সম্পূর্ণ নাম: আর্সেনিকাম অ্যালবাম
কিংডম: মিনারেল (খনিজ)
মূল বৈশিষ্ট্য:
নিরাপত্তাহীনতা, উদ্বেগ, অস্থিরতা, দুর্বলতা, শীতকাতরতা, মধ্যরাত্রিতে বৃদ্ধি।
অল্প অল্প পানি পানের তীব্র পিপাসা। জ্বালাপোড়ার মতো ব্যথা- যা তাপে উপশম হয়। লক্ষণের পর্যাবৃত্তি (Periodicity)। লক্ষণাবলীর বৈকল্পিক প্রদর্শনপ্রবণতা (alternation of symptoms)।
সাধারণ নাম : White oxide of Arsenic.
ফিজিওলজিক্যাল ক্রিয়া:
১. শ্লেষ্মিক ঝিল্লীতে (Mucous membrane) বিধ্বংসী প্রদাহ
২. সিরাস ঝিল্লীতে (Serous membrane) পানিসঞ্চয়প্রবণ প্রদাহ- প্রচুর পরিমাণ পানিসঞ্চয় প্রবণতা
৩. কিডনি – ফ্যাটি ডিজেনারেশন, এলবুমেনযুক্ত প্রস্রাব (Albuminuria)
৪. চর্ম – একজিমা, গ্যাংগ্রিন
৫. লোহিত রক্তকণিকার ধ্বংসপ্রবণতা (Haemolysis) – রক্তস্রাব
৬. হৃদপিণ্ড – ফ্যাটি ডিজেনারেশন
৭. রক্ত-পরিবহণ: ভাসোমোটর প্যারালাইসিস
৮. যকৃত – ফ্যাটি ডিজেনারেশন, বিভিন্ন প্রকারের ক্রিয়া-বিশৃঙ্খলাজনিত রোগ
৯. ফুসফুস – হাঁপানি, শ্লেষ্মাসঞ্চয়, প্রাণহানিকর সর্দি-সম্পর্কিত রোগ, নিউমোনিয়া
১০. কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্র: মোটর ও সেনসরি স্নায়ুর প্যারালাইসিস, স্নায়বিক ব্যথা
উত্তেজক কারণ:
ঠাণ্ডা ফলমূল, পানিযুক্ত ফলমূল, টক বিয়ার, বাসি বা নষ্ট সালাদ, তরমুজ জাতীয় ফল, আইস-ক্রিম, এলকোহল জাতীয় পানীয়, পনির খাবার পরে।
তামাক চাবানোর পর।
সমুদ্রে গোসল করার পর।
লাশ কাটাছেড়া করতে গিয়ে প্রাপ্ত ক্ষত। এনথ্রাক্স বিষাক্ততা। বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের কামড়ের পর।
অপুষ্টি। কুইনাইন সেবনের পর।
ভ্রমণ, পর্বতারোহণে।
দুঃখ ও ভয় থেকে। টোমেইন বিষাক্ততা (Ptomaine poisoning), শাকসব্জী খাবার পর।
বৃদ্ধি:
মধ্যরাত্রির পর, পরিশ্রম করলে
১৪ দিনের পর্যাবৃত্তিতে, বাৎসরিকভাবে দেখা দেয়া লক্ষণ
সমুদ্রতীরে, ঠান্ডায়, ঠান্ডা খাবার বা পানীয়ে
আক্রান্ত পার্শ্বে শয়নে/ মাথা নিচু রেখে শয়নে
পানিযুক্ত ফলমূল খেলে নষ্ট খাবার বা নষ্ট গোশত খাওয়ায়, মদ্যপানে
হ্রাস:
উষ্ণ আবরণে, নড়াচড়ায়, হাঁটাচলায়, লোকসঙ্গে, ঘামলে, খোলা বাতাসে
মানসিক অবস্থা ও লক্ষণাবলী:
মানসিক অস্থিরতা, কিন্তু শারীরিকভাবে এত দুর্বল যে নড়াচড়া করতেও কষ্ট হয়, আক্রান্ত অঙ্গের অস্থিরতা। অস্থিরতার দরুন স্থির থাকতে পারে না, সাথে উদ্বেগ থাকে।
একা থাকতে ভয় পায়, ক্যান্সারের ভয়, চোর-ডাকাতের ভয়, দারিদ্রের ভয়, মৃত্যুভয়, রোগের বাজে অবস্থায় দেয়া মৃত্যুভয়- মনে করে ঔষধ খেয়ে আর লাভ নেই, রোগ আর সারবে না।
