, তিনি দোদুল্যমান অবস্থায় ছিলেন। হোমিওপ্যাথি কিছু রোগে অচল এরূপ ধারণাও তার ছিল।
তিনি ঐরূপ দোদুল্যমান অবস্থায় প্র্যাকটিস শুরু করলেন-
“In such mental set up, I started private practice as an allopathic general practitioner with specialisation in Gynae and Obs. I carried out a fair stock homeopathic medicines also simply for experiment purposes.”
তিনি কেমন ভাবে পরীক্ষা করতেন তা তাঁর লেখা থেকেই জানা যাক। যেসব রোগ অ্যালোপ্যাথি সারাতে পারেনা সেগুলিতে তিনি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দিতেন। কিন্তু তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সন্দেহে ভরা। তবে পরীক্ষায় কিছু ভাল ফল পেয়েছিলেন। এই ভাল ফলের জন্য তাঁর কোনো কৃতিত্ব নাই বলে তিনি মনে করেন। কারণ তখন মেটেরিয়া মেডিকার মতো রোগের চিত্র সহজেই স্পষ্ট রোগীর মধ্যে পাওয়া যেত।
এই ব্যাপারে লেখাটি অনেক পরে লেখা- যখন তিনি উপলব্ধি করেছিলেন লক্ষণ আগের মতো স্পষ্ট পাওয়া যাচ্ছে না। একদম ধ্রুবসত্য বলেছেন! আমিও দেখেছি আজ থেকে ২০ বছর আগে যতো স্পষ্ট লক্ষণ পেতাম এখন অনেক ক্ষেত্রেই তা পাইনা বেশ কিছু ভুল করে আমি একটু অন্যভাবে চেষ্টা করছি। বর্তমানে বংশের ইতিহাস, অতীতের ওপর বেশ নজর দিচ্ছি। বিশেষ করে মানসিক লক্ষণ কারণ এগুলি তুলনামূলক ভাবে বেশি স্পষ্ট। বর্তমানে সবচেয়ে মুশকিল হচ্ছে ওষুধের যথেচ্ছ অপব্যবহারের ফলে কৃত্রিম রোগের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আসল বা নকল লক্ষণ ঠিক ঠিক বোঝা বেশ কঠিন । আগামী দিনের চিকিৎসকদের আরও বেশি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে।
তাঁর সময়ে রোগীর চিত্র মেটেরিয়া’র চিত্রের সঙ্গে মিলে যেত, ফলে তার চিকিৎসা করতে খুবই সুবিধা হতো। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে রোগীর চিত্র জটিল হতে শুরু করল। কারণ স্বরূপ তিনি মনে করেন-
“In the post war period complicated by various factors, most important of which are-
(a) denaturalization in every sphere of life,
(b) advent of innumerable, highly potent suppressive drugs in the Orthodox school of medicine.”
তাহলে বর্তমানকালে কি ভয়াবহ অবস্থা ভাবলেই গা শিউরে ওঠে! নতুনদের পক্ষে যথাযথ লড়াই করা খুবই কঠিন। আবার নতুনরা যদি এটা যুদ্ধ হিসাবে গ্রহণ করে তবে হারাবার কিছু নেই বরং পাবার জন্য আছে গোটা বিশ্ব। তবে অবশ্যই নীতি-নির্ভর হতে হবে।
উক্ত সময়ে হোমিওপ্যাথির প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল এই উদাহরণটি দিলেই আপনাদের কাছে সব পরিস্কার হয়ে যাবে। এই ঘটনাটি তাঁর জীবনের দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন সাধন করে। তিনি বলছেন, একদিন সকালে এক যুবক দৌড়ে চেম্বারে প্রবেশ করল। প্রচণ্ড অস্থিরতা ও যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় রোগী বললেন, “ডাক্তার বাবু ডান কানের প্রচণ্ড যন্ত্রণায় আমি মরতে বসেছি”। তিনি আরো বললেন, ভোরবেলা থেকে যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। তিনি আর্তচিৎকার করে বললেন, “ডাক্তারবাবু এখনই আমার যন্ত্রণা কমান, নইলে আমার মৃত্যু অনিবার্য।” রোগীর কথা শুনে মনে হল এটা একোনাইটের রোগী।
ওইরকম সময়ে তিনি ভাবলেন যদি হোমিওপ্যাথি সত্য হয় তবে অবশ্যই ব্যথাটি সেরে যাবে। তিনি ভাবলেন, পাঁচ মিনিটের মধ্যে আরোগ্য হবে কারণ মেটেরিয়া মেডিকায় বলা আছে-
“Aconite being described as cyclone like in its action.”
