ডা. ইশরাত জাহান :
🔴ডায়েটঃ ডায়েট অর্থ খাদ্যাভ্যাস অর্থাৎ খাওয়া-দাওয়ার নির্দিষ্ট পরিমাণ। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, কোন ব্যক্তি দ্বারা পরিমিত খাবার, সঠিক সময়ে খাওয়ার নামই হচ্ছে ডায়েট। অনেকে মনে করে থাকেন যে, ডায়েট মানেই হল- কম খাওয়া কিংবা না খেয়ে থাকা ইত্যাদি। মূলত এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা।
🔺আমাদের রুচি এবং খাদ্যাভ্যাস গত নিয়মানুবর্তিতাকেই বলে ব্যালেন্সড ডায়েট। যা আমাদের শরীর অনুযায়ী সঠিক খাবার, সঠিক পরিমাণে খেতে শেখায়।
🔺যেখানে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার সঠিক পরিমাণে থাকে তাই হেলদি ডায়েট। এটি আমাদের অপুষ্টি থেকে রক্ষা করে থাকে।
🔺অস্বাস্থ্যকর ডায়েট শরীরে সঠিক খাবার ও পুষ্টি প্রদানে ব্যর্থ থাকে থাকে। এতে করে শরীরের ওজন হ্রাস-বৃদ্ধি হতে পারে এবং উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, রক্তের কোলেস্টেরল বৃদ্ধি,হতাশা সহ নানা রোগও সৃষ্টি হতে পারে।

🔴ডায়েটের প্রয়োজনীয়তাঃ
আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ঘাটতি মেটানোর জন্যই ডায়েট মানা দরকার।একটা সুস্থ জীবন গঠনের জন্য যা খুবই কার্যকরী। একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে,অধিক ওজন বা যথার্থের চেয়ে কম ওজন কোনটাই সুস্থ জীবন নয়।বরং এসব হচ্ছে অপুষ্টির লক্ষণ। তাই সুস্থতার জন্যও ডায়েট প্রয়োজন। কিছু খাবার শরীরের জন্য হুমকিস্বরুপ হতে পারে যেমনঃ অতিরিক্ত তেলচর্বি যুক্ত খাবার,ভাজাভুজি,ফাস্টফুড ইত্যাদি। এসব খাবার পরিমিত পরিমাণ খাওয়া এবং সম্ভব হলে বর্জন করা।এছাড়া খাদ্যাভ্যাসও মেনে চলতে হবে।অতিরিক্ত খাবার না খাওয়া, সময়মতো খাওয়া ইত্যাদি।
🔴ডায়েট মানেই কি শুধু ওজন কমানো?
না,ডায়েট মানেই ওজন কমানো নয় বরং সঠিক খাবার,সঠিক পরিমাণে,সঠিক সময়ে গ্রহন করলে শরীরে সঠিক পুষ্টি সরবরাহের মাধ্যমে ওজন ঠিক রেখে শারিরীক সুস্থতাই ডায়েটের উদ্দেশ্য। ডায়েটের সঠিক অর্থ বুঝে শরীরকে সুস্থ ও কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে।ওজন হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা করা যাবে না।একটি শিশুও তার মায়ের পেট থেকেই ডায়েটে থাকে।এজন্য একজন মায়ের পুষ্টি চাহিদা থাকে মা ও শিশু উভয়ের জন্য।মোটা বা স্থুলতা দ্বারা শিশুকে স্বাস্থ্যবান বলে বিচার করা যাবে না বরং সুস্থতার কথা চিন্তা করতে হবে। এরপর প্রত্যেকের বাড়ন্ত বয়স, বয়ঃসন্ধিকাল,প্রাপ্ত বয়স থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই পুষ্টি ডায়েট মেনে চলতে হবে।কারন কোন বয়সে কতটুকু খাবার বা পুষ্টি প্রয়োজন তা আমরা জানি না।সেক্ষেত্রে ডায়েট আমাদের সাহায্য করতে পারে।
🔴 সুষ্ঠুভাবে ওজন কমানো বা নিয়ন্ত্রণ =ব্যায়াম + ডায়েট
শুধুমাত্র ডায়েট সম্পূর্ণভাবে ওজন কমাতে পারে না।সেক্ষেত্রে ব্যায়াম একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধুমাত্র ডায়েট করেও ওজন কমানো যায় তবে এখানে ‘বডি ফ্যাট’ একটা বিশাল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায় এবং এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া হয়ে যায়। এছাড়াও ব্যায়াম ছাড়া আমাদের পেশি ও হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়।তাই সুষ্ঠু-সুন্দর এবং দ্রুত ওজন কমানোর জন্য ডায়েট ও ব্যায়াম উভয়ই জরুরী।