মনে করে, সবকিছু বাজে দিকে এগুচ্ছে। অন্যদের জন্য দুশ্চিন্তা করে।
উদ্বেগ। প্রচণ্ড সংবেদনশীল। মর্মযাতনা। স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা ও ভয়। পরবর্তীতে রোগ নিয়ে নৈরাশ্য সৃষ্টি হয়। স্নায়বিক ক্ষুধামান্দ্য (প্রথমেই চিন্তা করা উচিৎ, এছাড়া Nat-m, Sep, Nux-v, Ign, Verat, Abrot, Sulph এর কথা ভাবা যেতে পারে)
নিরাপত্তাহীনতাবোধ, মনে করে এই অনিরাপদ পৃথিবীতে সে প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে আছে।
খুঁতখুতে স্বভাব, শৃঙ্খলা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার চিন্তায় মগ্ন থাকে। অন্যের ত্রুটি-বিচ্যুতি সন্ধান করে বেড়ায়।
প্রচণ্ডতা, নিজেকেই আঘাত করে, নিজের চুল ধরে টানে, নখ কামড়ায়, আত্মহত্যার প্রবণতা, উন্মাদনা, অন্য কারো উপর নির্ভর করে চলতে চায়, খুন হবার ভয় ও খুন করার ইচ্ছা।
স্বার্থপর, নিরাপত্তা সন্ধান করে। সহযোগিতা দাবী করে, লোকসঙ্গ চায়।
ভাবে, তাকে কেউ পর্যবেক্ষণ করছে। মদ খাবার পর,
বিভ্রমবশত কথা বা শব্দ শোনে ও কাল্পনিক পশু-পাখি দেখে।
উত্তেজনা ও বিষণ্নতার মিশ্রিতাবস্থা।
দেখে অনমনীয় ব্যক্তিত্ব বলে মনে হয়। কৃপণ, সবকিছু সংগ্রহ করে রাখার প্রবণতা।
নির্দেশক লক্ষণ:
প্রচণ্ড শীতকাতর, কাপড়-চোপড় পড়ে উষ্ণ থাকতে চায়। আগুনের কাছাকাছি থাকতে চায়। শীতকাতর বাতের রোগী, যিনি মাথাব্যথার সময় উষ্ণ থাকেন।
জ্বালাপোড়া-মতো যন্ত্রণা, আক্রান্ত অঙ্গ আগুনের মতো জ্বলে, ব্যথায় উন্মাদপ্রায় অবস্থা। এমনকি ব্যথাটি ঘুমের মধ্যেও অনুভব করে, যা তার মধ্যে শ্বাসকষ্টের অনুভূতির জন্ম দেয়।
জ্বালাপোড়া- গরমে, গরম পানীয়ে, উত্তাপ প্রয়োগে উপশম হয়।
ঠান্ডা পানির প্রচণ্ড পিপাসা, কিন্তু পানের পর মনে হয় তা পাথরের মতো হয়ে পেটে জমে আছে, বার বার অল্প অল্প পানি পান করে কিন্তু তা ঠিক হজম করতে পারে না। পান করার সময় খাদ্যনালীতে গর গর শব্দ হয়।
ক্রনিক রোগীতে পিপাসাহীনতা দেখা যায়।
খাবারের গন্ধ সহ্য করতে পারে না, এমনকি খাবার দেখলে বা গন্ধ পেলেও তা অসহ্য লাগে (Colch, Sepia)।
শ্লেষ্মিক ঝিল্লী হতে স্রাব- ক্ষতকর, পাতলা, অল্প; সর্দি, লালা ও ঘাম। স্রাবগুলোতে পচে যাওয়া গোশতের মতো গন্ধ।
রক্তস্রাব – কালো, দুর্গন্ধযুক্ত।
ক্ষত-প্রবণতা, প্রচণ্ড জ্বালাপোড়ার সাথে ক্ষত ও ক্ষয় প্রবণতা। দুর্বলতা ও দ্রুত শীর্ণতাপ্রাপ্তি।
চর্ম শুস্ক, পার্চমেন্টর মতো অমসৃণ, খড়খড়ে, ঠোট শুস্ক, শুকনো গ্যাংগ্রীন। স্রাব পরিমাণে অল্প।
অস্থির, উদ্বেগপূর্ণ, অশান্তিকর ঘুম- ঘুমের মধ্যে কথা বলে।