তিনি ভাবলেন, আজই হোমিওপ্যাথির চরম পরীক্ষা। আজই পরীক্ষা হবে হোমিওপ্যাথি সত্য বা মিথ্যা। যুবকটি তখনও পান চিবাচ্ছিলেন তাই পান মুখ থেকে ফেলে দিতে বললেন কিন্তু মুখ ভালভাবে ধোবার কথা বললেন না পাছে রোগী হোমিওপ্যাথি ওষুধ বলে সন্দেহ করে। কিন্তু হোমিওপ্যাথির প্রতি অবিশ্বাসের জন্য তিনি সাহায্যকারীকে বললেন, ইনজেকশন রেডি করতে। পাঁচ মিনিট নয়, তিন মিনিটেই প্রমাণ হল- হোমিওপ্যাথি পরম সত্য। সেটা কিভাবে হল! সেটা তাঁর অসাধারণ লেখায় পাওয়া গেল-
“Keeping my eyes over my wrist watch all the while. Just after three minutes the PATIENT asked in a shytone, “IS THE INJECTION ALREADY PREPARED SIR??? It seems it will not be required, as I feel almost free from the pain.” My joy knew no bounds — as no amount of morphia or any analgesic in the allopathic armamentarium could relieve the pain so quickly.”
অবশেষে হোমিওপ্যাথির জয় হলো আর তাঁর কুসংস্কার থেকে মুক্তি হলো। এই ঘটনা কি আমাদের ঘুম ভাঙাবে?
পরবর্তীকালে অনেক জরুরি ক্ষেত্রেই তিনি এরূপ সত্য দর্শন করেছিলেন। আর আমাদের কিছু মহাজ্ঞানী চিকিৎসক জরুরি অবস্থায় অ্যালোপ্যাথি ওষুধ দেবার জন্য লালায়িত। এরা কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে এই পথে যেতে চাইছেন। আর ডাঃ কাঞ্জিলালের অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক হিসাবে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র আর্তমানবের সার্বিক কল্যাণে অমানুষিক কষ্ট সহ্য করে অ্যালোপ্যাথি ত্যাগ করে হোমিওপ্যাথিতে এসেছেন। সত্যের প্রতি নিষ্ঠা ও ভালবাসা তাকে হোমিওপ্যাথি জগতে অমর করেছে। তাইতো তিনি গুরু এবং প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তি।
বারে বারে সত্য প্রমাণ পাবার পরে তিনি হোমিওপ্যাথির প্রতি আরো গভীর ভাবে অনুরক্ত হয়ে পড়েন। প্রয়াত দৌলতপুরের হোমিও প্রাজ্ঞ বন্ধু ডাঃ পি. এন. ঘোষের পরামর্শে কেন্ট ও ফ্যারিংটনের মেটেরিয়া মেডিকা কিনলেন। এছাড়াও তিনি অর্গাননের পঞ্চম ও ষষ্ঠ সংস্করণ কিনলেন। এছাড়াও উদরাময়, কলেরা, ম্যালেরিয়ার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু বই কিনলেন। তাঁর বন্ধু ডাঃ কে. এন. বসুর কাছ থেকে ধার করলেন, “Bradford’s life and letters of Hahnemann”. এই সময়ে তিনি ১০ থেকে ১২ ঘন্টা হোমিওপ্যাথিক বই পড়তেন। তিনি খুব বিরক্ত হতেন পড়ার সময় কোনো রোগী ডাকলে। এখানেই বোঝা যায় তাঁর জ্ঞান পিপাসা কতখানি ছিল। আর আমরা পড়ার সময় রোগী এলে মোটেই বিরক্ত হই না বরং খুশি হই- রোজগার হবে বলে। মহামানবের জীবনী আমাদের শিক্ষা দেয়, আমাদের কোন দোষগুলি বর্জন করতে হবে আর কোন গুণাবলী আমাদের অর্জন করতে হবে। তাঁর কাছে শিক্ষা পাই কোন পথে গেলে আমরা যোগ্য হোমিওপ্যাথ হতে পারবো। তিনি বলছেন-
“I read with special avidity Kent’s Materia Medica (giving 8 consecutive thorough readings at a stretch in the course 1 and 1/2 years ) and Farrington’s clinical Materia Medica ( 3 successive thorough readings.)”
