মাস কয়েক আগে রোগী মারাত্মক ধরনের চর্মরোগ নিয়ে চেম্বারে এসে হাজির। ইতিমধ্যেই তার প্রায় সমস্ত ধরনের অ্যালোপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করানো হয়েছে। রোগীর কেস টেকিং করে নিদান দেওয়া হলো এই যে, ঔষধ খাবার পাশাপাশি তিনি তাঁর পরনের পোশাকগুলি ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করার পর সেগুলিকে অন্তত তিন থেকে চার বার ভালো করে পরিষ্কার জলে ধুয়ে তারপর যেন শুকাতে দেন। তারপর তা পরিধান করেন। অর্থাৎ পোশাকে যেন ডিটারজেন্টের লেশ মাত্র লেগে না থাকে। সাথে কিছু নির্দিষ্ট ঔষধ পথ্য দেওয়া হলো। মাস দুয়েকের মধ্যে চর্মরোগ সম্পুর্ণ সেরে যাওয়ায় রোগী এবং তার বাড়ির লোক যারপরানাই আনন্দিত ও বিস্মিত হলেন। আসলে রোগটি ছিল অ্যালার্জিক কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস। প্রাথমিকভাবে রোগটি অ্যাকিউট রোগ হিসেবে দেখা দিলেও দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় বিশেষত রোগী যখন বুঝতেই পারেন না আসলে তাঁর রোগের কারণটি কী এবং সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় রোগটি ক্রনিক ও জটিল আকার ধারণ করে।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সাধারণভাবে কিছু কিছু কেমিক্যাল বা এলিমেন্ট সাবার ক্ষেত্রেই অ্যালার্জেন হিসেবে দেখা দেয়, তবে ব্যক্তি বিশেষেও আবার কিছু কিছু নির্দিষ্ট অ্যালার্জেন সেনসিটিভিটি থাকে। কারোর ক্ষেত্রে গলায় চেন পরলে বা হাতে আংটি পরলে সেখানে এক ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয় আবার কারোর ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করলেই এক ধরণের চর্মরোগ সৃষ্টি হয়। আবার অনেক সময় কসমেটিক ক্রিম থেকেও চর্মরোগ হতে পারে। পেশাগত কারণেও অনেকেই অনেক ধরনের অভ্যাসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। হয়তো সেটি সেই বিশেষ ব্যক্তির কাছে অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে। ফলে সেই ধরনের অ্যালার্জেন সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসায় চর্মরোগের সৃষ্টি হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে ইলেকট্রিক মিস্ত্রিরা যে আঠা লাগানো ব্ল্যাকটেপ ব্যবহার করেন, তার থেকেও অনেকের চর্মরোগ হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে রুপার চেন বা গয়না থেকেও অ্যালার্জি হয় যার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে জটিল চর্মরোগ হতে পারে।

লক্ষণ
অ্যালার্জিক কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস সাধারণভাবে যে লক্ষণগুলি দেখা দেয় সেগুলি হলো-
- রোগের একেবারে প্রথম অবস্থায় চামড়ায় বা ত্বকের উপরে ছোট ছোট ফুসকুরির মতো দেখা যায়।
- রোগটি ক্রনিক হলে আক্রান্ত স্থানটি থেকে চামড়ার খোসা ওঠে, স্থানটি থেকে চামড়ার খোসা ওঠে, স্থানটি লালচে বর্ণ ধারণ করে, সাথে অসহ্য চুলকানি, জ্বালা প্রভৃতি লক্ষ্য করা যায়।
- ধীরে ধীরে রোগটি দেহের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে যে অংশগুলি ঢাকা থাকে না সেইসব স্থানেও ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত স্থানটি ফুলে যায়। গরমভাব অনুভূত হয়, সাথে রস বের হয়।
- সাধরণত চুলে বিভিন্ন স্প্রে বা জেল ব্যবহার করলে মাথার তালুতে এই ধরণের চর্মরোগ হয়। আবার অনেক সময় কসমেটিকস, সেভিং ক্রিম প্রভৃতি কারণে মুখে চর্মরোগ হয়। নেল-পলিশ ব্যবহার করার ফলে অনেক সময় এই ধরনের চর্মরোগ হতে দেখা যায়।
জটিলতা
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে বা অবহেলায় এই ধরনের চর্মরোগের সাথে জটিল কিছু সংক্রমণ বা ইনফেকশন যুক্ত হলে তা মারাত্মক আকার নেয়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
সাধারণ ক্লিনিক্যাল রোগটিকে অনুমান করা যায়। তবে প্রয়োজনে Patch test অথবা Photo patch test করা হতে পারে।

করণীয়
রোগী যদি অ্যালার্জেনটিকে নিজেই ধরতে পারেন তার তৎক্ষণাৎ সেটিকে ত্বকের সংস্পর্শে থেকে দূরেই সরিয়ে ফেলতে হবে। তা সে যতই প্রিয় বা মূল্যবান হোক না কেন।
১) জামাকাপড়, পোশাক-আশাক ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করার পর সেগুলিকে অন্তত তিন থেকে চার বার ভালো করে পরিষ্কার জলে ধুয়ে ফেলতে হবে। তার কারণ পোশাকে লেগে থাকা ডিটার্জেন্ট থেকে মারাত্মক চর্মরোগ হতে পারে।
২) যদি পেশাগত কারণে কোনো নির্দিষ্ট বস্তুকে ধরতে হয় বা গায়ের সংস্পর্শে আনতে হয় যেট কিনা সেই ব্যক্তির পক্ষে অ্যালার্জেন হিসেবে ধরা পড়েছে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই হাতে গ্লাভস জাতীয় কিছু পড়ে নেওয়া অথবা দেহে এমন কিছু আবরণ দিতে হবে যাতে সেই বস্তু সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে না আসে।
চিকিৎসা
অনেক সময় দেখা যায়, রোগী চর্মরোগকে বিশেষ গুরুক্ত দিতে চান না। ফলে ক্রমশ তার জটিলতা বৃদ্ধি পায়। মনে রাখতে হবে চর্মরোগ কখনোই অবহেলার বিষয় নয় এবং সেই স্থানে যদি আবার ইনফেকশন হয় তবে তার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া কঠিন। অনেক সময়ই রোগী বাজার থেকে চলতি কিছু মলম লাগিয়ে এই ধরনের চর্মরোগকে সারিয়ে ফেলতে চান। এক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখা উচিত, চর্মরোগ সম্পুর্ণ নির্মুল না করলে অর্থাৎ মলম লাগিয়ে রোগটিকে চাপা দিলে রোগটি দেহের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ভাইটাল অর্গানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বলাইবাহুল্য এমন বহু অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগী আমরা নিয়তই পাই যাদের পূর্বে জটিল চর্মরোগের ইতিহাস ছিল এবং তারা সেটিকে মলম লাগিয়ে উপশম পেয়েছেন। যাইহোক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় কন্সটিটিউশনাল করলে চর্মরোগকে সম্পুর্ণ নির্মুল করা সম্ভব, রোগীর কেবল ধৈর্য্য ধরে বেশ কিছু মাস ঔষধ খাবার মানসিকতা থাকা দরকার। হোমিওপ্যাথি ঔষধের কোনো পার্শপ্রতিক্রিয়া না থাকায় কোনো রকমের জটিলতা আসার সম্ভাবনা নেই। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে এবং কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ গ্রহণ করা কখনই বাঞ্চনীয় নয়।
