অনুবাদ: ডা. শাহীন মাহমুদ:
হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল এসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া,
পশ্চিমবঙ্গ স্টেট ব্র্যাঞ্চ
ডা. সি. এফ. এস. হ্যানিমানের ২৪৪ তম জন্মদিন এবং হোমিওপ্যাথির ন্যাশনাল রিকগনিশনের সিলভার জুবিলিতে প্রদত্ত বিবৃতি-
সমস্ত প্রকৃত চিররোগগুলো মায়াজমসম্ভূত। এবং বর্তমান সময়ের দ্রুত প্রগতিশীল বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে, চিররোগগুলোও তার উৎস-মায়াজমগুলির মিশ্রণের দরুন জটিল প্রকৃতি ধারণ করছে। মানুষ সময়-উপাসক ও অর্থ-উপাসকে পরিণত হয়েছে- যারা সবচেয়ে দ্রুততম সম্ভাব্য সময়ে রোগের কষ্টগুলো থেকে উপশম পেতে চায়। সে অনুযায়ী তার সমস্ত অসুবিধাগুলিকে অবদমন করার পথ অবলম্বন করে, সমস্ত কষ্টগুলোকে নিশ্চুপ করিয়ে দেয় এবং সকল প্রজ্জ্বলিত সমস্যাগুলোতে (ব্যথা) অ-হোমিওপ্যাথিক উপায়ে অগ্নি-নির্বাপক প্রয়োগ করে- যার ফলস্বরূপ রোগগুলোকে জীবনীশক্তির হালকা স্তর থেকে গভীরতর স্তরে, কমগুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক অর্গানগুলোতে, দেহ থেকে মনে ঠেলে দেয়। কাজেই মায়াজমগুলোর মিশ্রণের সম্ভাব্যতা অর্জিত হয় এবং তৎপরবর্তীতে অবদমিত হয়- যার ফলস্বরূপ সেগুলো মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় এবং জটিল (বহুমাত্রিক, Manifold) রোগ সৃষ্টি করে। রোগ এরকম একটি জটিল অবস্থা অর্জন করায়, বিশেষ লক্ষণগুলো (নির্দেশক) সংখ্যায় এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে (Quality) অনেক কমে যায়। যখন রোগটি মন-সম্বন্ধীয় মৌলিক অঙ্গের সাথে যুক্ত হয়- নির্দেশক লক্ষণগুলো সংখ্যায় ও বৈশিষ্ট্যে আরো কমে যায়।
সুতরাং এ সমস্ত কিছু প্রাপ্ত লক্ষণসমষ্টিকে অফলপ্রসূ (Sterile) এবং এক-দৈশিক (One-sided) হিসাবে পরিণত করে। এই নিষ্ফল ও একই সাথে একদৈশিক লক্ষণসমষ্টি ঔষধ নির্বাচনকে চরমমাত্রায় কঠিন করে তোলে, যা দায়িত্বে থাকা কেইসটির আরোগ্যকে আরো সমস্যাসঙ্কুল করে এবং কখনো কখনো আরোগ্যযোগ্যতাহীন করে তোলে। জটিল রোগগুলোকে আরোগ্য করার ক্ষেত্রে বিলাসবহুল জীবনযাত্রা হচ্ছে আরেকটি সমস্যা- যা হোমিওপ্যাথিক ঔষধের কার্যকারীতাতে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। আধুনিক সময়ের মানুষগুলো কষ্ট সহ্য করতে চায় না। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করার পর সার্বিক অবস্থা, যেমন- সার্বিকভাবে ভালো লাগার অনুভূতি, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, শরীরের সাথে সাথে মনেরও সতেজতা অনুভব, ইত্যাদির উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও (সাধারণ) লক্ষণগুলোর উপচয় ঘটতে পারে। সে শরীরের কোন চর্মোদ্ভেদ উঠতে দেবে না, গনোরিয়ার স্রাব অথবা স্যাঙ্কারকে পুনঃপ্রকাশ ঘটতে দেবে না, ব্যথা, পাতলা পায়খানা অথবা শ্লেষ্মাযুক্ত আমাশয়, জ্বর বা অন্য কোন অসুবিধাকে মেনে নেবে না। যখনই এর কোনটা উঠে আসবে, যে কোন উপায়ে সে তাকে তক্ষুণি দমন করে ফেলতে চায়, তা কোন একটি অঙ্গ বা এর অংশবিশেষ কেটে ফেলে দিয়ে হলেও; এমনকি তার একদমই কোন প্রয়োজন না থাকলেও। এটি ঔষধের আরোগ্যকারী ক্রিয়াকে ব্যাহত করে, কাজেই আরোগ্যও বিঘ্নিত হয়।
হোমিওপ্যাথগণ ঝুঁকির মধ্যে আছেন। আধুনিক মানুষগণ ঝুঁকির মধ্যে আছেন। সমাধান পেতে হলে, মানুষকে অবশ্যই তার অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। তাকে বুদ্ধিমান হতে হবে। একজন বলেছিলেন: মানুষ মরে জ্ঞানের অভাবে। জীবনের চাইতে কিছুই মূল্যবান নয়, এটা আমাদের উপলব্ধি করতেই হবে। যদি প্রাণ থাকে, তবে সবই থাকবে। জীবনকে রক্ষা করার জন্য তাকে প্রকৃতির বিধানগুলোকে অনুসরণ করতেই হবে। সে অবশ্যই কোন পাপ করবে না। অবদমন কেবল রোগীর তরফ থেকেই নয়, চিকিৎসকের তরফ থেকেও একটি ভয়ানক পাপ। অবৈধ সঙ্গম পাপ। গনোরিয়া/স্যাঙ্কার হলো তার ফল। ফলটিকে কোনভাবেই অবদমন করা যাবে না। এটাকে আরোগ্য করতে হবে। কিছু সময় লাগবে এবং কিছুটা কষ্ট ভোগ করতে হবে। মানুষজনকে তা মেনে নিতে হবে। অন্যথায় মৃত্যুই হচ্ছে চরম পরিণতি। সমস্ত পাপের মধ্যে অবদমন হচ্ছে নিকৃষ্টতম।
Discussion about this post