এই বইগুলির মধ্যে অর্গানন বিষয়টি সর্বাপেক্ষা কঠিন। দুই-একবার পড়ে তিনি খুব সামান্যই বুঝতে পেরেছিলেন। পরবর্তীকালে ডা. কেন্টের দর্শন পড়ে তিনি অর্গাননের জটিল রহস্য উন্মোচনের পথ খুঁজে পেলেন। অর্গাননের মৌলিক সত্যকে তিনি অন্তরে অনুভব করলেন। আর আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর লেখা পড়ে অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে আলোর সন্ধান পাই। হোমিওপ্যাথিকে পুনরায় নতুনভাবে অনুভব করতে শুরু করি। লেখার জন্য পড়তে গিয়ে আবার আলোকিত হচ্ছি। আপনাদের অনুভবের কথা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। এবার তাঁর উপলব্ধির কথা তাঁর ভাষাতেই শুনুন-
“Before this my study and application of the science of Homoeopathy was formal and mechanical, committing many serious blunders, the gravity of which was realised only in later life.”
তিনি অর্গানন না বোঝার জন্য কতো মারাত্মক ভুল করেছিলেন যা পরবর্তী জীবনে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। বন্ধু, একটু ভেবে দেখুন একজন মানুষ কতটা সৎ ও সাহসী হলে মুক্তকণ্ঠে নিজের ভুল স্বীকার করতে পারেন। অর্গাননের শুরুতেই হ্যানিম্যান তাই AUDE-SAPERE বলেছেন। আর আমরা ভুল করিনা তাই স্বীকারও করিনা। এই কারণে আমরা ব্যর্থ। তিনি তার অসংখ্য ভুলের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ভুলের কথা বলেছেন যা পরে আলোচনা করবো।
অর্গানন না বোঝার জন্য তার ধারণা ছিল তিনি রোগী আরোগ্য করছেন। এই বিষয়ে তিনি বড়াই করতেন। যখন অর্গানন বুঝতে পারলেন তখন উপলব্ধি করলেন এগুলি সবই চাপা (Suppression) দেওয়া চিকিৎসা। তিনি কি রকমের চিকিৎসা করতেন সেটাই এখন বলছি। যেকোনো একজিমা ২-৭ দিনের মধ্যে আরোগ্য করতেন মলম দিয়ে।
আমার বিনীত প্রশ্ন- হোমিওপ্যাথিক শক্তিকৃত ওষুধে কি চাপা পড়েনা? আমরা আরোগ্যের দাবি অনেক দেখতে পাই। লক্ষণ দূর হলেই তাকে হোমিওপ্যাথিক আরোগ্য বলে না। অন্যান্য প্যাথির সঙ্গে আমাদের পার্থক্য আছে। এই আরোগ্যের মধ্যে কতগুলি হেরিং, কেন্টের পর্যবেক্ষণ অনুসরণ করে আরোগ্য হয়েছে? নতুনদের উদ্দেশ্যে বলি, আরোগ্যকারী নীতি অনুসরণ করে আরোগ্য হলেই তাকে গ্রহণ করবেন। আমি হোমিওপ্যাথিতে অনেক চাপা দেওয়া চিকিৎসা দেখেছি, খেয়াল করলে এবার আপনারাও দেখতে পাবেন। চাপা দেবার অনেক কুফল আমি দেখেছি, তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ডাঃ কাঞ্জিলাল তার ভুল সম্পর্কে বলেছেন-
“My first son, at that time aged one year, developed an eczema capitis. His symptoms indicated Sulphur and that remedy had been given in the 200-th potency, one dose. It was followed by intense aggravation. Instead of waiting I suppressed it forthwith my pet local application. My Homoeopathic friend (Dr. P. N. GHOSH) admonished this rash action of mine.”