মৃত্যু, শোক-দু:খ, ভয়ের স্বপ্ন।
ঘাম- শীতল, স্যাতসেতে।
মধ্য দুপুরে বা মধ্যরাত্রে রোগলক্ষণ ফিরে ফিরে আসার প্রবণতা। প্রতিদিন, তিন বা
চারদিন পর পর, প্রতি ১৫ দিন পর পর, প্রতি ছয় সপ্তাহ পর পর বা প্রতি বছর উপসর্গ
দেখা দেয়ার প্রবণতা।
হাইড্রোজেনয়েড কন্সটিটিউশন, যে কোন ধরণের পানিযুক্ত জিনিসে বৃদ্ধি। যেমন,
পানিসমৃদ্ধ ফলমূল, আর্দ্র স্থান ইত্যাদি।
টক, ব্র্যান্ডি, কফি ও দুধ খাবার আকাঙ্ক্ষা।
মিষ্টি, মাখন, চর্বি ও গোশতে অরুচি।
পানি সঞ্চয়প্রবণতা – সারা শরীরে পানিসঞ্চয়, চর্ম ফ্যাকাসে, মোম মাখানো বা মাটি মাখানো বলে মনে হয়।
রক্তসঞ্চয়ী মাথাব্যথা > ঠান্ডা প্রয়োগে সাময়িকভাবে আরাম হয়।
মাথাব্যথার সাথে অস্থিরতা, অবিরত মাথা নাড়াতে থাকে।
মাথার চামড়া অত্যন্ত সংবেদনশীল।
অল্প বয়সে চুল পাকে ও চুল পড়ে যায়।
চোখের চারপাশে পানি সঞ্চয়।
প্রচণ্ড আলোক-অসহ্যতা।
ক্ষতকর চোখের পানিস্রাবের সাথে জ্বালাপোড়া।
সবকিছু সবুজ দেখায়, মনে হয় সবকিছু একটি সবুজ
আবরণের ভেতর দিয়ে দেখছে।
মুখ ফ্যাকসে, উদ্বেগপূর্ণ অভিব্যক্তি, বসে যাওয়া, শীর্ণ। মনে হয় মুখে সূঁচ ফোটানো
হচ্ছে, মুখে শীতল ঘাম থাকে।
জিহ্বা – নীলচে সাদা, পানি খেতে তেতো লাগে, খাবার বা পানি পান করার পর মুখ তেতো হয়ে থাকে – সকালে মুখ টক, লবণাক্ত বা মিষ্ট স্বাদযুক্ত।
একই সাথে বমি ও পায়খানা, খাবার বা পান করার পরে বৃদ্ধি পায়।
খাবার বা পান করার পর তৎক্ষণাৎ বমি, বিশেষ করে
ঠান্ডা পানি পান করার পর। বমির সাথে শ্লেষ্মা, পিত্ত, রক্ত বা কফিচূর্ণের মতো
পদার্থ থাকে।
চিলিক মারা ব্যথাযুক্ত অর্শ্ব, ব্যথা হাটলে বা বসে থাকলে বাড়ে। জ্বালাপোড়া ব্যথা,
উত্তাপে বৃদ্ধি পায়।
পায়খানা- চালধোয়া পানির মতো, দুর্গন্ধযুক্ত, ক্ষতকর, জ্বালাপোড়া-মতো, কালো, মিউকাসযুক্ত, খাবারের দানা থাকে, পচা গোশতের মতো গন্ধযুক্ত। অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে যায়। ঠান্ডা পানি পানে বৃদ্ধি পায়। পায়খানার সাথে ঘর্মপ্রবণতা।
নাকের স্রাব- পাতলা, পানির মতো, ক্ষতকর নাকের স্রাব, হাঁচি হয় কিন্তু তাতে স্রাব কমে না।
ঠান্ডা বুকে বসে যায়।
নাকবন্ধ থেকে শ্বাসকষ্টের মতো লাগে।
শুকনো কাশি, দিনে কফ বের হয় কিন্তু রাতে শুকনো। পানি পানে বৃদ্ধি, উঠে বসলে উপশম।
হাঁপানিযুক্ত শ্বাসকষ্ট, দুপুর ১২ টার পর বা
রাত্রি ১২ টার পর বাড়ে, দমবন্ধ হবার ভয়ে শুইতে পারে না। উঠে বসলে বা সামনে ঝুঁকলে
উপশম।
ডান ফুসফুসের উপরের এক তৃতীয়াংশে বিদ্ধকর বেদনা।
সায়াটিক ব্যথা, হাটলে কমে, উত্তাপ প্রয়োগে উপশম।