ব্যায়ামের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে হাঁটা। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটুন।পাশাপাশি ঘরোয়া ব্যায়াম, খেলাধুলা ইত্যাদি করতে হবে।তবে প্রথমেই একেবারে বেশি সময় ব্যায়াম করা যাবে না।প্রথম দিন ২০ মিনিট এরপর ৩০ মিনিট। ক্রমে ক্রমে এক/দেড় ঘন্টা করে ব্যায়াম বা খেলাধুলা করুন।
🔴স্থুলকায় দেহের অধিকারীদের ডায়েট চার্টঃ
🔺 সকালঃ ভোরে ১ কাপ লেবু-পানি খান।(হালকা কুসুম গরম পানিতে ১ টা লেবুর রস দিয়ে তৈরি করুন)সাথে ১ টা আপেল বা কলা। নাস্তায় ২ টার বেশি রুটি খাবেন না এবং সাথে সবজি খান।১টা ডিমের শুধু সাদা অংশ খাবেন। চা খাওয়ার অভ্যাস থাকলে গ্রিন টি খান অথবা দুধ-চিনি ছাড়া আদা বা লেবু চা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
🔺দুপুরঃ মেপে এক কাপ সাদা ভাত সাথে এক পিছ মুরগী বা মাছ(গরু বা খাসি খাওয়া যাবে না) এবং সবজি অথবা ডাল।ভাত কম খাওয়ার কারণ ভাত একটি শর্করা জাতীয় খাবার যা আপনার শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
🔺বিকেলের নাস্তাঃ খুব বেশি ক্ষুধা লাগলে গাজর/শশা/আপেল খেতে পারেন।শশা এবং গ্রীন টি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে থাকে।
🔺রাতের খাবারঃ ঘুমানোর কমপক্ষে ২ ঘন্টা আগে খাবার খাবেন।সকালের ডায়েটের মত করে খাবেন।সাথে ১কাপ ডিমের বা সবজির তৈরি সুপ খেতে পারেন।অথবা প্যাকেটের নির্দেশনা অনুযায়ী প্যাকেটজাত ‘ওটস’ (oats) খেতে পারেন।এছাড়াও রাতে এক কাপ আদা পানি খেলে মেদ ভুড়ি কমবে।(২ কাপ পানিতে ৪/৫ টুকরো আদা দিয়ে জ্বাল করে সেটাকে শুকিয়ে এক কাপ বানিয়ে ফেলুন।এরপর কুসুম গরম অবস্থায় খান)

🔴টিপসঃ
- রাতে হালকা খাবার খেলে হজম সহজ হয়, ঘুম ভালো হয়, শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে, শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে। এছাড়া এটি ওজন কমানোর অতি সহজ একটি উপায়।
- ভাত আমাদের একটি উপকারী ও প্রধান খাবার হলেও এটি অনেক ক্ষেত্রেই বিপদজনক। অতিরিক্ত ভাত শরীরের ওজন বাড়ায়, হজম শক্তি হ্রাস করে, ঘুমের আধিক্য সৃষ্টি করে, নানা ধরনের হার্টের অসুখ সৃষ্টি করে, বেশি ভাত খেলে প্রোটিন ও ভিটামিন কম খাওয়া হয় বলে শরীরে এগুলোর অভাব দেখা যায়। সেক্ষেত্রে ভাত কমিয়ে রুটি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- প্রতিদিন পরিমিত পানি পান করুন। পানি ওজন কমাতে সাহায্য করে। দৈনিক ৩ লিটার অথবা ৫/৬ গ্লাস পানি পান করুন। তবে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পরিহার করুন। কারণ ঠান্ডা পানি এমনকি লেবুপানিও ওজন না কমিয়ে বরং বাড়িয়ে দিবে।
- অতিরিক্ত ওজন নিয়ে কখনো ‘ইয়োগা'(Yoga)করবেন না। সেক্ষেত্রে হালকা ব্যায়াম করুন।
- বারতি খাবার হিসেবে মুড়ি,চিড়া,টকদই, সেদ্ধ ছোলা,সালাদ ইত্যাদি খেতে পারেন।
- সকল প্রকার কোমল পানীয় বর্জন করুন।
- তেলচর্বি জাতীয় খাবার,বেশি মশলাযুক্ত খাবার,ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, মিষ্টি ফল,ডিমের কুসুম, ডিম পোচ,তেলে ভাজা খাবার ইত্যাদি বর্জন করুন।
🔴সতর্কতাঃ
অনেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত থাকতে পারেন এবং সে কারনে ডায়েটে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।এক্ষেত্রে ওজন কমাতে গিয়ে তার শারীরিক সমস্যার কথা ভুলে গেলে চলবে না বরং খাবার গ্রহনে যথেষ্ট সজাগ ও সচেতন হতে হবে। কারো রক্তে হিমোগ্লোবিনের, ভিটামিনের অভাব থাকতে পারে, রক্তচাপের পার্থক্য থাকতে পারে। তাই তারা তাদের শারীরিক সমস্যা অনুযায়ী ডায়েট তৈরি করুন। বাচ্চাদের ওজন কমানোর ক্ষেত্রে লক্ষ রাখুন যেন পুষ্টি এবং গ্রোথের বা শিশুর বৃদ্ধির ক্ষতি না হয়।
Discussion about this post