এই ভুলের মাশুল তিনি কিভাবে দিয়েছিলেন!
ডাঃ পি. এন. ঘোষের মৃদু ভর্ৎসনার উত্তরে তিনি গর্ব করে ডাঃ ঘোষকে বলতেন,
“I am a man of science, I do not follow your DOGMA”.
কিন্তু তিনি তার বিজ্ঞানের অহংকারে হোমিওপ্যাথিকে অশ্রদ্ধা করার হঠকারিতার মারাত্মক শাস্তি পরে পেয়েছিলেন। তাঁর সেই সন্তানটি শীঘ্রই মারাত্মক Bacillary dysentery -তে আক্রান্ত হল। অতি কষ্টে সেটা বন্ধ হয়েছিল। তারপর থেকে এই প্রবণতা বজায় ছিল। ২/৩ বছর অন্তর মারাত্মক আকার ধারণ করতো। অতি কষ্টে সেটা বন্ধ হত। কিন্তু একজিমা বার করার সব চেষ্টা ব্যর্থ হল। কারণ তাঁর ওষুধটি খুবই শক্তিশালী ছিল। অত্যন্ত মেধাবী অষ্টম শ্রেণির এই ছাত্রটির শেষবার আক্রমণ হয়েছিল ১২ বছর বয়সে। তখন তিনি দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে জেলে বন্দী ছিলেন পুর্ব পাকিস্থানে অধুনা বাংলাদেশে (তিনি বামপন্থী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন বলে)। এরপরে যে যে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছিল তার ভাষায়ই বলি-
“Nobody else knew about his peculiar constitution and specially about his idiosyncracy about allopathic medicine in general and he succumbed immediately after an injection ( the name of which is still unknown to me).”
সন্তানের মৃত্যু দিয়ে তাঁর ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ে আমার গুরু ডাঃ কে. সি. দাসের কথা। তার প্রথম সন্তানের কানের পূঁজ চাপা (Suppression) পড়ে পরে মেনিনজাইটিস হয়। ক্লাসে ২/১ বার কথা উঠেছিল। আমরা দেখেছি তাঁর চোখ চিকচিক করতো। আজকাল খুব ভয় পাই অধিকাংশ তথাকথিত Evidence based case গুলির ক্ষেত্রে যেখানে হেরিং ও কেন্টের আরোগ্যের পর্যবেক্ষণগুলি দূরবীণের সাহায্যেও খুঁজে পাচ্ছি না। আমার চোখের কি দোষ হল!
এইসব প্রাতঃস্মরণীয় চিকিৎসক সন্তান শোকে মুহ্যমান না হয়ে হোমিওপ্যাথিকে আকড়ে ধরেছেন। এই রুঢ়-ঊষর ভূমিতে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করে তারা নিজেরাই একেকজন প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছিলেন। একজন আদর্শ হোমিওপ্যাথ হতে হলে চরিত্রের কতটা দৃঢ়তা ও সহনশীলতা থাকা প্রয়োজন সেই শিক্ষা তাঁরা আমাদের দিয়েছেন। আমি তাদের প্রণাম জানাই।
তারপর ডাঃ কাঞ্জিলালের রুপান্তরের জন্য শেষ আঘাতটি আসে ১৯৪০ সালে। সেই সময়ে চিকিৎসক হিসাবে তাঁর নিজস্ব মূল্যায়ন আপনাদের কাছে তুলে ধরছি-
“At that time I was 3/4 – the fledged Homoeopath, thoroughly convinced about the fair efficacy of Homoeopathy in all diseases except Malaria and Kala– azar. With respect to only these two diseases I was not able to alienate myself from the attractions of Allopathy in spite of having gone through “Therapeutics of Fever ” by H. C. Allen and ” Intermittent Fever ” by P. P. Wells.”
