ডা. এ. জামান রিপন:
বিশ্বব্যাপী প্রায় দু’শবছরব্যাপী মানবজাতির কল্যাণ সাধনে হোমিওপ্যাথি দ্বিতীয় বৃহত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দূরারোগ্য ব্যাধি যেমন: আলসার, টিউমার, ক্যান্সারের মত জটিল ব্যাধিও অনেকাংশে এর মাধ্যমে আরোগ্য হয়। যা সারা পৃথিবীব্যাপী সমাদৃত রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরো নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। হাসপাতালের আউটডোর গুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে হোমিও চিকিৎসা সেবা নেয়া মানুষের ভীড়। শহরে গ্রামে অনেক ভালমানের উচ্চশিক্ষিত হোমিও চিকিৎসক আধুনিক মানের চেম্বার খুলে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অত্যাধুনিক হোমিওপ্যাথিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে এবং প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেও অনেক চিকিৎসক সফলতার সাথে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
অনেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশে এসে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দেশেও একটি হোমিওপ্যাথিক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। যা হোক, এই হোমিওপ্যাথি মানবসেবার পাশাপাশি পশুপাখির চিকিৎসায়ও বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ভেটেরেনারী চিকিৎসায় স্বতন্ত্রভাবে হোমিওপ্যাথির উপর আলাদা কোর্স রয়েছে। পাশাপাশি উদ্ভিদেরও চিকিৎসায় এর ব্যবহার নিয়ে চলছে গবেষণা। আমেরিকার কয়েকটি ইনস্টিটিউট উদ্ভিদের উপর রোগবালাই দমনে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রয়োগ করে গবেষণা অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি ব্যক্তি উদ্যোগে গত কয়েকদিন আগে কয়েক প্রকার সবজী ও ফলজ বৃক্ষের উপর হোমিও ওষুধ প্রয়োগ করে স্বল্পপরিসরে গবেষণা শুরু করি।
পুইশাকের পাতায় পাতায় মড়ক দেখা দেয়া একটি ক্ষেতে একোনাইট নামক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এক সপ্তাহ পর দেখা যায় প্রায় ৮০% উন্নতি হয়েছে। এই এক সপ্তাহে যে নতুন পাতাগুলো গজিয়েছে তাতে খুব সামান্য পরিমাণে মড়ক দেখা দিয়েছে। আর কতকগুলোতে কোন মড়ক দেখা যায়নি। গাছের গ্রোথ ও কালার অনেক উন্নতি হয়েছে।
পাশাপাশি একটি বেগুনের ক্ষেতে ফুল ও ফল আসা বন্ধ হয়েছিল। আর পাতাগুলো মুচরে যাচ্ছিল। সেই গাছগুলোতে ম্যা নেশিয়াম ফস ও কেলি ফস নামক ওষুধ প্রয়োগ করা হয় একই সময়। এক সপ্তাহ পর দেখা যায়- গাছের পাতা মুচরে যাওয়া অনেক কমে গেছে। গাছের ডালপালা ও পাতার বর্ণের অনেক উন্নতি হয়েছে। বর্ধনও অনেক ভাল হচ্ছে এবং ফুল আসা শুরু হয়েছে। আরো কয়েকটি ভিন্ন জাতের সবজী ক্ষেতে ভিন্ন ভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। আর এর ফলাফল এর জন্য অপেক্ষমান। সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে করা এই গবেষণার ফলাফল আশার আলো দেখাচ্ছে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে যদি গবেষণায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের জন্য যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি করা হয় তাহলে তা খুলে দিতে পারে সম্ভবনার অপার দূয়ার। কেননা আমাদের দেশে যেভাবে সার ও কীটনাশকের অপব্যবহার হচ্ছে তাতে একদিকে যেমন জনস্বাস্থ্য হুমকীর মুখে- অপরদিকে কৃষকের জন্য তা ব্যয়বহুল। অন্যদিকে হোমিওপ্যাথির এই গবেষণা সফল হলে কৃষিকাজে ফসল উৎপাদনে হোমিও ওষুধ প্রয়োগে ব্যয় কমে যেতে পারে প্রায় ৩০০ শতাংশ।
লেখক-
ডা. এ. জামান রিপন
www.facebook.com/Classical Homeo Research Centre
asadzamankuri2018@gmail.com
Discussion about this post