চর্ম শুকনো, মামড়িযুক্ত, শীতল, নীলচে, কুঞ্চিত, পার্চমেন্টের মতো খসখসে, জ্বালাময় ব্যথা, কালো পানিযুক্ত উদ্ভেদ।
সোরিয়াসিস, পচনশীল প্রদাহ। উদ্ভেদ ছাড়াই চুলকানি।
টাইফয়েডের মতো ঘুসঘুসে জ্বর।
ভেতরে জ্বালাপোড়ার অনুভূতির সাথে, বাইরে শীতলতা।
কোন নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধ স্থানে শীতলতা, খোলা বাতাসে উপশম। জ্বরে শীতবোধের সাথে শ্বাসকষ্ট, ঘামের সময় ব্যাপক পিপাসা।
কি-নোটস :
১. মানসিক অস্থিরতা কিন্তু শারীরিকভাবে দুর্বল
২. দ্রুতগতিতে দুর্বলতাবৃদ্ধি, উপসর্গের তুলনায় দুর্বলতার পরিমাণ অধিক।
৩. মধ্যরাত্রির পর বৃদ্ধি
৪. অল্প সময় পর পর ঠান্ডা পানির তীব্র পিপাসা ৫. জ্বালাপোড়াময় ব্যথা, উত্তাপে উপশম
অবশ্য স্মরণযোগ্য:
বয়স্ক, ভেঙ্গে পড়া স্বাস্থ্যযুক্ত ধাতুপ্রকৃতি। চরম দুর্বল। প্রচণ্ড শীতকাতর, আগুনের কাছে গিয়ে বসে থাকতে চায়। তার সাথে টিস্যু ধ্বংসের প্রবণতা, যেকারণে ক্ষত, পচনশীলতা, ক্ষতকারিতা ও প্রদাহিত অবস্থা দেখা যায়।
মানসিকভাবে উদ্বেগপূর্ণ ও অস্থির, প্রচণ্ড কষ্ট অনুভব করে- বিশেষভাবে মৃত্যুভয় কাজ করে। উত্তেজন ও বিষণ্নতার মিশ্রিত অবস্থা।
নিশ্চিতকারী লক্ষণ:
অস্থিরতা
পিপাসা
মধ্যরাত্রির পর বৃদ্ধি
জ্বালাপোড়া, উত্তাপে উপশম
উদ্বেগ ও অস্থিরতা।
ক্লিনিক্যাল টিপস:
টিস্যু ও রক্তের ম্যালিগন্যান্ট রোগে নিম্নশক্তি ব্যবহার করা হয়।
স্নায়বিক ও মানসিক উপসর্গে উচ্চশক্তি ব্যবহার করা হয়।
অতি বাজে জীবনীশক্তিযুক্ত রোগীতে এটি প্রয়োগ করা উচিৎ নয়, এমনকি সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও। এতে রোগীর ইউথানাসিয়া (বেদনাবিহীন মৃত্যু) হয়ে যেতে পারে।
প্রসবের পর প্রস্রাবরূদ্ধ – ডা. চৌধুরী
যে কোন পানিসঞ্চয়ে প্রস্রাববৃদ্ধিকারী হিসাবে কাজ করে – ডা. বাহর
পাইলোরাসের শেষপ্রান্তে ক্ষত – ডা. পোপ
তীব্রমাত্রার স্নায়ুপ্রদাহ ও পক্ষাঘাতে, Ars-30 প্রয়োজন হয় – ডা. জোসেফ . টি. ও. কনার
আর্সেনিক পেনিসিলিনের ক্রিয়াকে বিনষ্ট করার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঔষধ – ডা. এম. বি. দেশাই
পেলেগ্রাতে নিম্নশক্তি ব্যবহার করতে হয় – ডা. হন্ডার সাইলস
নখ কামড়ানোর অভ্যাসে আর্স ব্যবহৃত হয় – ডা. ডিক্সম
সম্পর্কযুক্ত ঔষধ:
মৃত্যুভয় – Acon, Calc, Cimic, Plat, Phos, Gels, Lac-c, Nit-ac.
জ্বালাপোড়া – Sulph, Phos.
অস্থিরতা – Acon, Rhus-t.
পানি পাকস্থলীতে পৌছানোমাত্রই বমি – Bism, Phos, Sanic.
সম্পূরক ঔষধ – All-s, Carb-v, Phos, Pyr.
Discussion about this post