এখান থেকে বোঝা গেল তখনো তিনি কুসংস্কার মুক্ত হতে পারেননি। সেই সময়ে তার অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। সেই সময় তাঁর আবিষ্কৃত বিখ্যাত ম্যালেরিয়ার বড়ি দিয়েও তিনি প্রায় ব্যর্থ হন। তিনি তিনটি ম্যালেরিয়ার মরশুম চরম ব্যস্ততার সঙ্গে কাটিয়েছিলেন। সেই সময়ে তাঁর পকেটে তাঁর প্রিয় বড়ি ও অ্যাট্রাবিন এবং পেলুড্রিন সবসময় থাকত। কিন্তু তাঁর ওই সময়ে একবার খুব জটিল প্রকৃতির ম্যালেরিয়া হয়েছিল যা হোমিওপ্যাথি ওষুধের ভুল নির্বাচনের আরোগ্য হয় নাই। এর পর সফলতা এসেছিল।
ডাঃ কাঞ্জিলালের প্রথম সাফল্য আসে একটি পুরাতন ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে। রোগিণী ছিলেন তাঁর বৌদি। সেখানে Nat – mur এর পরিষ্কার চিত্র ছিল। ২০০ শক্তির একটি মাত্রা রোগীকে সম্পূর্ণ আরোগ্য করেছিল। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন সুস্থ ছিলেন। এরপরে ডাঃ কাঞ্জিলাল উৎসাহিত হয়ে অনেক ম্যালেরিয়া রোগী দেখেছিলেন এবং অসাধারণ সাফল্য পেয়েছিলেন।
এ প্রসঙ্গে আমার বহুদিন পূর্বের কথা মনে পড়ে। বিকালে স্যারের (ডাঃ কে. সি. দাস) চেম্বার সবে শেষ হয়েছে। এমন সময় একটি ট্যাক্সি আমাদের সামনে থামল। দরজা খুলে আমাদের ক্লাসের একটি ছাত্র স্যারের পা জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমার মাকে বাঁচান স্যার।” ছেলেটি বলল, মায়ের Malignant Malaria হয়েছে। তখন অ্যালোপ্যাথিতে এর কোনো ওষুধ ছিলনা। তখন বিদেশে কিছু ওষুধ আবিষ্কার হয়েছিল কিন্তু এদেশে কোনো ওষুধ ছিলনা। তখন এই রোগে সাক্ষাৎ মৃত্যু । সেই ছাত্রটি কলকাতায় এক শিক্ষক, লেখক ও অধ্যাপকের কাছে প্রথমে গিয়েছিল। তিনি ছাত্রটিকে সরাসরি বলেন, হোমিওপ্যাথিতে এর কোনো চিকিৎসা নাই। তাই কলকাতা থেকে মগরায় সরাসরি চলে এসেছিল সেই ছাত্রটি। যাই হোক আমরা কয়েকজন স্যারের ওখানে ছিলাম। স্যার সালফার ০/৬ দিয়ে রোগীটি আরোগ্য করেছিলেন।
এখান থেকে আমাদের শিক্ষণীয় হচ্ছে- রোগীকে চিকিৎসা করলে রোগী অবশ্যই আরোগ্য হবে অথবা কষ্টের উপশম হবে। আর নতুনদের উদ্দেশ্যে বলি- চিকিৎসা শাস্ত্রের অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি কিন্তু মনে রাখতে হবে সেই জ্ঞান যেন তোমাদের হোমিওপ্যাথির পথে বাধাস্বরূপ না হয়।
তিনি তাঁর নিজের দুর্দান্ত ম্যালেরিয়াকে কোনোভাবেই বাগে আনতে পারেন নি। পরে তাঁর ধাতুগত ওষুধ সালফার বিভিন্ন শক্তিতে উপযুক্ত সময়ে প্রয়োগ করে তিনি বিশেষ উপকার পেয়েছিলেন। তাঁর ভাষাতেই বলি-
“Even the obstinate case of myself became much easier after repeated doses of my constitutional remedy — SULPHUR — in various potencies at sufficiently long intervals.”
‘অবশেষে কালাজ্বরে হোমিওপ্যাথি ওষুধ কাজ করে না’ -এই ধারণাটি দূর হলো কয়েকটি ক্ষেত্রে অসাধারণ ফল পাবার পরে। শেষ অবধি বাকি রইল ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া। সৌভাগ্যক্রমে (!) ১৯৪০ সালের শরৎকালে অভাবনীয় সুযোগ তাঁর সামনে এসেছিল। সেই সময়ে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার মহামারী দেখা দিয়েছিল। রোগীর সংখ্যা এত বেশি ছিল যে প্রতিটি চিকিৎসকের হাতে অন্তত ১০০ টি রোগী ছিল। অদ্ভূত বিষয় তখনকার সর্বাধুনিক ওষুধ (?) রোগ আরোগ্য করতে পারেনি। প্লেগের মহামারী হলে যেমন গাদা গাদা ইঁদুর মরে ঠিক সেইভাবে মানুষ মরছিল। কি ভয়ংকর অবস্থা হয়েছিল তখন আপনারা নিশ্চয় অনুভব করতে পারছেন। তখনকার সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ওষুধ ATRABIN তিন ঘণ্টা অন্তর ইনজেকশন দিয়েও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হল। তখন তাঁর অ্যালোপ্যাথির প্রতি অন্ধবিশ্বাস চলে গেল। তারপর এর সমাধানের জন্য হোমিওপ্যাথির স্মরণ নিলেন।
অ্যালোপ্যাথিতে ব্যর্থ হয়ে ডাঃ কাঞ্জিলাল সমাধানের জন্য, Allen’s therapeutic of fever বইটিতে অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন। তিনি ভাবলেন এই বইটির সব কথা যদি সত্য হয় তবে ম্যালিগনান্ট ম্যালেরিয়া অবশ্যই আরোগ্য হবে। এটা আসলে হোমিওপ্যাথির অগ্নিপরীক্ষা। এই রকমের চিন্তাধারার মধ্যে একদিন সন্ধ্যায় একটি ভয়ংকর ম্যালিগনান্ট ম্যালেরিয়া রোগী দেখার জন্য ডাক পেলেন। তাঁর অসাধারণ লেখাটির বঙ্গানুবাদ করলে রসভঙ্গ হতে পারে বলে তাঁর লেখাটি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম-
A child of 11 years, in a stage of collapse, where any injection would have been a veritable adventure being the last straw on the Camel’s back. So I took the party into confidence, explained the situation and told them I would like to try two doses, of Homoeopathic medicine ( my use of Homoeopathic medicine was by that time an open fact ) at the night. If the patient survives the night, question of injection etc.may decided in the morning. The party agreed.”
আপনারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন আর ভাবছেন বাচ্চাটির কি পরিণতি হল। ডাঃ কাঞ্জিলাল কার্বো-ভেজ দুইশত শক্তির একটি মাত্রা তৎক্ষণাৎ দিলেন। আর একটি দিয়ে বললেন, যদি এক ঘণ্টা পরে বাচ্চাটি বেঁচে থাকে অথবা কোনো প্রকার উন্নতি না হয় তবে দ্বিতীয় পুরিয়াটি দিতে। তিনি মনে মনে ভেবেছিলেন, সকালে কোনো সুখবর আসবে না। বাচ্চাটির অবস্থা দেখে তিনি নিশ্চিত ছিলেন ছেলেটি ওই রাত্রিতে মারা যাবে।
পরের দিন সকালে একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছিল। সেটা তাঁর ভাষাতেই বলি-
“But to my great surprise the father of the child appeared in my chamber (near the market place) at about 9 A. M. quite smiling and narrated the developments after I left the patient. Soon after my first and only dose of Carbo – veg 200, the patient warmed up and became almost rejuvenated and demanded food.”
এই অংশটি থেকে আমরা কি পেলাম?
(ক) এক মাত্রা ওষুধ হোমিওপ্যাথির নীতি সম্মত উপায়ে প্রয়োগ করলে জীবনদায়ী হতে পারে। এর শক্তির পরিচয় আমরা পেলাম। অন্যান্য চিকিৎসা ব্যর্থ হবার পরেও আমাদের ওষুধ কার্যকারী হতে পারে। তবে সবপ্যাথিরই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, তেমনি হোমিওপ্যাথিরও সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। জরুরি কথাটি হলো- অন্যান্য প্যাথির Prognosis কিন্তু সমভাবে হোমিওপ্যাথির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়- তার প্রমাণ আপনারা পেলেন। আর যদি একমাত্রাই জীবনদায়ী হয় তবে অধিক মাত্রার কিবা প্রয়োজন?
(খ) এখানে ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয়নি। তাহলে বন্ধু, যদি এক মাত্রা ওষুধ জীবনদায়ী হয় তবে ওষুধ ব্যবসায়ীর সর্বনাশ। ঠিক এই কারণেই হোমিওপ্যাথির বিরুদ্ধে এতো অপপ্রচার।
আমার বন্ধুরা, আশাকরি চিন্তামুক্ত হয়েছেন বাচ্চাটির আরোগ্যের খবরে। এরপরে ডাঃ কাঞ্জিলাল বললেন, বাচ্চাটিকে ওষুধ দেবার সময় পথ্যের বিবেচনা তিনি করেননি। তিনি মনে মনে ধরে নিয়েছিলেন- বাচ্চাটি আর বাঁচবে না তাই পথ্যের ভাবনা অপ্রয়োজনীয়।
বাচ্চাটির পরিবার তার ক্ষিদে মেটাবার জন্য মিছরি দিয়ে বার্লির দ্রবণ তাকে দিয়েছিল। কিন্তু বাচ্চাটি সারারাত ভাত খাবার জন্য বায়না করেছে। সেই কারণে বাচ্চাটির বাবা তাজা মাছের জন্য বাজারে এসেছেন আর মাছ-ভাত পথ্যের জন্য ডাঃ কাঞ্জিলালের অনুমতি প্রার্থনা করলেন। কিন্তু চিকিৎসার বিষয়ে কোন উচ্চ-বাচ্য করলেন না। ডাঃ কাঞ্জিলাল তাকে মাছ ভাতের অনুমতি দিলেন।
তারপর থেকে Malignant Malaria -র রোগী আসলে তিনি সরাসরি বলতেন তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করবেন। যারা অ্যালোপ্যাথি করতে চান তাদের অন্য চিকিৎসকের কাছে যাবার পরামর্শ দিতেন।
কিছু রোগীর তাঁর ওপর অগাধ আস্থা ছিল। তিনি যে ধরণের ওষুধ দিন না কেন- তাদের সে বিষয়ে মাথাব্যথা ছিল না। এইভাবে তিনি দুইশতর বেশি রোগীর চিকিৎসা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। কি আশ্চর্য সমাপাতন দেখুন! এক ম্যালেরিয়া হোমিওপ্যাথির সৃষ্টিকর্তা (ডা. হ্যানিমান), আর এক ম্যালেরিয়া কিভাবে ডা. কাঞ্জিলালকে হোমিওপ্যাথে রূপান্তরিত করল! বাকি অর্ধেক মরশুমে ম্যালেরিয়ার দুইশতর বেশী রোগীকে সম্পূর্ণভাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার দ্বারা আরোগ্য করেছিলেন। জীবনের এরূপ সন্ধিক্ষণে তিনি একটি অভাবনীয় সিদ্ধান্ত নিলেন। সেই সিদ্ধান্তের কথা তাঁর ভাষাতেই শুনুন-
“And just after the epidemic was over in November, 1940, I squandered away my allopathic dispensary, the stock value of which at that time (much cheaper market) would be a little over about Rs. 1000/=, amongst my Allopathic friends and turned into a full fledged homoeopath. Since then till date I have not written a single prescription of allopathic medicine. Even in my operation cases (Surgical, obstetrical or gynaecological), Which I had in plenty while at Daulatpur or Khulna town (1943 — 1949) the only non – homoeopathic (really physiological rather than allopathic) drug that I had to use were chloroform and ether. I used no antiseptic other than alcohol and calendula lotion. Of course, in the mean time, the more and more. I penetrated into homoeopathy the indications for operation gradually became more and more limited.”
আমরা দেখলাম ডাঃ কাঞ্জিলাল কিভাবে হোমিওপ্যাথে রূপান্তরিত হলেন। এর থেকে আমরা কি শিক্ষা পেলাম?
(১) তিনি অ্যালোপ্যাথি সম্পূর্ণ ত্যাগ করে তার কাছে থাকা ১০০০ টাকার বেশি দামের ওষুধ তাঁর অ্যালোপ্যাথিক বন্ধুদের দান করে দিলেন। সেটা ছিল ১৯৪০ সাল। বর্তমানে সেই টাকার মূল্য ২৫ লক্ষ টাকার বেশি। ভাবলে আমার গা শিউরে ওঠে। আর আমরা সত্যের জন্য কতটা ত্যাগ করতে প্রস্তুত? আসুন আমরা আলস্য ত্যাগ করে হোমিওপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথের সার্বিক স্বার্থে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমার বন্ধুদের কোন আপত্তি আছে?
(২) কি গভীর ভালবাসা হোমিওপ্যাথির প্রতি! তিনি শল্য চিকিৎসা করতেন সম্পূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহার করে। আমি মনে করি এ বিষয়ে তিনি পথিকৃৎ। এখানে অস্ত্রচিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি। শল্য চিকিৎসা সম্পূর্ণ হোমিওপ্যাথি ওষুধে সম্ভব হলে- এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। শল্য চিকিৎসার একচেটিয়া কারবার বন্ধ হবে। শুধু True Surgical কেসের শল্য চিকিৎসা হলে মানব জাতির সমূহ কল্যাণ সাধন হবে।
আমি এক নতুন প্রজন্মের চিকিৎসককে জানি, তিনি ২০০ শতেরও বেশি প্রসব করিয়েছেন শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে। তবে তিনি হোমিও ওষুধ ব্যবহার করেননি। এ বিষয়ে সত্ত্বর গবেষণার প্রয়োজন আছে। আমি বিশ্বাস করি আগামী দিনে আমরা সফল হব। এটা সফল হলে খরচ অনেক কমে যাবে। এবং পরবর্তী জটিলতা হ্রাস পাবে যা আমাদের প্রায়ই চিকিৎসা করতে হয়।
তাঁর জীবনের আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা তাঁর ভাষায়ই বলি-
“Before finishing I may add that in the Autumn of 1941. I had myself an attack of Malignant Malaria (Algid type) blood picture showing, “” M.T. Rings in fair number “” cured by two doses of Ocimum Sanc –30 prescribed by myself in consultation with some of my Homoeopathic friends, disobliging my allopathic friends who were furious at my FANATICISM (??? — Dr, A.N. Chakrabarty) in refusing to take injections.”
এই লেখাটি তিনি লিখেছিলেন ১৯৬২ সালে। যত দিন যায় তিনি ততই নিজের ঘাটতি, অযোগ্যতা ও অক্ষমতা উপলব্ধি করতে শুরু করেন। তিনি আবার ধ্রপদী হোমিও সাহিত্য গভীরভাবে পড়তে শুরু করলেন। যতবারই পড়েন তত বারই নতুন কিছু শেখেন। এই প্রসঙ্গে আমার গুরু ডাঃ কে. সি. দাসের একটি কথা মনে পড়ে। তিনি বলতেন, “না পড়লে, কি করে বুঝবি- তুই কত বড় মুর্খ?” কি অদ্ভুত মিল দুজনের চিন্তাধারায়! শেষে তাঁর কথায় বলি-
“In one word, with advancing age I am turning more and more a student rather than a master of Homoeopathy.”
আমার বন্ধুরা কি হতে চান? মাস্টার বা ছাত্র? এই প্রবন্ধটি আজ শেষ হলো। এই প্রবন্ধ থেকে আপনাদের কি উপলব্ধি হলো যদি ছোট করে মন্তব্য করতেন …
Discussion about this post